Monday, November 1, 2021

হযরত আলাউদ্দিন আহমদ সাবের কালিয়ার (র) বড় পীরের পর সবচেয়ে জালালি ফায়েজের আউলিয়া।।

 হযরত আলাউদ্দিন আহমদ সাবের কালিয়ার (র) বড় পীরের পর সবচেয়ে জালালি ফায়েজের আউলিয়া। বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানি (র) এর আপন নাতি। বড় পীরের পর তিনি হলেন সর্বাধিক জালালি তবীয়তের আউলিয়া। হযরত ইমাম জাফর সাদেক (র) বলেন "আল্লাহ্‌র অলি-আউলিয়াদের মধ্যে দুইটা অতি ধারালো খোলা তরবারি আছে, একটা হল বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানি (র) আর আরেকজন হল তাহার নাতি আলাউদ্দিন সাবের কালিয়ার (র)। যদি কোন ব্যাক্তি এই দুইজনের সাথে সামান্যতম বেয়াদবিও করে তাহলে আল্লাহর জালালি তেজে সে সাথে সাথে দুই খণ্ড হয়ে যাবে"। সাবের পাকের জালালি এতই বেশি ছিল যে তিনি যদি কাউকে লক্ষ করে একবার উচ্চারণ করতেন যে "লোকটির আচরণ ভালো না" তাহলে সাথে সাথে সেই লোক দুই খণ্ড হয়ে যেত। আর যদি সাবের পাক কখনও রেগে যেতেন তাহলে উক্ত এলাকা জ্বলে পুড়ে ছাড়-খার হয়ে যেত কেউ আর প্রানে বাঁচত না।সাবেরপাকের অসম্ভব জালালির কারনে তাহার মুর্শিদ শেখ ফরিদও তাহার সাথে রীতিমত কথা বলতে ভয় পেতেন এই ভেবে যদি সাবেরপাক কখনও খেপে যান।


 সাবের পাক একবার ক্ষেপে গেলে ৬ মাসের আগে তার সামনে কেউ আসতে পারত না।যদি কেউ এই সময় ভুলেও দেখা করতে যেত তাহলে আর প্রান নিয়ে ফিরতে পারত না সে যত বড় আল্লাহর অলি হোক না কেন। সাবেরপাকের শরীরের যদিও কেউ অজু ছাড়া স্পর্শও করত তাহলে তার গায়ে সঙ্গে সঙ্গে আগুনের জ্বালা-পোরা শুরু হয়ে যেত। সাবের পাকের এই অসম্ভব জালালির কারনে কেউই তার কাছে মুরিদ হইতে সাহস পেত না। সাবের পাক জীবিত থাকাকালিন শামসুদ্দিন তুর্কি পানিপথি নামের এক ব্যাক্তিকে শুধু মুরিদ করেছিলেন। এই ব্যাক্তি থেকে পরবর্তী সময়ে তাহার সিলসিলা চালু হয়ে আজ পর্যন্ত চালু হয়ে আছে। সাবেরপাকের ইন্তেকালের পর তার রওজাশরিফ ৪০ দিন এক পর্যন্ত একসিংহ পাহারা দিয়ে হটাৎ গায়েব হয়ে যায়। 

হযরত খাজা আলাউদ্দিন আহমেদ সাবের কালিয়ার (র)
জন্মঃ- ১৯ শে রবিউল আউয়াল ৫৯২ হিজরি
পর্দা-গ্রহনঃ-১৩ই রবিউল
পিতাঃ- হযরত আব্দুল রহিম (র)
মাতাঃ- হযরত জামিলা খাতুন (র)
পদবীঃ- কুতুবে আউলিয়া ,হযরত গাউসুল আজম বড় পীর আব্দুল কাদির জিলানি (র) এর আপন নাতী
মাজার শরিফঃ- ভারতের উত্তর-খণ্ড প্রদেশের কালিয়ায়র নামক শহরে।
তরিকাঃ- চিশতিয়া
পীর কেবলাঃ-হযরত শেখ ফরিদ (র)
ধর্মঃ- ইসলাম (সুন্নি)
সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ- জন্মের কয়েক বছর পর পিতা মারা গেলে শিশু সাবের আহমেদ ও তার মা অর্থ-নৈতিক দিক থেকে অসহায় হয়ে পড়েন।তারা উভয়েই দিনের বেলায় রোজা রাখতেন এবং রাতের বেলায় শুকনা রুটি দিয়ে ইফতার করতেন।ছোটবেলা থেকেই সাবের আহমদের মাঝে আল্লাহ্‌র অলৌকিক ক্ষমতা প্রকাশ পেতে থাকলে তাহার মাতা তাকে স্বীয় আপন ভাই হযরত শেখ ফরিদ (র) এর কাছে উচ্চতর সাধনার জন্য প্রেরন করেন।পরবর্তী-কালে তাহার ভাই সাবের আহমেদ (র) কে আপন মুরিদ করে নেন।কথিত আছে হযরত সাবের কালিয়ার এর অসম্ভব জালালির কারনে তার পীর কেবলা হযরত শেখ ফরিদ ও তাহাকে খুব ভয় পেতেন।ধীরে ধীরে বাবা শেখ ফরিদের তত্ত্বাবধানে সাবের আহমেদ ইল মে তাসাউফের উচ্চ শিখর লাভ করেন।পরবর্তীতে ভারতের কালিয়ার নামক স্থানে পর্দা গ্রহন করেন।
অলৌকিক কারামতঃ-
১। জন্মের সময় কারামতঃ- কথিত আছে যে বাবা সাবের আহমেদ যখন জন্ম নেন,তখন তার দায়ী মা তাকে অজু ছাড়া কোলে নিলে দায়ী মার সারা শরীরে সঙ্গে সঙ্গে জালা-পোড়া শুরু হয়ে যায়।

২। ১২ বছর অনাহারঃ-সাবের আহমেদকে তাহার মামা লঙ্গর-খানা পরিচালনার দায়িত্ব দিলে তিনি একটানা ১২ বছর সেই লঙ্গর খানা থেকে কোন খাবার গ্রহন করেন নি। এতে তার দেহ কঙ্কাল-সার হয়ে গেলে তার মামা শেখ ফরিদ জিজ্ঞাস করলেন"তোমাকে আমি পুরো লঙ্গর খানার দায়িত্ব দিলাম,তবুও তোমার শরীরের এই বেহাল অবস্থা কেন??" উত্তরে সাবের আহমেদ বললেন" আপনি আমাকে লংগর খানা দেখা শুনার কেবল দায়িত্ব দিয়ে ছিলেন,কিন্তু সেখান থেকে খাবার খাওয়ার কোন অনুমতি দেন নি,তাই আমি এত দিন না খেয়ে কাটিয়েছি"। এই উচ্চ পর্যায়ের সততার কথা শুনে শেখ ফরিদ (র) খুব অবাক হয়ে পড়েন।
৩। কেউ সামান্য বেদবি করলে তার নির্ঘাত মৃত্যুঃ- আল্লাহপাক তাকে এতই জালালি স্বভাব দান করেছিলেন যে তিনি যদি মুখে একবার উচ্চারণ করতেন যে লোকটির আচরণ ভাল না,তাহলে সাথে সাথেই সেই লোকটি দুই খণ্ড হয়ে যেত,তার আর প্রানে বাঁচার উপায় থাকত না
৪।সম্পূর্ণ কালিয়ার শহর ধ্বংসঃ- তাহার পীর কেবলা অর্থাৎ আপন মামা হযরত শেখ ফরিদ (র) তাকে খিলাফত দিয়ে কালিয়ার শহরের কুতুব (প্রধান ধর্মীয় নেতা)নিযুক্ত করেন।কিন্তু কালিয়ার শহরের কাজী তবারক তাকে সাধারন এক রাস্তার ফকির ভেবে খুব তাচ্ছিল্য করে এমন কি মসজিদে নামাজ পড়ার সময় তাকে ঘাড় ধরে বের করে দেন।এতে বাবা সাবের এর ধৈর্যের বান ভেঙ্গে গেলে তিনি কেবল এইটুকুই উচ্চারণ করেন যে "সব ধ্বংস হোক"।ফলে এক প্রচণ্ড ভুমিকম্পে সমগ্র কালিয়ার প্রদেশ ৫ মিনিটে ধূলিসাৎ হয়ে যায়।সেদিন ঐ কালিয়ার শহরে একটি গাছ ছাড়া আর কিছুই অক্ষত ছিল না। ভূমি-কম্পে সেই গাছ অক্ষত থাকার কারন হল সেই গাছের নীচে কালিয়ার আসার পর বাবা সাবের কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে ছিলেন। আজো সেই গাছকে মানুষ পরম শ্রদ্ধার চোখে দেখে থাকে।
৫।মৃত ছাগলের কথা বলাঃ-কাজী তবারক হিন্সার বশবর্তী হয়ে বাবা সাবেরকে পরীক্ষা করার জন্য জন সম্মুখে বাবা সাবেরকে বললেন যে " আমার তিন মাস আগে একটি ছাগল হারানো গেছে,তুমি যদি তার খবর বলতে পার তাহলে আমি মেনে নিব তুমি সত্যি আল্লাহর অলি"।বাবা সাবের এই কথা শুনে কেবল এই বলে ডাক দিলেন যে "যারা কাজী সাহেবের ছাগল খেয়েছ তারা আমার সামনে হাজির হও"সাথে ২৭ জন লোক আপনা আপনি বাবার সামনে হাজীর হন।এরপর বাবা সাবের কাজী সাহেবকে তার ছাগলের নাম ধরে ডাক দিতে বললে,কাজী সাহবের ডাকে ২৭ জনের পেট থেকে ছাগল কথা বলা শুরু করে দিল। এই আশ্চর্য কারামত দেখে কাজী তবারক হিংসায় তাকে যাদু কর বলে আখ্যা দিলেন। এতে বাবা সাবের কিছুই মনে করলেন না।
৬ ।স্ত্রীর গায়ে আগুন লাগাঃ- বাবা সাবের সব সময় আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকতেন।এজন্য চার পাশে কি ঘটছে তা তার কোন খেয়াল থাকতো না।একবার বাবা সাবের এর মায়ের অনু-রোধে তার মামা শেখ ফরিদ তাহার নিজের কন্যার সাথে বাবা সাবেরের বিয়ে দেন।কিন্তু বাসর রাতে যখন তাহার স্ত্রী তাহার নিকট গমন করলে বাবা সাবের জিজ্ঞেস করলেন"তুমি কে?" তাহার স্ত্রী বললেন "আমি আপনার বিবি"এই কথা শুনার পর বাবা সাবের জালালি হালে শুধু এইটুকু উচ্চারণ করলেন যে " যে আল্লাহ লা শারিক তার আবার স্ত্রী কিভাবে থাকতে পারে"আর এতে সাথে সাথেই তাহার বিবির গায়ে আগুন লেগে যায়।ফলে তাহার বিবি আগুনে জলসে মারা যান। এতে তাহার মামা খুব কষ্ট পেলেও তাহার করার কিছুই ছিল না।
৭। নিজের জানাজা নিজে পড়লেনঃ- বাবা সাবের দুনিয়া থেকে পর্দা গ্রহন করার কিছু দিন পূর্বে তাহার ভক্তদের বলে যান যে "আমার মৃত্যুর দুই ঘণ্টা পরে একজন লোক সাদা ঘোড়ায় চরে আসবে আমার জানাজা ও দাফন করতে,তাই তার আসার পূর্বে ভুলেও যেন কেউ লাশ স্পর্শ না করে "। যথা-রীতি বাবার কথা মত এক লোক মুখ চাদরে দেখে ঘোড়ায় চরে এসে লাশ দাফন করে চলে যেতে লাগলে এক ভক্তের আকুল আবেদনে সেই লোকটি মুখের কাপড় খুললে সবাই দেখতে পান যে এটা আর কেউ নয় সয়ং বাবা সাবের,এর পর বাবা ঘোড়ায় চরে হঠাত অদৃশ্য হয়ে যান।
৮। পূর্বে মাজার শরিফে কেউ প্রবেশ করতে পারত নাঃ- বাবা সাবের ইন্তেকালের পর তাহার মাজার শরিফের চারপাশে তিন গুন জালালি ভাব প্রকাশিত হতে শুরু করে।কেউ যদি মাজারে যাওয়ার চেষ্টা ১ মাইল দূর থেকেও করত তাহলে সাথে আকাশ থেকে বজ্র পাত হয়ে সে খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যেত।কথিত আছে তাহার ইন্তেকালের ৪০ দিন পর্যন্ত তাহার মাজার সিংহ পাহাড়া দিতে দেখা যেত। পরবর্তীতে তার এক বংশধরের অনুরোধে তিনি তাহার জালালি ভাব ক্ষান্ত করে তাহার মাজার শরীফ সবার জন্য জিয়ারতের উপযুক্ত করে দেন।
৯।জীন- পরীর গায়ে আগুন লাগাঃ- তাহার মাজার শরীফের ওপর দিয়ে জীন পরীও যদি ভুলে অতিক্রম করে তাহলে তাদের গায়ে সঙ্গে সঙ্গে আগুন লেগে যায়।
বাবা খাজা আলাউদ্দিন আহমেদ সাবের কালিয়ার এর কারামত বলে শেষ করা যাবে না,এক কথায় বলতে গেলে বড় পীর আব্দুল কাদির জিলানীর পর তার স্থান, এতে কোন সন্দেহ নেই।


আল্লাহ আমদের সবার নসীবে এই আউলিয়ার রূহানী ফয়েজ নসিব করুন আমিন... !!