Friday, September 19, 2014

আজকের এই জুমার দিনে শাহাদাত বরণ করেন “হযরত উসমান জুননুরাইন (রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু)’’ তার শাহাদাতের ঘটনা......


হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) বর্ণনা করেন যে,
যখন আমীরুল মু’মিনীন হযরত উসমান গনী (রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু)’এর বাসগৃহ তাঁর দুশমনেরা ঘেরাও করলো,

তখন আমি তাঁকে সালাম আরজ করার জন্যে হাজির হলাম,
তিনি আমাকে দেখে বললেন, ভাই ভাল করেছো যে এসেছ,

আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’এর সাক্ষাৎ লাভ করেছি, তিনি এরশাদ করেছেন,“উসমান তোমাকে এরা ঘেরাও
করে রেখেছে।"
আমি আরজ করলাম,জি হ্যাঁ। এরপর তিনি আমাকে একটু
পানি দিলেন যা আমি পান করলাম। সেই সুশীতল পানির অনুভূতি আমি এখনও আমার বক্ষে উপলব্ধি করছি।

এরপর হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ
করলেন,“যদি তুমি চাও দুশমনদের মোকাবেলায়
তোমাকে সাহায্য করা যেতে আর যদি চাও আমার নিকট
এসে ইফতার করবে। তখন আমি আরজ করলাম,"আপনার
খিদমতে হাযির হতে চাই।"

আর সেদিনই হযরত উসমান ইবনে আফফান (রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহূ) কে শহীদ করা হয়। এ ঘটনা সংঘটিত হয় ৩৫
হিজরিতে।

অন্য একটি বর্ণনা রয়েছে যে, এ স্বপ্ন দেখার পর হযরত উসমান
(রাঃ) জাগ্রত হয়ে তাঁর সম্মানিত স্ত্রীকে বললেন,“আমার
শাহাদাতের সময় এসে গেছে, এখনিই বিদ্রোহী দল
আমাকে শহীদ করে ফেলবে।"
তখন অত্যন্ত ব্যথিত কণ্ঠে তাঁর স্ত্রী বললেন, “আমীরুল
মু’মিনীন এমন হতে পারেনা!"

হযরত উসমান গনী (রাঃ) সেই পায়জামাটি পরিধান করলেন
যা ইতিপূর্বে পরিধান করেননি। এরপর বিশটি গোলাম আজাদ
করেন এবং কোরআন শরীফ তেলাওয়াতে মশগুল হন। এরই
মধ্যে বিদ্রোহীরা দেয়াল টপকিয়ে বাসভবনের
অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। কোরআনে কারীম তাঁর সম্মুখে উন্মুক্ত
ছিল, তারা তাঁকে শহীদ করলো, তাঁর রক্তে পবিত্র কোরআন রঞ্জিত হল।
যে আয়াতখানি উপরে রক্ত জমেছিল তা হলোঃ
“অতএব, তাদের জন্যে তোমাদের পক্ষ থেকে আল্লাহ্ পাকই
যথেষ্ট,তিনি সর্বস্রোতা, সর্বজ্ঞাত।”

জু’মার দিন আসরের নামাজের সময় তিনি শাহাদাত বরণ করেন,
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন।

(শরহুস সুদূর- ইমাম জালালুদ্দিন
সুয়ুতি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি,ফতহুশ শাম)


Tuesday, September 16, 2014

ইমাম সাদিক (আ.)’র অলৌকিক কিছু ঘটনা

মদীনায় জান্নাতুল বাকিতে ওয়াহাবিদের হাতে ধ্বংস হওয়ার আগে ইমাম সাদিক (আ.)সহ বিশ্বনবী (সা.)’র পবিত্র আহলে বাইতের চার সদস্যের মাজার (ডানে) এবং বাঁয়ে
১৪৮ হিজরির ২৫ শাওয়াল ইসলামের ইতিহাসে এক গভীর শোকাবহ দিন। কারণ, অাজ হতে ১২৮৬ চন্দ্রবছর আগে এই দিনে শাহাদত বরণ করেন মুসলিম বিশ্বের প্রাণপ্রিয় প্রবাদপুরুষ ইমাম আবু আব্দুল্লাহ জাফর আস সাদিক (আ.)। ইসলাম ও এর প্রকৃত শিক্ষা তাঁর কাছে চিরঋণী।
ইসলামের ফেক্বাহ শাস্ত্র বা ইসলামী আইনসহ এই মহান ধর্মের নানা দিক বিকশিত হয়েছিল মহান ইমাম হযরত ইমাম জাফর আস সাদিক (আ.)’র মাধ্যমে। তাঁর হাজার হাজার উচ্চ-শিক্ষিত ছাত্রের মধ্যে অনেক উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ ও খ্যাতনামা বিজ্ঞানীও ছিলেন। রসায়ন বিজ্ঞানের জনক জাবির ইবনে হাইয়ান ছিল তাঁর ছাত্র।
ইমাম আবু হানিফাসহ সুন্নি মাজহাবের কয়েকজন বড় ইমামও ছিলেন এই নিষ্পাপ ইমামের ছাত্র।
ইসলামের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ও এ ধর্মকে সাংস্কৃতিক বা চিন্তাগত হামলাসহ সার্বিক ক্ষতিকর দিক থেকে সুরক্ষার জন্য যা যা করার দরকার তার সবই তিনি করেছিলেন। তিনি ৮৩ হিজরির ১৭ ই রবিউল আউয়াল মদীনায় ভূমিষ্ঠ হন। ৩৪ বছর ধরে মুসলিম জাহানের নেতৃত্ব দেয়ার পর ১৪৮ হিজরির ২৫ শে শাওয়াল শাহাদত বরণ করেন। আব্বাসিয় শাসক মানসুর দাওয়ানিকি বিষ প্রয়োগ করে এই মহান ইমামকে শহীদ করে।
ইমাম জাফর আস সাদিক (আ.)’র অনেক অলৌকিক ক্ষমতা বা মু’জেজার ঘটনা রয়েছে। সেইসবের মধ্য থেকে আমরা অদৃশ্যের জ্ঞান সম্পর্কিত তাঁর কিছু ঘটনাসহ আরও ক’টি ঘটনা তুলে ধরছি:
এক. ইমাম জয়নুল আবিদিন (আ.)’র পুত্র হযরত জাইদ (আ.) জালিম উমাইয়া শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন এবং বীরের মত যুদ্ধ করে শহীদ হন। পরবর্তীকালে তার বড় ছেলে ইয়াহিয়া (আ.)ও ইরানিদের একটি দলকে সংঘবদ্ধ করে বিদ্রোহ করে একইভাবে শহীদ হন। তার লাশও বাবার মতই শহরের দরজায় ঝোলানো ছিল। কয়েক বছর পর আবু মুসলিমের নেতৃত্বে উমাইয়াদের বিরুদ্ধে সফল গণ-বিদ্রোহের সুবাদে উমাইয়া শাসকদের পতন ঘটলে আবু মুসলিম ইয়াহিয়ার লাশ নামিয়ে এনে সসম্মানে দাফন করেন।
(জাইদ (আ.)’র কিয়ামের উদ্দেশ্য ছিল জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা ও বিদ্রোহে সফল হলে ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-কে মুসলমানদের খলিফার পদে আসীন করা।)
বিদ্রোহের আগে ইয়াহিয়া (আ.) যখন খোরাসানের দিকে যাচ্ছিলেন তখন মুতাওয়াক্কিল বিন হারুন নামে ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-‘র এক ভক্তের সঙ্গে তার দেখা হয়। মুতাওয়াক্কিল হজ করে মদীনায় ইমামের সঙ্গে দেখা করে ফিরে আসছিলেন। ইয়াহিয়া নিজ চাচা তথা ইমামের ও নিজের বাড়ীর লোকদের কুশলাদি জানতে চাইলে মুতাওয়াক্কিল যা যা জানত তা তাকে জানান। এক পর্যায়ে ইয়াহিয়া বলেন: আমার চাচা তথা ইমাম জাফর সাদিক (আ.) আমার বাবার (জাইদ-আ.’র) পরিণতি কি হবে তা জানতেন। এক পর্যায়ে ইয়াহিয়া বললেন: আমার চাচা আমার সম্পর্কে তোমাকে কি কিছু বলেছেন? মুতাওয়াক্কিল বলেন, বলেছেন কিছু অপছন্দনীয় কথা, তাই তোমাকে বলতে চাই না।
<a href='http://ritsllc.com/ads/server/adserve/www/delivery/ck.php?n=a1a091d0&cb=INSERT_RANDOM_NUMBER_HERE' target='_blank'><img src='http://ritsllc.com/ads/server/adserve/www/delivery/avw.php?zoneid=354&cb=INSERT_RANDOM_NUMBER_HERE&n=a1a091d0' border='0' alt=''/></a>
ইয়াহিয়া বললেন: তুমি কি আমাকে মৃত্যুর ভয় দেখাচ্ছ? যা কিছু শুনেছ বল।
মুতাওয়াক্কিল বললেন: তুমিও নিহত হবে তোমার বাবার মতই এবং শহরের সদর দরজায় ঝোলানো হবে তোমার লাশ।
ইয়াহিয়া তা শুনে ‘সহিফায়ে সাজ্জাদিয়া’র (ইমাম জয়নুল আবেদিন-আ’র দোয়া ও মুনাজাতের বই) একটি পাতা আমানত হিসেবে মদীনায় নিজ আত্মীয়-স্বজনের কাছে পৌঁছে দিতে মুতাওয়াক্কিলকে অনুরোধ জানান। এরপর বলেন: আমার চাচা আমার নিহত হওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করায় এটা তোমাকে দিলাম, নইলে কখনও তা দিতাম না… কিন্তু আমি জানি, তিনি যা বলেছেন তা সত্য। কারণ, এই আধ্যাত্মিকতা তিনি তাঁর বাবার (ইমাম বাকির-আ.) কাছ থেকে পেয়েছেন।
কিছু দিন পর ইয়াহিয়ার ব্যাপারে ইমাম যা যা বলেছিলেন তার সবই ঘটেছিল।
দুই. সাফওয়ান বিন ইয়াহিয়া বলেন: জাফার বিন মুহাম্মাদ বিন আশআস বলেছেন, একদিন আব্বাসীয় শাসক মানসুর দাওয়ানাকি ইমাম জাফর আস সাদিক (আ.)-কে জব্দ করার জন্য আমার বাবার মামাকে কিছু টাকা দিয়ে বলে: মদীনায় গিয়ে আবদুল্লাহ বিন হাসান বিন হাসানের (ইমাম হাসান-আ.’র বংশধর) সঙ্গে ও তার আত্মীয়দের সঙ্গে বিশেষ করে, ইমাম জাফর আস সাদিক (আ.)’র সঙ্গে সাক্ষাত করবে। তাদেরকে বলবে যে তুমি খোরাসান থেকে এসেছ। খোরাসানে তাঁদের (নবী বংশ তথা ইমাম পরিবারের) অনুসারীরা হাদিয়া হিসেবে তাঁদের জন্য টাকা পাঠিয়েছে। আমি রিসিপ্ট বা রসিদ নিয়ে টাকা বুঝিয়ে দিতে চাই যাতে সেই রসিদ তাদেরকে দেখাতে পারি।
আমার বাবার মামা এই মিশন নিয়ে মদীনা গেলেন এবং ইমাম ও নবী-পরিবারের উক্ত সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে মানসুরের কাছে ফিরে আসেন। মানসুর জিজ্ঞেস করে: কি করলে?
তিনি (আমার বাবার মামা) বললেন: ”তাদের সবার সঙ্গে দেখা করেছি ও টাকাও দিয়েছি, তবে শুধু জাফর আস সাদিক (আ.) ছাড়া সবার কাছ থেকে রসিদও নিয়েছি। ইমামের কাছে যখন গিয়েছিলাম তিনি তখন মসজিদে নববীতে নামাজ পড়ছিলেন। নামাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি তাঁর পেছনে বসেছিলাম। জাফর আস সাদিক (আ.) নামাজ শেষে আমার দিকে ফিরে বলেছেন, আল্লাহকে ভয় কর এবং নবীর (দরুদ) আহলে বাইতকে ধোঁকা দিও না। আর মানসুরকে বলবে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে ও নবী-পরিবারকে ধোঁকা না দেয়।

মৃত সাগরের সৃষ্টির রহস্য !

সেটা অনেকদিন আগের কথা। বর্তমান ইরাকের এক বিশাল রাজ্য ছিল ব্যবিলন। আর এ শব্দটির শাব্দিক অর্থ হচ্ছে দেবতার নগরী। এ রাজ্যের রাজা ছিলেন সারগন। সে খুব আত্মগর্বী, মতাদর্পী ছিল। সে আল্লাহকে ভুলে নিজেকে খোদা হিসেবে ঘোষণা দিল। আর তার রাজ্যের প্রজারা সারগণের মূর্তি বানিয়ে তার পূজা করতে লাগল। এই সময়েই এক ঘরে জন্মগ্রহণ করেন হযরত ইব্রাহীম (আঃ)। বড় হয়ে তিনি এই রাজ্যের প্রত্যেককে এই জঘন্যতম কাজ থেকে বিরত থাকতে বললেন। এমনকি রাজা সারগনকেও তিনি বুঝাতে লাগলেন। কিন্তু রাজা এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে ইব্রাহীম (আঃ) কে আগুনে ফেলার নির্দেশ দেয়। আর ইব্রাহীমকে আগুনে ফেলার সাথে সাথে আল্লাহুর হুকুমে আগুন নাতিশীতোঞ্চ হয়ে যায়। আর এ বিষ্ময়কর দৃশ্য দেখে তাঁর বয়সী কয়েকজন তরুণ তাঁর অনুসারী হয়ে যায়। এতে রাজা আরও ক্ষুদ্ধ হয়ে তাঁর অনুসারীসহ ইব্রাহীম (আঃ) কে বেঁধে রাখে উত্তপ্ত মরুভূমিতে। কিন্তু আল্লাহ এবারও তাদের মাথার উপর একখন্ড মেঘ দাঁড় করে দেন। আর তাদের সামনের বালুকণাগুলোকে ক্ষুধার অন্নে পরিণত করে দেন। এ দৃশ্য দেখে রাজা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তাদেরকে রাজ্য থেকে বের করে দেয়। তারপর ইব্রাহীম (আঃ) ও তাঁর অনুসারীরা এ রাজ্য ত্যাগ করে ফিনিশিয়া রাজ্যে আগমন করে। সেখানে ‘সারা’ নামের রাজকন্যা তাঁর রূপে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে বিবাহ করে। আর এতে রাজা ক্ষুদ্ধ হয়ে মেয়েসহ ইব্রাহীম (আঃ) কে রাজ্য থেকে বের করে দেন। ইব্রাহীম (আঃ) সবাইকে নিয়ে জর্ডান নদীর পশ্চিম পাড়ে ‘হেবরন’ নামের এক ক্ষুদ্র পল্লীতে বসতি স্থাপন করেন। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর অনুসারীদের মধ্যে তাঁর চাচাতো ভাইয়ের ছেলে লুত (আঃ) ছিলেন। বলাবাহুল্য জর্ডান নদীর পূর্বদিকে বর্তমান যেখানে মৃত সাগর অবস্থিত সেখানে বেশ দূরে দূরে অবস্থিত ছিল পাঁচটি সু-সমৃদ্ধ জনপদ। তারা হচ্ছে- আমোরা, আদমাহ, সেবাইম, সো-আর এবং সাদুম। এই সাদুম জনপদটি ছিল সবার দক্ষিণে। ইব্রাহীম (আঃ) লুত (আঃ) কে এই সাদুম জনপদে পাঠালেন। কেননা এই জনপদের অধিবাসীরা সীমালঙ্ঘন, নির্যাতন এমনকি বিভিন্ন জঘন্য পাপাচারে লিপ্ত থাকতো। তাই তাদেরকে ন্যায় পথে ফিরিয়ে আনবার জন্য ইব্রাহীম (আঃ) এর নির্দেশে তিনি এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি সাদুমবাসীকে পাপের শাস্তি ও পূণ্যের পুরস্কার সম্পর্কে বিভিন্নভাবে বুঝাতে লাগলেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা। তারা উল্টো লুত (আঃ) কে অপমান ও উপহাস করতে লাগলো। এমনকি দৈহিক নির্যাতন চালাতে লাগলো। এতকিছু সহ্য করেও তিনি আল্লাহর রাস্তায় অটল। আর এদিকে তারা আইন করলো বাড়িতে অতিথি আপ্যায়ন নিষেধ। হযরত লুত (আঃ) যেহেতু একজন নবী সেহেতু তাঁর কাছে অতিথি আসাটাই স্বাভাবিক। তাই কোন অতিথি আসলে অতি গোপনে তাঁর সাথে সাক্ষাত করতো। কিন্তু গোপনে সাক্ষাত করতে আসলেও তারা ধরা পড়ে যেতো। কারণ লুত (আঃ) এর স্ত্রী লুকিয়ে লুকিয়ে প্রতিবেশীদের কানে পৌঁছিয়ে দিত। লুত (আঃ) প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে ঠিকই স্ত্রীর চালাকি বুঝতে পেরেছেন। তাই তিনি স্ত্রীকে বাইরে যেতে নিষেধ করেন। কিন্তু নিষেধ করলে কি হবে? তাঁর স্ত্রী ছলাকলায় কম নন। সে লবন নেই বলে প্রায় সময় লবণ ধার আনার কথা বলে লুত (আঃ) কে ফাঁকি দিয়ে প্রতিবেশীকে খবর পৌঁছিয়ে দিত। আর খবর পেয়ে তারা অতিথিদের উপর চড়াও হত আর তাদের উপর দৈহিক নির্যাতন চালাতো। আল্লাহ তা’আলা এতে নারাজ হয়ে গেলেন। তাই তিনি কয়েকজন ফেরেশতাকে পাঠালেন। যারা পরমা সুন্দরী তরুনীর বেশে সাদুমে আসলো। তারা যথাসময়ে লুত (আঃ) এর কাছে আগমন করে সব ঘটনা খুলে বলে। আর এদিকে লুত (আঃ)এর স্ত্রী সারা যথারীতি লবণ ধার এর কথা বলে পাশের প্রতিবেশীদেরকে গোপনে খবর দিল। খবর শুনে তারা ছুটে এসে লুত (আঃ) কে বললো অতিথিদেরকে তাদের হাতে তুলে দিতে। কিন্তু এতে তিনি বাধা দিলেও প্রতিবেশী যুবকরা পরমী সুন্দরীদের মোহে মুগ্ধ হয়ে তাঁদের উপর চড়াও হলো। আর তখনই ফেরেশতাগণ তাঁদের আসল রূপ ধারণ করলো। আর দেখতে দেখতে পাঁচটি নগরীকে তুলো ধোলাই করার মতো মর্ত্য পাতাল এক করতে লাগলেন। এর পূর্বে ফেরেশতাগণ লুত (আঃ) ও তাঁর অনুসারীদেরকে সাদুম নগরী পরিত্যাগ করতে বললেন। আর সাবধান করে দিয়েছিল কেউ যেন পিছন ফিরে না তাকায়। তারপর পাঁচ নগরী বিশিষ্ট বিশাল অঞ্চলটা একটা বিশাল হৃদে পরিণত হলো। একই সঙ্গে প্রবল বৃষ্টি ধারার মতো আকাশ থেকে পাথর বর্ষণ করলেন আল্লাহ তা’আলা। দেখতে দেখতে সেই বিশাল হৃদটি পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠলো। আল্লাহর হুকুমে লুত (আঃ) ও তাঁর অনুসারীরা বেঁচে গেলেও লুত (আঃ) এর স্ত্রী কি রা পেয়েছিল? না, সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা’আলা তাকে বিরাট একটা লবণের স্তুপে পরিণত করলেন এবং তাকে আবহমানকালের মতো সেই হৃদের মাঝখানে রেখেছিলেন। আর সেই কারণেই এই হৃদের পানি এত লোনা যে, তা সাগরের লবনাক্ত পানিকেও হার মানায়।

পুনশ্চঃ লূত নবীর ঐ জনপদের লোকেরা সমকামী ছিল।। কোরআনে তাদের ঘৃণ্য অভিশপ্ত বলে ধ্বংস হয়ে যাবার ঘটনাটি এসেছে, যার পরিণতি মৃত সাগর।। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ঠিক একই ভাবে ফেরআউনের উদাহরণ দিয়েছেন যে তার লাশকে তিনি হাজার হাজার বছর ধরে দৃশ্যমান রাখবেন (মমি আকার যেটা দেখি) মানুষকে তাদের সীমালঙ্ঘনের পরিণতি স্মরণ করিয়ে দিতে।।

ইবলীস শয়তানের ইতিহাস

জিনদের পঞ্চমবারের পয়গাম্বর ও বাদশাহ হামুসের পুত্র ছিল ইবলীসের জনক। তার নাম ছিল খবীস। খবীসের আকৃতি ছিল ভয়ঙ্কর এক সিংহের ন্যায়। তার স্বভাব প্রকৃতিও সিংহের ন্যায়ই ছিল। একদিকে তার দেহে ছিল পঞ্চ শক্তি অন্য দিকে তার চেহারায় ছিল সুস্পষ্ট ধূর্ততার ছাপ। এ খবীসইছিল পাপীষ্ঠ জিনদের মাথার তাজ। ইবলিসের মাতা ছিল জিনজাতির পঞ্চম নেতা হামুসের কণ্যা। তার নাম ছিল নিলবিস। নিলবিস জিন দেখতে ঠিক একটি নেকড়ে বাঘের মত। তার প্রকৃতিও ছিল অবিকল নেকড়ের ন্যায়। এক বর্ণনায় আছে, জাহান্নামের আগুনের খবিস ও নিলবিসের মিলনে ইবলীসের জন্ম হয়। সুতরাং পিতামাতা ও জাহান্নাম এই ত্রিস্বত্তার স্বভাব ও প্রকৃতির সম্পূর্ণ প্রভাবই ইবলীসের চরিত্রে নিহিত ছিল। ইবলীসের পিতার সারবুক নামেসর্ববিদ্যায় পারদর্শী একজন বন্ধ ছিল। খবিসের পুত্র ইবলীসেরশিক্ষা-দীক্ষার ভার তার পিতা উক্ত বন্ধু সারবুকের হাতে অর্পণকরল। ইবলীস ছিল অতিশয় মেধাবী ও স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন। সুতরাং কোন পাঠই তাকে একাধিকবার বলে দেয়ার প্রয়োজন হত না। সে একবার যা শুনত তাই সে চিরদিনের জন্য মনে রাখত।
ফলে সারবুকের মনে ইবলীস সম্পর্কে অত্যন্ত উচ্চ ধারণা জন্মেছিল। তাকে পড়াতে শুরু করে সে তার বন্ধু খবিসকে লক্ষ্য করে প্রায়ই বলত, বন্ধু! তোমার পুত্রের ভেতরে যে লক্ষণসমূহ দেখছি তাতে মনে হচ্ছে যে, সে ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই এক মহা বিখ্যাত ব্যক্তিতে পরিণত হবে। আমার শিক্ষকতা জীবনের ছাব্বিশ হাজার বছরের মধ্যে তোমার পূত্র ইবলীসের মত এত তীক্ষ্ম স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন ও বুদ্ধিমান ছাত্র আমার হস্তে আর দ্বিতীয়টি পড়েনি। কিন্তু দুঃখের বিষয় তোমার পূত্রটি অত্যধিক বেয়াদব, অহংকারী এবং ভীষণ একগুয়ে। এটা তার ভবিশ্যতেরজন্য সুখকর নয়।
তবে সে যাই হউক না কেন, ইবলীসের ভাগ্য সুপ্রসন্ন। ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি যে, ফেরেশতারা জিনকুলকে ধ্বংস করার সময় বালক ইবলীসকে স্নেহবশতঃ হত্যা না করলে উল্টা তাকে লালন-পালন করার জন্য আল্লাহর নিকট হতে অনুমতি নিয়ে আসমানে নিয়ে যায়।
ফেরেশতারা তাকে প্রথম আসমানে নিয়ে নিজেদের প্রকৃতি ও স্বভাব অনুরূপ আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীর নিয়ম-কানুন শিক্ষাদান করল। ইবলীস স্বীয় প্রতিভাবলে অতি অল্প আয়েসে ও স্বল্পসময়ে শিক্ষালাভ করে দীর্ঘ এক হাজার বছর প্রথম আসমানে আল্লাহর এবাদাত করল। তথাকার ফেরেশতারা তার ইবাদাতে একাগ্রতা ও নিষ্ঠা দেখেঅবাক হয়ে বলতে লাগল যে, আমরা ফেরেশতা জাতি কেবল আল্লাহর ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি হয়েছি। একমাত্র ইবাদতই আমাদের শিক্ষা-দীক্ষা ও ধ্যান ধারণা সবকিছু। ইবাদতই আমাদের একমাত্র কাজ। তবুকি আশ্চর্য! ইবলীস আমাদের কাছে ইবাদতের কায়দা কানুন শিখে সে যে ইবাদত করছে, তাতে তার ইবাদতের তুলনারয় আমরা নিজেদেরকে তো মোটেই ইবাদতকারী বলতে পারি না। আমাদের ফেরেশতাকূলের মধ্যে তো কাকেও এমন ধারায় ও এমন নিবিড় ভাবে কখনোই ইবাদত করতে দেখি নি। মনে হচ্ছে এখন এর কাছেই আমাদের অনেক কিছু শিখবার ও বুঝবার আছে। ফেরেশতারা তার ইবাদত বন্দেগি দেখে এত মুগ্ধ হল যে, তারা ইবলীসের “খাশে’ নামকরণ করল।
আবলীস প্রথম আসমানে একহাজার বছরইবাদতের পর দ্বিতীয় আসমানের ফেরেশতারা অতি আদর করে তাকে নিজেদের কাছে নিয়ে গেল। ইবলীস দ্বিতীয় আসমানে পৌঁছেও পূর্বাপেক্ষা আরও বেশী পরিমাণে ইবাদত মশগুল হল। এ আসমানের ফেরেশতারা তার ইবাদাত দেখে তাকেধন্য ধন্য করতে লাগল এবং শতমুখে তার প্রশংসা করতে লাগল, এবং তারাইবলীসের নামকরণ করল ‘আবেদ’। দ্বিতীয় আসমানে এক হাজার বছর অবস্থানের পর তৃতীয় আসমানের ফেরেশতারা ইবলীসকে তৃতীয় আসমানে নিয়ে গেল। তৃতীয় আসমানে এসে সে আরও বেশী পরিমাণে পরম একাগ্রতা ও মনোযোগের সাথে আল্লাহর ইবাদত শুরু করে দিল। সে এখানেও এক হাজার বছর ইবাদত করল। এখানের ফেরেশতারা তার ইবাদতে মুগ্ধ হয়ে তার নাম রাখল ‘অলী”। তারপর চতুর্থ আসমানের ফেরেশতারা আল্লাহর অনুমতি লাভ করে ইবলীসকে চতুর্থ আসমানে নিয়েগেল। ইবলীস এখানেও অত্যন্ত একাগ্রতার সাথে দীর্ঘ এক হাজার বছর আল্লাহর ইবাদতে মাশগুল রইল।তথাকার ফেরেশতারা তার ইবাদতে খুশী হয়ে নাম রাখল “ছালেহ”। এইভাবে অবশিষ্ট সকল আসমানে উন্নীত হয়ে প্রত্যেক আসমানে এক হাজার বছর করে ইবাদত করল। তখন পুরো ফেরেশতা জগতই তার প্রশংসায়মুখরিত হয়ে গেল। সকল ফেরেশতার সন্তুষ্টির ভেতর যে সপ্তম আসমানে উপনীত হয়ে পরম সুখে শান্তিতে সববাস শুরু করল।
ইবলীস ফেরেশতাদের নিকট থেকেই আদব-কায়দা এবং ইবাদতের রীতিনীতিপ্রশিক্ষণ নিয়েছিল। ইবলীস অত্যন্ত মেধাবী হওয়ায় যা শিক্ষালাভ করত তার কোন কিছুই আর ভুলত না। সুতরাং অতি অল্প সময়ে ফেরেশতাদের নিকট হতে সে সর্ববিষয়ে এত বেশী অভিজ্ঞতা অর্জন করল যে, এখন তার ওস্তাদ ফেরেশতাদের তুলনায় তার জ্ঞানই বেশী হয়ে গেল। তদ্রুপ ফেরেশতাদের ইবাদতের পরিমান অপেক্ষা তার ইবাদতের পরিমাণ অনেক বেশী বৃদ্ধি পেল। সাত আসমান ও যমীনের এমন একটি স্থান বাকি থাকল না যেখানে ইবলীসের সিজদাহ পড়েনি। ফেরেশতারা ইবলীসের ইবাদত বন্দেগী দেখে উপলব্ধি করতে লাগল যে, ইবলীসকে তারা শিক্ষা দান করেছে, এখন সেই ইবলীসের কাছেই তাদের অনেক কিছু শিখার আছে। তাই তারা সকলে আল্লাহর দরবারে আবেদন করল, হে মাবুদ! তুমি তোমার প্রিয় ইবলীসকে যদি আরশে মুআল্লার কাছেউঠিয়ে আন তবে আমরা তার কাছ থেকে অনেক মূল্যবান উপদেশ শুনে অনেক কিছু শিখতে পারতাম। কেননা, সে আমাদের অপেক্ষা অনেক বেশী জ্ঞানঅর্জন করেছে।
মহান আল্লাহ পাক ফেরেশতাদের এ আবেদন মঞ্জুর করে ইবলীসকে আরশে মুআল্লার নিকট নিয়ে আসলেন। আরশেমুআল্লার কাছেই রয়েছে ইয়াকুত নির্মিত একটি সুউচ্চ মিম্বর, ইবলীস উক্ত মিম্বরে আল্লাহর ইবাদতে রত হল। স্বীয় ইবাদতের অবসর সময়ে সে ফেরেশতাদেরকে ওয়াজনসিহতও করতে লাগল। ফেরেশতারা তার ওয়াজ ও অমূল্য উপদেশাবলী শুনে মুগ্ধ হয়ে সকলেই তার প্রশংসা করতে লাগল। শেষ পর্যন্তসে মালাইকাহ ফেরেশতার শিক্ষক নামে পরিচিত হয়ে গেল।ইবলীসের দুনিয়ায় আগমন
আল্লাহর আদেশে ফেরেশতারা শেষবার জিনদেরকে হত্যা করার পরেও পাহাড়-পর্বত ও বনে-জঙ্গলে লুকিয়ে থেকে কিছু সংখ্যক জিন প্রাণরক্ষা করে। ক্রমে তাদের বংশ বৃদ্ধি পেয়ে আবার জিনদের দিয়ে জগত পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল।কিন্তু তাদেরকে হিদায়েত করার জন্য পয়গাম্বর বা আল্লাহর দূত ছিল না। ফলে জিন জাতি ভীষন পাপাচারী হয়ে উঠেছিল। আল্লাহ তা’আলা ইবলীসকে আদেশ করলেন, হে ইবলীস! তোমার ইবাদত-বন্দেগী ও আমার প্রতি তোমার আনুগত্যে আমি তোমার প্রতি অন্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছি। এবার তোমার প্রতি আমার নির্দেশ হল তুমি দুনিয়াতে গিয়ে তোমার স্বজাতীয় জিনদেরকে সৎপথে প্রদর্শন কর।
মহান আল্লাহর এ নির্দেশ শুনে ইবলীস বলল, হে মাবুদ! আপনার নির্দেশ আমি অবশ্যই পালন করব। তবে আমার একটি আরজ হল আপনি আমাকেএমন ক্ষমাতা দান করুন, যেন সারাদিন দুনিয়াতে জিনদেরকে হিদায়েত করে সন্ধ্যায় আবার আমি এখানে ফিরে এসে সরারাত আপনার ইবাদত ও ফেরেশতাদেরকে নসিহত করতে পারি।
আল্লাহ পাক ইবলীসের এই আবেদন কবূল করলেন। তখন ইবলীস অত্যন্ত আনন্দ চিত্তে দুনিয়ায় নেমে আসল এবং জিনদেরকে হিদায়েতের কাজে আত্মনিয়োগ করল। কিন্তু একাধারে বহুদিন পর্যন্ত সে আপ্রাণ চেষ্টা ও পরিশ্রম করা সত্বেও সামান্য কিছু সংখ্যক জিন ব্যতীতপ্রায় সকলেই ইবলীসের বিরুদ্ধাচরণ করতে লাগল। তখন ইবলীস আবার আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করল হে মাবুদ! আমাকে এমন ক্ষমতা দিয়ে দিন যাতে এই অবাধ্যচারী জিনদেরকে আমি সমূলে ধ্বংস করতে পারি।
আল্লাহ তা’আলা ইবলীসের আবেদন শুনে জিনদেরকে ধ্বংস করার জন্য আসমান থেকে অগণিত ফেরেশতা দুনিয়ায় প্রেরণ করলেন, ফেরেশতাদের সঙ্গে ইবলীসের অনুগত বহু জিনও যোগদান করল। ফেরেশতা ও ইবলীসের বাধ্যগত জিনদের আক্রমণে কিছু সংখ্যক পথভ্রষ্ট জিন সৎপথ অবলম্বন করে প্রাণ রক্ষা করল। বাকি সমস্ত পাপী জিন প্রাণ হারল। ইবলীস দুনিয়ার কার্য থেকে অবসর নিয়ে পুনরায় একাগ্রচিত্তে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হল। আল্লাহর দরবারে তার কৃত সিজদাহর সংখ্যা যে কত ছিল, তা কারও পক্ষে হিসাব করা সম্ভব নয়। আসমান-যমীনে ও আরশে মাআল্লার নিকটে এমন কোনস্থান অবশিষ্ট ছিল না, যেখানে ইবলীস অসংখ্য সিজদাহ দেয়নি।
লাওহে মাহফুজ দর্শন
ইবলীস আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা জানাল হে প্রভু! তোমারই অসীম অনুগ্রহে আমি অতি সামান্য স্তর থেকে সসম্মানে অতিউচ্চস্তরে পৌঁছেছি। তোমারই অসীম অনুগ্রহে আমি তোমার নৈকট্যলাভ করতে সমর্থ হয়েছি। এখন আমার মনের একান্ত বাসনা হল তোমার পবিত্র লাওহে মাহফুজ দর্শ করে আমার জীবন ধন্য ও সার্থক করি। তুমি অনুগ্রহ করে আমার এই আকাঙ্খা পূর্ণ করা। পরম দয়ালু আল্লাহ তা’আলা ইবলীসের প্রার্থনা কবূল করে মিকাঈল ফেরেশতাকে নির্দেশ দিলেনঃ ইবলীসকে পবিত্র লাওহে মাহফুজের একান্ত নিকটে নিয়ে দেখিয়ে আনার জন্যে।
আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী হযরত মিকাঈল (আঃ) ইবলীসকে লাওহে মাহফুজের নিকটে নিয়ে গেল। ইবলীসসেখানে পৌঁছে এক দৃষ্টিতে লাওহেমাহফুজের দিকে তাকিয়ে অদৃষ্টলিপি পাঠ করতে লাগল। হঠাৎএক স্থানে তার দৃষ্টি পড়ল, সেখানে লিখিত রয়েছে- আল্লাহর একবান্দা ছয়লক্ষ বছর পর্যন্ত তার মাবুদের ইবাদত করবে। কিন্তুঅবশেষে আল্লাহর একটি আদেশ অমান্য করে সে জান্নাত থেকে বিতাড়িত হবে। ঐ বান্দা আসমান ও যমীনে মালউন বা অভিশপ্ত নামে পরিচিত হবে। ইবলীস এ লিপি পাঠের পর আপনা হতে কেঁদে ফেলল এবং সিজদায় পতিত হল এবং এ সিজদায় সে দীর্ঘ ছয় হাজার বছর অতিবাহিত করল। ছয় হাজার বছর পর মাথা তুলে, দেখতে পেল তার সিজদাহর জায়গায় লিখিত রয়েছে “লা’আনাতুল্লা-হি ‘আলা-ইবলীস’ অর্থাৎ ইবলীসের উপরেআল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হউক।
ইবলীস আরজ করল, হে আমার রব! ইবলীসকে? তাকে দেখিয়ে দিন। আমি তাকে যথোচিত শিক্ষা দান করি। জবাবে আল্লাহ তা’আলা ইবলীসকে বললেন, অচিরেই তুমি তাকে দেখতে পাবে। এ কথা শুনে ইবলীস সেখানে দাঁড়িয়ে একহাজার বছর পর্যন্ত পাঠ করল,”লা আনাতুল্লা-হি ‘আলা ইবলীস’- ইবলীসের উপর আল্লাহর লা’নত বর্ষিত হউক। এখানে উল্লেখ্য করাপ্রয়োজন যে, তখনও ইবলীস এ নামে পরিচিত হয়নি। আর তার এ কথা তখনও জানা ছিল না যে, এক সময় তারই নাম ইবলীস হবে। তখন আল্লাহ তা’আলা ইবলীসকে বললেন, ওহে! বলত আমার যে বান্দাহ আমার অশেষ অনুগ্রহ লাভ করেও আমার হুকুম অমান্য করবে তার কেমন শাস্তি হওয়া উচিত? জবাবে ইবলীস বলল, হে আমার রব! এরূপ অকৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপর আপনার কঠিন শাস্তি ও অভিশাপ বর্ষিত হওয়া উচিত।
আল্লাহ তা’আলা বললেন, তোমার এ মন্তব্যটা এক টুকরা তখতিতে লিখেতোমার নিকটেই রেখে দাও, পরে তা কাজে আসতে পারে। এক টুকরা তখতিতে লিখে রেখে দেল ইবলীস তখনই।ইবলীসের মনে কুমতলব ও অহঙ্কারেরসূত্রপাত
উল্লেখিত ঘটনার কিছুদিন পরে হঠাৎ একদিন ইবলীস মনে মনে ভাবল- এখন তো ফেরেশতা জগতে ও জিনের রাজ্যে এমন কোন ফেরেশতা বা জিন নেই যে আমার কোন নির্দেশ অমান্য করে। কেননা, আসমান যমীন বা জিন ও ফেরেশতাকুলের মাঝে আমার প্রভাব এখন অতুলনীয়। আমার প্রভাব প্রতিপত্তি ও ক্ষমাতার সাথে মোকাবেলা করার মত এখন আর কেউ নেই। এমতাবস্থায় যদি কোন কারণবশতঃ আল্লাহ তা’আলা নিজের দায়িত্ব থেকে অবসর গ্রহণ করেন কিংবা স্বেচ্ছায় ঘোষণা করেন যে, আমি এ সৃষ্টি জগত পরিচালনার দায়িত্ব হতে অবসর গ্রহণ করছি। অতএব এখন তোমাদের মধ্য হতে যোগ্যতম ব্যক্তি আমার সৃষ্টজগতের পরিচালনার ভার গ্রহণ কর। তা হলে নিশ্চয়ই একমাত্র আমিই এ পদের সুযোগ্যতম ব্যক্তি হিসেবে এ দায়িত্ব গ্রহণকরে সুষ্ঠুরূপে পালন করতে পারি।মূলতঃ এখন আর আমি কোন দিক দিয়েই আল্লাহ তা’আলা অপেক্ষা হীনবল ও কম ক্ষমতাবান নই। যাবতীয় ফেরেশতা ও জিনদের ওপর এখন আমার যে রূপ প্রভাব, তাতে আল্লাহ তা’আলার সাথে আমার কোন ব্যাপার নিয়ে বিরোধে অবশ্যই তারা আমার পক্ষাবলম্বন করবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
লাওহে মাহফুজ দর্শনে ফেরেশতারা
এর কিছুদিন পরেই একদা ফেরেশতারালাওহে মাহফুজে লিখিত দেখতে পান যে, অচিরেই আমার জনৈক বান্দাহর ওপরে চিরদিনের জন্য আমার লা’নত বর্ষিত হবে। এ লেখা পড়ে ফেরেশতারা ভয়ে অস্থির হয়ে পড়ল। তারা ভয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগল। তারা সঙ্কিত হয়ে পড়ল। হায়! না জানি তাদের মধ্যেই কোন হতভাগ্য বান্দাহর উপরে এ দুর্ভাগ্য নেমেআসবে। ফেরেশতারা এ দুশ্চিন্তায় কেঁদে কেঁদে হয়রান পেরেশান হয়ে সকলে মিলে তাদের ওস্তাদ ইবলীসেরনিকট উপস্থিত হল। ইবলীস এর কারণ জানতে চাইলে ফেরেশতারা বলল ওস্তাদ! ঐ যে পড়ে দেখুন; লওহে মাহফুপের এ লেখা পড়ে আমাদের সকলেরই মনে দারুন আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। আপনি আমাদের জন্য দোয়া করুণ যাতে আমরা আল্লাহর লা’নত থেকে রক্ষা পেতে পারি।
ইবলীস ফেরেশতাদের মিনতিতে তাচ্ছিল্যের সাথে মুচকী হেসে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করল, হে মাবুদ! তুমি ফেরেশতাদের কারো ওপর লা’নত দিও না। আল্লাহ তা’আলা ইবলীসের ঐ প্রার্থনা কবূল করলেন। ফেরেশতারা আল্লাহর সেই নির্ধারিত গযব থেকে রক্ষা পেল। কিন্তু ইবলীস সমগ্র ফেরেশতাদের জন্য দোয়া করল বটে কিন্তু অহংকার বশতঃ নিজের জন্য দোয়া করতে ভুলে গেল। এর কিছু দিন পরও একদিন ইবলীস আরশে মুআল্লার একখানা তখতির উপরে উজ্জ্বল নূরের হরফে ‘আউ’যুবিল্লা’হি মিশাশ শাইতোয়অ-নির রাজীম-“বিতাড়িত শয়তান হলে আল্লাহ তা’আলার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছি” লিখিত দেখতে পেল। এ লেখা পাঠ করে ইবলীস অত্যন্ত বিস্মিত হয়ে আল্লাহর নিকট জিজ্ঞেসা করল, হে মাবুদ! কে সেই দুষ্ট পাপিষ্ঠ শয়তান যাহার নিকট হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য তোমার কাছে প্রার্থনা করার কথা লিখিত রয়েছে? আল্লাহ তা’আলা জবাব দিলেন, তুমি শীঘ্রই তাকে চিনতে পারবে।”

হযরত আদম (আঃ) এর সৃষ্টি এবং শয়তানের অবাধ্যতার কাহিনী !

আল্লাহ ছাড়া আর কোন সৃষ্টিকর্তা নেই । হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল । হযরত আদম (আঃ) হলেন মানব জাতির পিতা । উনাকে আল্লাহতায়ালা প্রথম সৃষ্টি করেন । তারপর উনার সঙ্গী মা হওয়া (আঃ) কে সৃষ্টি করেন । কুরআন ও হাদীসে আদম (আঃ) এর সৃষ্টি সম্পর্কে আমরা অনেক কিছু জানতে পারি । আবু আশআরী (রাঃ) বলেন, রাসূলূল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ তায়ালা আদম (আঃ) কে পৃথিবী থেকে সংগৃহীত এক মুঠো মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেন । তাই মাটি অনুপাতে আদম সন্তানদের কেউ হয় সাদা, কেউ হয় গৈারবর্ণ, কেউ হয় কালো, কেউ হয় মাঝামাঝি । ঈষৎ শাব্দিক পার্থক্যসহ তিনি ভিন্ন সূত্রে উক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেছেন । সুদ্দী (রঃ) ইবন আব্বাস ও ইবন মাসউদ (রা) সহ কতিপয় সাহাবা সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তারা বলেনঃ আল্লাহতায়ালা কিছু কাদামাটি নেয়ার জন্য জিব্রাঈল (আ) কে যমীনে প্রেরণ করেন । তিনি এসে মাটি নিতে চাইলে যমীন বলল, তুমি আমার অঙ্গ হানি করবে বা আমাতে খুত সৃষ্টি করবে ; এ ব্যাপারে তোমার নিকট থেকে আমি আল্লাহর কাছে পানাহ চাই । ফলে জীব্রাঈল (আঃ) মাটি না নিয়ে ফিরে গিয়ে বললেন, হে আমার রব ! যমীন তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করায় আমি তাকে ছেড়ে এসেছি । এবার আল্লাহতায়ালা মীকাঈল (আ) কে প্রেরণ করেন । যমীন তার নিকট থেকেও আশ্রয় প্রার্থনা করে বসে । তাই তিনিও ফিরে গিয়ে জিব্রাঈল (আ) এর মতই বণনা দেন । এবার আল্লাহতায়ালা মালাকুল মউত বা আযরাঈল (আ) কে প্রেরণ করেন । যমীন তার কাছ থেকেও আশ্রয় প্রার্থনা করলে তিনি বললেন, আর আমিও আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়ন না করে শূন্য হাতে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে তার পানাহ চাই । এ কথা বলে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন স্হান থেকে সাদা, লাল ও কালো রঙের কিছু মাটি সংগ্রহ করে মিশিয়ে নিয়ে চলে যান । এ কারণেই আদম (আঃ) এর সন্তানদের এক একজনের রঙ এক এক রকম হয়ে থাকে । আজরাঈল (আঃ) মাটি নিয়ে উপস্হিত হলে আল্লাহতায়ালা মাটি গুলো ভিজিয়ে নেন । এতে তা আঠালো হয়ে যায় । তারপর আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেনঃ “কাদা মাটি দ্বারা আমি মানুষ সৃষ্টি করতে যাচ্ছি । যখন আমি তাকে সুঠাম করব এবং তাতে আমার রুহ সন্চার করব ; তখন তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হয়ো । “(১৫/২৮) তারপর আল্লাহতায়ালা আদম (আঃ) কে নিজ কুদরতি হাতে সৃষ্টি করেন যাতে ইবলিশ অহংকার করতে না পারে । তারপর মাটির তৈরী এ মানব দেহটি আল্লাহ চল্লিশ দিন রূহ প্রদান ব্যতীত ফেলে রাখে । তখন এই দেহটির প্রতি লক্ষ্য করে ফেরেশ্তারা এবং ইবলিশ ঘুরাঘুরি করত । আর আল্লাহর সৃস্টিকে বুঝার চেষ্টা করত । ইবলিশ আদম (আঃ) এর প্রাণহীন দেহটিকে আঘাত করলে তা ঠন ঠন আওয়াজ করে । সে দেহটির চারপাশে ঘুরে বলত , তুমি একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি হয়েছ । এরপর তার মধ্যে রূহ সন্চার করার সময় এলে আল্লাহতায়ালা বললেনঃ আমি যখন এর মধ্যে রুহ সন্চার করব, তখন এর প্রতি সেজদাবনত হয়ো । যথাসময়ে আল্লাহতায়ালা আদম (আঃ) এর দেহে রুহ সন্চার করেন , তখন রুহ তার মাথার মধ্যে প্রবেশ করে এবং তিনি হাচি দেন । ফেরেশ্তারা বললেন, আপনি আল-হামদুলিল্লাহ বলুন । আদম (আঃ) আল-হামদু লিল্লাহ বললেন । জবাবে আল্লাহতায়ালা বললেন, তোমার রব তোমাকে রহম করুন । তারপর উনার দৃস্টি জান্নাতের ফল-ফলাদির দিকে গেল । তিনি উনার পেটে ক্ষুধা অনুভব করলেন এবং ফল-ফলাদি খাওয়ার আকাংখা মনে আসল এবং তা সেগুলো পাওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি করে ছুটে যান । এ কারণেই আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মানুষ সৃষ্টিগতভাবেই ত্বরাপ্রবণ ‘ (২১/৩৭) সূরা সাদে আল্লাহতায়ালা বলেন, ” স্বরণ কর, তোমার প্রতিপালক ফেরেশ্তাদেরকে বলেছিলেন, আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি কাদা মাটি থেকে । যখন আমি তাকে সুষম করব এবং তাতে আমার রূহ সন্চার করব, তখন তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হয়ে । তখন ফেরেশ্তারা সকলেই সিজদাবনত হলো – কেবল ইবলিশ ব্যতীত । সে অহংকার করল এবং কাফিরদের অর্ন্তভুক্ত হলো । তিনি বললেন, হে ইবলিশ ! আমি যাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করলাম , তার প্রতি সিজদাবনত হতে তোমাকে কিসে বাধা দিল ? তুমি কি উদ্ধত প্রকাশ করলে না কি তুমি উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ? সে বলল, আমি তার চাইতে শ্রেষ্ঠ । আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃস্টি করেছেন কাদামাটি থেকে । তিনি বললেন, তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও । নিশ্চয়ই তুমি বিতাড়িত এবং তোমার উপর আমার লা’নৎ স্হায়ী হবে কর্মফল দিবস পর্যন্ত । সে বলল, আমার প্রতিপালক ! আপনি আমাকে অবকাশ দিন পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত । তিনি বললেন, তুমি অবকাশ প্রাপ্তদের অর্ন্তভুক্ত হলে – অবধারিত সময় উপস্হিত হওয়ার দিন পর্যন্ত । সে বলল- আপনার ক্ষমতার শপথ ! আমি তাদের সকলকেই পথভ্রষ্ট করব । তবে তাদের মধ্যে আপনার একনিষ্ঠ বান্দাদেরকে নয় । আর তিনি বললেন, তবে এটাই সত্য – আর আমি সত্যই বলি – তোমার দ্বারা আর তোমার অনুসারীদের দ্বারা আমি জাহান্নাম পূর্ণ করবই । (৭১-৮৫) সূরা আরাফে আল্লাহতায়ালা বললেন, “সে বলল, আপনি আমাকে উদভ্রান্ত করলেন , এজন্য আমিও তোমার সরল পথে নিশ্চয়ই ওৎ পেতে বসে থাকব । তারপর আমি তাদের নিকট আসবই সম্মুখ, পশ্চাৎ, দক্ষিণ এবং বাম দিক থেকে এবং তুমি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞরূপে পাবে না ।” সুদ্দী আবু সালিহ ও আবু মালিকের সূত্রে ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে এবং মুররা এর সূত্রে ইবন মাসউদ (রাঃ) ও কতিপয় সাহাবা থেকে বর্ণনা করেন যে, তারা বলেনঃ আল্লাহতায়ালা ইবলিশকে জান্নাত থেকে বের করে দেন । আদম (আঃ) তথায় নিঃসঙ্গ একাকী ঘুরে বেড়াতে থাকেন । এখানে তার স্ত্রী নেই যার কাছে গিয়ে একটু শান্তি লাভ করা যায় । এক সময় তিনি ঘুমিয়ে পড়েন । জাগ্রত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তার শিয়রে একজন নারী উপবিষ্ট রয়েছেন । আল্লাহতায়ালা তাকে আদম (আঃ) এর পাজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করেন । তাকে দেখে আদম (আঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কে ? তিনি বললেনঃ আমি একজন নারী । আদম (আঃ) বললেন, তোমাকে কেন সৃষ্টি করা হয়েছে ? জবাবে তিনি বললেন, যাতে আপনি আমার কাছে শান্তি পান । তখন ফেরেশ্তাগন আদম (আঃ) এর জ্ঞান যাচাই করার জন্য জিজ্ঞাসা কররেন, হে আদম ! উনার নাম কি বলুন তো ! আদম আঃ বললেন, হাওয়া । আবার তারা জিজ্ঞাসা করলেন, আচ্ছা হাওয়া নাম হলো কেন ? আদম (আঃ) বললেন, কারণ তাকে ‘হাই’ (জীবন্ত সত্তা) থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে । এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, “হে মানব জাতি ! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যাক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও যিনি তা হতে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেন এবং তাদের দুজন থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দেন ।” (৪/১) সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে যে, আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলূল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘মহিলাদের ব্যাপারে তোমরা আমার সদুপদেশ গ্রহণ কর । কেননা, নারীদেরকে পাজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে । আর পাজরের উপরের অংশটুকুই সর্বাধিক বাকা । যদি তুমি তা সোজা করতে যাও তাহলে ভেঙ্গে ফেলবে এবং আপন অবস্হায় ছেড়ে দিলে তা বাকাই থেকে যাবে । অতএব, মহিলাদের ব্যাপারে তোমরা আমার সদুপদেশ গ্রহণ কর ” সূত্রঃ আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া । আবুল ফিদা হাফিজ ইবন কাসির আদ-দামেশ্কী (র)।

ইব্রাহীম (আঃ) ও নমরূদের সঙ্গে বিতর্ক পরীক্ষা !

ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) ছিলেন হযরত নূহ (আঃ)-এর সম্ভবত: এগারোতম অধঃস্তন পুরুষ। নূহ থেকে ইবরাহীম পর্যন্ত প্রায় ২০০০ বছরের ব্যবধান ছিল। হযরত ছালেহ (আঃ)-এর প্রায় ২০০ বছর পরে ইবরাহীমের আগমন ঘটে। ঈসা থেকে ব্যবধান ছিল ১৭০০ বছর অথবা প্রায় ২০০০ বছরের। তিনি ছিলেন ‘আবুল আম্বিয়া’ বা নবীগণের পিতা এবং তাঁর স্ত্রী ‘সারা’ ছিলেন ‘উম্মুল আম্বিয়া’ বা নবীগণের মাতা। তাঁর স্ত্রী সারার পুত্র হযরত ইসহাক্ব-এর পুত্র ইয়াকূব (আঃ)-এর বংশধর ‘বনু ইসরাঈল’ নামে পরিচিত এবং অপর স্ত্রী হাজেরার পুত্র হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশে জন্ম নেন বিশ্বনবী ও শেষনবী হযরত মুহাম্মাদ(ছাল্লাল্লা-হু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)। যাঁর অনুসারীগণ ‘উম্মতে মুহাম্মাদী’ বা ‘মুসলিম উম্মাহ’ বলে পরিচিত।
বাবেল হ’তে তিনি কেন‘আনে (ফিলিস্তীন) হিজরত করেন। সেখান থেকে বিবি সারা-র বংশজাত নবীগণের মাধ্যমে আশপাশে সর্বত্র তাওহীদের দাওয়াত বিস্তার লাভ করে। অপর স্ত্রী হাজেরার পুত্র ইসমাঈলের মাধ্যমে বায়তুল্লাহ ও তার আশপাশ এলাকায় তাওহীদের প্রচার ও প্রসার হয় এবং অবশেষে এখানেই সর্বশেষ ও শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আগমন ঘটে। এভাবে ইবরাহীমের দুই স্ত্রীর বংশজাত নবীগণ বিশ্বকে তাওহীদের আলোয় আলোকিত করেন। শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর দেহসৌষ্ঠব ও চেহারা মুবারক পিতা ইবরাহীম (আঃ)-এর ন্যায় ছিল। যা তিনি মে‘রাজ থেকে ফিরে এসে উম্মতকে খবর দেন।
জ্ঞানীদের ইশারাই যথেষ্ট। কিন্তু মানুষ যখন কোন কিছুর প্রতি অন্ধভক্তি পোষণ করে, তখন শত যুক্তিও কোন কাজ দেয় না। ফলে ইবরাহীম ভাবলেন, এমন কিছু একটা করা দরকার, যাতে পুরা সমাজ নড়ে ওঠে ও ওদের মধ্যে হুঁশ ফিরে আসে। সাথে সাথে তাদের মধ্যে তাওহীদী চেতনার উন্মেষ ঘটে। সেমতে তিনি সম্প্রদায়ের কেন্দ্রীয় দেবমন্দিরে গিয়ে মূর্তিগুলো ভেঙ্গে ফেলার সংকল্প করলেন।
ইবরাহীম (আঃ)-এর সম্প্রদায় বছরের একটা বিশেষ দিনে উৎসব পালন করত ও সেখানে নানারূপ অপচয় ও অশোভন কাজ করত। যেমন আজকাল প্রবৃত্তি পূজারী ও বস্ত্তবাদী লোকেরা করে থাকে কথিত সংস্কৃতির নামে। এইসব মেলায় সঙ্গত কারণেই কোন নবীর যোগদান করা সম্ভব নয়। কওমের লোকেরা তাকে উক্ত মেলায় যোগদানের আমন্ত্রণ জানালো। কিন্তু তিনি অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে সেখানে যেতে অপারগতা প্রকাশ করলেন (ছাফফাত ৩৭/৮৯)। অতঃপর তিনি ভাবলেন, আজকের এই সুযোগে আমি ওদের দেবমন্দিরে প্রবেশ করে মূর্তিগুলোকে ভেঙ্গে চুরমার করে দেব। যাতে ওরা ফিরে এসে ওদের মিথ্যা উপাস্যদের অসহায়ত্বের বাস্তব দৃশ্য দেখতে পায়। হয়তবা এতে তাদের অনেকের মধ্যে হুঁশ ফিরবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান জাগ্রত হবে ও শিরক থেকে তওবা করবে।
অতঃপর তিনি দেবালয়ে ঢুকে পড়লেন ও দেব-দেবীদের দিকে লক্ষ্য করে বললেন, (তোমাদের সামনে এত নযর-নেয়ায ও ভোগ-নৈবেদ্য রয়েছে)। অথচ ‘তোমরা তা খাচ্ছ না কেন? কি ব্যাপার তোমরা কথা বলছ না কেন? তারপর তিনি ডান হাতে রাখা (সম্ভবতঃ কুড়াল দিয়ে) ভীষণ জোরে আঘাত করে সবগুলোকে গুঁড়িয়ে দিলেন (ছাফফাত ৩৭/৯১-৯৩)। তবে বড় মূর্তিটাকে পূর্বাবস্থায় রেখে দিলেন, যাতে লোকেরা তার কাছে ফিরে যায় (আম্বিয়া ২১/৫৮)।
মেলা শেষে লোকজন ফিরে এল এবং যথারীতি দেবমন্দিরে গিয়ে প্রতিমাগুলির অবস্থা দেখে হতবাক হয়ে গেল। ‘তারা বলাবলি করতে লাগল, এটা নিশ্চয়ই ইবরাহীমের কাজ হবে। কেননা তাকেই আমরা সবসময় মূর্তি পূজার বিরুদ্ধে বলতে শুনি। অতঃপর ইবরাহীমকে সেখানে ডেকে আনা হ’ল এবং জিজ্ঞেস করল, ‘হে ইবরাহীম! তুমিই কি আমাদের উপাস্যদের সাথে এরূপ আচরণ করেছ’? (আম্বিয়া ২১/৬২)।
ইবরাহীম বললেন, ‘বরং এই বড় মূর্তিটাই একাজ করেছে। নইলে এদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তারা কথা বলতে পারে’ (আম্বিয়া ২১/৬৩)। সম্প্রদায়ের নেতারা একথা শুনে লজ্জা পেল এবং মাথা নীচু করে বলল, ‘তুমি তো জানো যে, এরা কথা বলে না’। ‘তিনি বললেন, ‘তোমরা কি আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদত কর, যা তোমাদের উপকারও করতে পারে না, ক্ষতিও করতে পারে না’ (আম্বিয়া ২১/৬৫-৬৬)। তিনি আরও বললেন,‘তোমরা এমন বস্ত্তর পূজা কর, যা তোমরা নিজ হাতে তৈরী কর’? ‘অথচ আল্লাহ তোমাদেরকে ও তোমাদের কর্মসমূহকে সৃষ্টি করেছেন’ (ছাফফাত ৩৭/৯৫-৯৬)।‘ধিক তোমাদের জন্য এবং আল্লাহ ব্যতীত তোমরা যাদের পূজা কর, ওদের জন্য। তোমরা কি বুঝ না’? (আম্বিয়া ২১/৬৭)।
তারপর যা হবার তাই হ’ল। যিদ ও অহংকারের বশবর্তী হয়ে সম্প্রদায়ের নেতারা ইবরাহীমকে চূড়ান্ত শাস্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করল। তারা সিদ্ধান্ত নিল যে, একে আর বাঁচতে দেওয়া যাবে না। শুধু তাই নয়, একে এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে মারতে হবে, যেন কেউ এর দলে যেতে সাহস না করে। তারা তাঁকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার প্রস্তাব গ্রহণ করল এবং সেটা বাদশাহ নমরূদের কাছে পেশ করল। সম্রাটের মন্ত্রী ও দেশের প্রধান পুরোহিতের ছেলে ইবরাহীম। অতএব তাকে সরাসরি সম্রাটের দরবারে আনা হ’ল।
<a href='http://ritsllc.com/ads/server/adserve/www/delivery/ck.php?n=a1a091d0&cb=INSERT_RANDOM_NUMBER_HERE' target='_blank'><img src='http://ritsllc.com/ads/server/adserve/www/delivery/avw.php?zoneid=354&cb=INSERT_RANDOM_NUMBER_HERE&n=a1a091d0' border='0' alt=''/></a>
নমরূদের সঙ্গে বিতর্ক ও অগ্নিপরীক্ষা :
ইবরাহীম (আঃ) এটাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে তাওহীদের দাওয়াত দেওয়ার সুযোগ হিসাবে গ্রহণ করলেন। নমরূদ ৪০০ বছর ধরে রাজত্ব করায় সে উদ্ধত ও অহংকারী হয়ে উঠেছিল এবং নিজেকে একমাত্র উপাস্য ভেবেছিল। তাই সে ইবরাহীমকে জিজ্ঞেস করল, বল তোমার উপাস্য কে? নমরূদ ভেবেছিল, ইবরাহীম তাকেই উপাস্য বলে স্বীকার করবে। কিন্তু নির্ভীক কণ্ঠে ইবরাহীম জবাব দিলেন, ‘আমার পালনকর্তা তিনি, যিনি মানুষকে বাঁচান ও মারেন’। মোটাবুদ্ধির নমরূদ বলল, ‘আমিও বাঁচাই ও মারি’। অর্থাৎ মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে খালাস দিয়ে মানুষকে বাঁচাতে পারি। আবার খালাসের আসামীকে মৃত্যুদন্ড দিতে পারি। এভাবে সে নিজেকেই মানুষের বাঁচা-মরার মালিক হিসাবে সাব্যস্ত করল। ইবরাহীম তখন দ্বিতীয় যুক্তি পেশ করে বললেন, ‘আমার আল্লাহ সূর্যকে পূর্ব দিক থেকে উদিত করেন, আপনি তাকে পশ্চিম দিক হ’তে উদিত করুন’। ‘অতঃপর কাফের (নমরূদ) এতে হতবুদ্ধি হয়ে পড়লো’ (বাক্বারাহ ২/২৫৮)।
কওমের নেতারাই যেখানে পরাজয়কে মেনে নেয়নি, সেখানে দেশের একচ্ছত্র সম্রাট কেন পরাজয়কে মেনে নিবেন। যথারীতি তিনিও অহংকারে ফেটে পড়লেন এবং ইবরাহীমকে জ্বলন্ত হুতাশনে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার নির্দেশ জারি করলেন। সাথে সাথে জনগণকে ধর্মের দোহাই দিয়ে বললেন, ‘তোমরা একে পুড়িয়ে মার এবং তোমাদের উপাস্যদের সাহায্য কর, যদি তোমরা কিছু করতে চাও’ (আম্বিয়া ২১/৬৮)। উল্লেখ্য যে, কুরআন কোথাও নমরূদের নাম উল্লেখ করেনি এবং সে যে নিজেকে ‘সর্বোচ্চ উপাস্য’ দাবী করেছিল, এমন কথাও স্পষ্টভাবে বলেনি। তবে ‘আমিও বাঁচাতে পারি ও মারতে পারি’ (বাক্বারাহ ২/২৫৮) তার এই কথার মধ্যে তার সর্বোচ্চ অহংকারী হবার এবং ইবরাহীমের ‘রব’-এর বিপরীতে নিজেকে এভাবে উপস্থাপন করায় সে নিজেকে ‘সর্বোচ্চ রব’ হিসাবে ধারণা করেছিল বলে প্রতীয়মান হয়। প্রধানত: ইস্রাঈলী বর্ণনাসমূহের উপরে ভিত্তি করেই ‘নমরূদ’-এর নাম ও তার রাজত্ব সম্পর্কে জানা যায়। কুরআন কেবল অতটুকুই বলেছে, যতটুকু মানব জাতির হেদায়াতের জন্য প্রয়োজন।
যুক্তিতর্কে হেরে গিয়ে নমরূদ ইবরাহীম (আঃ)-কে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার হুকুম দিল। অতঃপর তার জন্য বিরাটাকারের আয়োজন শুরু হয়ে গেল। আল্লাহ বলেন, ‘তারা ইবরাহীমের বিরুদ্ধে মহা ফন্দি অাঁটতে চাইল। অতঃপর আমরা তাদেরকেই সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত করে দিলাম’ (আম্বিয়া ২১/৭০)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘আমরা তাদেরকে পরাভূত করে দিলাম’ (ছাফফাত ৩৭/৯৮)।
অতঃপর ‘একটা ভিত নির্মাণ করা হ’ল এবং সেখানে বিরাট অগ্নিকুন্ড তৈরী করা হ’ল। তারপর সেখানে তাকে নিক্ষেপ করা হ’ল’ (ছাফফাত ৩৭/৯৭)। ছহীহ বুখারীতে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হয়েছে যে, জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপের সময় ইবরাহীম (আঃ) বলে ওঠেন, ‘আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি কতই না সুন্দর তত্ত্বাবধায়ক’।[9]
একই প্রার্থনা শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) করেছিলেন, ওহোদ যুদ্ধে আহত মুজাহিদগণ যখন শুনতে পান যে, আবু সুফিয়ান মক্কায় ফিরে না গিয়ে পুনরায় ফিরে আসছে মদীনায় মুসলিম শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য, তখন ‘হামরাউল আসাদে’ উপনীত তার পশ্চাদ্ধাবনকারী ৭০ জন আহত ছাহাবীর ক্ষুদ্র দল রাসূলের সাথে সমস্বরে বলে উঠেছিল ‘আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি কতই না সুন্দর তত্ত্বাবধায়ক’ ঘটনাটি কুরআনেও বর্ণিত হয়েছে’। এভাবে পিতা ইবরাহীম ও পুত্র মুহাম্মাদের বিপদ মুহূর্তের বক্তব্যে শব্দে শব্দে মিল হয়ে যায়। তবে সার্বিক প্রচেষ্টার সাথেই কেবল উক্ত দো‘আ পাঠ করতে হবে। নইলে কেবল দো‘আ পড়ে নিষ্ক্রিয় বসে থাকলে চলবে না। যেমন ইবরাহীম (আঃ) সর্বোচ্চ পর্যায়ে দাওয়াত দিয়ে চূড়ান্ত বিপদের সময় এ দো‘আ করেছিলেন এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিরোধী পক্ষের সেনাপতি আবু সুফিয়ানের পশ্চাদ্ধাবনের পরেই উক্ত দো‘আ পড়েছিলেন।
বস্ত্ততঃ এই কঠিন মুহূর্তের পরীক্ষায় জয়লাভ করার পুরস্কার স্বরূপ সাথে সাথে আল্লাহর নির্দেশ এল ‘হে আগুন! ঠান্ডা হয়ে যাও এবং ইবরাহীমের উপরে শান্তিদায়ক হয়ে যাও’ (আম্বিয়া ২১/৬৯)। অতঃপর ইবরাহীম মুক্তি পেলেন।
অগ্নি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ইবরাহীম (আঃ) ফিরে আসেন এবং এভাবে আল্লাহ কাফিরদের সমস্ত কৌশল বরবাদ করে দেন। এরপর শুরু হ’ল জীবনের আরেক অধ্যায়।

ফেরাঊনের মাঝে জাদু প্রতিযোগিতায় মূসা (আঃ) !

মূসা (আঃ) ও ফেরাঊনের মাঝে জাদু প্রতিযোগিতার দিন ধার্য হবার পর মূসা (আঃ) পয়গম্বর সূলভ দয়া প্রকাশে নেতাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘দুর্ভোগ তোমাদের! তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করো না। তাহ’লে তিনি তোমাদেরকে আযাব দ্বারা ধ্বংস করে দেবেন। যারাই মিথ্যারোপ করে, তারাই বিফল মনোরথ হয়’ (ত্বোয়াহা ২০/৬১)। কিন্তু এতে কোন ফলোদয় হ’ল না। ফেরাঊন উঠে গিয়ে ‘তার সকল কলা-কৌশল জমা করল, অতঃপর উপস্থিত হ’ল’ (ত্বোয়াহা ২০/৬০)। ‘অতঃপর তারা তাদের কাজে নিজেদের মধ্যে বিতর্ক করল এবং গোপনে পরামর্শ করল’। ‘তারা বলল, এই দু’জন লোক নিশ্চিতভাবেই জাদুকর। তারা তাদের জাদু দ্বারা আমাদেরকে আমাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করতে চায় এবং আমাদের উৎকৃষ্ট জীবনধারা রহিত করতে চায়’। ‘অতএব (হে জাদুকরগণ!) তোমরা তোমাদের যাবতীয় কলা-কৌশল সংহত কর। অতঃপর সারিবদ্ধভাবে এসো। আজ যে জয়ী হবে, সেই-ই সফলকাম হবে’ (ত্বোয়াহা ২০/৬৩-৬৪)।
জাদুকররা ফেরাঊনের নিকট সমবেত হয়ে বলল, জাদুকর ব্যক্তিটি কি দিয়ে কাজ করে? সবাই বলল, সাপ দিয়ে। তারা বলল, আল্লাহর কসম! পৃথিবীতে আমাদের উপরে এমন কেউ নেই, যে লাঠি ও রশিকে সাপ বানিয়ে কাজ করতে পারে (‘হাদীছুল কুতূন’ নাসাঈ, ইবনু জারীর, ইবনু কাছীর)। অতএব ‘আমাদের জন্য কি বিশেষ কোন পুরস্কার আছে, যদি আমরা বিজয়ী হই’? ‘সে বলল, হ্যাঁ। তখন অবশ্যই তোমরা আমার নিকটবর্তী লোকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে’ (আ‘রাফ ৭/১১৩-১১৪)।
জাদুকররা উৎসাহিত হয়ে মূসাকে বলল, ‘হে মূসা! হয় তুমি (তোমার জাদুর লাঠি) নিক্ষেপ কর, না হয় আমরা প্রথমে নিক্ষেপ করি’ (ত্বোয়াহা ২০/৬৫)। মূসা বললেন, ‘তোমরাই নিক্ষেপ কর। অতঃপর যখন তারা ‘তাদের রশি ও লাঠি নিক্ষেপ করল’ (শো‘আরা ২৬/৪৪), তখন লোকদের চোখগুলিকে ধাঁধিয়ে দিল এবং তাদের ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুলল ও এক মহাজাদু প্রদর্শন করল’ (আ‘রাফ ৭/১১৬)। ‘তাদের জাদুর প্রভাবে মূসার মনে হ’ল যেন তাদের রশিগুলো ও লাঠিগুলো (সাপের ন্যায়) ছুটাছুটি করছে’। ‘তাতে মূসার মনে কিছুটা ভীতির সঞ্চার হ’ল’ (ত্বোয়াহা ২০/৬৬-৬৭)। এমতাবস্থায় আল্লাহ ‘অহি’ নাযিল করে মূসাকে অভয় দিয়ে বললেন, ‘তুমিই বিজয়ী হবে’ ‘তোমার ডান হাতে যা আছে, তা (অর্থাৎ লাঠি) নিক্ষেপ কর। এটা তাদের সবকিছুকে যা তারা করেছে, গ্রাস করে ফেলবে। তাদের ওসব তো জাদুর খেল মাত্র। বস্ত্ততঃ জাদুকর যেখানেই থাকুক সে সফল হবে না’ (ত্বোয়াহা ২০/৬৮-৬৯)।
জাদুকররা তাদের রশি ও লাঠি সমূহ নিক্ষেপ করার সময় বলল, اء ৪৪)- ‘ফেরাঊনের মর্যাদার শপথ! আমরা অবশ্যই বিজয়ী হব’ (শো‘আরা ২৬/৪৪)। তারপর মূসা (আঃ) আল্লাহর নামে লাঠি নিক্ষেপ করলেন। দেখা গেল তা বিরাট অজগর সাপের ন্যায় রূপ ধারণ করল এবং জাদুকরদের সমস্ত অলীক কীর্তিগুলোকে গ্রাস করতে লাগল’ (শো‘আরা ২৬/৪৫)।
এদৃশ্য দেখে যুগশ্রেষ্ঠ জাদুকরগণ বুঝে নিল যে, মূসার এ জাদু আসলে জাদু নয়। কেননা জাদুর সর্বোচ্চ বিদ্যা তাদের কাছেই রয়েছে। মূসা তাদের চেয়ে বড় জাদুকর হ’লে এতদিন তার নাম শোনা যেত। তার উস্তাদের খবর জানা যেত। তাছাড়া তার যৌবনকাল অবধি সে আমাদের কাছেই ছিল। কখনোই তাকে জাদু শিখতে বা জাদু খেলা দেখাতে বা জাদুর প্রতি কোনরূপ আকর্ষণও তার মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। তার পরিবারেও কোন জাদুকর নেই। তার বড় ভাই হারূণ তো সর্বদা আমাদের মাঝেই দিনাতিপাত করেছে। কখনোই তাকে এসব করতে দেখা যায়নি বা তার মুখে এখনকার মত বক্তব্য শোনা যায়নি। হঠাৎ করে কেউ বিশ্বসেরা জাদুকর হয়ে যেতে পারে না। নিশ্চয়ই এর মধ্যে অলৌকিক কোন সত্তার নিদর্শন রয়েছে, যা আয়ত্ত করা মানুষের ক্ষমতার বাইরে। এ সময় মূসার দেওয়া তাওহীদের দাওয়াত ও আল্লাহর গযবের ভীতি তাদের অন্তরে প্রভাব বিস্তার করল। আল্লাহ বলেন, َ ‘অতঃপর সত্য প্রতিষ্ঠিত হ’ল এবং বাতিল হয়ে গেল তাদের সমস্ত জাদুকর্ম’। ‘এভাবে তারা সেখানেই পরাজিত হ’ল এবং লজ্জিত হয়ে ফিরে গেল’ (আ‘রাফ ৭/১১৮-১১৯)। অতঃপর ‘তারা সিজদায় পড়ে গেল’। এবং ‘বলে উঠল, আমরা বিশ্বচরাচরের পালনকর্তার উপরে বিশ্বাস স্থাপন করলাম, যিনি মূসা ও হারূণের রব’ (শো‘আরা ২৬/৪৬-৪৮; ত্বোয়াহা ২০/৭০; আ‘রাফ ৭/১২০-১২১)।
পরাজয়ের এ দৃশ্য দেখে ভীত-বিহবল ফেরাঊন নিজেকে সামলে নিয়ে উপস্থিত লাখো জনতার মনোবল চাঙ্গা রাখার জন্য জাদুকরদের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো, -‘আমার অনুমতি দানের পূর্বেই তোমরা তাকে মেনে নিলে? নিশ্চয়ই সে (অর্থাৎ মূসা) তোমাদের প্রধান, যে তোমাদেরকে জাদু শিক্ষা দিয়েছে’ (ত্বোয়াহা ২০/৭১; আ‘রাফ ৭/১২৩; শো‘আরা ২৬/৪৯)। অতঃপর সম্রাট সূলভ হুমকি দিয়ে বলল, ৪৯)- ‘শীঘ্রই তোমরা তোমাদের পরিণাম ফল জানতে পারবে। আমি অবশ্যই তোমাদের হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলব এবং তোমাদের সবাইকে শূলে চড়াব’ (শো‘আরা ২৬/৪৯)। জবাবে জাদুকররা বলল,‘কোন ক্ষতি নেই। আমরা আমাদের পালনকর্তার কাছে প্রত্যাবর্তন করব’(৫০)। ‘আশা করি আমাদের পালনকর্তা আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি সমূহ ক্ষমা করবেন’ (শো‘আরা ২৬/৪৯-৫১; ত্বোয়াহা ২০/৭১-৭৩; আ‘রাফ ৭/১২৪-১২৬)।
<a href='http://ritsllc.com/ads/server/adserve/www/delivery/ck.php?n=a1a091d0&cb=INSERT_RANDOM_NUMBER_HERE' target='_blank'><img src='http://ritsllc.com/ads/server/adserve/www/delivery/avw.php?zoneid=354&cb=INSERT_RANDOM_NUMBER_HERE&n=a1a091d0' border='0' alt=''/></a>
উল্লেখ্য যে, জাদুকরদের সাথে মুকাবিলার এই দিনটি ছিল ১০ই মুহাররম আশূরার দিন ) (ইবনু কাছীর, ‘হাদীছুল ফুতূন’)। তবে কোন কোন বিদ্বান বলেছেন, এটি ছিল তাদের ঈদের দিন। কেউ বলেছেন, বাজারের দিন। কেউ বলেছেন, নববর্ষের দিন (তাফসীরে কুরতুবী, ত্বোয়াহা ৫৯)।
ফেরাঊনের ছয়টি কুটচাল :
জাদুকরদের পরাজয়ের পর ফেরাঊন তার রাজনৈতিক কুটচালের মাধ্যমে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরিয়ে দিতে চাইল। তার চালগুলি ছিল, (১) সে বলল: এই জাদুকররা সবাই মূসার শিষ্য। তারা চক্রান্ত করেই তার কাছে নতি স্বীকার করেছে। এটা একটা পাতানো খেলা মাত্র। আসলে ‘মূসাই হ’ল বড় জাদুকর’ (ত্বোয়াহা ২০/৭১)। (২) সে বলল, মূসা তার জাদুর মাধ্যমে ‘নগরীর অধিবাসীদেরকে সেখান থেকে বের করে দিতে চায়’ (আ‘রাফ ৭/১১০) এবং মূসা ও তার সম্প্রদায় এদেশে আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। (৩) সে বলল মূসা যেসব কথা বলছে ‘আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে সেসব কথা কখনো শুনিনি’ (ক্বাছাছ ২৮/৩৬)। (৪) সে বলল, হে জনগণ! এ লোকটি তোমাদের ধর্ম পরিবর্তন করে দেবে ও দেশময় বিপর্যয় সৃষ্টি করবে’ (মুমিন/গাফের ৪০/২৬)। (৫) সে বলল, মূসা তোমাদের উৎকৃষ্ট (রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক) জীবন ব্যবস্থা রহিত করতে চায়’ (ত্বোয়াহা ২০/৬৩)। (৬) সে মিসরীয় জনগণকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে দিয়েছিল (ক্বাছাছ ২৮/৪) এবং একটির দ্বারা অপরটিকে দুর্বল করার মাধ্যমে নিজের শাসন ও শোষণ অব্যাহত রেখেছিল। আজকের বহুদলীয় গণতন্ত্র বা দলতন্ত্র ফেলে আসা ফেরাঊনী তন্ত্রের আধুনিক রূপ বলেই মনে হয়। নিজেই সবকিছু করলেও লোকদের খুশী করার জন্য ফেরাঊন বলল, ‘অতএব হে জনগণ! তোমরা এখন কি বলতে চাও’? (শো‘আরা ২৬/৩৫; আ‘রাফ ৭/১১০)। এযুগের নেতারা যেমন নিজেদের সকল অপকর্ম জনগণের দোহাই দিয়ে করে থাকেন।
ফেরাঊনী কুটনীতির বিজয় ও জনগণের সমর্থন লাভ :
অধিকাংশের রায় যে সবসময় সঠিক হয় না বরং তা আল্লাহর পথ হ’তে মানুষকে বিভ্রান্ত করে, তার বড় প্রমাণ হ’ল ফেরাঊনী কুটনীতির বিজয় ও মূসার আপাত পরাজয়। ফেরাঊনের ভাষণে উত্তেজিত জনগণের পক্ষে নেতারা সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো, হে সম্রাট! ‘আপনি কি মূসা ও তার সম্প্রদায়কে এমনিই ছেড়ে দেবেন দেশময় ফাসাদ সৃষ্টি করার জন্য এবং আপনাকে ও আপনার উপাস্যদেরকে বাতিল করে দেবার জন্য’ (আ‘রাফ ৭/১২৭)।
জাদুকরদের সত্য গ্রহণ :
ধূর্ত ও কুটবুদ্ধি ফেরাঊন বুঝলো যে, তার ঔষধ কাজে লেগেছে। এখুনি মোক্ষম সময়। সে সাথে সাথে জাদুকরদের হাত-পা বিপরীতভাবে কেটে অতঃপর খেজুর গাছের সাথে শূলে চড়িয়ে হত্যা করার আদেশ দিল। সে ভেবেছিল, এতে জাদুকররা ভীত হয়ে তার কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবে। কিন্তু ফল উল্টা হ’ল। তারা একবাক্যে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলে দিল,
‘আমরা তোমাকে ঐসব সুস্পষ্ট নিদর্শন (ও মু‘জেযার) উপরে প্রাধান্য দিতে পারি না, যেগুলো (মূসার মাধ্যমে) আমাদের কাছে পৌঁছেছে এবং প্রধান্য দিতে পারি না তোমাকে সেই সত্তার উপরে যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। অতএব তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পার। তুমি তো কেবল এই পার্থিব জীবনেই যা করার করবে’(৭২)। ‘আমরা আমাদের পালনকর্তার উপরে বিশ্বাস স্থাপন করেছি, যাতে তিনি আমাদের পাপসমূহ এবং তুমি আমাদেরকে যে জাদু করতে বাধ্য করেছ, (তার পাপসমূহ) তা মার্জনা করেন। আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ ও চিরস্থায়ী’ (ত্বোয়াহা ২০/৭২-৭৩)।
তারা আরও বলল,
‘আমরা (তো মৃত্যুর পরে) আমাদের পরওয়ারদিগারের নিকটে ফিরে যাব’। ‘বস্ত্ততঃ আমাদের সাথে তোমার শত্রুতা তো কেবল একারণেই যে, আমরা ঈমান এনেছি আমাদের পালনকর্তার নিদর্শন সমূহের প্রতি, যখন তা আমাদের নিকটে পৌঁছেছে। অতএব ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের জন্য ধৈর্যের দুয়ার খুলে দাও এবং আমাদেরকে ‘মুসলিম’ হিসাবে মৃত্যু দান কর’ (আ‘রাফ ৭/১২৫-১২৬)।
এটা ধারণা করা অযৌক্তিক হবে না যে, ইতিপূর্বে ফেরাঊনের দরবারে মূসার লাঠির মু‘জেযা প্রদর্শনের ঘটনা থেকেই জাদুকরদের মনে প্রতীতি জন্মেছিল যে, এটা কোন জাদু নয়, এটা মু‘জেযা। কিন্তু ফেরাঊন ও তার পারিষদবর্গের ভয়ে তারা মুখ খুলেনি। অবশেষে তাদেরকে সমবেত করার পর তাদেরকে সম্রাটের নৈকট্যশীল করার ও বিরাট পুরস্কারের লোভ দেখানো হয়।

হযরত সুলায়মান (আঃ) সাথে পিপীলিকা !

হযরত দাঊদ (আঃ)-এর মৃত্যুর পর সুযোগ্য পুত্র সুলায়মান তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আবির্ভাবের ন্যূনাধিক দেড় হাযার বছর পূর্বে তিনি নবী হন। সুলায়মান ছিলেন পিতার ১৯জন পুত্রের অন্যতম। আল্লাহ পাক তাকে জ্ঞানে, প্রজ্ঞায় ও নবুঅতের সম্পদে সমৃদ্ধ করেন। এছাড়াও তাঁকে এমন কিছু নে‘মত দান করেন, যা অন্য কোন নবীকে দান করেননি। ইমাম বাগাভী ইতিহাসবিদগণের বরাতে বলেন, সুলায়মান (আঃ)-এর মোট বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। তের বছর বয়সে রাজকার্য হাতে নেন এবং শাসনের চতুর্থ বছরে বায়তুল মুক্বাদ্দাসের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তিনি ৪০ বছর কাল রাজত্ব করেন (মাযহারী, কুরতুবী)। তবে তিনি কত বছর বয়সে নবী হয়েছিলেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায় না।
পিপীলিকার ভাষাও তিনি বুঝতেন। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘অবশেষে সুলায়মান তার সৈন্যদল নিয়ে পিপীলিকা অধ্যুষিত উপত্যকায় পৌঁছল। তখন পিপীলিকা (নেতা) বলল, হে পিপীলিকা দল! তোমরা স্ব স্ব গৃহে প্রবেশ কর। অন্যথায় সুলায়মান ও তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদের পিষ্ট করে ফেলবে’। ‘তার এই কথা শুনে সুলায়মান মুচকি হাসল… (নমল ২৭/১৮-১৯)।
তাঁকে এমন সাম্রাজ্য দান করা হয়েছিল, যা পৃথিবীতে আর কাউকে দান করা হয়নি। এজন্য আল্লাহর হুকুমে তিনি আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করেছিলেন। যেমন আল্লাহ বলেন,
‘সুলায়মান বলল, হে আমার পালনকর্তা! আমাকে ক্ষমা কর এবং আমাকে এমন এক সাম্রাজ্য দান কর, যা আমার পরে আর কেউ যেন না পায়। নিশ্চয়ই তুমি মহান দাতা’ (ছোয়াদ ৩৮/৩৫)।
উল্লেখ্য যে, পয়গম্বরগণের কোন দো‘আ আল্লাহর অনুমতি ব্যতিরেকে হয় না। সে হিসাবে হযরত সুলায়মান (আঃ) এ দো‘আটিও আল্লাহ তা‘আলার অনুমতিক্রমেই করেছিলেন। কেবল ক্ষমতা লাভ এর উদ্দেশ্য ছিল না। বরং এর পিছনে আল্লাহর বিধানাবলী বাস্তবায়ন করা এবং তাওহীদের ঝান্ডাকে সমুন্নত করাই মূল উদ্দেশ্য ছিল। কেননা আল্লাহ জানতেন যে, রাজত্ব লাভের পর সুলায়মান তাওহীদ ও ইনছাফ প্রতিষ্ঠার জন্যই কাজ করবেন এবং তিনি কখনোই অহংকারের বশীভূত হবেন না। তাই তাঁকে এরূপ দো‘আর অনুমতি দেওয়া হয় এবং সে দো‘আ সর্বাংশে কবুল হয়।
ইসলামে নেতৃত্ব ও শাসন ক্ষমতা চেয়ে নেওয়া নিষিদ্ধ। আল্লামা জুবাঈ বলেন, আল্লাহর অনুমতিক্রমেই তিনি এটা চেয়েছিলেন। কেননা নবীগণ আল্লাহর হুকুম ব্যতীত কোন সুফারিশ করতে পারেন না। তাছাড়া এটা বলাও সঙ্গত হবে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, বর্তমানে (জাদু দ্বারা বিপর্যস্ত এই দেশে) তুমি ব্যতীত দ্বীনের জন্য কল্যাণকর এবং যথার্থ শাসনের যোগ্যতা অন্য কারু মধ্যে নেই। অতএব তুমি প্রার্থনা করলে আমি তোমাকে তা দান করব।’ সেমতে তিনি দো‘আ করেন ও আল্লাহ তাকে তা প্রদান করেন।[4]
প্রাপ্ত অনুগ্রহরাজির হিসাব রাখা বা না রাখার অনুমতি প্রদান। আল্লাহ পাক হযরত সুলায়মান (আঃ)-এর রাজত্ব লাভের দো‘আ কবুল করার পরে তার প্রতি বায়ু, জিন, পক্ষীকুল ও জীব-জন্তু সমূহকে অনুগত করে দেন। অতঃপর বলেন,
‘এসবই আমার অনুগ্রহ। অতএব এগুলো তুমি কাউকে দাও অথবা নিজে রেখে দাও, তার কোন হিসাব দিতে হবে না’। ‘নিশ্চয়ই তার (সুলায়মানের) জন্য আমার কাছে রয়েছে নৈকট্য ও শুভ পরিণতি’ (ছোয়াদ ৩৮/৩৯-৪০)।
বস্ত্ততঃ এটি ছিল সুলায়মানের আমানতদারী ও বিশ্বস্ততার প্রতি আল্লাহর পক্ষ হ’তে প্রদত্ত একপ্রকার সনদপত্র। পৃথিবীর কোন ব্যক্তির জন্য সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে এ ধরনের কোন সত্যায়নপত্র নাযিল হয়েছে বলে জানা যায় না। অথচ এই মহান নবী সম্পর্কে ইহুদী-নাছারা বিদ্বানরা বাজে কথা রটনা করে থাকে।
সুলায়মানের জীবনে উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলী :
(১) ন্যায় বিচারের ঘটনা : ছাগপালের মালিক ও শস্যক্ষেতের মালিকের মধ্যকার বিরোধ মীমাংসায় তাঁর দেওয়া প্রস্তাব বাদশাহ দাঊদ (আঃ) গ্রহণ করেন ও নিজের দেওয়া পূর্বের রায় বাতিল করে পুত্র সুলায়মানের দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী রায় দেন ও তা কার্যকর করেন। এটি ছিল সুলায়মানের বাল্যকালের ঘটনা, যা আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করেছেন (দ্র: আম্বিয়া ২১/৭৮-৭৯)। এ ঘটনা আমরা দাঊদ (আঃ)-এর কাহিনীতে বলে এসেছি।
(২) পিপীলিকার ঘটনা : হযরত সুলায়মান (আঃ) একদা তাঁর বিশাল সেনাবাহিনী সহ একটি এলাকা অতিক্রম করছিলেন। ঐ সময় তাঁর সাথে জিন, মানুষ পক্ষীকুল ছিল। যে এলাকা দিয়ে তাঁরা যাচ্ছিলেন সে এলাকায় বালির ঢিবি সদৃশ পিপীলিকাদের বহু বসতঘর ছিল। সুলায়মান বাহিনীকে আসতে দেখে পিপীলিকাদের সর্দার তাদেরকে বলল, তোমরা শীঘ্র পালাও। নইলে পাদপিষ্ট হয়ে শেষ হয়ে যাবে। সুলায়মান (আঃ) পিপীলিকাদের এই বক্তব্য শুনতে পেলেন এ বিষয়ে কুরআনী
‘সুলায়মান দাঊদের স্থলাভিষিক্ত হ’ল এবং বলল, হে লোক সকল! আমাদেরকে পক্ষীকুলের ভাষা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে এবং আমাদেরকে সবকিছু দেওয়া হয়েছে। নিশ্চয়ই এটি একটি সুস্পষ্ট শ্রেষ্ঠত্ব’ (নমল ১৬)। ‘অতঃপর সুলায়মানের সম্মুখে তার সোনাবাহিনীকে সমবেত করা হ’ল জিন, মানুষ ও পক্ষীকুলকে। তারপর তাদেরকে বিভিন্ন ব্যুহে বিভক্ত করা হ’ল’ (১৭)। ‘অতঃপর যখন তারা একটি পিপীলিকা অধ্যুষিত এলাকায় উপনীত হ’ল, তখন এক পিপীলিকা বলল, ‘হে পিপীলিকা দল! তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ কর। অন্যথায় সুলায়মান ও তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমদেরকে পিষ্ট করে ফেলবে’ (১৮)। ‘তার কথা শুনে সুলায়মান মুচকি হাসল এবং বলল, ‘হে আমার পালনকর্তা! তুমি আমাকে ক্ষমতা দাও, যেন আমি তোমার নে‘মতের শুকরিয়া আদায় করতে পারি, যা তুমি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে দান করেছ এবং যাতে আমি তোমার পসন্দনীয় সৎকর্মাদি করতে পারি এবং তুমি আমাকে নিজ অনুগ্রহে তোমার সৎকর্মশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কর’ (নমল ২৭/১৬-১৯)।
<a href='http://ritsllc.com/ads/server/adserve/www/delivery/ck.php?n=a1a091d0&cb=INSERT_RANDOM_NUMBER_HERE' target='_blank'><img src='http://ritsllc.com/ads/server/adserve/www/delivery/avw.php?zoneid=354&cb=INSERT_RANDOM_NUMBER_HERE&n=a1a091d0' border='0' alt=''/></a>
উপরোক্ত আয়াতগুলিতে প্রমাণিত হয় যে, সুলায়মান (আঃ) কেবল পাখির ভাষা নয়, বরং সকল জীবজন্তু এমনকি ক্ষুদ্র পিঁপড়ার কথাও বুঝতেন। এজন্য তিনি মোটেই গর্ববোধ না করে বরং আল্লাহর অনুগ্রহের প্রতি শুকরিয়া আদায় করেন এবং নিজেকে যাতে আল্লাহ অন্যান্য সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত করেন সে প্রার্থনা করেন। এখানে আরেকটি বিষয় প্রমাণিত হয় যে, তিনি কেবল জিন-ইনসানের নয় বরং তাঁর সময়কার সকল জীবজন্তুরও নবী ছিলেন। তাঁর নবুঅতকে সবাই স্বীকার করত এবং সকলে তাঁর প্রতি আনুগত্য পোষণ করত। যদিও জিন ও ইনসান ব্যতীত অন্য প্রাণী শরী‘আত পালনের হকদার নয়।
(৩) ‘হুদহুদ’ পাখির ঘটনা : হযরত সুলায়মান (আঃ) আল্লাহর হুকুমে পক্ষীকুলের আনুগত্য লাভ করেন। একদিন তিনি পক্ষীকুলকে ডেকে একত্রিত করেন ও তাদের ভাল-মন্দ খোঁজ-খবর নেন। তখন দেখতে পেলেন যে, ‘হুদহুদ’ পাখিটা নেই। তিনি অনতিবিলম্বে তাকে ধরে আনার জন্য কড়া নির্দেশ জারি করলেন। সাথে তার অনুপস্থিতির উপযুক্ত কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করলেন। উক্ত ঘটনা কুরআনের ভাষায় নিম্নরূপ:
‘সুলায়মান পক্ষীকুলের খোঁজ-খবর নিল। অতঃপর বলল, কি হ’ল হুদহুদকে দেখছি না যে? না-কি সে অনুপস্থিত’ (নমল ২০)। সে বলল, ‘আমি অবশ্যই তাকে কঠোর শাস্তি দেব কিংবা যবহ করব অথবা সে উপস্থিত করবে উপযুক্ত কারণ’ (২১)। ‘কিছুক্ষণ পরেই হুদহুদ এসে হাযির হয়ে বলল, (হে বাদশাহ!) আপনি যে বিষয়ে অবগত নন, আমি তা অবগত হয়েছি। আমি আপনার নিকটে ‘সাবা’ থেকে নিশ্চিত সংবাদ নিয়ে আগমন করেছি’ (নমল ২৭/২০-২২)।
এ পর্যন্ত বলেই সে তার নতুন আনীত সংবাদের রিপোর্ট পেশ করল। হুদহুদের মাধ্যমে একথা বলানোর মাধ্যমে আল্লাহ আমাদেরকে একথা জানিয়ে দিলেন যে, নবীগণ গায়েবের খবর রাখেন না। তাঁরা কেবল অতটুকুই জানেন, যতটুকু আল্লাহ তাদেরকে অবহিত করেন।
উল্লেখ্য যে, ‘হুদহুদ’ এক জাতীয় ছোট্ট পাখির নাম। যা পক্ষীকুলের মধ্যে অতীব ক্ষুদ্র ও দুর্বল এবং যার সংখ্যাও দুনিয়াতে খুবই কম। বর্ণিত আছে যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) একদা নও মুসলিম ইহুদী পন্ডিত আব্দুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন, এতসব পাখী থাকতে বিশেষভাবে ‘হুদহুদ’ পাখির খোঁজ নেওয়ার কারণ কি ছিল? জওয়াবে তিনি বলেন, সুলায়মান (আঃ) তাঁর বিশাল বাহিনীসহ ঐসময় এমন এক অঞ্চলে ছিলেন, যেখানে পানি ছিল না। আল্লাহ তা‘আলা হুদহুদ পাখিকে এই বৈশিষ্ট্য দান করেছেন যে, সে ভূগর্ভের বস্ত্ত সমূহকে এবং ভূগর্ভে প্রবাহিত পানি উপর থেকে দেখতে পায়। হযরত সুলায়মান (আঃ) হুদহুদকে এজন্যেই বিশেষভাবে খোঁজ করছিলেন যে, এতদঞ্চলে কোথায় মরুগর্ভে পানি লুক্কায়িত আছে, সেটা জেনে নিয়ে সেখানে জিন দ্বারা খনন করে যাতে দ্রুত পানি উত্তোলনের ব্যবস্থা করা যায়’। একদা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) ‘হুদহুদ’ পাখি সম্পর্কে বর্ণনা করছিলেন। তখন নাফে‘ ইবনুল আযরক্ব তাঁকে বলেন,
‘জেনে নিন হে মহা জ্ঞানী! হুদহুদ পাখি মাটির গভীরে দেখতে পায়। কিন্তু (তাকে ধরার জন্য) মাটির উপরে বিস্তৃত জাল সে দেখতে পায় না। যখন সে তাতে পতিত হয়’। জবাবে ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ‘যখন তাক্বদীর এসে যায়, চক্ষু অন্ধ হয়ে যায়’। চমৎকার এ জবাবে মুগ্ধ হয়ে ইবনুল ‘এরূপ জওয়াব দিতে কেউ সক্ষম হয় না, কুরআনের আলেম ব্যতীত’।

খিযির ও মূসা (আঃ)-এর কাহিনী

হযরত ইবনু আব্বাস (রা:) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, হযরত উবাই ইবনু কা‘ব (রা:) রাসূলুল্লাহ (সা:) হ’তে আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন যে, হযরত মূসা (আঃ) একদা বনী ইসরাঈলের এক সমাবেশে ভাষণ দিতে দাঁড়ালে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হ’ল, কোন ব্যক্তি সর্বাধিক জ্ঞানী? তিনি বললেন, আমিই সর্বাধিক জ্ঞানী। জ্ঞানকে আল্লাহর দিকে সোপর্দ না করার কারণে আল্লাহ্‌ তাকে তিরস্কার করে বললেন, বরং দু’সাগরের সঙ্গমস্থলে আমার এক বান্দা আছে, যিনি তোমার চেয়ে অধিক জ্ঞানী।
হযরত মূসা (আঃ) বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! তার নিকট পৌছাতে কে আমাকে সাহায্য্ করবে? কখনো সুফইয়ান এভাবে বর্ণনা করেছেন, আমি কিভাবে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে পারি? তখন বলা হ’ল, তুমি একটি থলিতে করে একটি মাছ নাও। যেখানে তুমি মাছটি হারাবে, সেখানেই আমার সে বান্দা আছে। অতঃপর হযরত মূসা (আঃ) একটি মাছ ধরলেন এবং থলিতে রাখলেন।অতঃপর মাছ নিয়ে তাঁর সঙ্গী ইউশা বিন নূনকে সাথে নিয়ে চললেন।শেষ পর্যন্ত তারা একটি পাথরের কাছে পৌছলেন এবং তার উপর মাথা রেখে বিশ্রাম নিলেন।মূসা (আঃ) ঘুমিয়ে পড়লেন। এ সময় মাছটি থলি থেকে বের হয়ে লাফিয়ে সমুদ্রে চলে গেল।অতঃপর সে সমুদ্রে সুড়ঙ্গের মত পথ করে নিল।আর আল্লাহ্‌ মাছটির চলার পথে পানির প্রবাহ থামিয়ে দিলেন।ফলে তার গমনপথটি সুড়ঙ্গের মত হয়ে গেল।অতঃপর তারা উভয়ে অবশিষ্ট রাত এবং পুরো দিন পথ চললেন।
পরদিন সকালে হযরত মূসা (আঃ) তার সাথীকে বললেন, আমরা তো সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, আমাদের খাবার নিয়ে এস।হযরত মূসা (আঃ)-কে আল্লাহ্‌ যে স্থানে যাবার কথা বলেছিলেন, সেই স্থান অতিক্রম করার পূর্ব পর্যন্ত তিনি কোনরূপ ক্লান্তিবোধ করেননি। সাথী ইউশা বিন নুন তখন বলল, আপনি কি ভেবে দেখেছেন, যে পাথরটির নিকট আমরা বিশ্রাম নিয়েছিলাম সেখানেই মাছটি অদ্ভুতভাবে সমুদ্রের মধ্যে চলে গেছে।কিন্তু আমি মাছটির কথা আপনাকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। মূলত: শয়তানই আমাকে এ কথা ভুলিয়ে দিয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, পথটি মাছের জন্য ছিল একটি সুড়ঙ্গের মত আর তাঁদের জন্য ছিল আশ্চর্যজনক ব্যাপার।
হযরত মূসা (আঃ) বললেন, আমরা তো সেই স্থানটিরই অনুসন্ধান করছি।অতঃপর তারা তাদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চললেন এবং ঐ পাথরের নিকটে পৌঁছে দেখলেন, এক ব্যক্তি কাপড় মুড়ি দিয়ে বসে আছেন। মূসা (আঃ) তাঁকে সালাম দিলেন। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, এখানে সালাম কি করে এলো? তিনি বললেন, আমি মূসা। খিযির জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি বনী ইসরাঈল বংশীয় মূসা? মূসা (আঃ) বললেন, হ্যাঁ। আমি এসেছি এজন্য যে, সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে, তা হ’তে আপনি আমাকে শিক্ষা দিবেন। খিযির বললেন, হে মূসা! আমার আল্লাহ্‌ প্রদত্ত কিছু জ্ঞান আছে, যা আপনি জানেন না। আর আপনিও আল্লাহ্‌ প্রদত্ত এমন কিছু জ্ঞানের অধিকারী, যা আমি জানি না। মূসা (আঃ) বললেন, আমি কি আপনার সাথী হ’তে পারি? খিযির বললেন, ‘আপনি কিছুতেই আমার সাথে ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না। যে বিষয় আপনার জ্ঞানের আওতাধীন নয় সে বিষয়ে আপনি ধৈর্যধারণ করবেন কেমন করে?’ মূসা (আঃ) বললেন, ‘ইনশাআল্লাহ্‌ আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আপনার কোন আদেশ আমি অমান্য করব না’ (কাহফ ৬৭-৬৯) ।
অতঃপর তাঁরা দু’জনে সাগরের কিনারা ধরে হেঁটে চললেন। তখন একটি নৌকা তাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। তারা তাদেরকে নৌকায় তুলে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন। তারা খিযির-কে চিনতে পেরে বিনা ভাড়ায় তাঁদেরকে নৌকায় তুলে নিলো। যখন তাঁরা দু’জনে নৌকায় চড়লেন, তখন একটি চড়ুই পাখি এসে নৌকাটির কিনারায় বসল এবং সমুদ্র থেকে এক ফোঁটা বা দুই ফোঁটা পানি পান করল। খিযির বললেন, ‘হে মুসা! আমার ও আপনার জ্ঞানের দ্বারা আল্লাহ্‌ জ্ঞান হ’তে ততটুকুও কমেনি যত টুকু এ পাখিটি তাঁর ঠোটের দ্বারা সাগরের পানি হ্রাস করেছে’।
<a href='http://ritsllc.com/ads/server/adserve/www/delivery/ck.php?n=a1a091d0&cb=INSERT_RANDOM_NUMBER_HERE' target='_blank'><img src='http://ritsllc.com/ads/server/adserve/www/delivery/avw.php?zoneid=354&cb=INSERT_RANDOM_NUMBER_HERE&n=a1a091d0' border='0' alt=''/></a>
তখন খিযির একটি কুড়াল নিয়ে নৌকাটির একটা তক্তা খুলে ফেললেন। মূসা (আঃ) অকস্মাৎ দৃষ্টি দিতেই দেখতে পেলেন যে, তিনি কুড়াল দিয়ে একটি তক্তা খুলে ফেলেছেন। তখন তিনি তাঁকে বললেন, আপনি একি করলেন? এ লোকেরা বিনা ভাড়ায় আমাদেরকে নৌকায় তুলে নিলো, আর আপনি তাদেরকে ডুবিয়ে দেয়ার জন্য নৌকা ছিদ্র করে দিলেন? আপনি তো একটি গুরুতর কাজ করলেন। খিযির বললেন, আমি কি বলিনি যে, আপনি আমার সাথে ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না। মূসা (আঃ) বললেন, আমার ভুলের জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না এবং আমার এ ব্যবহারে আমার প্রতি কঠোর হবেন না।মূসা (আঃ)-এর পক্ষ থেকে প্রথম এ কথাটি ছিল ভুলক্রমে।
অতঃপর তাঁরা যখন উভয়ে সমুদ্র পার হলেন, তখন তারা একটি বালকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন, যে অন্যান্য বালকদের সাথে খেলা করছিল।খিযির ছেলেটির মাথা দেহ হ’তে ছিন্ন করে ফেললেন। হযরত মুসা (আঃ) বললেন, আপনি একটি নিষ্পাপ শিশুকে বিনা অপরাধে হত্যা করলেন? আপনি খুবই খারাপ একটা কাজ করলেন। খিযির বললেন, আমি কি বলিনি যে, আপনি আমার সাথে ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না। মূসা (আঃ) বললেন, এরপর যদি আমি আপনাকে আর কোন প্রশ্ন করি, তাহ’লে আমাকে আর সঙ্গে রাখবেন না।অতঃপর উভয়ে চলতে লাগলেন। চলতে চলতে তাঁরা একটি জনপদের অধিবাসীদের নিকট পৌঁছে তাদের নিকট কিছু খাবার চাইলেন। কিন্তু জনপদ বাসী তাদের দু’জনের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল।সেখানে তারা একটি প্রাচীর দেখতে পেলেন, যা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছিল।হযরত খিযির প্রাচীরটি মেরামত করে সুদৃঢ় করে দিলেন।হযরত মুসা (আঃ) বললেন, এই বসতির লোকদের নিকট এসে আমরা খাবার চাইলাম।তারা মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল।অথচ আপনি এদের দেয়াল সোজা করে দিলেন।আপনি তো ইচ্ছা করলে এর জন্য পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারতেন।হযরত খিযির বললেন, এবার আমার এবং আপনার মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে গেল।এক্ষণে যে বিষয়ে আপনি ধৈর্যধারণ করতে পারেননি, আমি এর তাৎপর্য বলে দিচ্ছি।
নৌকাটির ব্যাপার ছিল এই যে, সেটি ছিল কয়েকজন দরিদ্র ব্যক্তির।তারা সমুদ্রে জীবিকা অন্বেষণ করত।আমি নৌকাটিকে ত্রুটিযুক্ত করে দিতে চাইলাম। কারণ, তাদের সামনে ছিল এক রাজা, যে ভাল নৌকা পেলেই জোরপূর্বক কেড়ে নিত। তারপর যখন এটাকে দখল করতে লোক আসল, তখন ছিদ্রযুক্ত দেখে ছেড়ে দিল। অতঃপর নৌকাওয়ালারা একটা কাঠ দ্বারা নৌকাটি মেরামত করে নিলো।আর বালকটি সূচনা লগ্নেই ছিল কাফের। আর সে ছিল তার ঈমানদার বাবা- মার বড়ই আদরের সন্তান । আমি আশঙ্কা করলাম যে, সে বড় হয়ে অবাধ্যতা ও কুফরি দ্বারা তাদেরকে কষ্ট দিবে। অতঃপর আমি ইচ্ছা করলাম যে, তাদের পালনকর্তা তাদেরকে তার চেয়ে পবিত্রতায় ও ভালবাসায় ঘনিষ্ঠতর একটি শ্রেষ্ঠ সন্তান দান করুন।আর প্রাচীরের ব্যাপার এই যে, সেটি ছিল নগরের দু’জন ইয়াতীম বালকের। এর নীচে ছিল তাদের গুপ্তধন। তাদের পিতা ছিলেন সৎকর্ম পরায়ণ। সুতরাং আপনার পালনকর্তা দয়াপরবেশ হয়ে ইচ্ছা পোষণ করলেন যে, তারা যৌবনে পদার্পণ করে নিজেদের গুপ্তধন উদ্ধার করুক।

Monday, September 15, 2014

জামাত শিবিরের সিলেবাসের বই

জামাত শিবিরের সিলেবাসের বই
থেকে কয়েকটি উক্তি বলছি যা একজন মুসলমানের ঈমান চলে যাওয়ার জন্য যথেষ্টঃ
১। মওদূদী বলেছে, সমস্ত
নবী গোনাহগার। (তাফহীমাত ২য় খন্ড ৫৭ পৃঃ)
২। মওদূদী বলেছে, আমাদের নবী তাঁর রেসালতের দায়ীত্ব আদায়ে ভূল ত্রুটি করেছেন। (তাফহীমুল ১৯ খন্ড পৃঃ ২৮৬, ৪নং টীকা, কুরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা পৃঃ ১১৮)
৩। মওদূদী বলেছে, নবী ও সাহাবীদের মধ্যে লোভ, লালসা, ঘৃনা-বিদ্ধেষ, কার্পন্য, স্বার্থপরতা ও প্রতিহিংসা ছিল, যারা ফলে ওহুদ যুদ্ধে পরাজিত হয়েছেন, (তাফহীমুল কুরআন ২য় খন্ড পৃঃ ৬০, ৯৯নং টীকা)
৪। নবী আঃ এর মত লম্বা দাড়ি রাখা বা অন্যান্য কর্ম নবী আঃ এর মত করা মারাত্মক ধরনের
বিদাত ও দ্বীনের বিপজ্জনক বিকৃতি। (রাসায়েল ও মাসায়েল ১ম খন্ড পৃঃ ১৮২ ও ১৮৩)
৫। কুরআন নাযিল হওয়ার একশত বছর তা পরিবর্তন হয়ে গেছে (কুরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা পৃঃ ১৪ ও ১৫)
৬। হাদীসের দ্বারা যদি বেশি কিছু
অর্জিত হয় তবে সহীহ হওয়ার
ধারনা এর উপর দৃঢ় বিশ্বাস ইয়াকিন রাখা যায় না (তরজমানুল কুরআন পৃঃ ২৬৭ ...
পুনঃপোস্ট

Sunday, September 14, 2014

>> ওলীগণের মাযারে যাওয়া প্রসংগঃ


>> যিয়ারতের উদ্দেশ্যে নবী-ওলীগণের মাযারে যাওয়া জায়েয।নবী-ওলীগণের
মাযারে যাওয়া রাসুল(দঃ) ও সাহাবা ই কেরামের সুন্নাত এবং আল্লাহওয়ালাদের উত্তম নিদর্শন।আর নবী-ওলীদের
মাযারে যাওয়া হারাম বা নাজায়েয বলা নবীবিদ্বষীদের চরিত্র ।

**ফতোয়ায়ে শামী ১ম খন্ড যিয়ারতে কুবূর অধ্যায়ে উল্লেখ আছে-
"ইবনে আবু শায়বা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, নবীকরীম (দঃ) প্রতিবছরের শুরেতে শুহাদা ই
উহুদের কবর শরীফ বা মাযারসমূহে তাশরীফ নিয়ে যেতেন।"

** তাফসীরে কবীর ও তাফসীরে দুররুল মনসূরে উল্লেখ আছে-
নবীকরীম (দঃ) থেকে প্রমাণিত যে,
তিনি প্রতিবছর শহীদগণের
কবরসমূহে তাশরীফ নিয়ে যেতেন
এবং তাদেরকে 'সালামুন আলায়কুম বিমা চবারতুম ফা'নিমা উক্ববাদ দ্বা-র' বলে সালাম পেশ করতেন এবং চার খলিফাও সেভাবে শুহাদা ই কেরামের মাযারসমূহ যিয়ারত করতেন।

>> উল্লিখিত আলোচনা দ্বারা পরিষ্কার হয়ে গেল মাযার যিয়ারতে যাওয়া নাজায়েয
নয়, বরং শরীয়ত সম্মত ও সুন্নাত।

{ তাফসীরে কবীর, দুররে মানসূর ও রদ্দুল মুহতার। }

হযরত জোনায়েদ বাগদাদী

হযরত জোনায়েদ বাগদাদী (রা.) একদিন নদীর
ওপারে যাওয়ার জন্য মনস্থির করলেন। এ সময়
তার সঙ্গে একজন মুরিদ ছিলেন। নদীর
ওপারে যাওয়ার কোনো উপকরণ
না পেয়ে তিনি পা হেঁটে নদী পারের সিদ্ধান্ত
নিলেন।
সে সময় তার মুরিদ তাকে বললেন; হুজুর
কিভাবে পায়ে হেটে নদী পার হবো । তখন জোনায়েদ
বাগদাদী (রা.) তাকে বললেন,যখন
নদীতে পা দেবে তখন ইয়া জোনায়েদ বলবে; আর
সারা নদী পথ ইয়া জোনায়েদ বলতে থাকবে। মুরিদ
তখন পীর সাহেবের হুকুম মতো চলতে থাকলো।
হযরত জোনায়েদ বাগদাদী (রা.) আল্লাহ আকবর
বলে নদীতে পা দিলো, আর আল্লাহ আল্লাহ
বলতে বলতে নদী পার হতে থাকলো । তার মুরিদও
ইয়া জোনায়েদ বলে নদীতে পা দিলো আর
ইয়া জোনায়েদ বলতে বলতে নদী পার হচ্ছিল। নদীর
মধ্যখানে শয়তানের আগমন হলো সেই মুরিদের
নিকট। শয়তান তাকে বললো; হে জোনায়েদ
বাগদাদীর মুরিদ তুমি কত্তোবড় ভুল
করছো জানো? তোমার পীর সাহেব আল্লাহ
আল্লাহ বলছে আর তুমি ইয়া জোনায়েদ বলছো?
এটা কেমন হলো?
তোমার পীর সাহেব যা করছেন
তা তোমারও করা উচিত।
তুমি আল্লাহকে ভুলে গেলে? মুরিদ শয়তানের এ
কথায় নিজে নিজে ভাবতে লাগলো;আসলেই
তো আমি আল্লাহকে ভুলে রয়েছি। তখন সে মুরিদ
ইয়া জোনায়েদ নামের স্থলে আল্লাহর নাম
বলতে লাগলেন। যতই আল্লাহর নাম বলছে ততই
সে নদীতে ডুবে যাচ্ছে। যখন তার গলা পর্যন্ত
ডুবে গেছে তখন সে মুর্শিদকে ডাক দিলো।
জোনায়েদ বাগদাদী (রা.) তখন তাকে বললো,এবার
ইয়া শব্দ বাদ দিলে জোনায়েদ জোনায়েদ বলো।
মুরিদ তাই করলো। এভাবে মুরিদ হেটে হেটে নদী পার
হলো। নদী পার হওয়ার পরে হযরত জোনায়েদ
বাগদাদী (রা.) মুরিদকে বললেন, আমি জোনায়েদ
আল্লাহ পর্যন্ত পৌছিয়েছি। তাই আমি আল্লাহ
জিকির করছি। আর তুমি আমি জোনায়েদ পর্যন্ত
পৌছিয়েছো তাই তোমার জিকির ইয়া জোনায়েদ।
যখন তুমি আল্লাহ পর্যন্তে পৌছে যাবে তখন
তোমার প্রতিটি অংঙ্গ আল্লাহ আল্লাহ জিকির
করবে........... যার বুঝার সে বুঝে নিক...........কারণ
বোঝাটাও তকদির না বোঝাটাও তকদির !

মাজার প্রসঙ্গ ~>>> ~~> কিছু জিঙ্গাসা ও উত্তরঃ



অভিযোগঃ মাজারে সেজদা করা হয়। সুতরাং মাজার ভেঙ্গে গুড়িয়ে দাও। শিরক বন্ধ কর।
উত্তরঃ মাজারে কিছু লোক সেজদা করে এটা সত্য। যারা করে তারা ধর্মীয় জ্ঞানের দিক থেকে একেবারেই অজ্ঞ।
~> এখন আমার প্রশ্নটা হচ্ছে মাজারে সেজদা করাকে আহলে সুন্নাতের কোন আলেম সওয়াবের কাজ বলেছে কি ?
কোন সম্প্রদায়কে বিবেচনা করতে হয় তাদের মূলনীতি বা বিশ্বাস
দেখে, অনুসারীদের দেখে নয় ।
আহলে সুন্নাত ওয়াল-জামাতের আক্বিদা বা বিশ্বাস হচ্ছে মাজারে সিজদা করা যাবেনা। এখন যারা করে দোষটা তাদের উপর বর্তায়।
~> আরেকটু ক্লিয়ার করে বলি,
মসজিদে মানুষ নামাজ পড়তে যায়। কেউ কেউ আবার জুতা চুরিও
করতে যায়। এখন আপনার
জুতা চুরি হয়েছে বলে কি আপনি মসজিদকে দোষারোপ করবেন কী?
মসজিদ ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে চাইবেন কী?
নিশ্চয়ই না !
আরেকটু ক্লিয়ার করি। মুসলিমদের
মধ্যে কেউ কেউ বিপদগামী হয়ে চরমপন্থা তথা জঙ্গীবাদকে ইসলাম
প্রচারের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে। যাদের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। কিছু জঙ্গীদের কারণে অমুসলিমরা মুসলিমদের সন্ত্রাসী বলে আখ্যায়িত করে এবং ইসলামকে একটি সন্ত্রাসী ধর্ম বলে প্রচার করে। এখন আপনি কি বিশ্বাস করেন কিছু মুসলিমদের কারণে সকল মুসলিম এবং ইসলাম একটি সন্ত্রাসী ধর্ম যেখানে ইসলাম সন্ত্রাসবাদেরবিরুদ্ধে?
উত্তর অবশ্যই না !
তাহলে আপনি কিভাবে বলেন কিছু
অজ্ঞ লোক মাজারে সেজদা করার
কারণে সকল সুন্নীদের মাজার
পূজারী, শিরকি যেখানে সুন্নী সম্প্রদায় মাজারে সেজদা করাকে নিষিদ্ধ মনে করে ?
শেয়ার করুন ।মন না চাইলে কপি করুন ।তবুও বাতেলদের কাছে পৌছানো চাই ।

Saturday, September 13, 2014

মীলাদ শরীফ

মীলাদ শরীফ-কিয়াম শরীফ নূরে মুজাস্‌‌সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের যামানাতেই ছিল।
মীলাদ শব্দের অর্থ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছানা-ছিফত করা ও তাঁর প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করা। অতএব, তা আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামসহ সবারই সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।
আমরা যেভাবে মজলিস করে মীলাদ মাহফিল করে থাকি তা খোদ আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের যামানাতেই ছিল।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা তাঁর নিজ গৃহে সমবেত ছাহাবীগণকে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশী প্রকাশ করেছিলেন এবং আল্লাহ পাক-এর প্রশংসা তথা তাছবীহ তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর (ছলাত-সালাম) দুরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথায় উপস্থিত হলেন। (তিনি যখন উপস্থিত হলেন, সমবেত লোকজন দাঁড়িয়ে অর্থাৎ
ক্বিয়াম শরীফ করে ছলাত ও সালাম পেশ করতঃ আসনে বসালেন) তিনি লোকজনের মীলাদ শরীফ পাঠের অনুষ্ঠান দেখে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব। (সুবুলুল হুদা ফি মাওলিদে মোস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ও মীলাদে আহমদী, পৃষ্ঠা ৩৫৫)
আরো ইরশাদ হয়েছে, হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে হযরত আবূ আমের আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি তাঁর সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতী-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফের ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস অর্থাৎ এই দিবসে রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যমীনে তাশরীফ এনেছেন। (তিনি যখন উপস্থিত হলেন সমবেত লোকজন দাঁড়িয়ে কিয়াম শরীফ করে ছলাত ও সালাম পেশ করতঃ আসনে বসালেন।)
তিনি লোকজনের মীলাদ শরীফ পাঠের অনুষ্ঠান দেখে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তাঁর রহমতের দরজা তোমাদের জন্য উন্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফিরিস্তাগণ তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ কিয়ামত পর্যন্ত তোমাদের মত এরূপ করবেন। তোমার মত সেও নাজাত ও ফযীলত লাভ করবে।” (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযির, ছুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মোস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফদ্বয়ের দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ স্বয়ং মীলাদ শরীফ পাঠ করতেন এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তা’যীম বা সম্মানার্থে কিয়াম করতেন। বর্তমানে যে সুনির্দিষ্ট তর্জ-তরীকায় মীলাদ মাহফিল হয় তাতে নূরে মুজাস্‌‌সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছানা-ছিফত সংক্ষিপ্তভাবে করা হয়ে থাকে যা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।

Thursday, September 11, 2014

-সমূদ্রের তুফান দুর হয়ে গেল:অবশ্যই পড়ুন_-_-_-

একবার ফোরাত নদীতে এমন ভয়ঙ্কর
তুফান আসল যে বন্যায় ক্ষেত-
খামারগুলো ডুবে গেল।
সেখানকার লোকেরা হযরত
আলী (রঃ) এর
দরবারে এসে ফরিয়াদ করলেন :
তিনি তৎক্ষণাৎ দাঁড়ালেন
এবং রাসূলে পাক,
সাহিবে লওলাক এর জুব্বা মুবারক,
পাগড়ি মুবারক, চাদর মুবারক
পরিধান করে ঘোড়ায় আরোহন
করলেন, হাসনাইনে করীমাইন
(অর্থাৎ ইমাম হাসান ও ইমাম
হোসাইন)ও অন্যান্য সাহাবীগণও
সাথে রওয়ানা হয়ে পড়লেন।
ফোরাত নদীর
তীরে তিনি দু’রাকাত নামায
আদায় করলেন। অত:পর পুলের উপর
তাশরীফ নিয়ে গিয়ে আপন
লাঠি মুবারক দ্বারা ফোরাত
নদীর দিকে ইঙ্গিত করতেই এক গজ
পানি কম হয়ে গেল, অত:পর
দ্বিতীয়বার ইঙ্গিত করতেই
আরো এক গজ কমে গেল, যখন ৩য় বার
ইঙ্গিত করলেন তিন গজ
পানি কমে গেল এবং বন্যা দুর
হয়ে গেল। লোকেরা আরয করল:
হে আমীরুল মু’মিনীন! থামুন ব্যস
এতটুকুই
যথেষ্ট। (শাওয়াহেদুন নবুয়াত,
পৃষ্ঠা-২১৪)

Wednesday, September 10, 2014

<<< মাজার প্রসঙ্গ >>> কিছু জিঙ্গাসা ও উত্তর ।

অভিযোগঃ মাজারে সেজদা করা হয় ।
সুতরাং মাজার ভেঙ্গে গুড়িয়ে দাও ।
শিরক বন্ধ কর ।
উত্তরঃ মাজারে কিছু লোক
সেজদা করে এটা সত্য ।
যারা করে তারা ধর্মীয় জ্ঞানের দিক
থেকে একেবারেই অজ্ঞ । আমার
প্রশ্নটা হচ্ছে মাজারে সেজদা করাকে আহলে সুন্নাতের
কোন আলেম সওয়াবের কাজ বলেছে কি ?
কোন সম্প্রদায়কে বিবেচনা করতে হয়
তাদের মূলনীতি বা বিশ্বাস
দেখে ,অনুসারীদের দেখে নয় ।
আহলে সুন্নাতের আক্বিদা বা বিশ্বাস
হচ্ছে মাজারে সিজদা করা যাবেনা ।
এখন যারা করে দোষটা তাদের উপর
বর্তায় ।
আরেকটু ক্লিয়ার করি । মসজিদে মানুষ
নামাজ পড়তে যায় ।কেউ কেউ আবার
জুতা চুরিও করতে যায় । এখন আপনার
জুতা চুরি হয়েছে বলে কি আপনি মসজিদকে দোষারোপ
করবেন ? মসজিদ
ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে চাইবেন ?
নিশ্চয়ই না !
আরেকটু ক্লিয়ার করি । মুসলিমদের
মধ্যে কেউ কেউ
বিপদগামী হয়ে চরমপন্থা তথা জঙ্গীবাদকে ইসলাম
প্রচারের মাধ্যম
হিসেবে বেছে নিয়েছে ।যাদের
সংখ্যা একেবারেই নগণ্য । কিছু
জঙ্গীদের
কারণে অমুসলিমরা মুসলিমদের
সন্ত্রাসী বলে আখ্যায়িত
করে এবং ইসলামকে একটি সন্ত্রাসী ধর্ম
বলে প্রচার করে । এখন
আপনি কি বিশ্বাস করেন কিছু
মুসলিমদের কারণে সকল মুসলিম
এবং ইসলাম একটি সন্ত্রাসী ধর্ম
যেখানে ইসলাম সন্ত্রাসবাদের
বিরুদ্ধে ? উত্তর অবশ্যই না !
তাহলে আপনি কিভাবে বলেন কিছু অজ্ঞ
লোক মাজারে সেজদা করার
কারণে সকল সুন্নীদের মাজার
পূজারী ,শিরকি যেখানে সুন্নী সম্প্রদায়
মাজারে সেজদা করাকে নিষিদ্ধ
মনে করে ?
শেয়ার করুন ।মন না চাইলে কপি করুন ।
তবুও বাতেলদের কাছে পৌছানো চাই ।
সবাইকে ধন্যবাদ !!!

Monday, September 8, 2014

পাপী ব্যাক্তির মরন কেমন হবে - শেয়ার করুন -

বী করিম (দ) বলেছেন, যারা পাপাচারী ব্যাক্তি তাদের যখন দুনিয়ার জীবন ত্যাগ করে আখিরাতের দিকে যাওয়ার সময় হবে, তখন মৃত্যুর ফেরেশতা (আজরাঈল ) এক ভয়ানক রূপ নিয়ে আগমন করবে,যেই রূপ ইতিপূর্বে কেউ দেখেনি। তার পাশে এসে বসে মৃত্যুর ফেরেশতা বলবেন,“হে পাপী আত্মা! আল্লাহ তা’আলার ক্রোধ এবং আজাবের দিকে ছুটে আস।
যখন মৃত্যুর ফেরেশতা এই ঘোষণা করবে, তখন তার আত্মা দেহের মধ্যে ছুটে বেড়াবে আর সে বের হয়ে আসতে চাইবে না। মৃত্যুর ফেরেশতারা তখন তার আত্মাকে কঠিন ভাবে ধরে টানতে টানতে দেহ থেকে বের করে আনা হবে।
ভেজা পশমের মধ্য থেকে কাটাঁযুক্ত কিছুকে টেনে আনতে যেমন অবস্থা হয় তেমন। রাসূল (দ:) আরো বলেছেন, “যখন এই আত্মাকে টেনে বের করা হবে তখন যেন এটা তার শরীরের মাংস এবং স্নায়ুকে সহ সবকিছুই ছিড়ে ফেলবে, কারণ এই আত্মা শরীর থেকে সহজে বের হতে চাইবে না।
*** ইয়া আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা কর......আমিন

কিয়ামের স্বপক্ষে ৮ টি দলিল :--

কিয়াম শব্দের অর্থ "দাঁড়ানো। মিলাদ
মাহফিলে রাসুলে পাক (স) এর
সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে সালাম পৌছানোর
প্রক্রিয়াকে আমরা "কিয়াম" বলে থাকি।।
দুনিয়াদার আলেমরা এই মহাফজিলতপূর্ণ
আমলটিকে "বেদাত" বলে ঘোষণা করে থাকে।। এই
লেখাটি পড়লে আপনি বুঝতে পারবেন ওরা কত বড়
মিথ্যুক ও রাসুলবিদ্বেষী।
১। "আবু দাউদ "কিতাবে হজরত ইবনে ওমর
(রাঃ )হইতে বর্ণিত আছে,, হুজুর পাক যখন
হুজরা শরীফ থেকে বাহির হতেন, তখন
আমরা সকলেই তাহার সম্মানার্থে দাঁড়াইতাম।।
২। হজরত ইমাম বোখারী তাঁর লিখিত
ইতিহাসে হজরত উম্মে সালমা (রাঃ)
হতে রেওয়ায়েত করেছেন,,"হুজুর পাক যখন
দাঁড়াইতেন, তখন আমরা সকলেই দাঁড়াইতাম।।
৩। হজরত ইমাম মালিক "মওতা"নামক
কিতাবে লিখেছেনঃ "মক্কা বিজয়ের দিন
রাসুলে পাক (সা) নিজেই আকরামা বিন
আবি জেহালের জন্য কিয়াম করেছিলেন,
কেননা তিনি মক্কার একজন বিশিষ্ট নেতৃস্থানীয়
ব্যক্তি ছিলেন।।
৪। তিরমিযী শরীফে হজরত আয়শা সিদ্দিকা (রাঃ)
হতে বর্ণিত আছে যে,, রাসুলে পাক (সা) জায়েদ বিন
হারিসের জন্য কিয়াম করেছিলেন।।
৫। আল্লামা আইনী "উমদাতুল কারী কিতাবুল
জিহাদ" এর মধ্যে লিখেছেনঃ "হজরত আদ্দি হাতিম
বলেছেন,, "আমি যখনই হুজুর পাকের
দরবারে যাইতাম, তখনই তিনি আমার জন্য কিয়াম
করিতেন"।
৬। বুখারী ও মুসলিম শরীফে হজরত আবু সাঈদ
হতে বর্ণিত আছে,, হুজুর পাক (সা)
সাআদকে দেখে বললেন, "কুম ইয়া সাইয়িদাকুম "।
অর্থাৎ, তোমরা নিজেদের কওমের সরদারের জন্য
কিয়াম কর।।
৭। তিরমিজি ও ইবনে হাব্বানের মধ্যে হজরত
আয়শা সিদ্দিকা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে,, হজরত
ফাতিমা (রা) যখনই হুজুর পাকের নিকট আসতেন,
হুজুর পাক তখনই তাঁর সম্মানার্থে কিয়াম
করতেন।।
৮। "ইবনে আকছার" নামক কিতাবে হজরত আনাস
(রা) হতে বর্ণিত আছে,, রাসুলুল্লাহ (স) বলেন,, "
আমার দুই ব্যাটা ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন
এবং তাঁর আওলাদের জন্য কিয়াম করেন।।

( শহীদ নুরুল ইসলাম ফারুকী রচিত
"সাকীয়ে কাওসার" কিতাব থেকে সংগৃহীত)।

Wednesday, September 3, 2014

ভ্রান্ত আকিদার লোকেরা বলেন যে, নবীর পরে সাহাবীদের স্তান অথচ সাহাবীদের মাজার নেই কিন্তু অনেক আউলিয়ার মাজার তৈরি করা হয়েছে। ভ্রান্ত আকিদার আলেমরা ওয়ায মাহফিলে বলেন, মাজার যাবেন না মাজার ভাল না।

ভ্রান্ত আকিদার লোকেরা বলেন যে, নবীর পরে সাহাবীদের স্তান অথচ সাহাবীদের মাজার নেই কিন্তু অনেক আউলিয়ার মাজার তৈরি করা হয়েছে। ভ্রান্ত আকিদার আলেমরা ওয়ায মাহফিলে বলেন, মাজার যাবেন না মাজার ভাল না।


এখন আমি বলছি, যদি কবরে শাহিত বাক্তি হক্কানি প্রসিদ্দ পীর মাশায়েখ, প্রকৃত আলেম ও সুলতানে আদেল ও সৈয়দজাদা হন, তাহলে তাদের কবরের উপর ইমারত নির্মাণ করা বৈধ এবং জায়েয। এতে মাক্রুহ হবেনা। যেমন- হযরত সৈয়াদুনা আমির হামযা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু, খাদিজা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা, হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা, হযরত ওসমান জিন্নুরাইন রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু, ইমাম হাসান, ইমাম হসাইন, ইমাম জয়নুল আবেদিন, ইমাম বাকের রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুম, ও অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামের কবর শরীফের উপর গম্বুজ ও ইমারত ছিল মক্কা ও মদিনা শরীফের পুরাতন ইতিহাসে যার রেকর্ড বিদ্দমান আছে। ওহাবি সৌদি সরকার এক ফরমান বলে ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে সেগুলো শহিদ ও নিশ্চিহ্ন করে। সৌদি আরব ব্যতীত প্রায় মুসলিম দেশে ইরাক, ইরান, সিরিয়া, তুরুস্ক, জর্ডান, মিসর ও পাকিস্তানসহ পৃথিবীর সর্বএ  আম্বিয়া ও আউলিয়া কেরামের কবর শরীফের উপর পাকা মাযার ও গম্বুজসমূহ এখনও সংরক্ষিত আছে এবং রাত-দিন সেখানে জিয়ারত ও কুরআন তেলাওয়াত চলছে। জগত বিখ্যাত ফতোয়ার কিতাব রদ্দুল মুখতারে (মিশরে মুদ্রিত) উল্লেখ আছে- জামেউল ফাতাওয়ার বরাতে আহকাম নামক গ্রন্তে উল্লেখ আছে মৃত ব্যক্তি পীর মাশায়েখ, হক্কানি আলেম ওলামা ও সৈয়দজাদা হলে তাদের কবরে উপর ইমারত নির্মাণ করা বৈধ। মাক্রহ নয়।
তফসিরে রুহুল বয়ান ৮৭৯ পৃষ্ঠার উল্লেখ আছে-
পীর মাশায়েখ, ওলামা ও যুগশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিবর্গের মাজারে যিয়ারতের উদ্দেশে এবং সেখানে বসে আরাম হাসিলের উদ্দেশে ইমারত নির্মাণ করা সালফে সালেহিন ও পূর্ববর্তী ওলামায়ে কেরাম  বৈধ বলে ফতোয়া দিয়েছেন।

শেখ মুহাক্কিক আব্দুল হক মুহাদ্দেসে দেহলভি রহমাতুল্লাহি আলায়হি নিজ গ্রন্তে জযবুল কুলুব ইলা দিয়ারিল মাহবুব এ উল্লেখ করেছেন-  মাশায়েখ এজামের মাজারের উপর ইমারত নির্মাণ করা সাহাবায়ে কেরাম ও প্রথম যুগের বুজুরগানে দ্বীনের কর্ম ও আমল দ্বারা প্রমাণিত। যেমন- নবী করীম সরওয়ারে কায়েনাত সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম- এর রওজা মোবারকে সর্বপ্রথম হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এবং দ্বিতীয়বার  হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু দেয়াল দ্বারা ইমারত নির্মাণ করেছিলেন। অনেক সাহাবায়ে কেরাম বিভিন্ন বুজুর্গদের মাজারে ইমারত তৈরি করেছিলেন। যেমন- মুন্তাকা সরহে মুয়াত্তা ও বাদায়ে সানায়ে গ্রন্তে উল্লেখ আছে যে---  হযরত ওমর ফারুকে আ'যম রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তার খেলাফত কালে উম্মুল মুমেনিন হযরত যয়নব বিনতে জাহাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহার মাযারে উপর গম্বুজ তৈরি করেছিলেন। উম্মুল মুমেনিন হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা মক্কা শরীফে অবস্থিত তার ভাই সাহাবিয়ে রসূল হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর মাজারে উপর গম্বুজ তৈরি করেছিলেন। তায়েফে অবস্থিত রয়িসুল মুফাসসেরিন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর মাজারে উপর হযরত মুহাম্মাদ ইবনে হানাফিয়া রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু মাজারে উপর গম্বুজ তৈরি করেছিলেন। তদুপুরি বর্তমানে মদিনা শরিফে অবস্থিত নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর রওজা মোবারকও সবুজ গম্বুজ বিশিষ্ট। উক্ত গম্বুজ বিশিষ্ট মাজারের মদ্দই শায়িত আছেন ইসলামি জগতের ১ম ও ২য় খলিফা হযরত সৈয়াদুনা আবু বকর সিদ্দিক ও হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুমা অতএব, দিবালোকের নেয় প্রমানিত হল আল্লাহর প্রিয় অলিগণের মাজারে ইমারত নির্মাণ করা শুদু জায়েজ নয় বরং সাহাবায়ে কেরামের সুন্নাতও। এসব তথ্য যারা জানে না, নির্ভরযোগ্য কিতাব পড়ে নাই তারাই প্রকৃত আউলিয়ায়ে কেরামের মাজার শরীফের ঘর ও গম্বুজ নির্মাণ করাকে বিদ'আত ও নাজায়েয বলে ফতোয়াবাজি করে।
www.facebook.com/babu626