Saturday, March 17, 2018

বৃদ্ধাঙ্গুল চুম্বন এর প্রমান

আযান ও ইক্বামতে রাসূলে পাকের নাম মুবারক ‘মুহাম্মদ’ সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলকে চুম্বন করে তা চোখে মোছা সম্পর্কে শরীয়তের দলীল
হাজার বছর ধরে মুসলিম মিল্লাতের মাঝে এ প্রথা চলে আসছে যে, হুযুর আকদাস, রহমতে আলম জানে দু’আলম সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র নাম মুবারক শুনে পরমভক্তি ভরে বৃদ্ধাঙ্গুলি চুমু দিয়ে চোখে মালিশ করা। বিশেষ করে আযানে যখন
اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللّٰهِ
এই পবিত্র বাক্য শুনে তখন ছোট বড় সকলে পরম ভালবাসা ও শ্রদ্ধা নিয়ে আপন বৃদ্ধাঙ্গুল চুম্বন করে তা চোখে মোছে নেয়। রাসূল প্রেমের এই অমৃত সুধা পানকারী প্রেমিকগণের পরিপূর্ণ ভক্তি সম্মানের এই মুস্তাহাব আমলকে বর্তমান যুগের অনেক মুনাফিক নিষেধ করে থাকে। এমনকি এই পবিত্র আমলকে বিদআত বলে অপপ্রচার চালিয়ে সরলমনা মুসলমানদের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা চালায়।
বৃদ্ধাঙ্গুল চুম্বনের এই মাসয়ালা নিয়ে বর্তমানে জনসাধারণের মাঝে অনেক কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া ফ্যাসাদও হয়ে যায়। পবিত্র নাম মুবারক উচ্চারণ করলে এবং করতে শুনলে বৃদ্ধাঙ্গুল চুম্বন দিয়ে আপন দু’চোখে মালিশ করে বরকত হাসিল করার এই আমলকে বাধাদানকারী কাঠমোল্লা, মূর্খ মৌলভীরা শুধু বিদআত, বিদআত বলে চিৎকার করে কিন্তু তাদের এ দাবীর পক্ষে কোন দলীল প্রমাণ পেশ করতে পারেনা বরং উল্টো সাধারণ মুসলমানদেরকে যারা এ আমল করেন তাদেরকে বলে, এটা জায়েয এ মর্মে এমন কোন দলীল দাও তো দেখি। সরলমনা সাধারণ মুসলমানরা দলীল পেশ করতে না পেরে এটাই জবাব দেয় যে, এই বরকতময় আমল তো আমরা আমাদের বাপ- দাদা ও বুযূর্গ সূফী মুত্তাকীদেরকে করতে দেখে আসছি। এই আমল তো শুধু দেখা- দেখিভাবে প্রচলিত এরকম একটি আমল নয়, বরং যুগ যুগ ধরে ইসলামী শরীয়ত ও মুসলিম মিল্লাতের কাছে গ্রহণযোগ্য অনন্য বরকতময় একটি আমল। এর পরেও ওই মুনাফিক দলগুলো তাদের যতটুকু সাধ্য ততটুকু শক্তি ব্যয় করে সরলমনা মুসলমানকে এই মহত্বপূর্ণ আমল থেকে বিরত রাখার চেষ্টা চালায়। অথচ, এই বরকতমন্ডিত আমলের বৈধতা সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসে যথেষ্ট দলীল প্রমাণ রয়েছে। ঐ দলীলগুলো থেকে কয়েকটি দলীল এখানে পেশ করা হচ্ছে, যাতে সরলপ্রাণ মুসলমানরা ঐ সকল মুখোশধারী মুনাফিক মুসলমানের খপ্পরে পড়ে বিভ্রান্ত হতে না হয়।
দলীল নং-১:- ইমাম দায়লামী মাসনাদুল ফিরদাউস গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন সত্যবাদীদের সরদার, মুত্তাকীদের ইমাম, খলীফাতুর রাসুল, আমীরুল মুমিনীন খলীফাতুল মুসলিমীন সায়্যিদুনা হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, মুয়াযযিন আযানে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাছুলুল্লাহ اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللّٰهِ বলতে যখন শুনতেন তখন
اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ رَضِيْتُ بِاللّٰهِ رَبًّا وَبِالْاِسْلَامِ دِيْنًا وَبِمُحَمَّدِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَبِيِّنَا
উচ্চারণঃ- আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবুদুহু ওয়া রাসুলুহু, রাদ্বিতু বিল্লাহি
রাব্বা ওয়াবিল ইসলামি দ্বীনা ওয়া বি মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাবীয়্যানা (এই দোয়া) পড়তেন। অতঃপর ঐ দুই কালেমা আঙ্গুলের ভেতর দিকের সন্ধিস্থল চুমু খেয়ে চোখে লাগাতেন। সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর এই আমল দেখে রাসুল পাক সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
مَنْ فَعَلَ مِثْلَ مَا فَعَلَ خَلِيْلِىْ فَقَدْ حَلَّتْ عَلَيْهِ شَفَاعَتِىْ-
যে এমন করবে যেমনি আমার বন্ধু করেছে, তার ব্যাপারে আমার শাফায়াত বৈধ হয়ে গেল।
দলীল নং-২: ইমাম আল্লামা আলী বিন সুলতান হারভী, ক্বারী, মক্কী, প্রকাশ মোল্লা আলী কারী আলায়হির রাহমাহ তার সর্বজন গ্রহণযোগ্য কিতাব মউদ্বুআতে কবীর গ্রন্থে পবিত্র নাম মুবারক শুনে আঙ্গুল চুম্বনের ব্যাপারে বলেন
وَاِذَا ثَبَتَ رَفْعُهُ اِلٰى الصِّدِّيْقِ رَضِىَ اللّٰهُ تَعَلٰىْ عَنْهُ فَيَكْفِىَ لِلْعَمَلِ بِهِ لِقَوْلِهِ عَلَيْهِ الصَّلٰوةِ وَالسَّلَامِ عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِىْ وَسُنَّةُ الْخُلَفَاءَ الرَّاشِدِيْنَ-
অর্থাৎ- হযরত সিদ্দীকে আকবর রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে এ কাজের প্রমাণ পাওয়া আমলের জন্য যথেষ্ট। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের উপর আবশ্যক, আমি ও আমার খোলাফায়ে রাশেদীনদের সুন্নাতের উপর আমল করা।
তাই হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে কোন আমল প্রমাণ পাওয়া বস্তুত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া
সাল্লাম থেকে কোন আমলের প্রমাণ বহন করে।
দলীল নং- ৩: ইমাম শামছুদ্দীন সাখাভী তার রচিত মাক্বাসিদ এ হাসানাহ গ্রন্থে এই হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং আঙ্গুল চুম্বনের এই আমলকে মুস্তাহাব বলে মন্তব্য করেছেন।
দলীল নং- ৪: বরেণ্য ইমাম হযরত আবুল আব্বাস আহমদ বিন আবূ বকর রাওআদ ইয়েমেনি সূফি তার রচিত ‘মাওজিবাতুর রাহমাহ ওয়া আযাঈমুল মাগফিরাহ’ নামক গ্রন্থে হযরত সায়্যিদুনা খিযির আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণনা করেন , হযরত খিযির আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালাম বলেন-
مَنْ قَالَ حِيْنَ سَمِعَ الْمُؤَذِّنُ يَقُوْلُ اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللّٰهِ مَرحَبًا بِحَبِيْبِىْ وَقُرَّةُ عَيْنِى مُحَمَّدَ بْنِ عَبْدِ اللّٰهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ يُقْبَلُ اَبْهَامَيْهِ وَيَجْعَلُهَا عَلٰى عَيْنَيْهِ لَمْ يَرْمَدْ اَبْدًا-
যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ শুনে
اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللّٰهِ مَرْحَبًا بِحَبِيْبِيْ وَقُرَّةُ عَيْنِىْ مُحَمَّدَ بْنِ عَبْدِ اللّٰهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ
পড়ে দুই বৃদ্ধাঙ্গুল চুম্বন করে তা তার আপন দু’চোখে লাগাবে, তার চোখ কোন দিন অসুস্থ হবে না।
দলীল নং- ৫: ‘মাওজিবাতুর রাহমাহ’ গ্রন্থে হযরত ফকীহ মুহাম্মদ বিন আলবাবা তার ভাই থেকে বর্ণনা করেন, তিনি আপন অবস্থার কথা বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন-
اَنَّهُ هَبَتْ رِيْحُ فَوَقَعْتْ مِنْهُ حَصَّاةٌ فِىْ عَيْنِهِ وَاَعْيَاهُ خُرُوْجِهَا وَالْمُتْهُ اَشَدُّ الْاَلَمِ وَاَنَّهُ لَمَّا سَمِعَ الْمُؤَذِّنُ يَقُوْلُ اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللّٰهِ قَالَ ذَالِكَ فَخَرَجْتُ الحَصَّاةُ مِنْ فَوْرِهِ ، قَالَ الرَّوَادُ رَحِمَهُ اللّٰهُ تَعَالٰى وَهَذَا يَسِيْرُ فِىْ جَنْبِ فَضَائِلِ الرَّسُوْلِ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالٰى عَلَيْهِ وَسَلَّمُ-
অর্থাৎ- একদিন খুব জোরে বাতাস প্রবাহিত হলে বাতাসের বেগে একটি কঙ্কর তার চোখে ঢুকে যায়, তা বের করার জন্য অনেক চেষ্টা করা হল কিন্তু বের হলনা এবং তা অসম্ভব ব্যথা- বেদনা শুরু করে দিল। এমন সময়ে সে মুয়াযযিনের আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ বাক্যটি বলতে শুনল, তখন উল্লিখিত দোয়া পড়ে এই বরকতময় আমল করল। সাথে সাথে তার চোখ থেকে ওই কঙ্কর বের হয়ে গেল। হযরত রাওআদ বলেন, হুযুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মহত্ত্বের সামনে সেটা তেমন কিছু নয়।
দলীল নং-৬: পবিত্র মদীনায়ে তায়্যিবাহ’র খতীব, হযরত ইমাম শামসুদ্দীন মুহাম্মদ বিন সালেহ মাদানী তার রচিত তারীখ গ্রন্থে বর্ণনা করেন,
رَوِيَ عَنِ الْفَقِيْهِ مُحَمَّدٍ بْنِ سَعِيْدٍ الْخَوَلَانِيْ قَالَ اَخْبَرَنِيْ فَقِيْهُ الْعَالِمِ اَبُوْ الْحَسَنِ عَلِي بْنِ حَدِيْدِ الْحُسَيْنِيْ اَخْبَرَنِيْ الْفَقِيْهُ الزَّاهِدِ الْبِلَالِىْ عَنِ الْحَسَنِ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَنَّهُ قَالَ مَنْ قَالَ حِيْنَ يَسْمَعُ الْمُؤَذِّنُ يَقُوْلُ اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللّٰهِ مَرْحَبًا بِحَبِيْبِىْ وَقُرَّةُ عَيْنِيْ مُحَمَّدُبْنِ عَبْدِ اللّٰهِ وَيُقْبَلُ اِبْهَامَيْهِ وَيَجْعَلُهَا عَلٰى عَيْنَيْهِ لَمْ يَعَمْ وَلَمْ يَرْمَد-
অর্থাৎ- ফকীহ মুহাম্মদ বিন সাঈদ খাওলানী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে ফকীহ আবুল হাসান আলী বিন মুহাম্মদ বিন হাদীদ হোসাইনী খবর দিয়েছেন, ফকীহ যাহেদ বিলালী ইমাম হাসান মুজতাবা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন যে ব্যক্তি, মুয়াযযিনের اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللّٰهِ শুনে-
مَرْحَبًا بِحَبِيْبِيْ وَقُرَّةُ عَيْنِيْ مُحَمَّدُ بْنِ عَبْدِ اللّٰه
এই দোয়া পড়ে আপন বৃদ্ধাঙ্গুল চুমু দিয়ে আপন চোখে লাগাবে, ঐ ব্যক্তির চোখ না কখনো অন্ধ হবে, না কখনো ব্যাথা অনুভব করবে।
দলীল নং-৭: খতীবে মদীনায়ে তায়্যিবাহ হযরত শামসুদ্দীন বনি সালেহ মাদানী তার ‘তারীখ’ গ্রন্থে হযরত মাজদ মিসরী, [যিনি সালফে-সালেহীনদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন] থেকে বর্ণনা করেন, মাজদ মিসরী বলেন
اِذَا سَمِعَ ذِكْرَهُ صَلَّي اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِىْ الْاَذَانِ وَجَمَعَ اَصَبِعَيْهِ الْمُسَبَّحَةِ وَالْاِبْهَامُ وَقَبَّلَهُمَا وَمَسْحَ بِهِمَا عَيْنَيْهِ لَمْ يَرْمَدْ اَبَدًا-
অর্থাৎ- যে ব্যক্তি আযানের মধ্যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র নাম শুনে শাহাদাত আঙ্গুল ও বৃদ্ধাঙ্গুল মিলাবে এবং তাতে চুমু খেয়ে চোখে মালিশ করবে তার চোখ কোন দিন অসুস্থ হবে না।
দলীল নং-৮: সর্বজন শ্রদ্ধেয় ইমাম, ইমাম আবুল আব্বাস আহমদ বিন আবু বকর রাওয়াদ ইয়েমেনি সূফী তার ‘মাওজিবাতুর রাহমাহ ওয়া আযঈমুল মাগফিরাহ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন-
قَالَ اِبْنُ صَالِحٍ وَسَمِعْتُ ذَالِكَ اَيْضًا مِنَ الْفَقِيْهِ مُحَمَّدَ بْنَ الزَّرَنِدِيِّ عَنْ بَعْضِ شُيُوْخِ الْعِرَاقِ وَالْعَجَمِ وَاَنَّهُ يَقُوْلُ عِنْدَ يَمْسَحُ عَيْنَيْهِ صَلَّي اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا سَيَّدِيْ يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ يَا حَبِيْبَ قَلْبِيْ وَيَا نُوْرَ بَصْرِيْ وَيَا قُرَّةَ عَيْنِيْ وَقَالَا لِيْ كُلُّ مُنْذُ فَعَلْتُهُ لَمْ تَرْمَدْ عَيْنِيْ-
অর্থাৎ- ইবনে সালেহ বর্ণনা করেন, আমি এই আমল ফকীহ মুহাম্মদ বিন যরন্দী থেকেও শুনেছি এবং ইরাক ও অনারব বিশ্বে অনেক মাশায়েখও বর্ণনা করেছেন, তাদের বর্ণনায় এটাও আছে যে, চোখ মোছার সময় এই দুরূদ পড়বে
صَلَّي اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا سَيَّدِيْ يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ يَا حَبِيْبَ قَلْبِيْ وَيَا نُوْرَ بَصْرِيْ وَيَا قُرَّةَ عَيْنِيْ-
এবং ঐ দুই মহান ব্যক্তি, শায়খ মুহাম্মদ মিসরী ও শায়খ ফকীহ মুহাম্মদ আমাকে বলেছেন, আমি এই আমল যখন থেকে করছি তখন থেকে আজ পর্যন্ত কখনো আমার চোখ অসুস্থ হয়নি।
অতঃপর ইবনে সালেহ বলেন-
وَاللّٰهِ الْحَمْدُ وَالشُّكْرُ مُنْذُ سَمِعْتُهُ مِنْهُمَا اِسْتَعْمَلْتُهُ فَلَمْ تَرْمَدْ عَيْنِيْ وَارْجُوْ اَنْ مَا فِيْهِمَا تَدُوْمُ وَاَنِّيْ اَسْلَمُ مِنْ الْعَمِّيْ اِنْشَاءَ اللّٰهُ تَعَالٰيْ-
মহান রবের শুকরিয়া ও প্রশংসা, আমি যখন এই মহান দু’জন বুযুর্গ মাশায়েখ থেকে এই আমলের কথা শুনেছি, তখন থেকে এই বরকতময় আমল আমি করতে শুরু করলাম এবং তখন থেকে এখনও পর্যন্ত আমার চোখে কোন ব্যাথা অনুভব হয়নি। আমি আশা করছি আমার চোখ সর্বদা ভাল ও সুস্থ থাকবে এবং কখনো অন্ধ হবে না, ইনশাআল্লাহ।
দলীল নং-৯: ইলমে ফিকহর প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য কিতাব ‘আল মুখতাসারুল কুদুরীর’ ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘জামেউল মুজমিরাত’ গ্রন্থের লেখক উস্তাজুল উলামা আল্লামা ইউসুফ বিন ওমরের ছাত্র, ফকীহদের ইমাম আরেফ বিল্লাহ সায়্যিদি ফজলুল্লাহ বিন মুহাম্মদ বিন আইয়্যুব সোহরাওয়ার্দি তার ফাতওয়া এ সুফিয়া এবং উলামাদের আশ্রয়স্থল ইমাম আব্দুল আলী বরজন্দী তার প্রসিদ্ধ কিতাব শরহে নেক্বায়া গ্রন্থে বর্ণনা করেন-
وَاَعْلَمْ اَنَّهُ يَسْتَحِبُّ اَنْ يُّقَالَ عِنْدَ سِمَاعِ الْاُوْلِي مِنَ الشَّهَادَةِ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالٰى عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ وَ عِنْدَ الثَّانِيَةِ مِنْهُمَا قُرَّةُ عَيْنِيْ بِكَ يَا رُسُوْلَ اللَّهِ ثُمَّ قَالَ يُقَالُ اَللَّهُمَّ مَتِّعْنِيْ بِالسَّمْعِ وَالْبَصْرِ بَعْدَ وَضَعَ ظُفْرِيْ الْاِبْهَا مَيْنِ عَلٰيْ الْعَيْنَيْنِ فَاِنَّهُ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالٰي عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ لَهُ قَائِدًا اِلٰيْ الْجَنَّةِ وَكَذَا فِى كَنْزِ الْعِبَاد
অর্থাৎ- জেনে রাখুন, অবশ্যই মুস্তাহাব যে, যখন আযানে প্রথমে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ বলতে শুনবে তখন সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলবে এবং দ্বিতীয়বার যখন বলতে শুনবে তখন বলবে, কুররাতু আইনি বিকা ইয়া রাসূলাল্লাহ, অতঃপর বৃদ্ধাঙ্গুলির নখের উপর চুমু খেয়ে তা চোখের উপর রেখে বলবে اَللَّهُمَّ مَتِّعْنِيْ بِالْسَّمْعِ وَالْبَصْرِ এর আমলকারীকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাতে নিয়ে যাবেন। এই বর্ণনা ‘কানযুল ইবাদ’ নামক গ্রন্থেও উল্লেখ আছে।
দলীল নং-১০: শায়খুল মাশায়েখ, খাতেমুল মহাক্কেকীন, মক্কা শরীফে হানাফী ইমামদের সম্মানিত ইমাম আল্লামা শাহ জামাল বিন আব্দুল্লাহ ওমর মক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার ফাতওয়ায় বর্ণনা করেন-
سُئِلَتْ عَنْ تَقْبِيْلِ الْاِبْهَامَيْنِ وَوَضَعْهُمَا عَلٰى الْعَيْنَيْنِ عِنْدَ ذِكْرِ اِسْمِهِ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالٰى عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِىْ الْاَذَانِ هَلْ هُوَ جَائِزٌ اَمْ لَا؟ اَجِبْتُ بِمَا نَصَّهُ نَعَمْ تَقْبِيْلُ الْاِبْهَامَيْنِ وَوَضَعْهُمَا عَلٰى الْعَيْنَيْنِ عِنْدَ ذِكْرِ اِسْمِهِ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالٰى عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ جَائِزٌ بَلْ هُوَ مُسْتَحَبٌّ صَرَّحَ بِهِ مَشَائِخُنَا فِىْ كُتُبِ مُتَعَدَّدَةٌ
অর্থাৎ- আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছে, আযানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক শুনে আঙ্গুল চুম্বন করে তা চোখে লাগানো জায়েয কি- না? আমি এসব বাক্য দ্বারা উত্তর দিলাম, হ্যাঁ আযানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক শুনে আঙ্গুল চুম্বন করে চোখে লাগানো জায়েয, বরং মুস্তাহাব। আমাদের মাযহাবের বিজ্ঞ মাশায়েখগণ তাদের নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে এই আমলকে মুস্তাহাব বলে উল্লেখ করেছেন।