Tuesday, April 21, 2015

হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ)


সিস্তান রাজ্যের সন্জ্ঞর গ্রামে ৫৩৩ হিজরী ও ১১৩৮ ইংরেজি সালে জন্ম গ্রহন করেন। উনার পিতার নাম গিয়াসুদ্দিন ও মাতার নাম সৈয়দা উম্মুল ওয়ারা।পরে স্বপরিবারে খোরাসান শহরে( বর্তমান আফগানিস্তান) হিজরত করেন।মাত্র ১৫ বৎসর বয়সে বাবা – মা উভয়কেই হারান।
একদিন নিজ জমিতে কাজ করে পরিশ্রান্ত অবস্তায় বিশ্রাম নিছিছলেন।এমন সময় সেখানে এসে উপস্হিত হলেন এক অচেনা আগন্তুক। কিশোর খাজা মইনুদ্দিন তাকে বাগানের কিছু আঙ্গুর এনে আপ্যায়ন করলেন। আগন্তুক ছিলেন আল্লাহর এক অলিআল্লাহ,হজরত ইব্রাহিম কান্দুযী(রঃ)।খুশী হলেন কিশোরের আপ্যায়নে।হাত তুলে দোয়া করলেন অনেকক্ষন।তারপর ঝুলি থেকে বের করলেন এক টুকরো শুকনো রুতি।রুটির একাংশ কিছুক্ষন চিবুলেন তারপর অন্য অংশটুকু মইনুদ্দিনকে খেতে দিলেন।আদেশ পালন করলেন মইনুদ্দি একটু পরেই উছ্ছিষ্ট রুটির প্রতিক্রিয়া প্রকাশিত হতে শুরু করলো।বিস্মিত হলেন ।অন্তরের আছছাদন যেন উবে যাছেছ একে একে।অদ্ভুত এক জ্যোতির্ময় অনুভব এসে ধীরে ধীরে আলোকিত করছে হৃদয়ের সর্বত্র।দরবেশ চলে গেলেন।অন্তরে জ্বালিয়ে দিয়ে গেলেন আল্লাহ প্রেমের
অনন্ত অনল।এই হলো অলিআল্লাহদের তাওয়াজ্জোহ এর ফল। মইনুদ্দিন বাগান ও ভিটে বাড়ি সহ সবকিছু বিক্রি করে দিয়ে বেরিয়ে পরলেন তিনি
আল্লাহর পথে।
প্রথমেই জাহেরী এলেম শিক্ষার জন্য হাজির হলেন বোখারা,সমরখন্দে।দীর্ঘ দিন সেখানে অবস্হান করে বুৎপত্তি অর্জন করলেন জাহেরী এলমের সমস্ত শাখা প্রশাখায়।হুজুর গরীবে নেওয়াজ পিতার সান্নিধ্যে প্রাথমিক দ্বীনি শিক্ষা অর্জন করেন। ৯ বছর বয়সে তরজমাসহ পবিত্র কুরআন শরীফ মুখস্থ করেন। অতঃপর ১৩ বছর পর্যন্ত পিতার সার্বিক তত্ত্বাবধানে কুরআন, হাদিস, ফিকহ্, উসুল, তাফসীর, আরবী সাহিত্য ব্যাকরণ, মানতিক, হিকমত দর্শন ইত্যাদি বিষয়ে গভীর বুৎপত্তি লাভ করেন। এছাড়াও তিনি প্রখ্যাত হাদিস বেত্তা ইমামুল হারামাইন হযরত আবুল মা’আলী (রহঃ) এর নিকট শরীয়তের বিভিন্ন সুক্ষাতিসুক্ষè বিষয়ে পান্ডিত্য লাভ করেন। সমরকন্দের প্রখ্যাত আলেম হযরত শরফুদ্দীন ও বোখারার প্রখ্যাত মুহাদ্দিস হযরত হুসামুদ্দীন (রহঃ) এর নিকট দীর্ঘ পাঁচ বছর অধ্যয়ন করে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার কৃতিত্বপূর্ণ পূর্ণতা অর্জন করেন। হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ) বোখারা থেকে নিশাপুরে আসেন। সেখানে যুগশ্রেষ্ঠ ওলী হযরত ওসমান হারুনী (রহঃ) এর নিকট মুরীদ হন এবং মুর্শীদের খেদমতে ২০ বছর অতিবাহিত করেন। ওলীয়ে কামেল খাজা ওসমান হারুনী (রহঃ) তার শিষ্যের মধ্যে বেলায়েতের ঝলক দেখতে পেয়ে খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ) কে খিলাফত প্রদান করেন। খাজায়ে খাজেগান আপন পীর মুর্শিদের অনুমতিক্রমে জ্ঞানী, গুণী, পন্ডিত, দার্শনিকসহ অসংখ্য ওলীর সাথে সাক্ষাত করেন। খাজা বাবা বাগদাদ শরীফে গাউছুল আজম বড়পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী (রহঃ) এর সাহচর্যে ৫৭ দিন অবস্থান করেন। এ সময় গাউসে পাক খাজা বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলছিলেন, ইরাকের দায়িত্ব শায়েক শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দীকে আর হিন্দুস্থানের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হলো।
তারপর বেরিয়ে পরলেন বাতেনী ইলম অর্জনের উদ্দেশ্যে।
হাদিস শরীফে উল্লেখ আছে, ”জ্ঞান দুই প্রকার।জবানী ইলম ও বাতেনী ইলম।” (মেশকাত শরীফ)।ইমাম মালিক (রঃ) বলেছেন-”যে ব্যক্তি
বাতেনী জ্ঞান অর্জন করলো কিন্তু ইলমে শরীয়ত শরীয়ত গ্রহন করলো না সে নিশ্চিত কাফের ,আর যে ব্যক্তি শুধু ইলমে শরীয়ত গ্রহন করল কিন্তু
বাতেনী ইলম গ্রহন করলো না সে নিশ্চয় ফাছেক”।আর জ্ঞান অর্জন করা প্রতিটি মোসলমানের উপর যেহেতু ফরয তাই বাতেনী এলেম অর্জন করাও
ফরয।এই বাতেনী জ্ঞান অর্জনের জন্য আবার খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) বের হয়ে গেলেন বাতেনী জ্ঞান সম্পন্ন শিক্ষক অন্যেশনের উদ্দেশ্য।
৫৫০ হিজরি সাল।বাগদাদে এসে সাক্ষাৎ পেলেন হজরত বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রঃ) এর।কয়েক মাস উনার সাথে অবস্হানের
পর আবার নুতন শিক্ষকের সন্ধানে বের হলেন।বিদায়ের সময় বড়পীর(রঃ) বললেন,’হে মইনুদ্দিন ।তুমি যখন হিন্দুস্হানে সফর করবে ,তখন পথে পরবে ভাতীসা রমন্ত নামে এক স্হান।সে স্হানে আছে সিংহতুল্য এক মর্দে মুমিন।তার কথা মনে রেখ তুমি।’
শুরু হল নুতন শয়েখের সন্ধান।পথে বিভিন্ন অলির সাথে সাক্ষাতের পর এসে উপস্হিত হলেন খোরাসান এবং ইরাকের মধ্যবর্তী নিশাপুর অন্চলের হারুন নগরে। এই শহরেই বসবাস করেন আউলিয়া সম্প্রদায়েরমস্তকের মুকুট হজরত ওসমান হারুনী(রঃ)।উনার নিকট বায়াত হবার দরখাস্ত পেশ করলে মন্জুর হল।উনার সাথে বিশ বৎসরের অধিক সময় অতিবাহিত করে কামালিয়াতের সর্বোচ্চ স্তরে পৌছলেন।
এবার দাওয়াতের পালা।অলী আল্লাহগন হলেন নবী রাসুলদের প্রকৃত উত্তরসুরী।সেই দায়িত্বের ভার এসে পড়ল খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) এর উপর।ইতিমধ্যে নুতন এক ছাত্র এসে হাজির হয়েছে খাজার দরবারে।
খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) ছাত্র জনাব কুতুবুদ্দিন বখতিকে সাথে নিয়ে হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন মক্কায়।হজ্ব পর্ব শেষ করে মদীনা শরীফ এসে হজরত খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) রসুলে পাক(সাঃ) এর কাছ থেকে এক অবিস্মরনীয় সুসমাচার।হযরত রসুলে পাক(সাঃ) জ্যোতির্ময় চেহারায় আবির্ভুত হয়ে জানালেন,”প্রিয় মইনুদ্দিন।তুমি আমার ধর্মের মইন(সাহায্যকারী)।আমি তোমাকে হিন্দুস্হানের বেলায়েত প্রদান করলাম।হিন্দুস্হান বুৎপরোস্তির অন্দ্ধকারে নিমজ্জিত।তুমি আজমীরে যও।সেখানে তোমর মধ্যমে পবিত্র ইসলামের ব্যাপক প্রসার ঘটবে।
সুসমাচার শুনে পরিপৃপ্ত হলেন খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ)।
পরক্ষনেই চিন্তিত হলেন তিনি।কোথায় আজমির? বিশাল হিন্দুস্হানের কোন দেশে আছে রসূল নির্দেশিত আজমীর?
চিন্তিত অবস্হায় তন্দ্রাছ্ছন্ন হয়ে পরেছিলেন খাজা খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ)।সেই অবস্হায় তিনি দেখলেন,হজরত মোহাম্মদ(সাঃ) তার শিয়রে উপবিষ্ট।তিনি তাকে আজমীর শহরের দৃশ্য দেখিয়ে দিলেন।সেই সঙ্গে দিয়ে দিলেন প্রয়োজনীয় পথ নির্দেশনা।এরপর দয়াল নবী (সাঃ) তার হাতে দিলেন একটি সুমিষ্ট আনার।তারপর তার জন্য দোয়ায়ে খায়ের করে যাত্রা শুরু করবার নির্দেশ দিয়ে দিলেন।
সফর শুরু হলো আবার।সঙ্গে সাথী কুতুবুদ্দিন।চলতে চলতে এসে পৌছলেন লাহোর।মনে পড়ে গেল হজরত বড়পীর(রঃ) এর সেই মুল্যবান উপদেশ – মর্দেমুমিন সেই সিংহ পুরুষ এর কথা,সেই ভাতীসা রমস্হ জায়গার কথা। হজরত খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) জানতে পারলেন এই লাহোরেই আছে সেই সিংহতুল্য মর্দে মুমিনের মাজার শরীফ।তার মোবারক নাম হজরত দাতাগন্জ্ঞে বখশ(রঃ)।তিনি একাধারে দুই মাস অবস্হান করলেন।তারপর শুরু হল যাত্রা।
এবারের যাত্রার গন্তব্য দিল্লী।
এগিয়ে চলল হজরত খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) এর বেহেশতীকাফেলা।এখন আর কাফেলা দুইজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।বিভিন্ন স্হানে
বিরতির সময় সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন কিছু খাটি আল্লাহ অনুরক্ত ফকির দরবেশ।আস্তে আস্তে এর সংখ্যা এসে দারিয়েছে চল্লিশে।সঙ্গী সাথী সহ
দিল্লী এসে উপস্হিত হলেন হজরত খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ)।দিল্লীর শাসক তখন হিন্দুরাজা খান্ডরাও।আজমীর অধিপতি পৃথ্বিরাজের ভাই ছিলেন তিনি।পৃথ্বিরাজই তাকে তার প্রতনিধি হিসেবে দিল্লীর শাসনভারঅর্পন করেছিলেন।
রাজমহলের অদুরেই নির্মিত হলো ফকির দরবেশদের ডেরা।নির্ভয়ে তরা শুরু করলেন তাদের নিয়মিত ইবাদত বন্দগী।ক্রমে ক্রমে ইসলামের আলো প্রসারিত হতে থাকলো।দিল্লীর আধ্যাতিক দৈন্যতায় এলো ইমানের জ্যোতির্ময় জোয়ার।পিতৃ ধর্ম ত্যাগ করে দলে দলে লোক এসে প্রবেশ
করতে থাকলো আল্লাহর মনোনীত একমাত্র ধর্ম ইসলামের সুবাসিত কাননে।বিরোধিতা যেমন বাড়তে লগলো।তামনি বাড়তে থকলো বিজয়ের বিরতিহীন অভিঘাত।কিন্তু গন্তব্যত এখানে নয় ।এগিয়ে যেতে হবে আরো সন্মুখে।রসুল পাক(সাঃ) এর নির্দেশিত সেই আজমীরের আকর্ষন একসময় উদ্বেলিত করে তুললো খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ)
এর অন্তরকে।দিল্লীর কুতুব হিসেবে নির্বাচিত করলেন হযরত কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকী(রঃ) কে।দিল্লীর দ্বীন প্রচার ও নওমুসলিমের বিড়াট কাফেলার হেফাজতের দায়িত্ব হযরত কাকির উপর।
খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) তার আত্নোৎসর্গকারী ফকির দরবেশদের নিয়ে রওয়ানা হলেন আজমীর অভিমুখে।পিছনে পরে থাকলো দিল্লী,দিল্লীর শোকাকুল জনতা ও দিল্লীর নব নিযুক্ত কুতুব হযরত বখতিয়ার কাকী(রঃ)।
আজমীর শহরের উপকন্ঠে এসে উপস্হিত হলেন খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) ।সফর সঙ্গীগন সবাই পরিশ্রান্ত।বিশ্রামের ব্যবস্হা করতেই হয়।এই সেই হিন্দুস্হানের বেলায়াতের প্রতিশ্রুত কেন্দ্রভুমি আজমীর ।চারিদিকে পাহাড়,পাথর মরুভুমি।নিকটেই বৃক্ষছায়া।এখানেই বিশ্রামের জন্য উপবেশন করলেন দরবেশদের কাফেলা।
স্হানটি ছিল রাজা পৃথ্বিরাজের উষ্ঠ্র বাহিনির বিশ্রামস্হল। রাজার লোকেরা কিছুক্ষন যেতে না যেতেই সবাইকে স্হান ত্যাগ করতে বলল।বিস্মিত হলেন খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) ।উটের দলতো এসে পৌছবে সেই সন্দ্ধাবেলায়।অথচ লোকগুলি তাদেরকে এখনই তাড়িয়ে দিতে চায়।তিনি বললেন, ”ঠিক আছে আমরা চললাম।তোমাদের উটই এখানে বসে বসে বিশ্রাম করুক।”
পরিশ্রান্ত কাফেলা আবার এগিয়ে চললো সামনের দিকে।।অদুরে ‘আনা সাগর’। সাগরতো নয় একটি বিশাল হ্রদ।লোকে বলে আনা সাগর।আনা সাগরের পাড় ঘেষে অজস্র মন্দির। খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) এই হ্রদেরই এক ছোট টিলার উপর বসবাসের স্হান নির্বাচন করলেন।সে রাতেই মুখে মুখে আগন্তুক দরবেশের আগমন সংবাদ ছড়িয়ে পড়লো সর্বত্র।সকালে মহা রাজ পৃথ্বিরাজও শুনতে পেলেন এক অদ্ভুত সংবাদ।উষ্ঠশালার কর্মচারীগন এসে জানালো।গতকাল সন্দ্ধায় যে উটগুলি উষ্ঠ্রশালায় আনাহয়েছিল সবগুলি এখনও শুয়ে আছে।কিছুতেই উঠবার নাম করছে না।সঙ্গে সঙ্গে মুসলমান দরবেশদলের ঘতনাও বর্নীত হলো রাজার কাছে।দরবেশদলের নেতা উষ্ঠ্রশালা পরিত্যাগের সময় বলেছিলেন , ”তোমাদের উটই এখনে বসে বসে বিশ্রাম করুক।”
ইতিপুর্বে বিক্ষিপ্তভাবে মুসলমান ফকিরদের সম্পর্কে এরকম অনেক কথা রাজার কর্নগোচর হয়েছিল।চিন্তিত হয়ে পড়লেন রাজা পৃথ্বিরাজ।মনে পড়ে গেল তার রাজমাতার ভবিষ্যতবানীর কথা।তিনি বলেছিলেন ”এক মুসলমান ফকিরের অভিসম্পাদেই পৃথ্বিরাজের রাজ্য ধ্বংস হয়ে যাবে।”
একি তবে সেই ফকির ? সম্ভবত এই ফকিরের কথাতেই এই অবস্হার সৃষ্টি হয়েছে।কর্মচারীদেরকে ফকিরদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার
জন্য নির্দেশ দিলেন রাজা। রাজ আদেশ পালন করল শ্রমিকেরা ।
হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) বললেন যাও।এ অবস্হা আর থাকবে না।উটশালায় ফিরে এসে বিশ্বয়ের সঙ্গে সবাই লক্ষ্য করল উটগুলো স্বাভাবিকভাবে চলাচল শুরু করেছে।ফকিরের কারামতি দেখে সবাই অবাক হয়ে গেল।ধীরে ধীরে আজমীরের অবস্হান্তর ঘটতে লাগলো।কৌতুহল নিবারনের জন্য লোকজন যাতায়াত শুরু করে দিল হযরত খাজার আস্তানায়।তার পবিত্র চেহারা আর তার সাথীদের প্রানখোলা মধুর চরিত্রের প্রভাবে সম্মোহিত হতে লাগলো আজমিরবাসী। হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) এর সোহবতের(সাক্ষাৎ) বরকতে তাদের অন্তরের অন্দ্ধকার দুর হতে লাগলো।জেগে উঠলো আজমেরীর সত্যান্বেষী জনতা।কিন্তু আতংকিত হলো পুরোহিতরা,শোষক বর্নবাদী হিন্দু সমাজ।ভীত হলো হিংস্র রাজপুরুষগন এবং সামনতবাদী সম্রাট।
ইসলাম বিদ্বেসী ক্রোধান্দ্ধ শহর লোকজন রাজদরবারে গিয়ে হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) ও তার সহচরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলো।
অভিযোগ শুনে ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলেন রাজা পৃথ্বিরাজ।অহংকারের নীচে চাপা পরে গেল মায়ের সদুপদেশবানী।রাজা একদল সৈন্যকে আদেশ দিলেন ফকির দরবেশদলকে এক্ষনি রাজ্য থেকে বিতাড়িত করতে। রাজার আদেশ পেয়ে ঝাপিয়ে পরলো অভিযানে। হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) নির্বিকার।আল্লাহ পাকের সাহায্য কামনা করলেন তিনি।সাথে সাথেই আক্রমনকারীদের কেউ হলেন অন্ধ,কারও শরীর হল নিঃসাড়।কেউ হলো ভুতলশায়ী।
নিরুপায় হয়ে পায়ে পড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলো তারা।দয়ার সাগর গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) ক্ষমা করে দিলেন সবাইকে।
রাজা পৃথ্বিরাজ ভেবে কুল পান না কি করবেন তিনি।সমরাস্ত্র, সুসজ্জিত সৈন্যদল কোন কিছুই যে আর কাজে আসছে না।এক দুরাগত যবন ফকিরের নিকট পরাজয় বরন করতে হবে তাকে ?ঐশ্বরিক ক্ষমতাধর এই ফকিরের আনুগত্য স্বীকার করবেন নাকি তাকে বিতাড়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন। এ কি বিশ্বয়কর সংকট।চুপ করে থাকলেও বিপদ ।বিরুদ্ধাচরন করলেও সমস্যা।এদিকে দলে দলে লোকজন গ্রহন করছে ফকিরের প্রচারিত একত্ববাদী ধর্মমত।
রাজা ভেবে চিন্তে ঠিক করলেন ,হিন্দু ধর্মের আধ্যাধিক সিদ্ধপুরুষদের দ্বারা প্রতিরোধ করতে হবে ফকিরকে।তাই সিদ্ধপুরুষ বলে খ্যাত ”রামদেও” কে অনুরোধ করলেন তার যোগমন্ত্র বলে এই যবন ফকিরকে বিতাড়িত করতে।রামদেও রাজী হলেন।তার ধীর্ঘ সাধনালব্দ্ধ আধ্যাধিক শক্তিতে হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) কে পরাস্ত করার বাসনায় হাজির হলেন হযরতের দরবারে।
হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) তখন ছিলেন ধ্যানমগ্ন অবস্হায়।কিছুক্ষন পর চোখ খুললেন হযরত।দৃষ্টিপাত করলেন রামদেও খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) এর জ্যোতির্ময় চেহারার দিকে।মুগ্ধ হয়ে গেলেন রামদেও।তার আধ্যাতিক শক্তি মুহুর্তের মধ্যে নিশ্চিন্ন হয়ে গেল।অন্ধকারে আলো জ্বললে মুহুর্তেই যেমন করে অন্ধকার অপসারিত হয়।হজরত খাজার কদম মোবারকে লুতিয়ে পড়লেন রামদেও।নির্দ্বধায় স্বীকার করলেন ইসলাম। খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) তার নাম রাখলেন মোহাম্মদ সাদী।
রামদেও এর ইসলাম গ্রহনের সংবাদ শুনে রাজা ক্ষোভে দঃখে অস্হির হয়ে উঠলেন।কিন্তু বিদূষী মায়ের উপর্যুপরি উপদেশের বাধ্য হয়ে সংযত হলেন রাজা।কিন্তু কিছুদিন পরই দেখা দিল আরেক বিপদ।
আনা সগরের পানি শুধুমাত্র উচ্চ বর্নের হিন্দু এবং পুরোহিত সম্প্রদায়
ছারা অন্য কেও ব্যবহার করতে পারতো না।নিম্ন বর্নের হি্ন্দুরা এটা তাদের ধর্মীয় বিধান বলে মনে করত।কিন্তু মোসলমানরা কি আর বর্নভেদের ধার ধারে ? একদিন আনাল সাগরে অজু করতে গেলন হজরত খাজার একজন সাগরেদ।পুরোহিতরা অপমান করে তাড়িয়ে দিলো তাকে।সাগরেদ সমস্ত ঘটনা বর্ননা করলেন খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) কে।হযরত খাজা মোহাম্মদ সাদীকে ”আনা সাগর” থেকে এক ঘটি পানি আনার নির্দেশ দিলেন।নির্দেশ মত মোহাম্মদ সাদী ‘আনা সাগর’ থেকে এক ঘটি পানি আনতেই দেখা গেলো এক আশ্চর্য দৃশ্য।কোথায় সাগর ? সব পানি তার শুকিয়ে গিয়েছে একেবারে।
এই আলৌকিক ঘটনা রাজাকে জানালো প্রজারা।বিব্রত বোধ করলো রাজা।রাজা বাধ্য হয়ে আবারও তাদের প্রজাদের দুর্ব্যবহারের জন্য ফকিরের কাছে ক্ষমা চাইতে নির্দেশ দিলেন রাজা।প্রমাদ গুনলেন পুরোহিত সম্প্রদায়।কিন্তু উপায়ন্তর না দেখে তারা খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) এর কাছে গিয়ে ক্ষমা ভিক্ষা করলেন ।
মানুষের দুর্দশা দেখে ও পুরোহিতদের ক্ষমার প্রেক্ষিতে মোহাম্মদ সাদীকে পুনরায় ঘটিতে ভরা পানি আনা সাগরে ঢেলে দিতে নির্দেশ দিলেন।নির্দেশ পালিত হলো।ঘটির পানি ঢেলে দেয়ার সাথে সাথেই ভরে গেল বিশাল হ্রদ ‘আনাল সাগর’।এই আলৌকিক ঘটনার পর বহুলোক ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিল খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ)এর হাত ধরে।
পৃথ্বিরাজ ভেবে পান না কি করে এ মোসলমান ফকিরকে প্রতিহত করা যায় ।কেউ কেউ রাজাকে বুদ্ধি দিলেন বিখ্যাত ঐন্দ্রজালিক অজয় পালকে দিয়ে কিছু করা যায় কিনা ?রাজা তাকেই ডেকে পাঠালেন এবং রাজকীয় পুরুস্কারের প্রস্তাব করলেন।অজয় পাল তার সর্বশক্তি দিয়ে খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) কে ঘায়েল করার চেষ্টা করলেন।কিন্তু মিথ্যা কি কখনো সত্যকে প্রতিহত করতে পারে ? অজয় পালও তার ভুল বুঝতে পেরে তার সঙ্গী সাথী সহ ইসলাম ধর্ম গ্রহন করলেন।খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) অজয় পালের নাম রাখলেন ‘আব্দুল্লাহ বিয়াবানী’।
সংবাদ শুনে মুষড়ে পরলেন রাজা।নিজ রাজ্য রক্ষার কথা চিন্তা করে সংঘর্ষমুক্ত সহাবস্হানের পথ অবলম্বন করলেন রাজা।কিন্তু সত্য মিথার সংষর্ষ যে অবসম্ভাবী।আবারও সংঘর্ষের সূত্রপাত হলো এভাবে-
রাজদরবারের একজন কর্মচারী ছিলেন খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) এর একান্ত অনুরক্ত।মুসলমানও হয়ে গিয়েসিলেন তিনি।রাজা একথা জেনেও তাকে খুব পছন্দ করতেন তার উত্তম স্বভাব,বিশ্বস্হতা ও সততার জন্য।কিন্তু রাজদরবারের অন্যান্য সদস্যদের প্ররোচনায় এক সময় সেই কর্মচারীর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন রাজা। খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) এর কাছে বার বার হেনস্ত হবার সমস্ত ক্ষোভ যেন গিয়ে পড়লো তার উপর।মুসলমান কর্মচারী সমস্ত দুঃখের কথা খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) এর কাছে বর্ননা করার পর খাজাকে অনুরোধ করলেন তার জন্য রাজার কাছে একটি সুপারিশ পত্র পাঠাতে।পর দুঃখে কাতর খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) একান্ত বিনয় ও নম্রতার মাধ্যমে সেই কর্মচারীর পক্ষে একটি সুপারিশ পত্র পাঠালেন।সেই সঙ্গে রাজাকে জানালেন ইসলাম গ্রহনের একান্ত আহ্বান।
চিঠি পেয়ে রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন পৃথ্বিরাজ।মুসলমান কর্মচারীকে চকুরীচ্যুত করলেন রাজা।সেই সঙ্গে খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) এর বিরুদ্ধে উচ্চারন করলেন অশালীন বক্তব্য।সংবাদ শুনে খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) এর প্রেমময় অন্টরেও প্রজ্জলিত হলো রুদ্ররোষের সর্বধ্বংসী আগুন।তিনি একটুকরা কাগজে লিখে পাঠালেন রাজা পৃথ্বিরাজকে-”মান তোরা যেন্দা বদস্তে লশকরে ইসলাম বছোপর্দম”। অর্থাৎ আমি তোমাকে তোমার জীবিতাবস্হাতেই মুসলিম সেনাদের হাতে সোদর্প করলাম।এর পরেই স্বপ্ন দেখলেন সুলতান শাহাবুদ্দিন মোহাম্মদ ঘুরী এবং উনার নেতৃত্বেই হিন্দুস্হানে উরলো মোসলমানদের বিজয় পতাকা এবং পতন হলো মহারাজা পৃথ্বিরাজের।
নিদ্রাভিবুত ছিলেন সুলতান শাহাবুদ্দিন মোহাম্মদ ঘুরী।স্বপ্নে দেখলেন শ্বেত শুভ্র বস্ত্রাবৃত এক জ্যোতির্ময় মহাপুরুষ সিংহাসনে বসা।তার সামনে দন্ডায়মান অনেক অনুচর।তাদের মধ্যে একজন সুলতান ঘোরীকে হাত ধরে একদল সুসজ্জিত মুসলমান সেনাদলের নিকট নিয়ে গেল।আর সেই সময় সেই জ্যোতির্ময় মহাপুরুষ তাকে লক্ষ্য করে বললেন,”যাও তোমাকে আমি হিন্দুস্হানের শাসন ক্ষমতা দান করলাম।”।
স্বপ্ন ভেঙ্গে গেল।চমকিত হলেন সুলতান।এ নিশ্চয়ই শুভ স্বপ্ন হবে। সকালে ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে স্বপ্নের বৃত্তান্ত জানালেন।সবাই একবাক্যে বললেন ,মনে হয় অচিরেই হিন্দুস্হান আপনার করতলগত হবে।এ স্বপ্ন তারই আগাম সুসংবাদ।
সুলতান মনস্হির করলেন হিন্দুস্হান অভিযান শুরু করার। সেনাপতি কুতুবুদ্দিন আইবেককে প্রস্তুত হবার নির্দেশ দিলেন।৫৮৮ হিজরি সালে সুলতান শাহাবুদ্দিন মোহাম্মদ ঘুরী তার বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে হিন্দুস্হান অভিমুখে রওয়ানা হলেন।অন্তরে বিগত যুদ্ধের পরাজয়ের গ্লানি।সে গ্লানি এবার মুছতেই হবে।ইতি পুর্বে দুই দুইবার হিন্দুস্হান আক্রমন করেও সফল হতে পারেন নি।শুরু হল তুমুল যুদ্ধ। সুলতান শাহাবুদ্দিন মোহাম্মদ ঘুরীর সৈন্যসংখ্যা রাজা পৃথ্বিরাজের সৈন্যের তুলনায় একেরারেই কম।কিন্তু ইমানের বলে বলীয়ান এক আল্লাহর একছ্ছত্র শক্তির প্রতি নির্ভর করে তারা নির্ভয়ে এগিয়ে চললো। এই বাহিনীর প্রধান সেনাপতি কুতুবুদ্দিন আইবেক।তারায়েনা প্রান্তরে দুই বাহিনীর মধ্যে প্রচন্ড যুদ্ধ শুরু হলো। মুসলমানদের প্রচন্ড আক্রমনের সামনে ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল পৌত্তলিক সৈন্যবাহিনী।নাস্তানাবুদ হয়ে পালিয়েও নিস্তার পেল না তারা।ক্ষিপ্রগতিতে রাজপুত সৈন্যদের পশ্চাদ্ধাবন করে যাকে যেভাবে পাওয়া গেল,তাকে সেভাবেই হত্যা করতে লাগলো মুসলমান সৈন্য বাহিনী।উপায়ন্তর না দেখে যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে গেলো সেনাপতি খান্ডে রাও।রাজা পৃথ্বিরাজও সরস্বতী নদীর তীর ধরে পালাবার চেস্টা করার সময় মোসলমানদের সৈন্যদের হাতে বন্দী হয়ে গেল রাজা।শেষাবধি হত্যা করা হল তাকে।৫৮৮ হিজরী সালে ভয়াবহ এ যুদ্ধে সুলতান সাহাবুদ্দিন ঘোরী নিরংকুশ বিজয় লাভ করলেন।আরো সামনে এগিয়ে চললো ঘোরী বাহিনী।এর পর সহজেই এক এক করে সরস্বতী,সামানা ও হাশিসহ অধিকৃত হল দিল্লী।সুলতান দিল্লীর দায়িত্ব দিলেন কুতুবুদ্দিন আইবেককে ।তারপর সুলতান শাহাবুদ্দিন মোহাম্মদ ঘুরী এগিয়ে চললেন আজমীরের দিকে।
তার এই এই অপ্রতিরুদ্ধ অগ্রাভিযানের সামনে অবনত হলো যুদ্ধে নিহত হিন্দু রাজাদের পুত্রগন।দেউল নামক স্হানে সম্রাটের সঙ্গে সাক্ষাত করলো অনেক রাজপুত্রগন।মুসলিম শাসনের প্রতি তাদের আনুগত্যের বিনিময়ে সম্রাট তাদেরকে দান করলেন বিভিন্ন রাজ্যের জায়গী। সুলতান এগিয়ে চললেন আজমীরের দিকে।
এদিকে আজমীরে ক্রমাগত বেড়েই চলছে খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) এর কাফেলা। ইসলাম কবুলকারীদের সংখ্যা এখন লক্ষ লক্ষ।শুধু আজমীরে নয় এখন খাজা মইনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) এর জামাত এখন ছড়িয়ে পরেছে হিন্দুস্হানের কোনায় কোনায়।দর্শনার্থীদের ভীর সব সময় লেগেই থাকে।
সুলতান শাহাবুদ্দিন মোহাম্মদ ঘুরী অবশেষে আজমীর এসে পৌছলেন।তখন সন্ধা হয় হয়।সুর্যাস্ত হওয়ার পর সচকিত হয়ে উঠলেন সুলতান শাহাবুদ্দিন মোহাম্মদ ঘুরী।দুরে কোথায় আজানের ধ্বনি শোনা যায়।সেদিকে এগিয়ে যেতেই তিনি দেখলেন একদল নুরানী জান্নাতী
লোক হাত বেধে দাড়িয়েছেন।দরবেশদের জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করলেন সুলতান।সালাত শেষে জামাতের ইমামের মুখের দিকে তাকিয়েই চমকে উঠলেন সুলতান শাহাবুদ্দিন মোহাম্মদ ঘুরী।এইতো সেই জ্যোতির্ময় মহাপুরুষ,স্বপ্নে যিনি জানিয়েছেন হিন্দুস্হান বিজয়ের সুসংবাদ।
সুলতান শ্রদ্ধাভরে পরিচিত হলেন হজরত খাজার সাথে।তিনদিন হযরতের মোবরক সহবতে অতিবাহিত করে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করলেন সুলতান।তার প্রতিনিধি হিসেবে দিল্লীতে রেখে গেলেন কুতুবুদ্দিন আইবেক কে।তিনিও বায়াত গ্রহন করলেন খাজার প্রতিনিধি খাজা বখতিয়ার কাকী(রঃ) হাতে।এর পর রাজনৈতিক ও রুহানী শক্তির সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পৌত্তলিকতা উছ্ছেদের অভিযান চলতে থাকলো সমান্তরাল গতিতে।কুতুবুদ্দিন আইবেক ক্রমে ক্রমে প্রসারিত করলেন মুসলিম রাজ্যের সীমানা।কনৌজ,বানারস সহ আরো বহু স্হানে উড়িয়ে দিলেন মোসলমানদের বিজয় পতাকা।

Saturday, April 18, 2015

ইলমে গায়েব নবী করীমের(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার) নবুয়তের অন্যতম দলীল


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
প্রিয় সুহৃদ
আসসালামু আলাইকুম
ইলমে গায়ব বিষয়ে আনেক তর্ক বিতর্ক হয়েছে , সে কারনে এই বিষয়ে কোরআন শরীফ থেকে ও সহীহ বুখারী শরিফ ও ( মুত্তাফাকুল আলাই )হাদিস নি্যে মুল পোস্ট টি সাজানো হয়েছে । যারা জানতে চান কেবল তাদের জন্য । আর যারা সত্য জানবেন কিন্তূ কশ্চিম কালেও মেনে নিবেন না কোরআন হোক আর সহীহ হাদিস হোক নবীজি কে ছোট করা যাদের ধর্মে পরিনত হয়েছে কোরআন বা হাদীস কোন বিষয় নয় তাদের ব্যাপারে আমার কিছু বলার নাই । আল্লাহই তাদের জন্য যথেষ্ট ।
হযরত আমর ইবনে আখতাব (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) হতে বর্নিত , তিনি বলেন , আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) একদিন আমাদেরকে নিয়ে ফজরের নামাজ পড়লেন । অতঃপর মিম্বরে আরোহন করলেন এবং আমাদের উদ্দেশে দীর্ঘ বক্তব্য প্রদান করলেন ; এমন কি যোহরের নামায পড়ালেন ।অতঃপর আবারো আরোহন করলেন মিম্বরে , আর বক্তব্য দেওয়া শুরু করলেন ,এমন কি আসরের নামাযের সময় উপস্থিত হল । অতঃপর মিম্বরে হতে নেমে আসরও পড়লেন । পুনরায় মিম্বরে আরোহন করে বক্তব্য দিতে দিতএ সুর্য অস্তমিত হয়ে গেল । সে দিন নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) অতীতে যা কিছু এবং ভবিষ্যতে যা কিছু হবে সকল বিষয়ে আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন । আমাদের মধ্যে যাঁদের স্মরণশক্তি অধিক তাঁরা সেসব (অদৃশ্য) সংবাদ বেশী মনে রাখতে পেরেছেন ।
( সুত্র : বুখারী শরীফ হাদিস নম্বর ৬২৩০ কিতাবুল কদর , মুসলিম শরিফ হাদিস নম্বর ২৮৯১ কিতাবুল ফিতান , তোরমিযী শরীফ হাদিস নম্বর ২১৯১ কিতাবুল ফিতান , আবু দাউদ শরীফ হাদিস নম্বর ৪২৮ কিতাবুল ফিতাম , মিসকাতুল মাসাবিহ : কিটাবুল ফিটাম ৪৬১ পৃষ্ঠা )
প্রসঙ্গিক আলোচনা
মহান রাব্বুল আলামীন পৃথিবীর বুকে মানবজাতির হিদায়াতের জন্য যত নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন সবাইকে তাঁদের নুবুয়তের দলিল হিসাবে কতিপয় মু’জিযাও দান করেছেন ।
অন্যান্য নবীগনের ক্ষেত্রে ঐসব মু’জিযার সীমিত থাকলেও আমাদের প্রিয় রাসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা)-এর ব্যাপার ছিল সম্পুর্ন ভিন্ন । অন্য নবীগনের যাবতীয় মু’জিযা একত্রিত করলে যা হয় তাঁর সবক’টি তো বটে; বরং এরপরেও আরো কত মু’জিযা দান করেছেন তা গণনা করা যাবে এমন হিসেবের খাতা নীল আকাশের নিচে খুজে পাওয়া যাবে না ,গণনা বাইরে যে সব মু’জিযা রয়েছে এর একটি হল ইলমে গায়েব বা “অদৃশ্যজ্ঞান “। এই ইল্‌মে গায়েব মহানবীর অতুলনীয় বৈশিষ্টাবলীর অন্যতম অনুগ্রহ। যেমন কোরআনে পাকে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন।
এই আয়াতের শেষ অংশে ” ওয়া আল্লামাকা মালাম তাকুন তায়’লামু ওয়া কানা ফাদ’লুল্লাহি আলাইকা আযিমা ‘
অর্থাৎ আপনাকে যা জানা ছিল না তিনি(আল্লাহ) আপনাকে সবই শিক্ষা দিয়েছেন এবং তা ছিল আপনার উপর আল্লাহর মহা অনুগ্রহ ।
পবিত্র ক্বোরআনের ভাষায় বলা যায় – নবীপাক(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা)এর জন্য মহান আল্লাহ অজানা কিছুই রাখেন নি ; হোক না তা অতীত কিংবা ভবিষ্যত । কিয়ামত পরবর্তি বেহেশত-দোযখের সংবাদ পর্যন্ত যেখানে লুকায়ে থাকতে পারেনি ।তাই তো তিনি উপস্থিত আনেক লোকের মনের খবর বলে দিয়েছেন , মুনাফিক্বেদের অন্তরে আবৃত অন্ধকার কুঠুরিতে লালিত কপটতা প্রকাশ করে মসজিদ থেকে তাদের অনেককে বের করে দিয়েছেন । এমন কি অনেক সাহাবীর আবেদন পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বংশ তালিকা নিখুঁত ভাবে বলে দিয়েছেন এ গুলো কি প্রমান করে না নবীপাকের ইলমে গায়েব বিতর্কের উর্ধ্ধে একটি স্বীকৃত বিষয় ?
আল্লাহর রাসুলের(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) বাল্যবন্ধু নয় কেবল সারাজীবনের একান্ত সঙ্গী ইসলামের প্রথম খলিফা এবং নবীগনের পর যিনি শ্রেষ্ট মানুষ , সিদ্দিকে আকবর হযরত আবু বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ইসলাম গ্রহনের প্রাক্কালে নবী করীমের(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) কাছে তাঁর নুবুয়তের পক্ষে দলিল কি আছে ? জানতে চাইলে নবী করীম উত্তর দিতে গিয়ে ভ্রু কুঁচকে ফেলেন নি বরং দু’শ ভাগ দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে বলে দিয়েছিলেন কেন গত রাতে তুমি যে স্বপ্ন দেখেছ , আকাশের চন্দ্র-সুর্য তোমার কোলে এসে হাজির । আর সিরিয়া যাত্রাপথে সেই স্বপ্নের ব্যাখ্যাকারী তোমাকে যা কিছু বলেছে তাইতো আমার নবুয়তের পক্ষে দলিল ।
এমন আশ্চর্যজনক তথ্যপ্রদানের অবস্থা হচ্ছে সিদ্দিক-ই-আকবরের স্তম্ভিত ! তিনি শতভাগ নিশ্চিত হলেন যে , এই অদৃশ্যজ্ঞানের সংবাদদাতা (নবী) কষ্মিণকালেও মিথ্যুক হতে পরেন না ।তিনিই মহান আল্লাহর সত্য নবী । সন্দেহাতীত ভাবে তাঁর নবুয়ত প্রমানিত ।তদ্রুপ হযরত আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)এর কথা শোনা যাক । বদরের যুদ্ধের বন্দিদের কে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ হলে অন্য বন্দীরা যথারীতি মুক্তিপণ আদায়ে ব্যস্ত । এ দিকে চাচা হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও ঐ যুদ্ধবন্দীদের একজন । তিনি ভাতিজার কাছে এসে আবেদন করলেন বাবা ! আমি তো গরিব মানুষ ! মুক্তিপন দেয়ার মত আমার কাছে কোন সম্পদ নেই ।উত্তরে নবী করীম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা)বললেন ” কেন চাচা ! আপনি যুদ্ধে আসার পুর্বে আমার চাচীর কাছে যে স্বর্নালন্কার লুকিয়ে রেখে এসেছেন সে গুলো কোথায় ? হযরত আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)র সে গোপন সংবাদ তো দুনিয়ার বুকে অন্য কেউ জানার কথা নয় ! কিন্তূ তাঁর ভাতিজা কিভাবে সুস্পস্টভাবে বলে দিলেন । তা রীতিমত বিষ্ময়ের ! না! এ ধরনের অদৃশ্য সংবাদদাতা কোনদিন মিথ্যুক হতে পারেন না । তাঁর কপালও চমকে উঠল । নবীজীর হাতে নিজেকে সঁ’পে দিয়ে বলে উঠলেন হে আল্লাহর রাসুল ! আমাকে ইসলামের কালেমা শরীফ পড়িয়ে মুসলমান বানীয়ে দিন । আমি এতদিন ছিলাম গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত। এবার আলোতে আসতে চাই । নবীজি তাঁকে কালেমা পড়িয়ে নিজ হাতে বায়াত করে মুসলমান বানালেন । এ ভাবে একজন জাহান্নামী মুহুর্তে বেহেশতী হয়ে গেলেন । শুধু কি তাই ? নবীর পরশে শ্রেষ্ট সোনার মানুষে রুপান্তরিত হলেন ।
এ ভাবে হাজারো দৃষ্টান্ত রয়েছে যদ্বারা স্পস্ট প্রমাণিত হয় -মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় হাবীবকে ইলমে গায়েব দান করেছেন ।
এখন আরো কয়েকটি সহীহ হাদীসের উদ্ধৃতি পেশ করব যাতে সহীহ হাদীস ছাড়া অন্য কিছূ মানিনা বলে যারা গলার পানি শুকিয়ে ফেলে তারা বিষয়েটি সহজে বুঝতে পেরে হিদায়াত লাভ করে ।
হযরত ওমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত , তিনি বলেন একদা হুজুর নবী করীম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) আমাদের সামনে দন্ডায়মান হলেন অতঃপর সৃষ্টিজগতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তথা বেহেশত বাসীরা বেহেশতে এবং দোযখনাসীরা দোযখে প্রবেশ করা পর্যন্ত সবকিছু আমাদের সামনে বলে দিলেন । আমাদের মধ্যে যারা মুখস্ত রাখতে পেরেছে তারা মুখস্ত রেখেছে ; আর যারা ভুলে যাবার তারা ভুলে গেছে ।
[ বুখারী : হাদীস নং ৩০২০ : কিতাবু বাডয়িল খালক্ব ]
হযরত হুযাইফা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্নিত । তিনি বলেন রাসুলে পাক(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) আমাদের সামনে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করলেন- সে দিন থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে তার কোন বিষয়েই তাঁর বক্তব্যে বাদ দেননি । শ্রোতাদের মধ্যে যে মুখস্থ রাখার সে মুখস্ত রেখেছে আর যে ভুলে যাবা সে ভুলে গেছে ।
( বুখারী শরীফ হাদীস নং ৬২৩০ কিতাবুল কদর । মুসলিম শরীফ হা:নং২৮৯১ কিতাবুল ফিতন )
হযরত আনাস বিন মালিক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে াপর এক হাদীস শরিফে দেখা যায় । তিনি বলেন একদা নবীপাক(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) আমাদের মাঝে তাশরীফ আনলেন তখন সূর্য পশ্চিমাকাশে দিকে ঝুঁকে পড়েছিল ( অর্থাৎ যোহরের নামাযের সময় হয়ে গিয়েছিল ) অতঃপর নবী করীম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) যোহরের নামায পড়লেন আর সালাম ফিরানোর পর মিম্বরে আরোহন করে ক্বিয়ামতের আলোচনা রাখলেন এবং ক্বিয়ামতের পুর্বেকার কতিপয় বড় বড় ঘটনা বর্ননা দিলেন আর উপস্থিত সাহাবীদেরকে সম্বোধন করে বললেন , খোদার কসম তোমরা আমার কাছে যা কিছু জানতে চাইবে আমি এই মজলিসেই সব প্রশ্নের উত্তর দেব ।
হযরত আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন হুজুরের বানীর এমন দৃঢ়তা দেখে আনসারী সাহাবাদের মধ্যে আনন্দের কান্নার রোল বয়ে গেলো । আর নবীপাক(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা)বারবার বলে যাচ্ছেন – তোমরা আমাকে প্রশ্ন কর , প্রশ্ন কর । অতঃপর এক ব্যক্তি দাড়িয়ে প্রশ্ন করল – হে আল্লাহর রাসুল ! পরকালে আমার ঠিকানা কোথায় হবে ? নবীপাকে বললেন জাহান্নাম । অথপর আবদুল্লাহ ইবনে হুযাফা বললেন -ইয়া রাসুল লাল্লাহ ! আমার পিতা কে ? নবী করীম বললেন – তোমার পিতা হুযাফা । নবীপাক(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) আবার ও জোর তাগিদ দিয়ে বললেন , তোমরা প্রশ্ন কর , প্রশ্ন কর ।
অত:পর,ওমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) নবী করীম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) বরাবর সামনে গিয়ে বসলেন আর বললেন -আমরা সন্তস্ট যে আল্লাহ কে রব হিসাবে পেয়ে , ইসলাম কে দ্বীন হিসাবে আর মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) কে রাসুল হিসেবে পেয়েছি । তিনি এসব কথা বলার সময় নবী করীম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) চুপ রইলেন । অতঃপর বললেন -সেই সত্তার কসম ! যার হাতে আমার প্রাণ , আমার এ দেয়ালের সামনে এই মাত্র বেহেসত ও দোযখ হাজির করা হয়েছে , যখন আমি নামায পড়ছিলাম , আজকের মত কোন ভাল-মন্দকেও দেখিনি ।
(সুত্র বুখারী শরীফ হাদীস নং৬৮৬৪ কিতাবুল ই’তিসাম , বিল কিতাবে ওয়াস সুন্নাহ :, মুসলিম শরীফ হাদিস নং ২৩৫৯ )
এ ভাবে অসংখ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় রাসুলে আকরাম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) ইলমে গায়েবের অধিকারী ছিলেন । অবশ্যই তা আল্লাহ প্রদত্ত ।
আর সত্তাগত আলিমুল গায়েব হলেন একমাত্র আল্লাহ । আর আল্লাহর রাসুলের ইলমে গায়েব আল্লাহ্‌ প্রদত্ত । যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে -
” মা কানাল্লাহু লি উতলিয়াকুম আলাল গাইবে ওয়ালাকিন নাল্লাহা ইজতাবিয়ু মির রুসুলিহু মাইয়া শায়ু ”
অর্থাৎ হে সাধারাণ লোকগন ! আল্লাহ তা’আলার শান নয় যে , তিনি তোমাদেরকে ইলমে গায়েব দান করবেন , তবে হ্যাঁ রাসুলগনের মধ্য হতে তিনি যাকে চান তাকে অদৃশ্যজ্ঞানের জন্য মনোনীত করেন ।( সুরা আলইমরান ১৭৯)
রসুলগণের মধ্য হতে যদি আল্লাহ পাক কাউকে নির্বাচিত করেন। তাহলে সর্বপ্রথমে কাকে নির্বাচিত করবেন তা সহজেই অনুমেয় ।
আরেক জায়গায় ইরশাদ হয়েছে ;
(আল্লাহ)স্বীয় গায়েবের বিষয়ে কাউকে ক্ষমতাবান করেন না । কিন্তূ রাসুলদের মধ্য যার উপর তিনি সন্তষ্ট হন( তাকেই ক্ষমতাবান করেন )
(সুরা জিন- আয়াত ২৬-২৭ )
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন ‘ আল্লামাকা মা লাম তাকুন তা’লাম ” আর্থাৎ, তিনি আপনাকে এমন জিনিস শিক্ষা দিয়েছেন যা আপনি জানতেন না “
( সুরা নিসা আয়াত ১১৩)
এ আয়াতে ব্যাখা করতে গিয়ে প্রসিদ্ধ তাফসীর গ্রন্থ “জালালাইন শরীফে” বলা হয়েছে ” আউযয়ু মিনাল আহকামে ওয়াল গাইব ” অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) কে শরীয়তের যাবতীয় হূকুম ও গায়েব সম্পর্কে শিক্ষা দিয়েছেন ।
উপরে বর্নিত আয়াত এবনহ জালালাইন শরীফের ব্যাখ্যা দ্বারা বুঝা গেল,
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর হাবীব(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) কে ইলমে গায়েব জানাইয়াছেন । তাই আমরা বলি(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) ইলমে গায়েব জানেন । অসংখ্য হাদিসে মাধ্যমে জানা যায় যে রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) স্পস্ট বলে দিয়েছেন -কে কখন মৃত্যুবরন করবে ? কোন জায়গায় কে মারা যাবে এবং কার গর্ভে ছেলে সন্তান অথবা মেয়ে সন্তান রয়েছে ইত্যাদি।
যদি রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) এ সব বিষয়ে গায়েব না জানতেন , তাহলে সম্স্ত গয়েবের সংবাদ কি ভাবে দিলেন ?
তাফসীরে সাভার ৪র্থ খন্ডে ২৭৫ পৃষ্টা রয়েছে,
“ইনণাহু(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) লাম ইয়াখ রুজু মিনাদ দুনিয়া হাত্বা আ’লামাহু ল্লাহু বি জামইহি মুগি বাতিদ দুনিয়া ওয়াল আখেরাহ “
অর্থাৎ, আল্লাহর দুনিয়া এবং আখেরাতের সমস্ত গায়েব না জানানো পর্যন্ত রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) দুনিয়া থেকে ইন্তেকাল করেন নি ।
তাফসিরে খায়েন ৪র্থ পারায় রয়েছে ;
” মা কানাল্লাহু লি ইয়াজ রাল মু’মিনিনা আলা মা ানতুম আলাইকুম “
উক্ত আয়াতের ব্যখ্যাু উল্লেখ করা হয়েছে – রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) এরশাদ করেন , আমার কাছে আমর উম্মতকে তাদের নিজ নিজ মাটির আকৃতিতে পেশ করা হয়েছে যেমন ভাবে আদম (আলাহিস সালাম) এর কাছে পেশ করা হয়েছিল । আমাকে জানানো হয়েছে , কে আমার উপর ঈমান আনবে ? কে আমাকে অস্বিকার করবে ? যখন এ খবর মুনাফিকদের কাছে পোছলো তখন তারা ঠাট্টা করে বললো -কে তাঁর উপর ঈমান আনবে আর কে তাকে অস্বিকার করবে তাদের কে তাদের জন্মের পুর্বেই মুহাম্মদ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) জানতেন বলে বলেন । অথচ আমরা তাঁর সাথেই আছি – কিন্তু আমাদেরকে চিন্তে পারেন নি । এ খবর যখন রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) এর নিকট পৌছলো । তখন তিনি মিম্বরের উপরে দাড়ালেন এবং আল্লাহর প্রশংসা করে ইরশাদ করলেন,
“( কালা মা বালআকওয়ামে তায়ানু ফি ইলমি লা তাসআলু নি আন শাঈন ফিমা বাইনাকুম ওয়া বাইনাস সাআতি ইল্লা আনবাইতুকুম বিহ্‌)
অর্থাৎ, এসব লোকেদের ( মুনাফিকদের) কি যে হলো আমার জ্ঞান নি্যে তারা বিরূপ সমালোচনা করছে । তোমরা এখন থেকে কেয়ামত পর্যন্ত যে কোন বিষয় সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞাসা করো আমি অবশ্যই উহা তোমাদের কে বলে দিবো”
(তাফসীরে খায়েন )
বুখারী শরীফের ‘ বাদ্‌য়ু খালকে ” শীর্ষক আলোচনায় ও মিশকাত শরীফের “বাদয়ু খলকে ওয়া জিকরুল আমবিয়া” শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত উমর ফারূক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহূ) থেকে বর্নিত অর্থাৎ হযরত ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন — ” রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) এক জায়গায় আমাদের সাথে অবস্থান করছিলেন । সে খানে তিনি আমাদের সৃষ্টির সূচনা থেকে সংবাদ দিচ্ছিলেন – এমন কি বেহেস্তবাসী দোযখবাসী নিজ নিজ ঠিকানায় যাওয়ার অবধি পরিব্যাপ্ত যাবতীয় আবস্থা ও ঘটনা বলী প্রদান করেন ,যিনি ওসব স্মরণ রাখতে পেরেছেন তিনিতো স্মরণ রেখেছেন ; আর যিনি রাখতে পারেন নি তিনি ভুলে গেছেন । ( মেশকাত শরীফ ৫০৬)
মেশকাত শরিফের “আল-ফিতনা” অধ্যায়ে বুখারী ও মুসলিম শরীফ বরাত দিয়ে হযরত হুযাইফা (রাদিয়াল্লাহ আনহু) থেকে বর্নিত হয়েছে
অনুবাদ : রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) সে স্থানে কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে সব কিছুর খবর দিয়েছেন । কোন কিছুই বাদ দেন নাই । যারা মনে রাখার তারা মনে রেখেছেন, আর যারা ভুলে যাওয়ার তারা ভুলে গেছেন ।( মিশকাত শরীফ)
এ সমস্ত হাদীস শরীফের মাধ্যমে জানা গেল রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) সৃষ্টির শুরু থেকে কেয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে উহা জানতেন এবং উহার সংবাদ সাহাবাদেরকে দিয়েছেন ।
মুলত গবেষণা করলে দেখা যায় , নবীজীর বরকতময় জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে রয়েছে বিশ্বমানবতার জন্য শিক্ষনীয় বিষয় । আর অধিকাংশ গুরুত্বপুর্ণ কর্মসুচিতে দেখা যায় , ইলমে গায়েবের প্রভাব । পবিত্র ক্বোরআন-হাদীসের আলোকে সংক্ষেপে এতটুকু আলোচনা করলাম ।
আল্লাহ আমাদের উক্ত আলোচনা থেকে প্রকৃত ইলম জানার ও বোঝার তৌফিক দান করূন – আ-মিন ।
( বিস্তারিত জানার জন্য দেখতে পারেন “জা-আল-হক্ব” : প্রথম খন্ড )

Thursday, April 16, 2015

গায়েবানা জানাযা জায়েয কি না-

গায়েবানা জানাযা জায়েয কি না-
মানুষ মারা গেলে তাকে শেষ বিদায় জানানোর জন্য জমায়েত এবং তার মাগফিরাতের জন্য যে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় এবং তাতে যে বিশেষ পদ্ধতিতে নামায পড়া হয়, তার নাম জানাযা। অত্যন্ত ভাবগম্ভীর ও অনাড়ম্বর পরিবেশে এই জানাযার নামায আদায় করা হয়ে থাকে। মৃতের মাগফিরাত কামনায় এই জানাযার নামায আদায় করা জীবিতদের জন্য শরয়ী দায়িত্ব। হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন,
গায়েবানা জানাযা
n حَقُّ الْـمُسْلِمِ عَلَى الْـمُسْلِمِ خَمْسٌ: رَدُّ السَّلَامِ، وَعِيَادَةُ الْـمَرِيْضِ، وَاتِّبَاعُ الْـجَنَائِزِ، وَإِجَابَةُ الدَّعْوَةِ، وَتَشْمِيتُ الْعَاطِسِ
একজন মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের পাঁচটি হক রয়েছে, সালামের উত্তর দেওয়া, অসুস্থের খোঁজ-খবর নেয়া, জানাযায় অংশ গ্রহণ করা, দাওয়াত কবুল করা এবং হাঁচির জবাব দেওয়া।
[আল-বুখারী, আস-সহীহ, দারু তওকিন নাজাত, খ. ২, পৃ. ৭১, হাদীস: ১২৪০]

অপর এক হাদীসে রয়েছে, হযরত আবু সাঈদ আল-খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন,
خَمْسٌ مَنْ عَمِلَهُنَّ فِي يَوْمٍ كَتَبَهُ اللهُ مِنْ أَهْلِ الْـجَنَّةِ: مَنْ عَادَ مَرِيْضًا، وَشَهِدَ جَنَازَةً، وَصَامَ يَوْمًا، وَرَاحَ يَوْمَ الْـجُمُعَةِ، وَأَعْتَقَ رَقَبَةً
পাঁচটি আমল এমন আছে, যে ব্যক্তি যে কোনো দিন ওই আমলগুলো করে আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতবাসীদের অর্ন্তভুক্ত করে দেবেন; যে রোগীর খোঁজ-খবর নেবে, জানাযায় অংশগ্রহণ করবে, যে কোন দিন রোযা রাখবে, জুমুআর নামাযের জন্য প্রত্যুষে রওয়ানা করবে এবং একটি গোলাম আযাদ করবে।
[ইবনে হিব্বান, আস-সহীহ, মুআস্সিসাতুর রিসালা, বৈরুত,
লেবানন, খ. ৭, পৃ. ৬, হাদীস: ২৭৭১]
আরেক হাদীসে আছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: ্রمَنْ شَهِدَ الْجَنَازَةَ حَتَّى يُصَلَّى عَلَيْهَا فَلَهُ قِيْرَاطٌ، وَمَنْ شَهِدَهَا حَتَّىٰ تُدْفَنَ فَلَهُ قِيرَاطَانِগ্ধ قِيْلَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ وَمَا الْقِيْرَاطَانِ؟ قَالَ: ্রمِثْلُ جَبَلَيْنِ عَظِيْمَيْنِ
হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের জানাযায় অংশগ্রহণ করে জানাযার নামায আদায় করে তার জন্য রয়েছে এক কিরাত সাওয়াব। আর যে ব্যক্তি জানাযায় শরিক হয়ে দাফনকার্য সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত উপস্থিত থাকে তার জন্য রয়েছে দুই কিরাত সমপরিমাণ সাওয়াব। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!) দুই কিরাত বলতে কী বোঝানো হয়েছে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, দুটি বৃহৎ পাহাড়ের সমপরিমাণ সাওয়াব।
[আল-বুখারী, আস-সহীহ, দারু তওকিন নাজাত, খ. ৭, পৃ. ৩৪৭, হাদীস: ৩০৭৮]
সাহাবি আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন:
“مَا مِنْ رَجُلٍ مُسْلِمٍ يَمُوتُ فَيَقُومُ عَلَى جَنَازَتِهِ أَرْبَعُونَ رَجُلا لا يُشْرِكُونَ بِاللَّهِ شَيْئًا إِلا شَفَّعَهُمُ اللَّهُ فِيهِ ”
“যদি কোন মুসলিম মৃত্যুবরণ করে, আর তার জানাযায় এমন চল্লিশ জন লোক উপস্থিত হয়, যারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করে না, আল্লাহ মৃত ব্যক্তির ব্যাপারে তাদের সুপারিশ কবুল করবেন”। [মুসলিম ২০৭২]
তাই আলেমগণ বলেছেন, মুসল্লি যত বেশী হবে ততই মৃতের জন্যে কল্যাণ হবে, কারণ এতে সে অধিক মানুষের দু’আ পাবে।
শরিয়তের দৃষ্টিতে জানাযার নামায আদায় করা ফরজে কিফায়া। কোনো এলাকায় যদি কাউকে জানাযার নামায ছাড়া দাফন করে দেওয়া হয় তাহলে ওই এলাকার সবাই গুনাহগার হবে। জানাযার নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। যেমন:
১. মৃত ব্যক্তিকে অবশ্যই মুসলমান হতে হবে। কেননা কোনো অমুসলিম, কাফের, নাস্তিক-মুরতাদের জানাযার নামায পড়া জায়েয নয়।
২. ওই ব্যক্তিকে জীবিত জন্মগ্রহণ করতে হবে। কেননা মৃত নবজাতক বা মৃত ভ্রুণের জানাযার নামায পড়ার প্রয়োজন নেই।
৩. মৃত ব্যক্তির শরীর ও কাপড় প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব ধরণের নাপাকি থেকে পবিত্র হতে হবে। সে পবিত্রতা গোসলের দ্বারা হোক বা তায়াম্মুমের দ্বারা হোক। সুতরাং কোনো মৃত ব্যক্তির স্বাভাবিকভাবে গোসল ও অপারগতাবশত তায়াম্মুম করানো ছাড়া জানাযার নামায পড়ালে তা শুদ্ধ হবে না। পবিত্র করানোর পর পুনরায় নামায পড়াতে হবে।
৪. মৃতের সতর আবৃত থাকতে হবে। অন্যথায় জানাযার নামায সহিহ হবে না। সুতরাং পুরুষ ও মহিলার জীবিতাবস্থায় যে পরিমাণ তার সতর হিসেবে গণ্য, সে পরিমাণ সতর ঢেকে রাখতে হবে। অন্যথায় তার জানাযার নামায শুদ্ধ হবে না।
৫. মৃতের লাশ ইমাম ও মুক্তাদিগণের সামনে থাকতে হবে। পাশে বা পিছনে থাকলে বা একেবারে অনুপস্থিত থাকলে জানাযা শুদ্ধ হবে না।
৬. মৃতের লাশ মাটিতে বা খাটিয়ার ওপর রাখতে হবে। কোনো ওজর ছাড়া মৃতের লাশ যানবাহনের ওপর বা মানুষের কাঁধের ওপর রেখে জানাযার নামায আদায় করলে তা শুদ্ধ হবে না।
৭. মৃতের লাশ অবশ্যই জানাযা স্থলে উপস্থিত থাকতে হবে। অনুপস্থিত লাশের ওপর জানাযা অর্থাৎ গায়েবানা জানাযা পড়া জায়েয নয়।
সম্প্রতি ল্য করা যাচ্ছে, আমাদের সমাজে যারা রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডে বা সহিংসতায় মারা যান, কর্মসূচি দিয়ে তাদের গায়েবানা জানাযা পড়া হয়। যেহেতু একজায়গায় একত্রিত হয়ে সবাই মিলে তার জানাযার নামায পড়া সম্ভব নয় সে কারণেই মৃত ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার গায়েবানা জানাযা পড়া হয়ে থাকে। তাছাড়া অনেক সময় দেখা যায় বড় কোনো নেতা বা ব্যক্তি মারা গেলে তার প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সম্মান থাকার কারণে তার জানাযার নামায পড়তে আগ্রহ বোধ করে। এসব েেত্র মানুষ সাধারণত গায়েবানা জানাযার আশ্রয় নিয়ে থাকে। কিন্তু গায়েবানা জানাযা জায়েয কিনা এ বিষয়টিকে কেউ খতিয়ে দেখার চেষ্টা করেন না। যেহেতু জানাযার নামায একটি ইবাদত ও ধর্মীয় বিষয় তাই ধর্মীয় শর্তাবলী ও বিধি-বিধান মেনেই তা পালন করা উচিত। দুঃখের বিষয় হলো, সম্প্রতি জানাযার বিধি-বিধানকে চরম উপো করে এই মহান ইবাদতটিকে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে রূপ দেয়া হয়েছে, যা কিছুতেই কাম্য নয়।
হানাফী, মালিকী মাযহাবের সব ফকিহ ও হাম্বলী মাযহাবের ফকিহদের একাংশের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হলো, লাশ অনুপস্থিত রেখে গায়েবানা জানাযা জায়েয নয়। কেননা সাহাবায়ে কেরামের যুগের দিকে ল করলে দেখা যায় যে, সে যুগে গায়েবানা জানাযা পড়ার কোনো প্রচলন ছিল না। অথচ সে যুগেও বড় বড় সাহাবি দূর-দূরান্তে ইন্তেকাল করেছিলেন; কিন্তু তাদের গায়েবানা জানাযা পড়া হয়নি। যেমন বীরে-মাউনার ঘটনায় সত্তরজন কারী আলেম সাহাবির শাহাদাতের খবর জেনেও নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়েবানা জানাযা পড়েননি। এমনকি স্বয়ং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকালের পরও কোথাও কোনো সাহাবি এমনকি মক্কা শরিফ যা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মস্থান সেখানেও কোনো গায়েবানা জানাযা পড়া হয়নি। আর নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো কাজ ব্যাপকভাবে বর্জন করা তা বর্জনীয় হওয়ার প্রমাণ।
হানাফী, মালেকী ও হাম্বলী ঊলামায়ে কেরামদের মতে জানাযার নামাযে মৃত ব্যাক্তির সামনে থাকা জরুরি নতুবা গায়েবানা জানাযা পড়া যাবেনা আর গায়েবানা জানাযা সুন্নাহসম্মত নয়।
[বাহরুর রায়েক; ফতোয়ায়ে শামী; আহকামুল মাইয়েত; যাদুল মা’আদ- বাবে সলাতুল জানায়েয; আল মাজমূ’-৫/২৫৩; আল মুগনী ২/৩৮৬; যারকানী ২/১০; ইলাউস সুনান ২/২৩৪; ফয়দুল বারী ২/৪৬৯; মুগনী মুহতাজ ১/১৬৫; কাশফুল কান্না ২/১২৬; শরহুছ ছগীর ১/৫৬৯]
হাম্বলী মাযহাবের অন্যতম দাবীদার ইবনুল কায়্যিম বলেন,
وَلَـمْ يَكُنْ مِنْ هَدْيِهِ وَسُنَّتِهِ الصَّلَاةُ عَلَىٰ كُلِّ مَيِّتٍ غَائِبٍ فَقَدْ مَاتَ خَلْقٌ كَثِيْرٌ مِنَ الْـمُسْلِمِيْنَ وَهُمْ غُيَّبٌ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيْهِمْ.
“গায়েবানা জানাযা পড়া রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত পরিপন্থি। কেননা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় দূর-দূরান্তে বহু সাহাবায়ে কেরাম ইন্তেকাল করেছেন; কিন্তু তিনি তাদের গায়েবানা জানাযা পড়েননি।’’
[(ক) আল-আযীমাবাদী, আওনুল মা’বুদ শরহু সুনানি আবী দাউদ, দারু আল-কুতুব আল-ইলমিয়া, বৈরুত, লেবানন (দ্বিতীয় সংস্করণ: ১৪১৫ হি. = ১৯৯৪ খ্রি.), খ. ৯, পৃ. ৮; (খ)) ইবনে কাইয়িম আল-জওযিয়া, যাদুল মা‘আদ ফী হাদয়ি খাইরিল ইবাদ, মুআস্সিসা আর-রিসালা, বৈরুত, লেবানন (সপ্তদশ সংস্করণ: ১৪১৫ হি. = ১৯৯৪ খ্রি.), খ. ১, পৃ. ৫০০]
হানাফী মাযহাবের শ্রেষ্ঠতম ভাষ্যকার আল্লামা ইবনুল হুমাম রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি বলেন,
وَشَرْطُ صِحَّتِهَا إسْلَامُ الْـمَيِّتِ وَطَهَارَتُهُ وَوَضْعُهُ أَمَامِ الْـمُصَلِّيْ، فَلِهَذَا الْقَيْدِ لَا تَجُوزُ عَلَىٰ غَائِبٍ وَلَا حَاضِرٍ مَحْمُوْلٍ عَلَىٰ دَابَّةٍ أَوْ غَيْرِهَا، وَلَا مَوْضُوْعٍ مُّتَقَدِّمٍ عَلَيْهِ الْـمُصَلِّيْ، وَهُوَ كَالْإِمَامِ مِنْ وَجْهٍ.
‘জানাযা সহিহ হওয়ার জন্য শর্ত হলো, মৃতকে মুসলমান হতে হবে, পবিত্র হতে হবে এবং লাশ মুসল্লিদের সামনে রাখতে হবে। কাজেই অনুপস্থিত লাশের ওপর গায়েবানা জানাযা জায়েয নয়।
[ইবনুল হুমাম, ফতহুল কদীর শরহুল হিদায়া, দারুল ফিকর, বৈরুত, লেবানন, খ. ২, পৃ. ১১৭]
এতে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, লাশ ছাড়া জানাযা তথা গায়েবানা জানাযা পড়া জায়েয নয়। ফাতহুল কদীরেরই অন্য জায়গায় তিনি আরও বলেন,
ثُمَّ دَلِيْلُ الْـخُصُوْصِيَّةِ أَنَّهُ لَـمْ يُصَلِّ عَلَىٰ غَائِبٍ إلَّا عَلَىٰ هَؤُلَاءِ وَمَنْ سِوَى النَّجَاشِيِّ صَرَّحَ فِيْهِ بِأَنَّهُ رُفِعَ لَهُ وَكَانَ بِمَرْأًى مِنْهُ مَعَ أَنَّهُ قَدْ تُوُفِّيَ خَلْقٌ مِنْهُمْ غَيْبًا فِي الْأَسْفَارِ كَأَرْضِ الْـحَبَشَةِ وَالْغَزَوَاتِ وَمِنْ أَعَزِّ النَّاسِ عَلَيْهِ كَانَ الْقُرَّاءُ، وَلَـمْ يُؤْثَرْ قَطُّ عَنْهُ بِأَنَّهُ صَلَّىٰ عَلَيْهِمْ وَكَانَ عَلَى الصَّلَاةِ عَلَىٰ كُلِّ مَنْ تُوُفِّيَ مِنْ أَصْحَابِهِ حَرِيْصًا حَتَّىٰ قَالَ: ্রلَا يَمُوتَنَّ أَحَدٌ مِنْكُمْ إلَّا آذَنْتُمُوْنِيْ بِهِ، فَإِنَّ صَلَاتِيْ عَلَيْهِ رَحْمَةٌ لَهُগ্ধ عَلَىٰ مَا سَنَذْكُرُ.
‘বহু সাহাবায়ে কেরাম এমন রয়েছেন, যারা বিভিন্ন সফরে মদিনার বাইরে ইন্তেকাল করেন। যেমন সিরিয়া বা বিভিন্ন যুদ্ধেেত্র। এক বীরে মাউনার মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডেই শহীদ হয়েছেন সত্তরজন সাহাবী। যারা ছিলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অত্যন্ত প্রিয়পাত্র; কিন্তু তিনি তাদের কারো গায়েবানা জানাযা পড়েছেন বলে একটি বর্ণনাও পাওয়া যায় না। অথচ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের জানাযায় শরীক হতে অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন। যে কারণে তিনি বলে রাখতেন, তোমাদের মধ্যে কারো ইন্তেকাল হলে আমাকে সংবাদ দেবে। যাতে আমি তার জানাযা পড়তে পারি। কারণ আমি যার জানাযায় শরীক হবো তা তার জন্য রহমতের কারণ হবে।
[ইবনুল হুমাম, প্রাগুক্ত, খ. ২, পৃ. ১১৮]
আল্লামা কাসানী (রহ.) বলেন, وَعَلَىٰ هَذَا قَالَ أَصْحَابُنَا: لَا يُصَلَّىْ عَلَىٰ مَيِّتٍ غَائِبٍ “এজন্যই আমাদের ওলামাগণ বলেছেন, অনুপস্থিত লাশের ওপর জানাযা তথা গায়েবানা জানাযা পড়া যাবে না।
[আল-কাসানী, বাদায়িউস সানাই ফী তারতীবিশ শারায়ি,
দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বৈরুত, লেবানন, খ. ১, পৃ. ৩১২]
বিখ্যাত ফাতওয়া গ্রন্থ আদ-দুররুল মুখতারে বলা হয়েছে,
حُضُوْرُهُ (وَوَضْعُهُ) وَكَوْنُهُ هُوَ أَوْ أَكْثَرُهُ (أَمَامَ الْـمُصَلِّيْ) وَكَوْنُهُ لِلْقِبْلَةِ فَلَا تَصِحُّ عَلَىٰ غَائِبٍ.
জানাযা সহিহ হওয়ার জন্য শর্ত হলো, মৃতের লাশ মুসল্লিদের সম্মুখে উপস্থিত থাকা। কাজেই গায়েব বা অনুপস্থিত লাশের ওপর জানাযা জায়েয নয়।
[আল-হাসকফী, আদ-দুররুল মুখতার তানওয়ীরুল আবসার ওয়া জামিউল বিহার, দারুল ফিকর, বয়রুত, লেবনান, খ. ২, পৃ. ২০৯]
মোটকথা হানাফী ও মালিকী মাযহাবের ইমামগণের সর্বসম্মত অভিমত এবং হাম্বলী মাযহাবের অধিকাংশ ইমামের অভিমত হলো, গায়েবানা জানাযা জায়েয নয়। জানাযা পড়তে হলে অবশ্যই লাশ মুসল্লিদের সামনে উপস্থিত থাকতে হবে।
কেউ কেউ গায়েবানা জানাযা জায়েয বলতে চান। তারা দলিল হিসেবে ইথিওপিয়ার মুসলিম বাদশাহ হজরত নাজ্জাসীর ঘটনা এবং মুয়াবিয়া ইবনে মুয়াবিয়া আল-মুযানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর ঘটনা পেশ করেন।
নাজ্জাসীর জানাযার ঘটনা
গায়েবানা জানাযার জন্য হাবশার (আবিসিনিয়া) বাদশাহ আছহামা নাজ্জাশীর জানাযা আদায়ের ঘটনাই হ’ল একমাত্র দলীল, যিনি ৯ম হিজরিতে মারা যান। নাজ্জাশী খ্রিস্টানদের বাদশাহ ছিলেন। কিন্তু নিজে মুসলমান ছিলেন। সেকারণে তার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের নিয়ে জামা‘আত সহকারে জানাযা আদায় করেন এবং ইরশাদ করেন, صَلُّوْا عَلَى أَخٍ لَّكُمْ مَاتَ بِغَيْرِ أَرْضِكُمْ ‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জানাযা পড়। যিনি তোমাদের দেশ ব্যতীত অন্য দেশে মৃত্যুবরণ করেছেন’।
নাজ্জাসীর জানাযার ঘটনাটি সহীহ ইবনে হিব্বানে এভাবে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ، قَالَ: أَنْبَأَنَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم، أَنَّ أَخَاكُمْ النَّجَاشِيَّ تُوُفِّيَ، فَقُومُوْا فَصَلُّوْا عَلَيْهِ، فَقَامَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ، وَصَفُّوْا خَلْفَهُ، وَكَبَّرَ أَرْبَعًا وَهُمْ لَا يَظُنُّوْنَ إِلَّا أَنَّ جَنَازَتَهُ بَيْنَ يَدَيْهِ
ইমরান ইবনে হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের ভাই নাজ্জাশী ইন্তিকাল করেছেন। চলো তাঁর জানাযার নামায পড়ি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে বাইরে এলেন। সাহাবায়ে কেরাম তার পেছনে কাতারবন্দি হলেন। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চার তাকবীরের সাথে নামায পড়ালেন। সাহাবায়ে কেরামের ধারণা নাজ্জাশীর জানাযা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে রাখা ছিলো।
[ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, দারু ইয়াহইয়ায়িল কুতুব আল-আরাবিয়া, বয়রুত, লেবনান, খ. ১, পৃ. ৪৯১, হাদীস: ১৫৩৭]
সহিহ আল-বুখারীতে ঘটনার বিবরণ এভাবে রয়েছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ: ্রنَعَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِلَىٰ أَصْحَابِهِ النَّجَاشِيَّ، ثُمَّ تَقَدَّمَ، فَصَفُّوْا خَلْفَهُ، فَكَبَّرَ أَرْبَعًا
হজরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সাহাবায়ে কেরামের কাছে উপস্থিত হয়ে নাজ্জাসীর মৃত্যুসংবাদ শোনালেন এবং জানাযার নামায পড়ার জন্য সামনে অগ্রসর হলেন। সাহাবায়ে কেরাম তার পেছনে কাতারবন্দি হয়ে দাঁড়ালেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চার তাকবীর দিলেন।
[আল-বুখারী, আস-সহীহ, দারু তওকিন নাজাত, খ. ২, পৃ. ৮৬, হাদীস: ১৩১৮]
সহীহ আল-বুখারীর অন্য বর্ণনায় হজরত জাবের রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত আছে,
عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم حِيْنَ مَاتَ النَّجَاشِيُّ: ্রمَاتَ اليَوْمَ رَجُلٌ صَالِحٌ، فَقُوْمُوْا فَصَلُّوْا عَلَىٰ أَخِيكُمْ أَصْحَمَةَ
একদিন নবী করীম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হাবশার অধিবাসী একজন নেককার লোক মারা গেছেন। তোমরা তোমাদের ভাই ‘আছমাহা’(নাজ্জাসী) এর জানাযা পড়ার জন্য প্রস্তুত হও।
[আল-বুখারী, আস-সহীহ, দারু তওকিন নাজাত, খ. ৫, পৃ. ৫১, হাদীস: ৩৮৭৭]
ইবনে মাজাহ শরীফে ঘটনাটি এভাবে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ أَسِيْدٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم خَرَجَ بِهِمْ فَقَالَ: ্রصَلُّوْا عَلَىٰ أَخٍ لَكُمْ مَاتَ بِغَيْرِ أَرْضِكُمْগ্ধ قَالُوْا: مَنْ هُوَ؟ قَالَ: ্রالنَّجَاشِيُّ
হুযায়ফা ইবনে আসীদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে বের হলেন। তিনি বললেন, তোমরা অমুসলিম দেশে ইন্তিকালকারী তোমাদের এক ভাইয়ের জানাযা পড়। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি কে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিনি নাজ্জাসী।
[ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, দারু ইয়াহইয়ায়িল কুতুব আল-আরাবিয়া, বয়রুত, লেবনান, খ. ১, পৃ. ৪৯১, হাদীস: ১৫৩৭]
উপর্যুক্ত হাদীসসমূহসহ সিহাহ সিত্তায় বর্ণিত অন্যান্য হাদীস দ্বারা বোঝা যায় হাবশার অধিপতি নাজ্জাসী স্বদেশে ইন্তিকাল করেছেন আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বস্থানে সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে জানাযার নামায পড়েছেন। গায়েবানা জানাযার পক্ষে কেউ কেউ এ ঘটনাকে দলিল হিসাবে পেশ করেন।
মুয়াবিয়া ইবনে মুয়াবিয়া আল-মুযানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর গায়েবানা জানাযার ঘটনা:
হযরত মুয়াবিয়া ইবনে মুয়াবিয়া আল-মুযানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর গায়েবানা জানাযার ঘটনা এভাবে বর্ণিত হয়েছে, ইমাম তাবারানী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি তার আল-মুজামুল কাবীর গ্রন্থে হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: نَزَلَ جِبْرِيْلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ! مَاتَ مُعَاوِيَةُ بْنُ مُعَاوِيَةَ الْـمُزَنِيُّ، أَتُحِبُّ أَنْ تُصَلِّيَ عَلَيْهِ؟ قَالَ: ্রنَعَمْগ্ধ ، فَضَرَبَ بِجَنَاحَيْهِ فَلَمْ تَبْقَ شَجَرَةٌ، وَلَا أَكَمَةٌ إِلَّا تَضَعْضَعَتْ، وَرَفَعَ لَهُ سَرِيْرَهُ حَتَّىٰ نَظَرَ إِلَيْهِ، فَصَلَّىٰ عَلَيْهِ وَخَلْفَهُ صَفَّانِ مِنَ الْـمَلَائِكَةِ فِيْ كُلِّ صَفٍّ سَبْعُوْنَ أَلْفًا، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لِـجِبْرِيْلَ: ্রيَا جِبْرِيْلُ! مَا بَلَّغَ هَذَا هَذِهِ الْـمَنْزِلَةَ مِنَ اللهِ؟গ্ধ قَالَ: بِحُبِّهِ “قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ” وَقِرَاءَتِهِ إِيَّاهَا جَائِيًا وَذَاهِبًا وَقَائِمًا وَقَاعِدًا وَعَلَىٰ كُلِّ حَالٍ.
হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেন, একদিন জিবরাইল আলায়হিস্ সালাম রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আল্লাহ তাআলার রাসুল! মুআবিয় ইবনে মুআবিয়া আল-মুযানী ইন্তেকাল করেছেন। আপনি তার নামাযে জানাযা পড়তে আগ্রহী? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অবশ্যই। তখন জিবরাইল আলায়হিস্ সালাম তার উভয় ডানা দ্বারা জমিনে আঘাত করলেন। ফলে জমিনের সকল গাছ-পালা টিলা-টুম্বর সমান হয়ে গেল। অতঃপর মুআবিয়ার লাশ সামনে আনা হলো। যা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখতে পেলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাযার নামায পড়ালেন। পেছনে দু’কাতার ফেরেশতা দাঁড়ালেন। প্রতি কাতারে সত্তর হাজার করে ফেরেশতা ছিল। নামায শেষে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরাইল আলায়হিস্ সালামকে জিজ্ঞাসা করলেন। কোন আমলের বরকতে মুআবিয়া এই মর্যাদা লাভ করল। উত্তরে হযরত জিবরাইল আলায়হিস্ সালাম বললেন, মুআবিয়া সুরা ইখলাসকে খুবই মুহাব্বত করতেন এবং চলতে ফিরতে উঠতে বসতে সর্বাবস্থায় তিনি সুরা আল-ইখলাস তেলাওয়াত করতেন।
[আত-তাবারানী, আল-মু’জামুল কবীর, মাকতাবাতু ইবনে তায়মিয়া,
কায়রো, মিসর, খ. ১৯, পৃ. ৪২৮, হাদীস: ১০৪০]
এই ঘটনা দ্বারাও অনেকে বুঝাতে চান যে, গায়েবানা জানাযা পড়া বৈধ।
নাজ্জাসীর জানাযা সম্পর্কে উত্তর
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজ্জাসীর গায়েবানা জানাযা পড়েছেন বলে যে দাবি করা হয়েছে তা এই হাদীস দ্বারা বোঝা যায় না; বরং হাদীস দ্বারা যেটা বোঝা যায় সেটা হলো, নাজ্জাসীর লাশ মুজিযা-স্বরূপ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে নিয়ে আসা হয়েছিল। সাহাবায়ে কেরামও এই মনে করে জানাযার নামায পড়েছেন যে, লাশ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে আছে। যেমন সহীহ সনদে মুসনদে আহমদ ইবনে হাম্বলে বর্ণিত হয়েছে,
حَدَّثَنَا عَبْدُ الصَّمَدِ، حَدَّثَنَا حَرْبٌ، حَدَّثَنَا يَحْيَىٰ، أَنَّ أَبَا قِلَابَةَ حَدَّثَهُ، أَنَّ أَبَا الْـمُهَلَّبِ حَدَّثَهُ، أَنَّ عِمْرَانَ بْنَ حُصَيْنٍ حَدَّثَهُ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: ্রإِنَّ أَخَاكُمْ النَّجَاشِيَّ تُوُفِّيَ فَصَلُّوْا عَلَيْهِগ্ধ، قَالَ: فَصَفَّ رَسُوْلُ اللَهِ صلى الله عليه وسلم، وَصَفَفْنَا خَلْفَهُ فَصَلَّىٰ عَلَيْهِ، وَمَا نَحْسِبُ الْـجِنَازَةَ إِلَّا مَوْضُوْعَةً بَيْنَ يَدَيْهِ.)إسناده صحيح علىٰ شرط مسلم رجاله ثقات رجال الشيخين غير أبي المهلب الجرمي فمن رجال مسلم.(
হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের ভাই নাজ্জাসী ইন্তেকাল করেছেন। সুতরাং তোমরা তার জানাযা পড়।’ বর্ণনাকরী বলেন, এরপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাতার সোজা করে দাঁড়ালেন। আমরাও তার পেছনে কাতারবন্দি হয়ে দাঁড়ালাম। আমাদের ধারণা হচ্ছিল লাশটি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে রাখা হয়েছিল।
[আহমদ ইবনে হাম্বল, আল-মুসনদ, মুআস্সিসাতুর রিসালা,
বৈরুত, লেবানন, খ. ৩৩, পৃ. ২০৯, হাদীস: ২০০০৫]
বিষয়টি সহীহ ইবনে হিব্বানেও সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে যে,
عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ، قَالَ: ্রأَنْبَأَنَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم، أَنَّ أَخَاكُمْ النَّجَاشِيَّ تُوُفِّيَ، فَقُوْمُوْا فَصَلُّوْا عَلَيْهِ، فَقَامَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم، وَصَفُّوا خَلْفَهُ، وَكَبَّرَ أَرْبَعًا وَهُمْ لَا يَظُنُّوْنَ إِلَّا أَنَّ جَنَازَتَهُ بَيْنَ يَدَيْهِ
সাহাবায়ে কেরাম প্রবলভাবে ধারণা করেন যে, লাশটি নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে রাখা হয়েছে।
[ইবনে হিব্বান, আস-সহীহ, মুআস্সিসাতুর রিসালা,
বয়রুত, লেবনান, খ. ৭, পৃ. ৩৬৯, হাদীস: ৩১০২]
عن ابن عباس قال : ( كشف للنبي صلى الله عليه وآله وسلم عن سرير النجاشي حتى رآه وصلى عليه -) سنن الترمذي গ্ধ كتاب الجنائز عن رسول الله صلى الله عليه وسلم গ্ধ باب ما جاء في صلاة النبي صلى الله عليه وسلم على النجاشي (
হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, নাজ্জাসীর খাটিয়াকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে রাখা হয়েছিল। ফলে তিনি তাকে দেখে দেখে জানাযা আদায় করেছিলেন।
[তুহফাতুল আহওয়াযী-১০৩৯]
বিষয়টি নাসবুর রায়া গ্রন্থেও বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। এখানে তা হুবহু উল্লেখ করা হলো:
النَّوْعُ الْـحَادِي وَالْأَرْبَعِيْنَ، مِنْ الْقِسْمِ الْـخَامِسِ، مِنْ حَدِيْثِ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: إِنَّ أَخَاكُمْ النَّجَاشِيَّ تُوُفِّيَ، فَقُوْمُوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ، فَقَامَ رَسُوْلُ اللَهِ صلى الله عليه وسلم، وَصَفُّوْا خَلْفَهُ، فَكَبَّرَ أَرْبَعًا، وَهُمْ لَا يَظُنُّوْنَ إلَّا أَنَّ جِنَازَتَهُ بَيْنَ يَدَيْهِ.
الثَّانِيْ: أَنَّهُ مِنْ بَابِ الضَّرُورَةِ لِأَنَّهُ مَاتَ بِأَرْضٍ لَّـمْ يُقَمْ فِيْهَا عَلَيْهِ فَرِيْضَةُ الصَّلَاةِ، فَتَعَيَّنَ فَرْضُ الصَّلَاةِ عَلَيْهِ لِعَدَمِ مَنْ يُصَلِّيْ عَلَيْهِ ثَمَّ، وَيَدُلُّ عَلَىٰ ذَلِكَ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم لَـمْ يُصَلِّ عَلَىٰ غَائِبٍ غَيْرِهِ، وَقَدْ مَاتَ مِنْ الصَّحَابَةِ خَلْقٌ كَثِيْرٌ، وَهُمْ غَائِبُوْنَ عَنْهُ، وَسَمِعَ بِهِمْ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيْهِمْ، إلَّا غَائِبًا وَاحِدًا وَرَدَ أَنَّهُ طُوِيَتْ لَهُ الْأَرْضُ حَتَّىٰ حَضَرَهُ، وَهُوَ مُعَاوِيَةُ بْنُ مُعَاوِيَةَ الْـمُزَنِيّ، رَوَى حَدِيْثَهُ الطَّبَرَانِيُّ فِيْ ্রمُعْجَمِهِ الْوَسَطِগ্ধ. و্َরكِتَابِ مُسْنَدِ الشَّامِيِّينَগ্ধ حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ سَعِيدٍ الرَّازِيُّ ثَنَا نُوحُ بْنُ عَمْرِو بْنِ حُوَيٍّ السَّكْسَكُ ثَنَا بَقِيَّةُ بْنُ الْوَلِيدِ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ زِيَادٍ الْأَلْـهَانِيِّ عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ، قَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُوْلِ اللَهِ صلى الله عليه وسلم بِتَبُوْكَ، فنزل عليه جبرئيل، فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! إنَّ مُعَاوِيَةَ بْنَ مُعَاوِيَةَ الْـمُزَنِيّৃ
[আয-যায়লায়ী, নসবুর রায়া লি আহাদীসিল হিদায়া, দারুর রাইয়ান লিত-তাবাআতি ওয়ান নশর, বয়রুত, লেবনান ও দারুল কিবলা লিস-সাকাফাতিল ইসলামিয়া, জিদ্দা, সাঊদী আরব (প্রথম সংস্করণ: ১৪১৮ হি. = ১৯৯৭ খ্রি.), খ. ৩, পৃ. ২৮৩]
আল্লামা ইবনে হাজার আল-আসকালানী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ফাতহুল বারীতে ইয়াহইয়া ইবনে কসীরের বর্ণনা উল্লেখ করার পর লিখেন, আমরা নাজ্জাসীর জানাযা পড়েছি এই অবস্থায় যে, তার মৃতদেহ আমাদের সামনে উপস্থিত ছিল।’
وَلِابْنِ حِبَّانَ مِنْ حَدِيْثِ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ، فَقَامَ وَصَفُّوْا خَلْفَهُ وَهُمْ لَا يَظُنُّوْنَ إِلَّا أَنَّ جِنَازَتَهُ بَيْنَ يَدَيْهِ أَخْرَجَهُ مِنْ طَرِيْقِ الْأَوْزَاعِيِّ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِيْ كَثِيْرٍ، عَنْ أَبِيْ قِلَابَةَ، عَنْ أَبِي الْـمُهَلَّبِ عَنْهُ وَلِأَبِيْ عَوَانَةَ مِنْ طَرِيْقِ أَبَانَ وَغَيْرِهِ، عَنْ يَحْيَىٰ فَصَلَّيْنَا خَلْفَهُ وَنَحْنُ لَا نَرَى إِلَّا أَنَّ الْـجِنَازَةَ قُدَّامَنَا وَمِنَ الِاعْتِذَارَاتِ أَيْضًا أَنَّ ذَلِكَ خَاصٌّ بِالنَّجَاشِيِّ، لِأَنَّهُ لَـمْ يَثْبُتْ أَنَّهُ صلى الله عليه وسلم صَلَّىٰ عَلَىٰ مَيِّتٍ غَائِبٍ غَيْرِهِ، قَالَ الْـمُهَلَّبُ وَكَأَنَّهُ لَـمْ يَثْبُتْ عِنْدَهُ قِصَّةُ مُعَاوِيَةَ اللَّيْثِيِّ.
উপর্যুক্ত বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায় যে, নাজ্জাসীর নামাযে জানাযা গায়েবানা ছিল না, বরং নাজ্জাসীর লাশ মদীনায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস

Friday, April 10, 2015

ক্বাছীদায়ে নু'মান :


ক্বাছীদায়ে নু'মান :

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, হাবীবুল্লাহ, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহাম শান মুবারকে রচিত একটি মহা মূল্যবান কিতাব হচ্ছে "ক্বাছীদায়ে নু'মান"।

এ সুমহান কিতাব খানা রচনা করেছেন বিশ্ব বিখ্যাত ইমাম, ইমামুল আইম্মাহ, ইমামে আযম,ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি।

এ সুমহান কাব্যগ্রন্থে প্রতিটা পংক্তিতে তিনি হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-সিফাত করেছেন, এবং হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার অনেক আক্বীদা শরীফ গুলো এ মহান কিতাবে বর্ননা করেছেন।
এ কিতাবে মোট ৫৩ টি পংক্তি রয়েছে । ইতিপূর্বে ধারাবাহিকভাবে ১০ টি পোস্ট করেছিলাম। এখন আপনাদের খেদমতে সবগুলো পংক্তি একত্রে পোস্ট করা হলো-

ﻳﺎﺳﻴﺪ ﺍﻟﺴﺎﺩﺍﺕ ﺝﺀﺗﻚ ﻗﺼﺪﺍ
ﺍﺭﺟﻮ ﺭﺿﺎﻙ ﻭﺍﺣﺘﻤﻲ ﺑﺤﻤﺎﻙ

অর্থ: হে মহান সাইয়্যিদ ! আপনার মহান সন্তুষ্টি ও আশ্রয় লাভের উদ্দেশ্যে আমি আপনার নিকটে এসেছি। "

ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺧﻴﺮﺍ ﺍﺧﻼﺀﻕ ﺍﻥ ﻟﻲ
ﻗﻠﺒﺎ ﻣﺸﻮﻗﺎ ﻻ ﻳﺮﻭﻡ ﺳﻮﺍﻙ

অর্থ: হে সৃষ্টির সর্বোত্তম ! আল্লাহ পাক উনার কসম করে বলছি আমার এই আশেক হৃদয় শুধু আপনাকেই চায়, আর কাউকে নয়।"

ﻭﺑﺤﻖ ﺟﺎﻫﻚ ﺍﻧﺒﻲ ﺑﻚ ﻣﻐﺮﻡ
ﻭﺍﺍﻟﻠﻪ ﻳﻌﻠﻢ ﺍﻧﻨﻲ ﺍﻫﻮﺍﻙ

অর্থ: আল্লাহ পাক উনার মহিমার কসম ! আমি শুধ আপনারই অনুরাগী। আল্লাহ পাক জানেন, আমি শুধু আপনাকে চাই।"

ﺍﻧﺖ ﺍﻟﺬﻱ ﻟﻮﻻﻙ ﻣﺎ ﺧﻠﻖ ﺍﻣﺮﺀ
ﻛﻼﻭ ﻻ ﺧﻠﻖ ﺍﻟﻮﺭﻱ ﻟﻮﻻﻙ

অর্থ : আপনি না হলে কোন কিছু সৃষ্টি করা হতো না। আপনি না হলে কিছুতেই কায়িনাত সৃষ্টি হতোনা।"

ﺍﻧﺖ ﺍﻟﺬﻱ ﻣﻦ ﻧﻮﺭﻙ ﺍﻟﺒﺪﺭ ﺍﻛﺘﺴﻲ
ﻭﺍﻟﺸﻤﺲ ﻣﺸﺮﻗﺔ ﺑﻨﻮﺭ ﺑﻬﺎﻙ

অর্থ : আপনার নূর মুবারকের পোশাক পরে চন্দ্র আলোকিত হয়েছে ।
আপনারই নূর মুবারকের আভায়
সূর্য জ্যোতির্ময় হয়েছে।

انت الذي لما رفعت الي السماء
بك قد سمت وتزينت لسراك

অর্থ: আপনাকে (হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উর্ধাকাশে ভ্রমন করানোর জন্যেই আকাশ সুউচ্চ এবং শুশোভিত হয়েছে।"

انت الذي ناداك ربك مرحبا
ولقد دعاك لقربه وحباك

অর্থ: আপনাকে আপনার মহান রব (মীরাজ শরীফে) সাদর সম্ভাষণ জানিয়েছেন। তিনি আপনাকে একান্তে নিজের কাছে ডেকে নিয়ে নৈকট্য দান করেছেন।

انت الذي فينا سالت شفاعة
لباك ربك لم تكن لسواك

অর্থ: আপনি যখন আমাদের জন্য শাফায়াত চাইলেন, আপনার রব সেটা মঞ্জুর করলেন। এ মর্যাদা আপনি ছাড়া আর কেউ অর্জন করতে পারে নাই।

انت الذي لما توسل ادم
من زلة بك فاز وهو اباك

অর্থ: আপনার সুমহান উসীলায় হযরত আদম আলাইহিস সালাম দুয়ার অনুমতি লাভ করলেন,অথচ তিনি আপনার আদি পিতা।

وبك الخليل دعا فصارت نره
بردا وقد خمدت بنور سناك

অর্থ: আপনারই সুমহান উসীলা দিয়ে হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম দোয়া করলেন, ততক্ষনাৎ সে আগুন ঠান্ড হয়ে গেল।"

ﻭﺩﻋﺎﻙ ﺍﻳﻮﺏ ﻟﻀﺮ ﻣﺴﻪ
ﻓﺎﺯﻳﻞ ﻋﻨﻪ ﺍﻟﻀﺮ ﺣﻴﻦ ﺩﻋﺎﻙ

অর্থ: হযরত আইয়ুব আলাইহিস সালাম উনার বিশেষ প্রয়োজনের সময় (রোগে আক্রান্ত) আপনাকে ডাকলেন। তৎক্ষণাৎ উনার সে প্রয়োজন পুরা হয়ে গেল (সুস্থ
হয়ে গেলেন)।

ﻭﺑﻚ ﺍﻟﻤﺴﻴﺢ ﺍﺗﻲ ﺑﺸﻴﺮﺍ ﻧﺤﺒﺮﺍ
ﺑﺼﻔﺎﺕ ﺣﺴﻨﻚ ﻣﺎﺩﺣﺎ ﺑﻌﻼﻙ

অর্থ: হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম আপনার সুমহান আগমনের সুসংবাদ নিয়ে এসেছিলেন। তিনি আপনার সৌন্দর্য এবং সুউচ্চ মর্যাদার
প্রসংসা করেছেন।

ﻭﻛﺬﺍﻙ ﻣﻮﺳﻲ ﻟﻢ ﻳﺰﻝ ﻣﺘﻮﺳﻼ
ﺑﻚ ﻓﻲ ﺍﺍﻗﻴﺎﻣﺔ ﻳﺤﺘﻤﻲ ﺑﺤﻤﺎﻙ

অর্থ: হযরত মুসা আলাইহিস সালাম এই দুনিয়াতে আপনারই
উসীলা নিয়েছেন। আবার হাশরের দিনও আপনার আশ্রয় চাইবেন।

ﻭﺍﻻﻧﺒﻴﺎﺀ ﻭﻛﻞ ﺧﻠﻖ ﻓﻲ ﺍﻟﻮﺭﻱ
ﻭﺍﻟﺮﺳﻮﻝ ﻭ ﻻﻣﻼﻙ ﺗﺤﺖ ﻟﻮﺍﻙ

অর্থ: সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, রাজা বাদশা এবং সমস্ত সৃষ্টি জগৎ আপনারই ঝান্ডাতলে আশ্রয় চাইবে

لك معجزات اعجزت كل الوري
وفضاءل جلت فليس تحاك

অর্থ: আপনার অনেক বিস্ময়কর মুজিজা শরীফ আছে। আরো আছে অগনিত সুমহান গুনাবলি, যা বর্ননা করে শেষ করা যাবে না।"

نطق الذراع بسمه لك معلنا
والضب قد لباك حين اتاك

অর্থ: বিষধর প্রানী নত মস্তকে আপনার সাথে কথা বলেছে। গুইসাপও আপনার ডাকে সাড়া দিয়ে হাজির হয়েছে ।

والذءب جاءك و الغزالة قد اتت
بك تستجير و تحتمي بحماك

অর্থ: জঙ্গলের নেকড়ে বাঘ এবং হরিনী আপনার নিকট আশ্রয় এবং নিরাপত্তা লাভের জন্য এসেছে।

وكذ الو حوش اتت اليك وسلمت
وشكا البعير اليك حين راك

অর্থ: বন্যপশুরা আপনার কাছে এসে সালাম দিয়েছে। আর উট আপনাকে দেখে নিজের কষ্টের কথা ব্যক্ত করেছে।

ودعوت اشجارا اتتك مطيعة
وسعت اليك مجيبة لنداك

অর্থ: আপনি গাছকে ডাক দিয়েছেন, আপনার ডাকে সাড়া দিয়ে গাছ অনুগত হয়ে আপনার পানে ছুটে এসেছে।

والماء فاض براحتيك وسبحت
صم الحصي بالفضل في يمناك

অর্থ: আপনার পবিত্র হাত মুবারক থেকে পানির ফোয়ারা প্রবাহিত হয়েছে, আর আপনার ডান হাতে নির্বাক পাথরও তাসবীহ পাঠ করেছে।

وعليك ظللت الغمامة في الوري
والجذع حن الي كريم لقاك

অর্থ: মেঘ আপনার মাথা মুবারকের উপর ছায়া দিয়েছে। আপনার সাক্ষাৎ লাভের আশায় শুষ্ক খেজুর গাছের কান্ড ঢুকরে কেঁদেছিলো।

وكذاك لا اثرلمشيك في الثري
والصخر قد غاصت به قدمك

অর্থ: নরম মাটিতে আপনার চলার চিহৃ পরে নাই, আবার কঠিন পাথরে আপনার কদম মুবারকের ছাপ বসে গিয়েছে।

وشفيت ذالعاهات من امراضه
وملات كل الارض من جدواك

অর্থ: আপনি রোগীকে রোগ ব্যাধি হতে আরোগ্য দান করেছেন, এবং সমগ্র পৃথিবী তথা ক্বায়িনাতকে আপনার অনুগ্রহ দ্বারা পরিপূর্ণ করেছেন।

ورددت عين قتادة بعد العمي
وابن الحصين شفيته بشفااك

অর্থ: অন্ধ হয়ে যাওয়া হযরত ক্বাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার চোখের দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছেন, আর অসুস্থ হযরত ইবনে হাসীন রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে সুস্থ করে দিয়েছেন।

وكذا خبيبا وابن عفرا بعدما
جر حا شفيتهما بلمس يداك

অর্থ: হযরত খুবাইব এবং হযরত ইবনে আফরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা উনাদের আপনার দুই হাত মুবারকের স্পর্শে সুস্থ করে দিয়েছেন ।"

وعلي من رمد اذ داويته
في خيبر فشفي بطيب لماكا

অর্থ: খয়বারে আপনার ঠোঁট মুবারকের সুগন্ধি মুবারক দ্বারা হযরত আলী আলাইহিস সালাম ওয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার চোখ মুমারকের অসুস্থতা সারিয়ে দিয়েছেন।

وسالت ربك في ابن جابر بعد ما
ان مات فاحياه و قد ارضاك

অর্থ: আপনার দোয়ায় হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার শহীদ হয়ে যাওয়া দুই সন্তানকে জীবিত করে আল্লাহ পাক আপনাকে সন্তুষ্ট করেছিলেন।

شاة مست لام معبد التي
نشفت فدرت من شفا رقياك

অর্থ: হযরত উম্মে মা'বাদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহা উনার দুধ শুকিয়ে যাওয়া বকরী আপনার হাত মুবারকের স্পর্শে আবারো দুগ্ধবতী হয়েছিল।

ودعوت عام القحط ربك معلنا
فانهل قطر السحب حين دعاك

অর্থ: অনাবৃষ্টি এবং দুর্ভিক্ষের বছর আপনি দোয়া করেছিলেন, সাথে সাথে মুশুলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল।

ودعوت كل الخلق فانقادوا الي
دعواك طوعا سامعين نداك

অর্থ: সমগ্র সৃষ্টি জগৎকে আপনি সত্যের দাওয়াত দিলেন, সবাই স্বেচ্ছায় আপনার দাওয়াত মুবারকে সাড়া দিয়েছিল।"

وخفضت دين الكفر يا علم الهدي
ورفعت دينك فاستقام هداك

অর্থ: হে সমগ্র ক্বায়িনাতের হেদায়েত ! আপনি কুফরের দ্বীনকে অবনত করে নিজের পবিত্র দ্বীন মুবারককে উন্নত করেছেন। তাই আপনার পথ সুদৃঢ় হয়েছে ।

اعداك عادوا افي القليب بجهلهم
صر عي وقدحرموا الرضي بجفاك

অর্থ: আপনার প্রতি শত্রুতা তাদের অজ্ঞতা নিয়ে অন্ধ কুপেই পড়ে রয়েছে। আপনার সাথে শত্রুতার কারনে তারা আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়েছে ।

في يوم بدر قد اتتك ملاءك
من عند ربك قاتلت اعداك

অর্থ: বদরের জিহাদে আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে ফিরিশতাগন এসে আপনার শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদ করেছেন।

والفتح جاءك يوم فتحك مكة
والنصر في الاحزاب قد وافاك

অর্থ: মক্কা শরীফ বিজয়ের দিন আপনার চুড়ান্ত বিজয় প্রকাশ হয়েছিল। আহযাব বা খন্দকের জিহাদে আল্লাহ পাক উনার সাহায্য আপনার সাথেই ছিল।

هود و يونس من بهاك تجملا
وجمال يوسفا من ضياء سناك

অর্থ: হযরত হুদ আলাইহিস সালাম হুদ আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইউনূছ আলাইহিস সালাম আপনার সৌন্দর্যচ্ছটায় ভূষিত ছিলেন। হযরত ইউসূফ আলাইহিস সালাম উনার সৌন্দর্য আপনার মুবারক নূরের ঝলক থেকেই উৎসারিত।"

فقد فقت ياطه جميع الانبياء
طرا فسحان الذي اسراك

অর্থ: ইয়া ত্বোয়াহা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আপনার স্থান সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সকলের উর্ধে। সকল প্রসংসা সেই আল্লাহ পাক উনার যিনি রাতের কিছু সময় আপনাকে নিজের কাছে সফর করিয়েছিলেন।

والله يا يسين مثلك لم يكن
في العالمين و حق من انباك

অর্থ: ইয়া ইয়াসীন ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আল্লাহ পাক উনার কসম , সমগ্র সৃষ্টিকুলে আপনার মত কোন মেছাল নাই।

عن وصفك الشعراء يامدثر
عجزوا وكلوا من صفات علاك

অর্থ: ইয়া মুদ্দাসির ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আপনার সুমহান শান মুবারক কবিগন বর্ননা করতে অক্ষম। আপনার মর্যাদা তুলে ধরতে তার অপারগ।

انجيل عيسي قد اتي بك مخبرا
ولنا الكتاب اتي بمدح حلاك

অর্থ: হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম পবিত্র ইঞ্জিল শরীফে আপনার সুসংবাদ দিয়েছেন। কুরআন শরীফেও আপনার প্রশংসা বিদ্যমান।

ماذا يقول الماد حون وما حسي
ان تجمع الكتاب من معناك

অর্থ: প্রশংসাকারীগন আপনার কি প্রসংসা করবে? লেখকগনই বা আপনার ছানা সিফত কতটুকু লিখতে পারবে ?"

والله لو ان البحار مدادهم
والشعب اقلام جعلن لذاك

অর্থ: আল্লাহ পাক উনার কসম! সকল সমুদ্রকে যদি কালিতে পরিনত হয়, আর সকল গাছগুলোর ডাল যদি কলম বানানো হয়।

لم يقدر الثقلان يجمع قدره
ابدا وما استطاعوا له ادراك

অর্থ: তরপরও জ্বিন-ইনসান আপনার শান লিখে শেষ করতে পারবে না। উনার হাক্বীকী মর্যাদার সঠিক উপলব্ধি তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

بك لي قليب مغرم ياسيدي
وحشاشة محشوة بهواك

অর্থ: হে আমার সাইয়্যিদ ! আমার হৃদয় আপনারই ইশকে আসক্ত। আমার প্রান শুধু আপনারই ভালোবাসায় পরিপূর্ণ ।

فاذا سكت ففيك صمتي كله
واذا نطقت فماد حا علياك

অর্থ: আমি যখন চুপ থাকি তখন আপনারই চিন্তা করি, আবার যখন কথা বলি তখন আপনারই প্রসংসা করি।

واذا سمعت فعنك قولا طيبا
واذا نظرت فما اري الاك

অর্থ: যখন কিছু শুনি, তখন আপনারই কোন উত্তম বানী শুনি। যখন কিছু দেখি, তখন শুধু আপনাকেই দেখি ।"

ﻳﺎ ﻣﺎ ﻟﻜﻲ ﻛﻦ ﺷﺎﻓﻌﻲ ﻓﻲ ﻓﺎﻗﺘﻲ
ﺍﻧﻲ ﻓﻘﻴﺮ ﻓﻲ ﺍﻟﻮﺭﻱ ﻟﻐﻨﺎﻙ

অর্থ: হে আমার মালিক ! আমার প্রয়োজন কালে আপনি আমার জন্য সুপারিশ করুন।
পৃথিবীতে আমি শুধু আপনারই ঐশ্বর্যের মুখাপেক্ষী।

ﻳﺎﺍﻛﺮﻡ ﺍﻟﺜﻘﻠﻴﻦ ﻳﺎ ﻛﻨﺰ ﺍﻟﻮﺭﻱ
ﺟﺪ ﻟﻲ ﺑﺠﻮﺩﻙ ﻭ ﺍﺭﺿﻨﻲ ﺑﺮ ﺿﺎﻙ

অর্থ: হে জ্বীন-ইনসানের সবচাইতে সম্মানিত। হে সমগ্র মখলুকাতের
ধনভান্ডার! আমাকে আপনার দানে ধন্য করুন। আপনার সন্তুষ্টি দিয়ে খুশি করুন।

ﺍﻧﺎ ﻃﺎﻣﻊ ﺑﺎﻟﺠﻮﺩ ﻣﻨﻚ ﻭ ﺍﻡ ﻳﻜﻦ
ﻻﺑﻲ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﻓﻲ ﺍﻻﻧﺎﻡ ﺳﻮﺍﻙ

অর্থ: আমি আপনার করুনার প্রত্যাশী। আপনি ছাড়া সারা জাহানে আবু হানীফার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) কেউ নেই।.

ﻓﻌﺴﺎﻙ ﺗﺸﻔﻊ ﻓﻴﻪ ﻋﻨﺪ ﺣﺴﺎﺑﻪ
ﻓﻠﻘﺪ ﻏﺪﺍ ﻣﺘﻤﺴﻚ ﺑﻌﺮﺍﻙ

অর্থ: একটাই আশা, হিসাবের দিনে আপনি আমার জন্য সুপারিশ করবেন। কারন আমিতো আপনারই রশি আঁকড়ে ধরেছি।

ﻓﻼﻧﺖ ﺍﻛﺮﻡ ﺷﺎﻓﻊ ﻭ ﻣﺸﻔﻊ
ﻭﻣﻦ ﺍﻟﺘﺠﻲ ﺑﺤﻤﺎﻙ ﻧﺎﻝ ﺭﺿﺎﻙ

অর্থ: সবচাইতে মহান সুপারিশকারী সেতো একমাত্র আপনি। যে আপনার আশ্রয়
গ্রহণ করেছে সে আপনার সন্তুষ্টি লাভ করেছে ।

ﻓﺎﺟﻌﻞ ﻗﺮﺍﻙ ﺳﻔﺎﻋﺔ ﻟﻲ ﻓﻲ ﻏﺪ
ﻓﻌﺴﻲ ﺍﺭﻱ ﻓﻲ ﺍﻟﺤﺸﺮ ﺗﺤﺖ ﻟﻮﺍﻙ

অর্থ: আপনার মেহমানদারীকে আমার জন্য কাল সুপারিশে পরিনত করুন। যাতে হাশরের ময়দানে আমি আপনারই ঝন্ডাতলে শামিল হতে পারি।

ﺻﻠﻲ ﻋﻠﻴﻚ ﺍﻟﻠﻪ ﻳﺎﻋﻠﻢ ﺍﻟﻬﺪﻱ
ﻣﺎ ﺣﻦ ﻣﺸﺘﺎﻕ ﺍﻟﻲ ﻣﺸﻮﺍﻙ

অর্থ: হে সমগ্র জগতের হিদায়েতের প্রতিক ! আপনার প্রতি আল্লাহ পাক উনার বেশুমার ছলাত, যতক্ষন কোন আশেক আপনার আশ্রয়ের প্রত্যাশী থাকে।

ﻭﻋﻠﻲ ﺻﺤﺎﺑﺘﻚ ﺍﻟﻜﺮﺍﻡ ﺟﻤﻴﻌﻬﻢ
ﻭﺍﻟﺘﺎ ﺑﻌﻴﻦ ﻭ ﻛﻞ ﻣﻦ ﻭﺍ ﻻﻙ

অর্থ: আপনার সম্মানিত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, উনাদের অনুসারী, আর যারা আপনাকে মুহব্বত করেছেন সকলের
প্রতি বেশুমার ছলাত। "

সুবহানাল্লাহ্ !! সুবহানাল্লাহ্ !!

আল্লাহ পাক আমাদের উক্ত মহান ক্বাছীদা শরীফ উনার হাক্বীকত বুঝার তৌফিক দান করুন।
এবং সকল ফযিলতের হিসসা দান করুন।

আমীন !

পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ পর্ব-১


পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ উনার সময় ইয়া নবী, ইয়া রসূল বলে সম্বোধন করার শরয়ী ফায়সালা
এবং বিরোধী পক্ষের খোরা যুক্তির খন্ডন মূলক জবাব ........................ পর্ব-১

আলীমুল হাকীম আল্লাহ্ পাক উনিই সকল হামদ ও শুকরিয়ার মালিক | যিনি পবিত্র মহামহিম | সর্বোত্তম আখলাকের অধিকারী আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অনন্তকালের জন্য অফুরন্ত ছলাত ও সালাম |

কিছু সংখ্যক জাহিল ও গুমরাহ লোক কিল্লতে ইলম ও কিল্লতে ফাহম অর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বলে থাকে যে, “পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ উনার সময় ‘ইয়া নবী সালামু আলাইকা, ইয়া রসূল সালামু আলাইকা, ইয়া হাবীব সালামু আলাইকা, ছলাওয়াতুল্লাহ আলাইকা’- এভাবে পবিত্র সালাম শরীফ পেশ করলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানহানী হয় | তাই এভাবে সালাম পেশ করা ঠিক নয় |”

তাদের আপত্তিকর বিষয়গুলো হচ্ছে-

(ক) نبى-رسول- حبيب এ শব্দগুলো نكرة (নাকিরাহ) বা অপরিচিত তাই এগুলোকে يا (ইয়া) হরফে নিদা দ্বারা ডাকলে معرفة (মা’রিফাহ) বা পরিচিত হয়ে যায় বটে, তবে ডাকার পূর্বে অপরিচিত থেকে যায় | তাই يا نبى ‘ইয়া নবী’ এভাবে সালাম পেশ করা ঠিক নয় | বরং يا ايها النبى ও يا ايها الرسول ইত্যাদি নিয়মে সালাম পেশ করাই সঠিক বা ক্বাওয়ায়িদ সম্মত |

(খ) يا ইয়া হরফে নিদা শুধু নিকটবর্তী আহ্বানের জন্য আসে | দূরবর্তীর জন্য আসে না | তাই يا نبى বলে সালাম দেয়া ঠিক হবে না | কারণ, তিনি তো আমাদের দেশ থেকে অনেক দূরে আছেন |

(গ) سلام এক পেশ দিয়ে পড়া শুদ্ধ হবে না |

(ঘ) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র সালাম শরীফ পাঠের পূর্বে পবিত্র ছলাত শরীফ বা পবিত্র দুরূদ শরীফ পড়া যাবে না | প্রথমে পবিত্র সালাম শরীফ দিতে হবে | তারপর পবিত্র ছলাত বা পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করতে হবে |

(ঙ) ছন্দ আকারে মিলযুক্ত বাক্যের মাধ্যমে পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করা ঠিক নয় | কারণ, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে এভাবে উল্লেখ নেই | নাউযুবিল্লাহ!

জাহিল ও গুমরাহ লোকদের আপত্তির কারণে কেউ সুওয়াল করতে পারে, يا نبى سلام عليك (ইয়া নবী সালামু আলাইকা) এভাবে সালাম পেশ করা শুদ্ধ হবে কিনা? শুদ্ধ হলে তার দলীল-আদিল্লাহ কি রয়েছে?

এদের জবাবে বলতে হয়, মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,

ان الله وملئكته يصلون على النبى يايها الذين امنوا صلوا عليه وسلموا تسليما

অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হযরত ফেরেশ্তা আলাইহিমুস্ সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র ছলাত শরীফ পাঠ করেন | হে মু’মিনগণ! আপনারাও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র ছলাত শরীফ তথা পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করো এবং পবিত্র সালাম শরীফ প্রেরণ করো প্রেরণ করার মতো |”
(পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৫৬)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করতে নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন | তবে পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ কিভাবে, কোন পদ্ধতিতে পাঠ করতে হবে তা সরাসরি নির্ধারিত করে দেননি | আর এককভাবেও এমন কোনো নিয়ম নির্ধারণ করে দেননি যে, কেবলমাত্র সে নিয়মেই পাঠ করতে হবে, তার বাইরে অন্য কোনো নিয়মে পাঠ করা যাবে না | তাই হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বিভিন্ন পদ্ধতিতে পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করেছেন ও করেন | তন্মধ্যে পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মজলিসে পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র তাওয়াল্লুদ শরীফ পাঠ করার পর দাঁড়িয়ে যে পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করা হয় তা ছন্দ, কবিতা বা ক্বাছীদা শরীফ আকারে | যেহেতু ছন্দ, কবিতা বা ক্বাছীদা শরীফ তৈরি করা, পাঠ করা এবং লেখা সবগুলোই সুন্নত মুবারক |

পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ পর্ব-৪

. পর্ব-৪

মূলকথা হলো- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হিসেবে যারা যেভাবে ‘ইয়া নবী’, ‘ইয়া রসূল’, ইয়া হাবীব বলে খেয়াল করে উনাকে ডাকবে তাই শুদ্ধ হবে | শুধু ‘ইয়া’ ‘হরফে নিদা’ যোগ করার দ্বারাও পূর্বাপর সমস্ত সময়ের জন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই নির্দিষ্ট ও পরিচিত হন |

আধুনিক আরবী সাহিত্য বিশারদগণের সম্রাট অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রখ্যাত কবি আহমদ শাওকী বেক উনার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ “আশ শাওকিয়াত” এর الهمزية النبوية শীর্ষক কবিতায় শুধু يا ‘ইয়া’ হরফে নিদা উল্লেখ করে رسول কে নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেছেন। যেমন,

يا من له عز الشفاعة وحده + وهو المنزه ماله شفعاء

অর্থ: “ইয়া (হে) রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনিই সেই মহান রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যার রয়েছে পরকালে শাফায়াত করার একক মর্যাদা | জাত ও ছিফাতগতভাবে তিনি পূত-পবিত্র ও কলুষমুক্ত | উনার নিজের জন্য কোনো শুপারিশকারীর প্রয়োজন নেই |”

لى فى مديحك يا رسول عرائس+ تيمن فيك وشاقهن جلاء.

অর্থ: “ইয়া রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার প্রশংসা করার ব্যাপারে আমার রয়েছে প্রেমাস্পদের সাথে সাক্ষাতের আকাঙ্খার মতো অফুরন্ত বাসনা | যা আমাকে পূন্য-ধন্য করবেই | আর ওই বাসনাকে আপনার দিবালোকের মতো উজ্জ্বল সুন্দরতম চরিত্র মুবারক আরো উৎসাহিত করে তুলেছে |

অত্র কবিতায় يا رسول আলিফ-লাম যোগ করা ছাড়াই লিখা হয়েছে | এটা ক্বাওয়ায়িদ ও কবিতার নিয়মসম্মত | এভাবে ব্যবহার করায় সম্মানহানী হয় না | বরং এতে সম্মান প্রকাশ হয়েছে |

আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ব্যাপারে যেমন কবিগণ يا نبى، يا رسول (ইয়া নবী, ইয়া রসূল) বলে নিদা করেছেন | তেমনি উনার বংশধর তথা আওলাদে রসূলগণকেও সাহিত্যিক ও কবিগণ يا ‘ইয়া’ হরফে নিদা দ্বারা আহ্বান করেছেন |

“দুরূসুল্ বালাগাহ” উনার ‘মুহাস্সানাতুল মা’নুবিয়্যাহ’র আলোচনায় জনৈক কবির কবিতায় উল্লেখ আছে-

يا سيد احاز لطفا+ له البرايا عبيد
انت الحسين ولكن + جفاك فينا يزيد

অর্থ: “হে ইমাম, সাইয়্যিদ আলাইহিস সালাম! যিনি প্রত্যেক প্রকারের গুণ ও পবিত্রতা নিজের মধ্যে একত্রিত করে রেখেছেন, সমস্ত সৃষ্ট যার গোলাম | আপনি হলেন হযরত হুসাইন আলাইহিস সালাম | কিন্তু কি করা যাবে যে, আমাদের মধ্যে আপনার অমনোযোগ দৈনন্দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে |”

কবি অত্র শ্লোকে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে يا سيد বলে আহ্বান করেছেন | এতে একমাত্র হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে বুঝানো হয়েছে | অথচ পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ সাইয়্যিদ বা আওলাদে রসূল রয়েছেন | অর্থাৎ এখানে سيد শব্দটি যদিও নাকিরাহ, এর পূর্বে يا ‘ইয়া’ হরফে নিদা যুক্ত করার সাথে সাথে তা معرفة (মা’রিফাহ) বা নির্দিষ্ট হয়েছে | যা পূর্বাপর সব সময়ের জন্য হযরত হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে বুঝাচ্ছে |

তেমনিভাবে يا حبيب، يا نبى، يا رسول দ্বারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই আহ্বান করা হয়েছে বুঝতে হবে | তাই আলিফ-লাম ছাড়া শুধু يا ‘ইয়া’ হরফে নিদা দ্বারা সম্মান ও মর্যাদাই প্রকাশ পায়।

বাতিল ও গুমরাহদের বক্তব্য হলো- معرفة অর্থ পরিচিত ও نكرة অর্থ অপরিচিত |

এর জবাবে বলতে হয়-

আরবী ক্বাওয়ায়িদ অনুযায়ী বাতিলদের প্রদত্ত অর্থ ভুল, ধোঁকাপ্রসূত, মনগড়া ও ফিতনামূলক | কারণ, معرفة ও نكرة আরবী নাহু শাস্ত্রের দুটি অন্যতম পরিভাষা, যার অর্থ হলো معرفة (নির্দিষ্ট) ও نكرة (অনির্দিষ্ট) | যদিও লুগাত বিশারদগণ বিভিন্ন অর্থ নিয়েছেন | তবে লুগাতে হাজারো অর্থ থাকলেই যে সব অর্থ সবক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে হবে তা নয় | বরং পরিভাষা অনুযায়ী প্রয়োগ করতে হবে |

যেমন, আল্লামা হযরত সিরাজুদ্দীন উছমান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “হিদায়াতুন্ নাহু” কিতাবে উল্লেখ করেছেন,

المعرفة اسم وضع لشىء معين ... والنكرة ما وضع لشىء غير معين كرجل

অর্থ: “ معرفة (মারিফাহ) এমন একটি اسم (ইস্ম) বা বিশেষ্য যাকে কোনো নির্দিষ্ট কিছুর জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে | ..... نكرة (নাকিরাহ) এমন একটি اسم বা বিশেষ্য যাকে কোনো অনির্দিষ্ট কিছুর জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে | যেমন, رجل (রজুলুন) বা এক ব্যক্তি |

হযরত আল্লামা ইবনে হাজিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “কাফিয়া” নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন,

المعرفة ما وضع لشىء بعينه ... النكرة ما وضع لشىء لا بعينه

অর্থ: “معرفة (মারিফাহ) এমন একটি اسم (বিশেষ্য) যাকে কোনো নির্দিষ্ট কিছুর জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে | ... نكرة (নাকিরাহ) এমন একটি اسم (বিশেষ্য) যাকে কোনো অনির্দিষ্ট কিছুর জন্য প্রনয়ণ করা হয়েছে |”

অনুরূপ নাহুমীর, মাবাদিউল আরাবিয়া ও অন্যান্য ক্বাওয়ায়িদের কিতাবসমূহে বর্ণিত আছে | তাই প্রমাণিত হলো যে, গুমরাহ ও বেআক্বলদের বক্তব্য অশুদ্ধ; যা ক্বাওয়ায়িদের খিলাফ |

অতএব, প্রমাণিত হলো يا نبى، يارسول، يا حبيب এভাবে সালাম পেশ করা সম্মান প্রকাশক, ক্বাওয়ায়িদ হিসেবে শুদ্ধ এবং গ্রহণযোগ্য |

পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ পর্ব-৬



পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ উনার সময় ইয়া নবী, ইয়া রসূল বলে সম্বোধন করার শরয়ী ফায়সালা
এবং বিরোধী পক্ষের খোরা যুক্তির খন্ডন মূলক জবাব ........... পর্ব-৬

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

قال رب فانظرنى الى يوم يبعثون

অর্থ: “শয়তান (মহান আল্লাহ পাক উনার সামনে) বললো, হে আমার মহান রব! আপনি আমাকে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন |” (পবিত্র সূরা হিজর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৬)

وقل رب زدنى علما

অর্থ: “বলুন, হে আমার মহান রব! আমার ইল্ম বৃদ্ধি করুন |” (পবিত্র সূরা ত্ব-হা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৪)

وقل رب اعوذ بك من همزت الشيطين

অর্থ: “বলুন, হে আমার মহান রব! আমি আপনার কাছে (আমার উম্মত উনাদের ব্যাপারে) শয়তানের প্ররোচনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি |” (পবিত্র সূরা মু’মিনুন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৯৭)

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

قال رب ان قومى كذبون

অর্থ: “হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম তিনি বললেন, হে আমার মহান রব! আমার সম্প্রদায় তো (অন্যায়ভাবে) আমাকে মিথ্যাবাদী বলছে |” (পবিত্র সূরা শুয়ারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৭)

رب هب لى من الصالحين

অর্থ: “(হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট প্রার্থনা করলেন:) হে আমার মহান রব! আমাকে একজন সৎপুত্র দান করুন |” (পবিত্র সূরা ছফ্ফাত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০০)

এ রকম সর্বমোট ৬৭খানা পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ربى এর শেষে ياء متكلم বাদ দেয়া হয়েছে | অনুরূপভাবে নিম্নোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফগুলোতেও ياء বাদ দিয়ে নিদর্শন হিসেবে যের রাখা হয়েছে |

যেমন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون

অর্থ : “আমার ইবাদত-বন্দেগী (মা’রিফত-মুহব্বত অর্জন) করার জন্য আমি জিন ও মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছি |” (পবিত্র সূরা যারিয়াত শরীফ : নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)

ان ارضى واسعة فاياى فاعبدون

অর্থ: “(মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন) আমার যমীন প্রশস্ত | অতএব, তোমরা আমারই ইবাদত-বন্দেগী করো |” (পবিত্র সূরা আনকাবূত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ)

পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ উনার ২৫ ও ৯২ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যেও অনুরূপ নিয়মে উল্লেখ আছে |
তেমনিভাবে এর বিপরীতও আমরা দেখতে পাই هى যমীরের সাথে هيه যুক্ত করে উচ্চাঙ্গের ছন্দ মিলানো হয়েছে |

যেমন, পবিত্র সূরা ক্বারিয়াহ শরীফ উনার ১০, ১১ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে,

وما ادراك ماهية نار حامية

অর্থ: “আপনি জানেন তা (হাবিয়া দোযখ) কি? তা হচ্ছে প্রজ্জ্বলিত অগ্নি |”

এখানে هيه আসলে ছিল هى যা যমীর বা সর্বনাম | هى সর্বনামের পরে ه অক্ষর যুক্ত করণের মধ্যে লক্ষ-কোটি কারণ নিহিত রয়েছে | তন্মধ্যে একটি কারণ হচ্ছে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বাক্যের সাথে মিল ও সাদৃশ্যতা বুঝানো | তাই هيه (হিয়াহ) শব্দ মুবারক ইরশাদ হয়েছে |

অতএব প্রমাণিত হলো, পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র সালাম শরীফ প্রেরণের সময়
يا نبى، يا رسول، يا حبيب উনাদের ياء متكلم কে বাদ দিয়ে নিদর্শন হিসেবে যের দেয়া হয়েছে | ওয়াক্ফের সময় উক্ত যের উহ্য রেখে ইয়া নবী, ইয়া রসূল ও ইয়া হাবীব পড়া হয়; যা পবিত্র কুরআন শরীফ ও ক্বাওয়ায়িদের ভিত্তিতেই ছহীহ |

পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ পর্ব-৭

পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ উনার সময় ইয়া নবী, ইয়া রসূল বলে সম্বোধন করার শরয়ী ফায়সালা
এবং বিরোধী পক্ষের খোরা যুক্তির খন্ডন মূলক জবাব ........... পর্ব-৭

কিছু সংখ্যক জাহিল ও গুমরাহ লোক কিল্লতে ইলম ও কিল্লতে ফাহম অর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বলে থাকে যে, “পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ উনার সময় ‘ইয়া নবী সালামু আলাইকা, ইয়া রসূল সালামু আলাইকা, ইয়া হাবীব সালামু আলাইকা, ছলাওয়াতুল্লাহ আলাইকা’- এভাবে পবিত্র সালাম শরীফ পেশ করলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানহানী হয় | তাই এভাবে সালাম পেশ করা ঠিক নয় |”

তাদের আপত্তিকর বিষয়গুলোর একটি হচ্ছে-
(ক) “ نبى-رسول- حبيب এ শব্দগুলো نكرة (নাকিরাহ) বা অপরিচিত তাই এগুলোকে يا (ইয়া) হরফে নিদা দ্বারা ডাকলে معرفة (মা’রিফাহ) বা পরিচিত হয়ে যায় বটে, তবে ডাকার পূর্বে অপরিচিত থেকে যায় | তাই يا نبى ‘ইয়া নবী’ এভাবে সালাম পেশ করা ঠিক নয় | বরং يا ايها النبى ও يا ايها الرسول ইত্যাদি নিয়মে সালাম পেশ করাই সঠিক বা ক্বাওয়ায়িদ সম্মত |”

তাদের উপরোক্ত বক্তব্যের খন্ডনমূলক জবাবের এটি ৬ষ্ঠ পর্ব যা ধারাবাহিকভাবে পেশ করা হচ্ছে |

(ধারাবাহিক)

হযরত আল্লামা আবূ যায়েদ মুহম্মদ ইবনে আবুল খত্তাব আল ক্বারশী সঙ্কলিত “জামহারাতু আশয়ারিল আরব” নামক কিতাবে বিখ্যাত কবি আমর ইবনে সালিম আল খুযায়ী তিনি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রশংসায় বলেন,

يا رب انى ناشد محمد صلى الله عليه وسلم+ حلف ابينا وابيه الاتلدا

অর্থ: “হে আমার মহান রব! আমি সাইয়্যিদুনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে ছন্দাকারে কবিতা পাঠ করছি | যিনি আমার পিতা ও উনার প্রবীণ পিতার সঙ্গী |”
এখানে ربى ছিল, সহজতার জন্য ياء متكلم কে হযফ করে নিদর্শন হিসেবে যের দেয়া হয়েছে | যের বিশিষ্ট يا رب এতে ওয়াক্ফ করলে ইয়া রব্ পড়তে হয় |

তেমনিভাবে يا نبى، يا رسول، يا حبيب উনাদের শেষে যে ياء ছিল তা বাদ দিয়ে নিদর্শন হিসেবে যের দিয়ে পড়া হয় | এখানে ওয়াক্ফ করার কারণে ইয়া নবী, ইয়া রসূল, ইয়া হাবীব পড়া হয় | যেমন, يا رب (ইয়া রব) পড়া হয় |

Friday, April 3, 2015

বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী(রহ) এর সময়কালের ঘটনা।

বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী(রহ) এর সময়কালের ঘটনা। বোরানপুর গ্রামে একজন ধনবান হিন্দু বাস করতো। লোকজনের মুখে বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানি (রহ) এর গুন গরিমা ও ইসলামের কথা বহুদিন যাবৎ শুনে তার অন্তরে ইসলাম ও বড়পীর (রহ) এর প্রতি শ্রদ্ধা বীজ উপ্ত হতে থাকে। শেষে এমন অবস্থা দাঁড়ায় যে, শেষ পর্যন্ত সে ইসলাম গ্রহন করার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ল।
কিন্তু পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের কারনে প্রকাশ্যে মুসলিম হওয়া সম্ভব হলনা। তাই সে গোপনে ইসলাম গ্রহন করল ও হিন্দু ধর্মের সকল আচার অনুষ্ঠান ও পূঁজা পার্বন ত্যাগ করল।এবং সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।
এর কিছুদিন পরে ঔ নবমুসলিমটি ইন্তেকাল করেন, ফলে তার আত্মীয় স্বজনরা হিন্দু ধর্মের নিয়ম অনুসারে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করার জন্য শ্মশানে নিয়া গেল। সেখানে অতি জাঁকজমকের সাথে নিম-চন্দন দিয়ে তার জন্য চিতা তৈরী করলো। শেষে লোবান ঢেলে চিতায় অগ্নিসংযোগ করলো। মুহূর্তেই আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়লো। দেখতে দেখতে সমস্ত কাঠ-খড়ি পুড়ে শেষ হয়ে গেল, কিন্তু মৃতদেহের একটি পশমও আগুন স্পর্শ করল না। এই কান্ড দেখে উপস্থিত জনতা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল। যেভাবেই হোক শবদেহ দাহ করতেই হবে তাই অপর একটি চিতা তৈরী করে পূর্বের চেয়ে অধিক পরিমান ঘি-চন্দন ও শুকনো কাঠ-খড়ি সাজিয়ে অগ্নি সংযোগ করল। সাথে সাথে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো। কিন্তু তার একটি লোমও দাহ হোক এটা আল্লাহর ইচ্ছা নয়। কিছুক্ষণের মধ্যে সব কাঠ পুড়ে ছাই। কিন্তু গোপনে ইসলাম পালনকারী এই হিন্দুর একটি পশম অগ্নি স্পর্শ করল না। নিরুপায় হয়ে তার আত্মীয় স্বজন লাশ নদীতে ভাসিয়ে দিল।
ইতিমধ্যে বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ) তার এক শিষ্যকে ডেকে বললেন,কয়েকজন লোক নিয়ে নদীর পাড়ে যাও, সেখানে একটা মৃতদেহ পাবে। সে গোপনে ইসলাম গ্রহন করেছিল। তার দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করো। জেনে রেখো, তার নাম আব্দুল্লাহ।
বড়পীর (রহ) এর প্রধান শিষ্য জানতে চাইলেন যে,আব্দুল্লাহ কোন পুণ্যে জ্বলন্ত ভয়াবহ অগ্নি তার কিছুই করতে পারলো না? বড়পীর (রহ) বললেন,সারা জাহানের মালিক ওয়াদা করেছেন যে ব্যাক্তি ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করবে, তার কোন ভয় নেই।তাকে আল্লাহ রক্ষা করবেন । - সুবহানাল্লাহ -

Thursday, April 2, 2015

ইসলাম ধর্মে পা ধরে সালাম করা

পাল্টা জবাব ওহাবীর মুখে ছুড়ে মারলাম
এইটা এক ওহাবী খারেজীর আইডি
সে পোষ্ট করেছে আর লিখেছে
****** ইসলাম ধর্মে পা ধরে সালাম করা হারাম ! ! ! এটি হিহুদী , নাছারা, বিধর্মীদের কাজ। কিন্তু আফসোসের বিষয় আজ কত গুলো ভন্ডরা এই রিতি পালন করে থাকে।************
আসুন ওহাবীদের গালে দলিলের থাপ্পর মারি।
দেখ খবিশেরা নিজের চখে দেখ
কদমবুসি বা কদম চুম্বন, পবিত্র কোন বস্তু চুম্বন বা তাজিমের জন্য দাঁড়ানো জায়েজ কি না?
প্রথমে যারা, বেদাত বেদাত, শেরক শেরক করে চিল্লায় তাদেরই কেতাব থেকে প্রমান, অর্থাৎ দেওবন্দিদের কেতাব হইতে। তার পরে হাদিস দিয়ে প্রমান দেব ইনশা আল্লাহ।
মাওঃ রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী ফাতওয়ায়ে রশিদিয়া ১/৫৪ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন -দ্বিননদার ব্যক্তির তাজিমের জন্য দাঁড়ানো দুরস্ত আছে। এইরূপ ব্যক্তির কদম চুম্বনও দুরস্ত হইবে। ইহা হাদিসের দ্বারা সাব্যস্ত আছে।
(২) -মাওঃ থানবী সাহেব আত্তাকাশ শুফ পুস্তকের ৪২৪ পৃষ্ঠায় একটি হাদিস উদ্ধৃত করিয়া প্রমান করিয়াছেন পীরের প্রিয় পাত্রগণের অভ্যাস এই যে, পীরের হস্ত বা পদ বা কপালে চুম্বন দিয়া থাকেন। ইহাতে কোন দোষ নাই, অবশ্য খিয়াল রাখিতে হইবে যে শরীঅতের হুকুমের কোন ব্যতিক্রম না ঘটে। অর্থাৎ কদম চুম্বন করিতে গিয়ে পীরের পা চাঁটা, পায়ের আঙ্গুল চোষা ইত্যাদি নাজায়েজ কার্য হইতে সতর্ক থাকিতে হইবে।
(৩) - মাওলানা আহমাদ সাঈদ দেও বন্দি সাহেবের লিখিত রাসুলুল্লাহ কি মুযেজাত পুস্তকের ১৪১ টৃষ্ঠায় আছেঃ - বাযযারের হাদিস -(সারমর্ম) বরীদা হইতে বর্ণিত, একটি গ্রামে অমুসলমান (আরবী) হুজুর সঃ কে বলিয়া ছিলেন আমি আপনাকে সিজদা করিব, তখন হুজুর সঃ বলিয়া ছিলেন আমি যদি কোন মানুষকে তাজীমের সেজদা আদেস দিতাম তবে বিবিগণকে তাঁহাদের স্বামীদিগকে সিজদা করিতে বলিতাম। মোটকথা হুজুর সঃ উহাকে আদেশ দিলেন না। তখন ঐ ব্যক্তি বলিল তবে আমাকে হস্ত -পদ চুম্বন করিতে আদেশ দেন। তখন হুজুর সঃ আদেশ দিলেন। সে হুজুর সঃ এঁর হস্ত পদ চুম্বন করিল। এই রূপ একটি হাদিস মুহাদ্দেস হাকিম বর্ণনা করিয়া সহীহ বলিয়া ছেন।। এইরূপ ধরনের একটি হাদিস কে ফাতওয়ায়ে শামীর বরাত দিয়ে
* মাওঃ শফী সাহেব জাওয়াহেরুল ফিকাহ কেতাবে ১/১৯৭ পৃষ্ঠায় সহি হাদিস বলিয়া উল্লেখ করিয়া ছেন। , ইমাম নবাবী আল আজগার কিতাবে উক্ত হাদীস হইতে ইহাই প্রমান করিয়াছেন যে, মুহাব্বত বা ভালবাসা সূত্রে বযুর্গদিগের হস্ত -পদ চুম্বন করিতে পারে।
মিশকাত শরীফে الصا فحة و ا لعا نقة অধ্যায়ে দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে বর্ণিত আছে - হজরত যেরা রাঃ থেকে বর্ণিত আছে, যানি আব্দুল কায়েসের প্রতিনিধিভুক্ত ছিলেন, তিনি বলেন যখন আমরা মদীনা মানোয়ারায় আসলাম তখন আমরা নিজ নিজ বাহন থেকে তাড়া তাড়ি অবতরন করতে লাগলাম। অতঃপর আমরা হুজুর সঃ পবিত্র হাত পায়ে চুমু দিয়ে ছিলাম।,
সময় হাতে আর পেলাম না বলে এত টুকুই লিখলাম প্রয়জন বোধ হলে দ্বিতীয় খণ্ড লিখবো, বানান ভূল থাকলে থাকতে পারে সংশোধনের সময় নেই।
আশা করি যারা শেরেক বেদাত বলে লাফায় তাদের মুখ বন্ধ হল।
কদমবুসীর অর্থ ও দলিল :
কদমবুছীর সংজ্ঞাঃ “কদমবুছী” -এর “কদম”
শব্দটি আরবী যার অর্থ “পা”, আর “বুছী”
শব্দটি ফার্সী যার অর্থ “চুম্বন করা”।
সুতরাং “কদমবুছী” অর্থ হলো “পায়ে চুম্বন করা”।
অর্থাৎ সরাসরি মুখ দিয়ে পায়ে চুম্বন
দেয়াকে “কদমবুছী” বলে। কিন্তু প্রচলিত
অর্থে কদমবুছী বলতে আমাদের দেশে হাত
দিয়ে পা স্পর্শ করে হাতে চুমু খাওয়ার যে প্রচলন
তা মূলতঃ কদমবুছী নয় বরং তা দস্তবুছী।
কদমবুছীর প্রকৃষ্ট উদাহরণ দেখিয়েছেন হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ।
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কদম
মুবারকে সরাসরি চুম্বন করতেন বা বুছা দিতেন তাঁরা,
এমনকি তাঁরা একে অপরকেও
কদমবুছী করেছেন। আর তাই
কদমবুছী হচ্ছে খাছ সুন্নত।
কদমবুছী হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিতঃ
হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে, “হযরত
ওযায়ে ইবনে যারে, তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন,
তিনি বলেন, আমরা আব্দুল কায়েস
গোত্রে থাকা অবস্থায় যখন মদীনা শরীফ-এ
আসতাম তখন তাড়াতাড়ি করে নিজেদের
সওয়ারী হতে নেমে সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাত মুবারক
এবং কদম মুবারকে চুম্বন করতাম।” (আবূ দাউদ
শরীফ, ২য় জিলদ্, পৃষ্ঠা ৭০৯; বযলুল মাজহুদ, ৬ষ্ঠ
জিলদ্, পৃষ্ঠা ৩২৮; ফতহুল বারী, ১১ জিলদ্, পৃষ্ঠা ৫৭;
মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, ৭ম জিলদ্, পৃষ্ঠা ৮০;
আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব)
হযরত সাফওয়ান ইবনে আস্সাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
বলেন, “একবার ইহুদীদের একটি দল
এসে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উভয় হাত মুবারক ও
পা মুবারকে বুছা (চুম্বন) দিলো।” (আবূ দাউদ
শরীফ; নাসাঈ শরীফ; ইবনে মাযাহ শরীফ,
পৃষ্ঠা ২৭০; তিরমিযী শরীফ, ২য় জিলদ্, পৃষ্ঠা ৯৮;
ফতহুল বারী, ১১ জিলদ্, পৃষ্ঠা ৫৭; তুহফাতুল
আহওয়াযী শরহে তিরমিযী, ৭ম জিলদ্, পৃষ্ঠা ৫২৫;
মুছান্নিফে ইবনে আবী শায়বা, ৭ম জিলদ্,
পৃষ্ঠা ৫৬২)
হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত আছে, “এক
ব্যক্তি আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে বলল,
ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
আমাকে এমন কোন বিষয়ে আদেশ করেন,
যা আমার বিশ্বাসকে আরো বৃদ্ধি করবে। তখন
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, “তুমি ঐ
গাছটিকে ডেকে আনো।” অতঃপর
সে ব্যক্তি গাছটির নিকটে গিয়ে বললো, নিশ্চয়
রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তোমাকে ডেকেছেন।
সুতরাং গাছটি এসে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সালাম করলো।
আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে চলে যেতে বললেন,
গাছটি তখন চলে গেল। অতঃপর ঐ
ব্যক্তি অনুমতি সাপেক্ষে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাথা মুবারক ও
উভয় কদম মুবারক বুছা দিল।” (মুস্তাদিরেকে হাকিম;
ফতহুল বারী, ১১ জিলদ্, পৃষ্ঠা ৫৭; তুহফাতুল
আহওয়াযী শরহে তিরমিযী, ৭ম জিলদ্, পৃষ্ঠা ৫২৮;
আল কালামুল মুবীন, পৃষ্ঠা ১৪৬)
হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, “(গাছের সিজদা দেয়ার ঘটনা সংঘটিত হওয়ার
পর) একদিন আমি আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিদমতে আরজ
করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাক আপনার উভয় হাত মুবারক
এবং পা মুবারকে বুছা দেয়ার অনুমতি দিন। আল্লাহ্ পাক-
এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
অনুমতি দিলেন। অতঃপর তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উভয় হাত মুবারক
এবং পা মুবারকে বুছা দিলেন।” (নাসীমুর রিয়াজ
শরহে কাজী আয়াজ ৩য় জিলদ্, পৃষ্ঠা ৫০; কিতাবুল
আযকার লিন্ নববী)
হযরত যায়েদ বিন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
থেকে বর্ণনা রয়েছে যে, “নিশ্চয়ই তিনি হযরত
আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর হাত
মুবারকে বুছা দিয়েছেন। তিনি এটাও বর্ণনা করেন
যে, নিশ্চয়ই হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর হাত ও
পা মুবারকে বুছা দিয়েছেন।” (ফতহুল বারী, ১১
জিলদ্, পৃষ্ঠা ৫৭; তুহফাতুল
আহওয়াযী শরহে তিরমিযী, ৭ম জিলদ্, পৃষ্ঠা ৫২৮)
শুধু তাই নয় বরং হাদীছ শরীফ-এ মাকেও
কদমবুছী করার ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে,
যেমন এ প্রসঙ্গে ফিক্বাহের কিতাবে উল্লেখ
আছে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি তার
মায়ের কদমবুছী করলো সে যেন জান্নাতের
চৌকাঠে চুম্বন করলো।” (মাবসূত লিস্ সারাখ্সী, ১ম
জিলদ্, পৃষ্ঠা ১৪৯)
ইমাম-মুজতাহিদ তথা আউলিয়ায়ে কিরাম
রহ্মতুল্লাহি আলাইহি-এর জীবনীতে কদমবুছীঃ
বস্তুত গভীর শ্রদ্ধা, আদব, মুহব্বত
এবং আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটে কদমবুছীর
মাধ্যমে। আর তাই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুমগণ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কদম
মুবারকে সরাসরি চুম্বন দিয়ে তাঁর প্রতি গভীর
শ্রদ্ধা, মুহব্বত, তা’যীম এবং আনুগত্যের চরম
পরাকাষ্ঠা প্রকাশ করেছেন। এই ধারাবাহিকতায় মুরীদও
তাঁদের অনুসরণে একইভাবে স্বীয় মুর্শিদ
ক্বিবলার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা, পরম মুহব্বত
এবং আনুগত্য প্রকাশ করে থাকে কদমবুছীর
মাধ্যমে। কেননা হাদীছ শরীফ-এ এসেছে,
“হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, শায়খ
(বা মুর্শিদ বা পীর ছাহেব) তাঁর ক্বওম
তথা মুরীদের কাছে তেমন; নবী (আলাইহিস্
সালাম) তাঁর উম্মতের
মাঝে যেমন।” (দাইলামী শরীফ, মাকতুবাত
শরীফ, আত্ তায্কিরাহ ফি আহাদীসিল মুশ্তাহিরাহ,
মাকাছিদুল হাসানা)
হাদীছ শরীফ-এ আরো এসেছে, “হযরত আনাছ
বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত,
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
তোমরা পীর-মাশায়িখকে সম্মান করবে। পীর-
মাশায়িখকে সম্মান করা আল্লাহ্ পাককে সম্মান করারই
নামান্তর। কাজেই যে ব্যক্তি তাঁদের যথাযথ সম্মান
করে না সে আমাদের দলভূক্ত
নয়।” (দাইলামী শরীফ, আত্ তায্কিরাহ
ফি আহাদীসিল মুশ্তাহিরাহ)
পক্ষান্তরে যারা অহংকারী, যাদের
অন্তরে রয়েছে আত্ম-অহংকার তারা কখনও
কদমবুছীর ফযীলত, বরকত লাভ করতে পারে না।
অন্তরে লালিত অহংকারই
তাকে কদমবুছী থেকে বিরত রাখে। অহংকার
ব্যক্তি কখনও
হাক্বীক্বীভাবে কদমবুছী করে না। যদি লোক
লজ্জার ভয়ে কিংবা অবস্থার চাপে করে তা হয় একান্ত
অন্তঃসারশুন্য। খুব কমসংখ্যক লোক
নিজেকে নিকৃষ্ট, হীন ও তুচ্ছ
মনে করতে পারে, “বড় যদি হতে চাও ছোট হও
আগে” এই নীতি বাক্যের উপর আমল
করতে পারে।
---------------------
আসুন ওহাবীদের গালে দলিলের থাপ্পর মারি।
প্রসঙ্গঃ কদমবুসি ও হাতবুসি ১০০% জায়েজ- কুরআন হাদিস থেকে প্রমান এবং ওহাবী আহলে খাব্বিসদের পর্দা ফাস।
কুরআন-হাদিস থেকে দলিল দেওয়ার আগে ওহাবীরা সাধারন মানুষকে যেভাবে বলে ধোকা দেয় তার পর্দা ফাস করা আগে প্রয়োজন মনে করতেছি।
আহলে খাব্বিস ওহাবীরা এই বলে সাধারন মানুষকে ধোকা দেয় যে, মা-বাবা,ওস্তাত এর হাত-পা চুম্বন করলে মাথা নত হয়ে যায় আর সাজদা একমাত্র আল্লাহর কাছেই করতে হয় তাই কদমবুসি-হাতবুসি হারাম, শীরক ইত্যাদি।
যারা এরুপ বলে সেইসব গাধার কাছে আগে প্রশ্ন যে যে ‘সাজদা’ আর ‘মাথা নত করা কি এক জিনিস.?
নিষ্চয় সাজদা একমাত্র আল্লাহর জন্য অন্য কাউকে করলে তা নিঃসন্দেহ শিরক হবে এতে কোন সন্ধেহ নয়।
কিন্তু মাথা নত করলে কি সাজদা হয়।........?
ওহাবীদের মতে যদি এরুপ হয় তাহলে
লক্ষ করুন
- আমরা জুতা পড়ি কিন্তু জুতার ফিতা বাধার সময় আমাদের মাথা নত হয়ে যাচ্ছে তাহলে কি জুতা পড়াও শিরক..?
- রাস্তা হাটতে আপনার হাত থেকে কোন কিছু পড়ে গেল ধরুন কলম এখন কলমকে উঠাতে আপনার মাথা নত হয়ে যাচ্ছে তাহলে এটাও কি শিরক..?
- এভাবে একটা না হাজারটা কারন আমরা দাড়াতে পারি যেখানে আপনি মাথা নত না করলে আপনার চলবেই না।
ওহাবীদের এই ধোকাবাজী এখন দিবালোকের মত পরিস্কার যে এরা সাজদাকে মাথা নত এর সাথে মিলিয়ে মুসলিম মিল্লাতকে ধোকা দিচ্ছে। আসলে মাথা নত করা,কুদমবুসি,হাতবুসি ইসলামে জায়েজ যা আমাদের সাহাবাদের সংস্কৃতি থেকে লক্ষ করা যায়।
এখন যদি হাতবুসি বা কদম বুসি হারাম হয় তাহলে আমি পুরো জ্ঞানে বলছি যে যারাই এরুপ বলে অর্থাত ওহাবীরা তারা এবং তাদের সন্তানরাও হারামী, কারন সুত্র তাদেরই যেমন জানি না ওহাবীরা বাসর রাতে তাদের স্ত্রীকে কোথায় কোথায় চুম্বন দিয়েছে আর সেই চম্বনের ফল তাদের সন্তানরা কি হারামী হবে না। (মাইন্ড করবেন না আমি আপনাদের সুত্রেই কথা বলছি।)
কথা অনেক হল। এবার্ আসুন পবিত্র কদম বুসি,হাতবুসি কুরআন হাদিস থেকে প্রমান করি।
Lokho korun-
পবিত্র বস্তুকে চুমু দেয়া জায়েয। কুরআন করীম ইরশাদ ফরমান-
وَادْ خُلُوالْبَابَ سُجَّدًا وًّقُوُلُوُا حِطَّةٌ
অর্থাৎ ওহে বনী ঈসরাইল বায়তুল মুকাদ্দিসের দরজা দিয়ে নতশিরে প্রবেশ কর। এবং বল আমাদের গুনাহ মাফ করা হোক। এ আয়াত থেকে অবগত হওয়া গেল যে আম্বিয়া কিরামের আরামগাহ বায়তুল মুকাদ্দিসকে সম্মান করানো হলো অথর্ৎ বনী ঈসরাইলকে ওখানে নতশিরে প্রবেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ আয়াত দ্বারা এটাও বোঝা গেল যে পবিত্র স্থান সমূহে তওবা তাড়াতাড়ি কবুল হয়। মিশ্কাত শরীফের اَلْمُصَافَحَةِ وَالْمُعَانَقَةِ অধ্যায়ের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে বর্ণিত আছে-
وَعَنْ ذِرَاعٍ وَّكَانَ فِىْ وَفْدِ عَبْدِ الْقَيْسِ قَالَ لَمَّا قَدِمْنَا الْمَدِيْنَةَ فَجَعَلْنَا نَتَبَادَرُ مِنْ رَّوَاحِنَا فَنُقَبِّلُ يَدَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرِجْلَه‘
হযরত যেরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, যিনি আব্দুল কায়সের প্রতিনিধিভুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন- যখন আমরা মদিনা মনোয়ারায় আসলাম তখন আমরা নিজ নিজ বাহন থেকে তাড়াতাড়ি অবতরণ করতে লাগলাম। অতঃপর আমরা হুযুর আলাইহিস সালামের পবিত্র হাত-পা চুমু দিয়েছিলাম।
মিশ্কাত শরীফের اَلْكَبَائِرُ وَعَلَامَاْتِ النِّفَاقِ শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত ছিফওয়ান ইবনে আস্সাল, থেকে বর্ণিত আছে فَتَقَبَّلَ يَدَيْهِ وَرِجْلَيْهِ (অতঃপর হুযুর আলাইহিস সালামের হাত-পায় চুমু দেন।) মিশ্কাত শরীফে مَا يُقَالَ عِنْدَ مَنْ حَضَرَهُ الْمَوْتِ শীর্ষক অধ্যায়ে তিরমিযী ও আবু দাউদ শরীফের বরাত দিয়ে বর্ণিত আছে-
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَبَّلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عُثْمَانَ ابْنُ مَطْعُوْنٍ وَهُوَ مَيِّتٌ
অর্থাৎ হুযুর আলাইহিস সালাম হযরত উছমান ইবনে মাতউনকে মৃতবস্থায় চুমু দিয়েছেন। প্রসিদ্ধ শিফা শরীফে উলল্লেখিত আছে-
كَانَ اِبْنُ عُمَرَ يَضَعُ يَدَهْ عَلَى الْمِنْبَرِ الَّذِىْ يَجْلِسُ عَلَيْهِ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِى الْخُطْبَةِ ثُمَّ يَضَعُهَا عَلَى وَجْهِهِ
যে মিম্বরে দাঁড়িয়ে হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুৎবা দিতেন, হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর সেটাতে হাত লাগিয়ে মুখে মাখতেন (চুমু দিতেন) আল্লামা ইবনে হাজরের রচিত শরহে বুখারীর ষষ্ঠ পারায় ১১৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছে-
اِسْتَنْبَطَ بَعْضُهُمْ مِنْ مَشْرُوْعِيَّةِ تَقْبِيْلِ الْاَرْكَانِ جَوَازَ تَقْبِيْلِ كُلِّ مَنْ يَّسْتَحِقُّ الْعَظْمَةَ مِْن اَدَمِىٍّ وَغَيْرِهِ نُقِلَ عَنِ الاِْمَامْ اَحْمَدَ اَنَّه‘ سُئِلَ عَنْ تَقْبِيْلِ مِنْبَرِ النَّبِىِّ عَلَيْهِ السَّلاَمَ وَتَقْبِيْلِ قَبْرِهِ فَلَمْ يَرَبِهِ بَاسًا وَّنُقِلَ عَنْ ِابْنِ اَبِى الصِّنْفِ اليَمَانِى اَحَدِ عُلَمَاءِ مَكَّةَ مِنَ الشَّافِعِيَّةِ جَوَازَ تَقْبِيْلِ الْمُصْحَفِ وَاَجْزَاءِ الْحَدِيْثِ وَقُبُوْرِ الصَّالِحِيْنَ مُلْخَصًا
অর্থাৎ কাবা শরীফের স্তম্ভগুলোর চুম্বন থেকে কতেক উলামায়ে কিরাম বুযুর্গাণে দ্বীন ও অন্যান্যদের পবিত্র বস্তুসমূহ চুম্বনের বৈধতা প্রমাণ করেন। ইমাম আহমদ ইব্নে হাম্বল (রহঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে তার কাছে কেউ জিজ্ঞাসা করেছিল- হুযূর আলাইহিস সাললামের মিম্বর বা পবিত্র কবর মুবারকে চুমু দেয়াটা কেমন? তিনি এর উত্তরে বলেছিলেন, কোন ক্ষতি নেই। মক্কা শরীফের শাফেঈ উলামায়ে কিরামের অন্যতম হযরত ইবনে আবিস সিন্ফ ইয়ামানী থেকে বর্ণিত আছে- কুরআন করীম ও হাদীছ শরীফের পাতাসমূহ এবং বুযুর্গানে দ্বীনের কবরসমূহ চুমু দেয়া জায়েয।
প্রখ্যাত ‘তুশেখ’ গ্রন্থে আল্লামা জালাল উদ্দিন সয়ুতী (রহঃ) বলেছেন-
اِسْتَنْبَطَ بَعْضُ الْعَارِفِيْنَ مِنْ تَقُبِيْلِ الْحَجَرِ الْاَسْوَدِ تَقْبِيْلَ قُبُورِ الصَّالِحِيْنَ
হাজর আসওয়াদের চুম্বন থেকে কতেক আরেফীন বুযুর্গানে কিরামের মাযারে চুমু দেয়ার বৈধতা প্রমাণ করেছেন।
উপরোক্ত হাদীছে, মুহাদ্দিছীন ও উলামায়ে কিরামের ইবারত থেকে প্রমাণিত হলো যে বুযুর্গানে দ্বীনের হাত, পা, ওনাদের পোশাক, জুতা, চুল মোট কথা সব কিছু পবিত্র বস্তু; অনুরূপ কাবা শরীফ, কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের পাতা সমূহের উপর চুম্বন জায়েয ও বরকতময়। এমনকি বুযুর্গানে দ্বীনের চুল, পোশাক ও অন্যান্য পবিত্র বস্তুর সম্মান করা এবং যুদ্ধকালীন ও অন্যান্য মুসিবতের সময় এগুলো থেকে সাহায্য লাভ করা কুরআন করীম থেকে প্রমাণিত আছে। কুরআন করীম ইরশাদ ফরমান-
وَقَالَ لَهُمْ نَبِيُّهُمْ اِنَّ اَيَةَ مُلْكِهِ اَنْ يَّاْتِيَكُمُ التَّابُوْتُ فِيْهِ سَكِيْنَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَبَقِيَّةٌ مِّمَّا تَرَكَ اَلُ مُوْسَى وَاَلُ هَرُوْنَ تَحْمِلُهُ اَلْمَلَئِكَةُ
(বনী ইসরাঈলীদেরকে তাদের নবী বলেছেন, তালুতের বাদশাহীর নিদর্শন হচ্ছে তোমাদের কাছে সেই তাবুত (সিন্দুক) আসবে যেথায় তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে চিত্ত প্রশান্তি এবং হযরত মুসা ও হযরত হারুনের পবিত্র বস্তু সমূহ থাকবে; ফিরিশতাগণ এটা বহন করে আনবে।) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তফসীরে খাযেন, রূহুল বয়ান, মদারেক, জালালাইন ও অন্যান্য তফসীরে লিখা হয়েছে যে তাবুত হচ্ছে সীসা ও কাঠের তৈরী সিন্দুক, যেখানে নবীগণের ফটো (এ সব ফটো কোন মানুষের তৈরী ছিল না বরং কুদরতী ছিল) ওনাদের আবাসসমূহের নকশা, হযরত মুসা (আঃ) এর লাঠি, তাঁর কাপড়, জুতা এবং হযরত হারুন (আঃ) এর লাঠি, টুপি ইত্যাদি ছিল। বনী ইসরাঈলগণ যখন শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতো, তখন বরকতের জন্য ওটাকে সামনে রাখতো এবং যখন খোদার কাছে দুআ করতো, তখন ওটাকে সামনে রেখেই প্রার্থনা করতো। সুতরাং সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে বুযুর্গানে দ্বীনের পবিত্র বস্তু থেকে ফয়েয গ্রহণ এবং ওগুলোকে সম্মান করা নবীগণেরই অনুসৃত পথ। তফসীরে খাযেন, মদারেক, রূহুল বয়ান ও কবীরে বার পারার সূরা ইউসুফের আয়াত فَلَمَّا ذَهَبُوْا بِهِ এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে যে, যখন হযরত ইয়াকুব (আঃ) হযরত ইউসুফ (আঃ) কে তার ভাইদের সাথে পাঠালেন, তখন ওরা গলায় হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর কোর্তাকে তাবিজ বানিয়ে ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন, যাতে নিরাপদে থাকে। পৃথিবীর সমস্ত পানি আল্ললাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু যমযম কূপের পানির সম্মান এ জন্যেই করা হয় যে এটা হযরত ইসমাঈল (আঃ) এর পবিত্র পায়ের আঘাতে সৃষ্টি হয়েছে। মকামে ইব্রাহীমের পাথর ইব্রাহীম (আঃ) এর সানি্নধ্যের ফলে এর ইয্যত এতটুকু বৃদ্ধি পেয়েছে যে আল্ললাহ তাআলা ইরশাদ ফরমান- وَاتَّخِذُوْا مِنْ مَّقَامِ اِِبْرَاهِيْمَ مُصَلَّى (তোমরা ইব্রাহীম (আঃ) এর দাঁড়াবার স্থানকে নামাযের স্থানরূপে গ্রহণ কর।) অর্থাৎ সবার মস্তক ওই দিকে নত কর। মক্কা শরীফকে যখন হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে সম্পর্কিত করা হলো, তখন আলল্লাহ তাআলা এর নামের কসম করে ইরশাদ ফরমান-
لاَاُقْسِمُ بِهَذَا الْبَلَدِ وَاَنْتَ حِلٌّ بِهَذَا الْبَلَدِ
(শপথ করছি এ শহরের (মক্কা শরীফের) আর তুমি এ শহরের অধিবাসী) অন্যত্র বলেছেন وَهَذَا الْبَلَدِ الْاَمِيْنِ (এবং এ নিরাপদ শহরের (মক্কা) শপথ)। হযরত আয়ুব (আঃ) প্রসঙ্গে ইরশাদ ফরমান- اُرْكُضْ بِرِجْلِكَ هَذَاْ مُغْتَسَلٌ بَارِدٌ وَتُرَابٌ
(তুমি তোমার পা দ্বারা ভূমিকে আঘাত কর। এ-তো গোসলের সুশীতল পানি আর পানীয়।) অর্থাৎ হযরত আয়ুব (আঃ) এর পায়ের আঘাতে যে পানি বের হলো, সেটা রোগ নিরাময়ের সহায়ক হলো। এতে বোঝা গেল নবীদের পা ধোয়া পানি মর্যাদাবান ও রোগ নিরাময়ের সহায়ক। মিশ্কাত শরীফের শুরুতে কিতাবুল লেবাসে বর্ণিত আছে যে হযরত আস্মা বিনতে আবু বকর (রাঃ) এর কাছে হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আচকান শরীফ ছিল এবং মদীনা শরীফে কারো রোগ হলে, তিনি ওটা ধুয়ে তাকে সেই পানি পান করাতেন। সেই মিশ্কাত শরীফের কিতাবুল আত্-আমার اَلاشْرِبَةْ শীর্ষক অধ্যায়ে উলেল্লখিত আছে যে হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা হযরত কব্শা (রাঃ) এর বাসায় তশরীফ নিয়ে গেলেন এবং ওর মোশকে মুখ মুবারক লাগিয়ে পানিপান করেন। তিনি (কব্শা) মোশকের মুখটা বরকতের জন্য কেটে রেখে দিয়েছিলেন। একই মিশ্কাতের কিতাবুস সালাতের اَلْمَسَاجِدْ অধ্যায়ের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে বর্ণিত আছে যে একদল লোক হুযূর (সাল্ললাল্ললাহু আলাইহি ওয়া সাল্ললামের (হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং আরয করেন- আমাদের দেশে ইহুদীদের একটি উপাসনালয় আছে; আমরা একে ভেঙ্গে মসজিদ করার ইচ্ছে পোষণ করি। তখন হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি থালায় পানি নিয়ে ওখানে কুলি করেন এবং বলেন ওই উপাসনালয়কে ভেঙ্গে ফেল। অতঃপর এ পানি ওখানে ছিটিয়ে দাও। তারপর মসজিদ তৈরী কর। এতে বোঝা গেল হুযূর (সালল্লালল্লাহু আলাইহি ওয়া সালল্লাম) পবিত্র থুথু কুফরীল অপবিত্রতা দূরীভূত করেন। হযরত খালিদ বিন ওলীদ (রাঃ) স্বীয় টুপীতে হুযূর (সালল্লালল্লাহু আলাইহি ওয়া সালল্লাম) এর একটি চুল মুবারক রাখতেন এবং যুদ্ধের সময় ওই টুপী নিশ্চয় তার মাথায় থাকতো। মিশ্কাত শরীফে السترةঅধ্যায়ে বর্ণিত আছে, হুযূর (সালল্লালল্লাহু আলাইহি ওয়া সালল্লাম) ওযু ফরমালেন, তখন হযরত বিলাল (রাঃ) হুযুরের ব্যবহৃত ওযুর পানি নিয়ে নিলেন। লোকেরা হযরত বিলালের দিকে দৌড়ে গেলেন এবং যিনি ওই পানিতে হাত ভিজাতে পারলেন, তিনি সে হাত নিজ মুখে মালিশ করে নিলেন। আর যিনি পেলেন না, তিনি অন্যজনের হাতের আদ্রতা নিজ মুখে বুলিয়ে নিলেন। এ সব হাদীছ থেকে প্রমাণিত হয় যে, বুযুর্গানে দ্বীনের ব্যবহৃত বস্তুসমূহ থেকে বরকত লাভ করা সাহাবা কিরামের সুন্নাত। এবার ফকীহগণের বিভিন্ন উক্তির প্রতি দৃষ্টিপাত করুন। ফাত্ওয়ায়ে আলমগীরী কিতাবুল কারাহিয়া مُلَاقَاتُ الْمُلُوْكِ শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে-
اِنْ قَبَّلَ يَدَ عَالِمِ اَوْ سُلْطَانٍ عَّادِلٍ بِعِلْمِهِ وَعَدْلِهِ لَا بَاسَ بِهِ
যদি আলিম বা ন্যায়পরায়ণ বাদশাহের হাতে চুমু দেয়া হয় ওদের ইলম ও ন্যায়পরায়ণতার কারণে, তাহলে এতে কোন ক্ষতি নেই। একই গ্রন্থে কিতাবুল কারাহিয়াতে زِيَارَةُ الْقُبُوْرِ অধ্যায়ে উল্লেখিত আছে-
وَلَاْبَاسَ بِتَقُبِيْلِ قَبْرِ وَالِدَيْهِ كَذَا فِى الْغَرَائِبِ
নিজের মা-বাপের কবরে চুমু দেয়ায় কোন ক্ষতি নেই যেমন গরায়েবে বর্ণিত হয়েছে। সেই আলমগীরীর কিতাবুল কারাহিয়াতের مَلَاقَاتِ الْمُلُوْكِ অধ্যায়ে আরও লিপিবদ্ধ আছে-
اِنَّ التَّقْبِيْلَ عَلَى خَمْسَةِ اَوْجَهٍ قُبَلَةُ الرَّحْمَةِ كَقُبْلَةِ الْوَالِدِ وَلَدَهُ وَقُبْلَةُ التَّحِيَّةِ كَقُبْلَةِ الْمُؤْمِنِيْنَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ وَقُبْلَةُ الشَّفَقَةَ كَقُبْلَةِ الْوَلَدِ لِوَالِدَيْهِ وَقُبْلَةُ الْمَوَدَّةِ كَقُبْلَةِ الرَّجُلِ اَخَاهُ وَقُبْلَةُ الشَّهْوَةِ كَقُبْلَةِ الرَّجُلِ اِمْرَأَتَهُ وَزَادَ بَعْضُهُمْ قُبْلَةَ الدِّيَانَةِ وَهِىَ قُبْلَةُ الْحَجْرِ الْاَسْوَدِ
চুম্বন পাঁচ প্রকার-
আশীর্বাদসূচক চুম্বন, যেমন বাবা ছেলেকে চুমু দেয়; সাক্ষাৎকারের চুম্বন, যেমন কতেক মুসলমান কতেক মুসলমানকে চুমু দেয়; স্নেহের চুম্বন, যেমন ছেলে মা-বাবাকে দেয়; বন্ধুত্বের চুম্বন, যেমন এক বন্ধু অপর বন্ধুকে চুমু দেয়; কামভাবের চুম্বন, যেমন স্বামী স্ত্রীকে দেয়। কেউ কেউ ধার্মিকতার চুম্বন অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদের চুম্বনকে এর সাথে যোগ করেছেন।
দুররুল মুখতারের পঞ্চম খন্ড কিতাবুল কারাহিয়াতের শেষ অধ্যায় الاستبراء এর মুসাফাহা পরিচ্ছেদে বর্ণিত আছে وَلَا بَاسَ بِتَقْبِيْلِ يَدِا الْعَالِمِ وَالسُّلْطَنِ الْعَادِلِ আলিম ও ন্যায়পরায়ণ বাদশাহের হাতে চুমু দেয়ায় কোন ক্ষতি নেই। এ জায়গায় ফাত্ওয়ায়ে শামীতে হাকিমের একটি হাদীছ উদ্ধৃত করেছে, যার শেষাংশে বর্ণিত আছে-
قَال ثُمَّ اَذِنَ لَه‘ فَقَبَّلَ رَأْسَه‘ وَرِجْلَيْهِ وَقَالَ لَوْ كُانْتُ اَمِرًا اَحَدًا اَنْ تَسْجُدَ لَاحَدٍ لَاَمَرْتُ الْمَرْ أَةَ اَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا وَقَالَ صَحِيْحُ الْاَسْنَادِ
হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেই ব্যক্তিকে অনুমতি দিয়েছেন। তাই সে তাঁর মস্তক ও পা মুবারক চুমু দিলেন। অতঃপর হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ ফরমান যদি আমি কাউকে সিজ্দার হুকুম দিতাম, তাহলে স্ত্রীকে হুকুম দিতাম স্বামীকে সিজ্দা করতে। দুররুল মুখতারে সেই জায়গায় আলমগীরীর মত পাঁচ প্রকার