Tuesday, November 12, 2013

জনতার কাছে প্রশ্ন, বিবেক কি নাড়া দেবে?

ইসলাম শান্তির ধর্ম। উদারতা এবং সহনশীলতার ধর্ম। প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মদিনার সনদ, হুদায়বিয়ার সন্ধি এবং বিদায় হজের ভাষণ_ এর জ্বলন্ত প্রমাণ। ইসলামের এই তিন গুরুত্বপূর্ণ দলিল আমাদের উদারতা এবং সহনশীলতার শিক্ষা দেয়। মহানবীর এই তিন প্রামাণ্য আমাদের জানান দেয়, কীভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি স্থাপন করা যায়। মানুষে মানুষে বন্ধন সৃষ্টি ও বৈষম্য দূর করা যায়।

সম্প্রতি ভ্রান্ত চিন্তা-চেতনার অধিকারী জামায়াতে ইসলামী ও মওদুদিবাদীরা রাজনৈতিক স্বার্থে, ক্ষমতার সিঁড়ি হিসেবে আলেমদের ব্যবহার করছেন। দেশ, স্বাধীনতা ও ইসলামের চিরশত্রু জামায়াতে ইসলামী আলেমদের মৌলিক কাজ থেকে সরিয়ে এনে রাজনীতির হীন স্বার্থে ব্যবহার করছে। আলেমদের মাঝে মতানৈক্য ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি, সামাজিকভাবে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করছে এই জামায়াতিরা। অথচ আলেমদের জানা উচিত, আদর্শ ও নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত মওদুদিপন্থি জামায়াত-বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলেই তাদের প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায়। বিএনপি জোট সরকারের আমলে (১৭-০৮-২০০৫) একযোগে ৫০০ স্থানে বোমা হামলায় বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র বানানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। বাংলাভাই, শেখ আবদুর রহমান সৃষ্টি করে সুন্নতি লেবাসের অপমান করেছিল। শান্তিপ্রিয় আলেমদের গায়ে কলঙ্ক এঁকে দেওয়া হয়েছিল। বিশ্বমিডিয়ায় জামায়াতিরা প্রচার দিয়েছিল, বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলো জঙ্গির কারখানা। পথে-ঘাটে আলেমদের জঙ্গি বানানোর অপচেষ্টা করেছে।  রক্ত আর লাশের রাজনীতিতে মেতে উঠেছে। জনতার বিবেকের কাছে প্রশ্ন! কোরআনের ভাষ্যে (সূরা বাকারা আয়াত-২১৭) বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হত্যা অপেক্ষাও জঘন্য অপরাধ! দেশে জামায়াতিরা কেন জ্বালাও-পোড়াও হত্যা-নৈরাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে? কোরআনের ভাষ্য আর জামায়াতিদের কর্মে কী কোনো মিল আছে? জনতার কাছে প্রশ্ন, বিবেক কি নাড়া দেবে?

মসজিদ আল্লাহর পবিত্র ঘর। এই পবিত্র ঘরে কীভাবে জামায়াত ও তার দোসররা আগুন নিয়ে রাজনৈতিক খেলা খেলে; নামাজের পরিবেশ নষ্ট করল? কোরআনের ভাষ্যে (আয়াত-১৯১, সূরা বাকারা) তাদেরকে জালিম ও কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে। মসজিদে আগুন নিয়ে রাজনৈতিক খেলা কি কোরআন-হাদিসসম্মত? কীভাবে পবিত্র কোরআনে আগুন দিল এই জামায়াতিরা? জনতার কাছে প্রশ্ন, বিবেক কি নাড়া দেবে? গত রবিবার উচ্চ আদালত জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেছেন। অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক মূলমন্ত্রে তৈরি জামায়াতের গঠনতন্ত্র পরিপ্রেক্ষিতে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন উচ্চ আদালত। জঙ্গিমূর্তি এই দলটি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। সন্ত্রাস-নৈরাজ্য, চোরাগোপ্তা হামলা, পুলিশের মাথা থেঁতলে দেওয়া ও রগকাটার রাজনীতি বন্ধ ছিল সময়ের দাবি। রাষ্ট্রীয়ভাবে জামায়াত অবৈধ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিকভাবেও এই জামায়াতিতের বয়কট করা দরকার। বিভ্রান্ত এই দলের বিরুদ্ধে আলেমরাও সোচ্চার ভূমিকা রাখবেন বলে আশা রাখি। মৌলিকভাবে জামায়াতে ইসলামী মদিনার ইসলাম লালন করে না। তারা নবী-রাসূল ও সাহাবাদের সমালোচক। যারা শিক্ষা-সংস্কৃতি, শিল্প-সাহিত্যে ও ব্যবসায় নারীদের উন্নতি-অগ্রগতি চায় না, তাদের কাছে প্রশ্ন_ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বিবি খাদিজা (রা.) কীভাবে ব্যবসা করলেন? আম্মাজান হজরত আয়েশা কি অশিক্ষিত? না পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম হাদিস বর্ণনাকারী? জনতার কাছে প্রশ্ন, বিবেক কি নাড়া দেবে?

স্বীকৃতির পক্ষে বা বিপক্ষে সাগর সাগর রক্ত, লাখ লাখ লাশ আর গৃহযুদ্ধের হুমকি হক্কানি আলেমদের মুখে বেমানান। এই হুঙ্কারে প্রশ্ন উঠবে, এত ক্ষমতাধর আলেমরা ১৯৭১ সালে নীরব ছিলেন কেন?  যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে দেশের পবিত্র পতাকা উড়িয়ে পতাকার অপমান করেছে।বিবেকের কাছে প্রশ্ন, এগুলো ইসলামসম্মত? জনতার কাছে প্রশ্ন, বিবেক কি নাড়া দেবে?