Sunday, January 19, 2020

মিথ্যুক কিভাবে মুফাসসির হয়!

লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়েই মন্তব্য করবেন আশাকরি। আমার কথায় কোন ধরনের ভুল থাকলে দেখিয়ে দেবেন, তা অকপটে স্বীকার করতে সর্বদাই প্রস্তুত আছি । আমি হীনমন্যতার ঊর্ধ্বে থাকতে ভালোবাসি। যুগে যুগে জ্ঞানের আলোকবর্তিকা নিয়ে যেসব মনীষী পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন, যারা অন্যায় ও অসত্যের কাছে কোনোদিন মাথানত করেননি , ইসলাম ও মানুষের কল্যাণে সারা জীবন যারা পরিশ্রম করে গেছেন তাঁদের অন্যতম হজরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি রহমাতুল্লাহি আলাইহি। ভারতীয় উপমহাদেশে যাকে খাজা সাহেব হিসেবে চেনেন। যার অবদান কোন মুসলমানের পক্ষে অস্বীকার করা মানে নিজ জাতের সাথে বেঈমানী করার মতো। ওলি আল্লাহ বলতে যেসব নাম প্রথমেই উচ্চারিত হয় সেখানে তিনিই অন্যতম। খাজা কিংবা কোন প্রসিদ্ধ দরবারে কিছু মূর্খদের মুর্খামির দায়বার মাটির নিচে শুয়ে থাকা লোকটির নয়। অথচ সেইসব অজ্ঞদের সমালোচনা করতে গিয়ে খাজাবাবা কে গাঁজাবাবা বলা কোন বিবেকবান মানুষের হওয়া উচিৎ নয়। আর সেই বেয়াদবি মূলক বক্তব্যের ফলাফল আজ সাধারণ মানুষ খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। এজন্য আল্লাহ তার কালামে পাকে বলেন,
أَلا إِنَّ أَوْلِيَاء اللّهِ لاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ
নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর (ওলি) বন্ধু, তাদের না কোন ভয় ভীতি আছে, না তারা চিন্তান্বিত হবে।
لَهُمُ الْبُشْرَى فِي الْحَياةِ الدُّنْيَا وَفِي الآخِرَةِ لاَ تَبْدِيلَ لِكَلِمَاتِ اللّهِ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
তাদের জন্য সুসংবাদ পার্থিব জীবনে ও পরকালীন জীবনে। আল্লাহর কথার কখনো হের-ফের হয় না। এটাই হল মহা সফলতা। (সুরা ইউনুছ ৬২ এবং ৬৪)
👉 খাজা গরিব নওয়াজই উপমহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ ইসলাম প্রচারক। নিখিল ভারতে ইসলামের ভিত্তিকে সুদৃঢ়ভাবে তিনিই স্থাপন করেছেন আর তারই দোয়ায় ভারতবর্ষে মুসলিম রাজত্বের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল।
◾ ব্যক্তিগত কোন আক্রোশে আমি পোস্ট করিনা। কিন্তু সাধারণ মানুষের কথা ভেবে চুপ থাকতেও পারিনা। তাই কারো নাম উল্লেখ না করেই কথাগুলো বলছি। আফসোস, আজ মুসলিম সমাজ কিছু বক্তা নামের মিথ্যুকের কাছে নিয়মিত ধোঁকা খেয়ে যাচ্ছেন। সাধারণ মানুষের বিশ্বাস নিয়ে তারা আজ নিজেদের প্রকাশের প্রতিযোগীতায় নেমেছে। প্রতিদিন নিত্যনতুন ইসূ নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত করছেন। ওয়াজের নামে আওয়াজ দিয়ে ঠিক বেঠিকের হাজিরা নিয়ে নিচ্ছেন শ্রোতাদের কাছ থেকে। আমলি শিক্ষার চেয়ে হিন্দি গানের সুরের মূর্ছনায় মঞ্চ মাতাচ্ছে। একবার ভেবে দেখুন তো সেসব বক্তা গান না শুনে কিভাবে গানের সেই সুর নকল করেন! নিয়মিত গান শুনা নিশ্চিত গায়ক থেকে ওয়াজের বক্তার কাতারে আজ তাদের অবস্থান।
একটি কথা সবার জানা থাকা উচিৎ যে, কারো সাথে মতের অমিল হলেই যে তার বিরোধিতা করতে হবে এমন নয়। কেবল "লা-নাতুল্লাহি আলাল কাজেবীন" মিথ্যাবাদির প্রতি আল্লাহর লানত যে বিদ্যমান তাই আজ বলতে বাধ্য হয়েছি।
এতোদিন believe it or not (বিশ্বাস করুন আর নাই করুন) কথাটি দিয়ে নিশ্চয় পত্রিকার পাতায় কিছু অবিশ্বাস্য কথা উল্লেখ করা দেখেছেন। কিন্তু বর্তমানে সেটি পত্রিকার পাতায় নয় বরং মাহফিলেও নিয়মিত লক্ষণীয়! এই যেমন,
১) আমেরিকার নাসার কর্তৃপক্ষ তাকে তিনবার আমন্ত্রণ জানিয়েছে এবং সেখানকার গবেষকরা বলেছে সূর্য পশ্চিম দিকেও উদিত হতে পারে। আরে নাসা কেন বলতে যাবে এটি তো কিয়ামতের আলামত এর অংশ।
২) সাঈদী সাহেবের চাঁদে দেখার গুজবটির সত্যতা প্রমানসাপেক্ষেও সে এক নতুন নাটকের অবতারণা করেছিলো ততকালীন সময়ে। আর তা হচ্ছে ঠিক এমন যে, আরবের এক ঈমাম নাকি তাকে বলতে এসেছিল উনি সাঈদী সাহেবকে চাঁদে দেখেছেন।
৩) তিন তিনবার বিশ্ববিখ্যাত অক্সফোর্ডের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছিল নাকি সে। আর সেই মিথ্যাকে সত্য প্রচারের চতুরতায় সে মাহফিলে বলে আমার এ শ্রেষ্ঠ শিক্ষকতার কথা আমার পরিবারের সদস্যরাও জানেনা। আশ্চর্য! এ কেমন পরিবার যারা এতোবড় সফলতার খবর জানেনা!
৪) ব্যাডমিন্টনে সে যে দেশ সেরা খেলোয়াড় তা আপাতত বিশ্বাস করলেও ৯০ এর দশকের প্রথম দিকে সে যে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগেও ফুটবল খেলে প্রচুর টাকা ইনকাম করেছিলেন তা কেমনে?
৫) আইফোন কার তৈরী সেটি ছোট্ট একটি বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করলেও হয়তো উত্তর মিলবে। অথচ সে বলে মাইক্রোসফটের বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বিল গেটস নাকি আইফোন তৈরী করেছে। শুধু তাই নয় তার সাথে দেখাও হয়েছে নাকি তার। এবং বিল গেটস নাকি দেখতে টিকটিকির মতো! মানুষের রূপ কি সত্যি টিকটিকির মতো! এও কি সম্ভব?
৬) ইমাম মেহেদি নাকি ইয়ামেনের কারাগারে বন্ধি ছিলো এতোদিন! পরে সেখান থেকে পালিয়েছে। অর্থাৎ ইমাম মেহেদিরও তার ভাষ্যমতে জন্ম হয়েছে। এবং এ পৃথিবীতে অবস্থান করছেন।
৭) আফগানিস্তানে মার্কিন সৈন্যরা বোমার আঘাতে কোন মানুষের ক্ষতি করতে পারেনি কারণ সমস্ত বোম নাকি সাদা পাগড়ীওয়ালা ফেরেস্তারা নিয়ে নদীতে ফেলে দিয়েছে। একটি বোমাও নাকি সেখানে আঘাত হানেনি। এমন দৃশ্য নাকি মার্কিন সৈন্যরা বিমান থেকে বোমা ফেলার সময় দেখতে পেতো! অথচ খবরের কাগজ আফগানি মুসলমানদের রক্তে রক্তাক্ত দেখছিলাম। মার্কিনীরা তো আফগানিস্তানকে নাস্তানাবুদ করে দিয়েছে।
৮) হেফাজতের আমীর মুফতি শফি নাকি স্বপ্নে দেখেছিলেন ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামাত নেতা কাদের মোল্লা জান্নাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মোসাবাহা করছেন! এই আজগুবি বানোয়াট কাহিনীটিরও মঞ্চায়ন করেছেন ঠিক একই ব্যক্তি।
৯) সিরিয়া থেকে নাকি 'ডোনাল্ড ট্রাম্প'কে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বানিয়েছে আল্লাহ! তাও নাকি কুরআনের আয়াত দিয়ে প্রমাণিত!
১০) নাসার গবেষকরা তাকে জানিয়েছে আগামী ৭৫ বছরের মধ্যে এ পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। কেন কুরআনে কি কিয়ামত এর কোন আলামত নেই?
👉 এভাবে আরো কতো কি⁉ শুধু ১০টি উপস্থাপন করেছি। তবুও যে আমরা আজ জন্মান্ধে পরিণত হয়েছি। বিবেক বুদ্ধি যেন তাদের মিথ্যের কাছে বন্ধক রেখেছি। ভালোমন্ধ বুঝার ক্ষমতা হারিয়ে তাদেরকে মুফাসসির বলে আখ্যায়িত করছি । জানেন কেন? শুধু রাজনৈতিক পরিচয়ের খাতিরে।