Sunday, July 26, 2015

একবার বিশিষ্ট সাহাবী হযরত জাবের [রা:]

চৌখে পানি আশার কাহিনী পড়ে
দেখুন
একবার বিশিষ্ট সাহাবী হযরত
জাবের [রা:] হযরত রাসূল[সা:]-এর
কাছে আরজ করলেন,ইয়া রাসূলুল্লাহ্ !
দয়া করে এই গোলামের বাড়িতে
দাওয়াত কবুল করে নিন । নবীজী
তাঁর দাওয়াত কবুল করে নিলেন।
জাবের [রা:] খুশীতে আত্মহারা
হয়ে বাড়িতে চলে গেলেন ।
বাড়িতে গিয়ে স্রী
ও পুত্রদের খোশ…খবর দিলেন- আজ
আমাদের ভাগ্য খুলে,গেছে
আল্লাহর নবী দয়া করে আমাদের
বাড়িতে তশরীফ নিবেন । এর চেয়ে
আনন্দের ব্যাপার আমাদের জীবনে
আর কি হতে পারে! তিনি
তাঁদেরকে নিয়ে মহানন্দে
নবীজীকে আপ্যায়ন করার
আয়োজনে লেগে গেলন । বাড়ি-ঘর
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে সুন্দরভাবে
সাজালেন । সুগন্ধী দ্রব্য ছিটিয়ে
ঘরকে সুবাসিত করলেন-ঘরে পালিত
খাসীজবাই করলেন। বড় ছেলে
আবদুল্লাহকে নিয়ে খাসী জবাই
করে নিজ হাতে তার চামড়া
ছাড়িয়ে সুন্দর করে মাংস টুকরো
টুকরো করে নিলেন । অত:পর স্রীর
কাছে মাংস নিয়ে বললেন,যত্ন
করে মাংসের টুকরোগুলো ভুনা করে
নাও । স্রীকে এ কথা বলে হযরত
জাবের[রা:] বাড়ী-ঘর তদারক করতে
থাকলেন,কোথাও কোন কাজ বাকী
রয়েগেল কি-না । মাঝে মাঝে
রান্না ঘরে গিয়ে দেখেন-রান্না
আর কতদূর হয়েছে; আবার বাড়ীর
সামনের রাস্তায় গিয়ে দেখেন-
নবীজী আসছেন কি-না । ইতিমধ্যে
হযরত জাবের [রা:]-এর ছোট ছেলে ঘুম
থেকে উঠে খাসী তালাশ করতে
লাগলো । তারা দুই ভাই মিলে
খাসীটিকে আদর-যত্ন করে লালন -
পালন করতো ।বড় ভাই তাকে
জানাল -নবীজীর মেহমানদারী
করার জন্য খাসীটিকে জবাই করা
হয়েছে । ছোট ভাই বায়না ধরলো-
খাসী কিবাবে জবাই করে
আমাকে তা দেখাও । অগত্যা বড়
ভাই ছুরি হাতে করে ঘরের পেছনে
গিয়ে বললো, এখানে খাসী জবাই
করা হয়েছে । ছোট ভাই জানতে
চাইলো,কিভাবে ? বর্ণনা করে
বোঝতে না পেরে অবশেষে বড়
ভাই বললো, তাহলে তুমি মাটিতে
শুয়ে পড় । আমি তোমাকে দেখাই ।
ছোট ভাই মাটিতে শোয়ার পর বড়
ভাই তার গলায় ছুরি চালিয়ে জবাই
করার নমুনা দেখাতে গিয়ে ছোট
ভাইকে সত্যি সত্যি জবাই করে
ফেললো । বড় ভাই যখন দেখলো-ছোট
ভাইয়ের গলা থেকে রক্ত গড়িয়ে
পড়ছে, সে ছটফট করতে করতে এক সময়
নিস্তেজ হয়ে গেছে, তখন বুঝলো
ব্যাপারটি কি ঘটেছে । আতঙ্কিত
হয়ে সে নিকটবর্তী এক খেজুর
গাছের চূড়ায় উঠে আত্মগোপন করে
রইলো। এদিকে হযরত জাবের[রা:]
পুত্রদের খোজে বাড়ীর পেছনে
এসে ছোট ছেলের অবস্হা দেখে
থমকে গেলেন । অত:পর তাকে বুকে
করে স্রীর কাছে গিয়ে
বললেন,তাড়াতড়ি একটি কম্বল
নিয়ে এসো, বাচ্চাটিকে শুইয়ে
দিই । স্রী রক্তমাখা সন্তানের লাশ
দেখে চিৎকার করে কাঁদতে
লাগলেন। কিন্ত স্বামী তাকে
সান্ত্বনা দিয়ে বললো আজ
আমাদের শোক প্রকাশ করার দিন না
আমাদের দুঃখ দেখলে নবীজীও
দুঃখিত হবেন । অতএব,ধৈর্য ধারণ
করো । মুখে হাসি ফুটিয়ে তোল ।
তারপর তাঁরা দু’জনে মিলে ছোট
ছেলেকে কম্বল মুড়ে রান্নঘরের
পেছনে রেখে আসলেন ।স্রী
রান্নার কাজে মন দিলেন । জাবের
[রাঃ] বের হলেন বড় পুত্র আবদুল্লাহর
খোজে । বাড়ীর পেছনে গিয়ে
ছেলের নাম ধরে জোরে হাঁক
দিলেন । গাছের উপর আত্মগোপন
করে বড় ছেলে সব. ঘটনা প্রত্যক্ষ
করছিল,R ভয়ে কাঁপছিল । পিতার
ডাক শুনে ভাবলো, এখন পালাতে
না পারলে আব্বার হাতে ধরা
পড়তে হবে । ধরা পড়লে R রক্ষা
থাকবেনা । পালানোর উদ্দেশ্যে
গাছ থেকে লাফিয়ে পড়ে
আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে সেও মৃত্যুর কোলে
ঢলে পড়লো । পিতা কাছে গিয়ে
গায়ে হাত দিয়ে দেখেন-
আবদুল্লাহর দেহে প্রাণের স্পন্দন
নেই ! বড় ছেলে কে কোলে তুলে
তিনি বাড়ীর ভিতরে আসলেন ।
স্রীকে বললেন, R একটি কম্বল নিয়ে
আসার জন্যে । বড় ছেলের অবস্হা ।
দেখে মাতা পুনরায় আর্তনাদ করে
উঠলেন । স্বামী তাকে পুনরায়
সান্ত্বনা দিয়ে বললেন,ধৈর্য্য ধরো
। আজ আমাদের দুঃখ প্রকাশের দিন
না । আজ আমাদের পরম আনন্দের দিন ।
তারপর দু’জনে মিলে বড় ছেলের
লাশও কম্বলে মুড়ে ছোট ছেলের
লাশের পাশে রাখলেন ।স্বামী-
স্রী তদের চোখের পানি মুছে মুখে
হাসি ফুটিয়ে তুলেন । যাঁর ”নূরে”
সমগ্র মাখলুকাত পয়দা,সেই
রাহমাতাল্লিল আলামীনের
সামনে অশ্র্র বিসর্জন দিলে তিনি
দুঃখ পাবেন । তাই আনন্দিত হয়ে
তাঁরা নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত
হয়ে পড়লেন । হযরত জাবের [রাঃ]
বাড়ীর সামনে দাড়িয়ে নবীজীর
আগমনের অপেক্ষা করতে লাগলেন ।
অল্পক্ষণের মধ্যে নবীজীকে উটের
পিঠে করে আসতে দেখা গেলো ।
হযরত জাবের [রাঃ] আনন্দে
আত্মহারা হয়ে দৌড়ে গিয়ে
স্রীকে নবীজীর আগমনের সংবাদ
দিলেন । পুনরায় তিনি দৌড়ে
বাড়ীর সামনে চলে এলেন ।
নবীজীর উটের কাছে গিয়ে
তাঁকে বাড়ী পর্যন্ত এগিয়ে
আনলেন নবীজী জাবের [রাঃ]-এর
ঘরের সামনে উট থামিয়ে তাঁর ডান
পা মোবারক মাটিতে
রাখলেন,বাম পা মোবারক এখনো
নামাতে বাকী । এমন সময় জিব্রাইল
[আঃ] আল্লাহর পক্ষ হতে নির্দেশ
নিয়ে উপস্হিত হয়ে বললেন ইয়া
রাসূলুল্লাহ! আল্লাহ্ আপনাকে
জাবেরের ছেলেদেরকে সংগে
নিয়ে খানা খেহে বলেছেন ।
অতঃপর নবীজী
সাহাবায়েকেরামকে নিয়ে
জাবের [রাঃ]-এর ঘরে তশরীফ
নিলেন ।তাদের সামনে জাবের
রা] দস্তর খানা বিছিয়ে দিলেন
তার স্রী খাবার বেরে দিলেন R
তিনি সেগুলো এনে মেহমানদের
সামনে হাজির করলেন তারপর
তিনি নবীজীকে আরজ করলেন, ইয়া
রাসূলুল্লাহ্! বিস্মল্লাহ্ করুন নবীজী
বললেন, হে জাবের ! তোমার
ছেলেরা কোথায় ? তাদেরকে
ডাক হযরত জাবের [রাঃ] বললেন,
ইয়া হাবীবাল্লাহ! আপনি দয়া করে
খেয়ে নিন ছেলেদেরকে আমি
পরে ডাকবো হযরত রাসূল [সাঃ]
পুনরায় বললেন তোমার ছেলেদের
ডেকে নিয়ে এসো তাদেরকে
সাথে নিয়ে খানা খাবো হযরত
জাবের ও তার স্রী হাত জোড় করে
পুনরায় আরজ করলেন ,ইয়া
রাসূললুল্লাহ ! আপনি খানা খেয়ে
নিন আমরা তাদেরকে ডেকে
দিচ্ছি তখন নবীজী বললেন, হে
জাবের ! এইমাত্র জিব্ররাইল
ফেরেশতা আমাকে আল্লাহর
নির্দেশ জানিয়ে গেলেন ,আমি
যেন তোমার ছেলেদেরকে সাথে
নিয়ে খানা খাই নবীজীর একথা
শুনে হযরত জাবের [রা] ও তার স্রী R
ধৈর্য্য ধারণ করতে পারলেনা ।
তারা হাউমাউ করে কেদে বললেন
ইয়া রাসূলূল্লাহ্! ছেলেদেরকে
কোথায় পাবো ? তারা তো জগতে
বেঁচে নেই নবীজী জানতে
চাইলেন ,তাদের কি হয়েছে ?তখন
তারা নবীজীকে সমস্ত ঘটনা খুলে
বললেন তাদের দুঃখের কাহিনি
শুনে সাহাবায়েকেরামও কাঁদতে
শুরু করলেন ।নবীজীর প্রেমিক হযরত
জাবের[রা] ও তার স্রীর ঘটনা শুনে
অনেকে চিল্লাচিল্লি করে
মাটিতে গড়াগড়ি খেতে থাকেন
তারপর নবীজী উঠে দাঁড়িয়ে হযরত
জাবের [রা:]-কে বললেন
,তাদেরকে কোথায় রেখেছো,
সেখানে আমাকে নিয়ে চলো।
*hozrut*জাবের [রা:] নবীজীকে
রান্না ঘরের পেছনে নিয়ে গেলন।
আল্লাহ্র নবী *hozrut* রাসূল [স:]
কম্বলাবৃত দুই ছেলের মৃতদেহের উপর
তাঁর দুই হাত মোবারক রেখে বললেন,
হে জাবেরের ছেলেরা! তোমরা
কি দেখ না, তোমাদের আব্ব-আম্মা
আল্লাহ্র নবীকে কত ভালোবাসেন!
আমি মনে কষ্ট পাবো বলে
তোমাদের কথা তারা আমাকে
জানায়নি । তোমরা শীঘ্রই ওঠ,
তোমাদেরকে সঙে করে আমি
খানা খাবো । এ কথা বলে নবীজী
যখন তাদের. দেহ থেকে কম্বল
সরিয়দিলেন , সংগে সংগে তারা
দু’জনউঠে নবীজীর কদম মোবারক
জড়িয়ে ধরলো । তখন নবীজীর
প্রেমে কেউ সুস্হির ছিলেন না ।
সবাই কাঁদতে কাঁদতে বেহুঁশের
মতো হয়ে গেলন। পরিস্হিতি শান্ত
হলে নবীজী হযরত জাবের [রা:]-এর
দুই ছেলেকে নিয় খানা খেতে
বসলেন ।
সবাইকে বললেন , মাংস খাবার পর
হাড় চিবিয় না খেয়ে তা জমা
করে রাখার জন্যে।
এভাবে সবার খাওয়া শেষ হলে
নবীজী তাঁর পবিত্র হাত মোবারক
*হাড়ের* ওপর রেখে বললেন, ওহে
জাবেরের খাসী! তুমি কি দেখো
না তোমার মনিব আল্লাহ্র নবীকে
কতখানি ভালোবাসেন? তুমি
পুনরায় তোমার মনিবের হয়ে যাও।
নবীজী *a* কথা বলার সাথে সাথে
খাসী জীন্দা হয়ে সামনে
দাঁড়িয়ে গেলো ।

ফেরাউন নমরুদ ও মশা কাহিনী

বাইবেলের বুকস অব জেনেসিস ও বুকস অব ক্রোনিকেলস অনুসারে নমরুদ ছিলেন কুশের পুত্র, হামের পৌত্র (grandson) এবং নূহের প্রোপৌত্র (great-grandson). He proclaims himself a god and is worshiped as such by his subjects. ইহুদি ধর্মপুস্তকগুলো তাকে উপস্থাপন করেছে as a man of power in the earth, and a mighty hunter.
অনেকের মতে নমরুদ অর্থ বিদ্রোহী (Rebel)। তিনি খোদার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। আর আমরা তার সম্পর্কে ইতিহাস ও অন্যান্য ধর্মপুস্তক গুলিতে যা পাই তা এটা প্রমান করার জন্যে যথেষ্ট যে তার শক্তি, ক্ষমতা ও দম্ভের প্রকাশ আকাশ ছুঁয়েছিল- তিনি ঐশ্বরিক শক্তির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নেমেছিলেন। এই আর্টিকেলে আমরা দেখব ঐ প্রতিদ্বন্দ্বীতার ধরণ কেমন ছিল এবং তা কি ধরণের ফলাফল বয়ে নিয়ে এসেছিল।
হিব্রোণে বাসকরার এক পর্যায়ে আল্লাহ ইব্রাহিম(আ:) (Abraham)-কে বললেন, "হে ইব্রাহিম! তুমি নমরুদকে সতর্ক কর তার উপর শাস্তি আসার আগেই।"সুতরাং ইব্রাহিম পুনঃরায় নমরুদের রাজদরবারে উপস্থিত হলেন। ফেরাউন নমরুদ (Pharaoh Nimrod) তাকে চিনতে পেরে বললেন, "হে ইব্রাহিম! কি উপলক্ষ্যে তোমার এ আগমন?"
ইব্রাহিম(আ:) বললেন- "হে নমরুদ! আমি আল্লাহ প্রেরিত রসূল, যিনি এক-যার কোন শরীক নেই, যিনি আরশের অধিপতি।"নমরুদ কখনও আল্লাহর কর্তৃত্ব স্বীকারের পক্ষপাতি ছিলেন না। ইতিপূর্বে তো তিনি এ বিষয়ে ইব্রাহিম(আ:)র সাথে বাদানুবাদেও লিপ্ত হয়েছিলেন সেইসময় যখন ইব্রাহিম(আ:) তাকে সিজদা করতে অস্বীকার করে বলেছিলেন- "আমি সিজদা করি একমাত্র আল্লাহকে, যিনি আমার প্রতিপালক।" এতে অবাক হয়ে নমরুদ জিজ্ঞেস করেছিলেন, "হে ইব্রাহিম, কে তোমার প্রতিপালক?"
এ সংক্রান্ত কোরআনের আয়াতসমূহ-
সে (নমরুদ) ইব্রাহিমের সাথে তার প্রতিপালক সম্পর্কে তর্ক করেছিল, যখন ইব্রাহিম বলল, "আমার প্রতিপালক তিনি, যিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান।"সে বলল, "আমিও জীবন দান করি এবং মৃত্যু ঘটিয়ে থাকি।"ইব্রাহিম বলল, "নিশ্চয় তিনি সূর্য্যকে উদিত করেন পূর্ব দিক থেকে, এবার আপনি তাকে পশ্চিম দিক থেকে উদিত করে দেখান।" তখন সে অবিশ্বাসী হতভম্ব হয়ে গেল।(২:২৫৮)
এ কারণেই এসময়ে নমরুদ ইব্রাহিম(আ:)র সাথে পুনরায় তার প্রতিপালক সম্পর্কে বিতর্কে না গিয়ে সরাসরি ফয়সালার পথ বেঁছে নিলেন। আর তাই তিনি বললেন, "হে ইব্রাহিম! দুনিয়ার রাজত্ব তো আমার। শীঘ্রই আকাশের রাজত্বও আমি তোমার আল্লাহর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেব।"
ইব্রাহিম(আ:) বললেন, "হে নমরুদ, কিভাবে আপনি আকাশে পৌঁছিবেন?"
তিনি বললেন, "আমার বিজ্ঞ পরিষদবর্গই এ ব্যাপারে আমাকে পূর্ণপথ বাৎলে দেবে।"
অতঃপর নমরুদ যখন এ ব্যাপারে পরিষদবর্গের পরামর্শ চাইলেন, তখন পরিষদবর্গের একজন হয়ে ইবলিস তাকে পূর্ণ পরামর্শ দিল। সুতরাং নমরুদের হুকুমে চারটি শকুনকে লালন-পালন করা হল। অতঃপর একটি সিন্দুক তৈরী করে শকুন চারটিকে কয়েকদিন অভুক্ত রেখে ঐ সিন্দুকের চার কোনায় বেঁধে দেয়া হল। তারপর সিন্দুকের উপরদিকে শকুনের নাগালের বাইরে কিন্তু দৃষ্টির সীমানায় ঝুলিয়ে দেয়া হল মাংসের টুকরো।
নমরুদ ও তার সেনাপতি প্রস্তুত হয়ে টাওয়ার অব বাবিলের চূঁড়া থেকে সিন্দুকে আরোহণ করলেন। উল্লেখ্য আকাশের রাজত্ব দখলের উদ্দেশ্যে ইতিমধ্যে নমরুদ টাওয়ার অব বাবিল (Tower of Babel) নির্মান করেছিলেন। এই টাওয়ার অব বাবিল সম্পর্কে বাইবেলে আছে- "....and a tower, whose top may reach unto heaven....". -(Genesis 11:4) যাহোক, শকুনেরা মাংসের টুকরো খেতে চাইল, আর তাদেরকে নিয়ে সিন্দুকসহ উর্দ্ধপানে উড়ে চলল। এ সম্পর্কে ইহুদি রাব্বানিক সাহিত্য জানায়- Nimrod goes on to try storming Heaven, throwing arrows in person, in a chariot driven by birds. আর তাই বাইবেলেও তার সম্পর্কে বলা হয়েছে-"He was a mighty hunter against the Lord."-(Genesis 10:9)
উর্দ্ধ আকাশে পৌঁছে নমরুদ ও তার সেনাপতি একের পর এক তীর উপরের দিকে নিক্ষেপ করলেন। ঐ সময় আল্লাহ জিব্রাইলকে বললেন, "আমার এই বান্দা যেন নিরাশ না হয়। সুতরাং তার তীরগুলিকে রক্তরঞ্জিত করে ফেরৎ পাঠাও।"
এদিকে সকল তীর নিক্ষেপ শেষে নমরুদ পৃথিবী পৃষ্ঠে ফিরে আসতে চাইল। সেজন্যে শকুনগুলিকে নিম্নগতি করার লক্ষ্যে সিন্দুকের উপরের দিকে ঝুলিয়ে দেয়া মাংস একইভাবে নিচের দিকে ঝুলিয়ে দেয়া হল।
মাটিতে অবতরণের পর নমরুদের রক্ষীরা নিক্ষিপ্ত তীরগুলি কুড়িয়ে আনল। যেগুলো পাওয়া গেল তার সবগুলোই রক্তরঞ্জিত।নমরুদ রক্তমাখা তীরগুলি দেখে সফলতার আনন্দে আত্মহারা হয়ে ইব্রাহিমকে বললেন, "হে ইব্রাহিম! আমি তোমার খোদাকে হত্যা করেছি, তীরে লেগে থাকা রক্তই তার সাক্ষ্য বহন করে।"
এ সম্পর্কে বুক অব জাসের (book of Jasher) জানায়- "...they cast the arrows toward the heavens, and all the arrows fell upon them filled with blood, and when they saw them they said to each other, Surely we have slain all those that are in heaven. -(Jasher, 9:29) "..They thought that they killed God."-(Jasher, 9:30)
ইব্রাহিম(আ:) বললেন, "আমার স্রষ্টা চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী।"
নমরুদ বললেন, "ঠিক আছে, তিনি যদি মারা গিয়ে না থাকেন, তবে তাঁর সৈন্যদলকে একত্রিত করতে বল। আমিও আমার সৈন্যদল ময়দানে সমবেত করছি।"
ইব্রাহিম(আ:) বললেন, "আল্লাহকে ভয় করেন, তিনিই তো আপনাকে রাজ্য ও রাজত্ব দান করেছেন। আর তিনিই পরজগতের প্রতিফলদাতা।"
নমরুদ বললেন, "আমিই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। সুতরাং তোমার আল্লাহ বলে যদি কেউ থাকেন, তবে অবশ্যই তাকে আমার শক্তির মোকাবেলা করতে হবে।"
নমরুদ ষাট লক্ষ সেনা ময়দানে সমবেত করলেন। এদিকে প্রতিপক্ষের কোন দেখা নেই। নমরুদ ইব্রাহিম(আ:)কে ডেকে বললেন, "তোমার প্রতিপালকের সেনাদল কোথায়? তিনি নিশ্চয় আমার শক্তিবল দেখে ভীত হয়ে পশ্চাৎপসারণ করেছেন।"
ইব্রাহিম বললেন, "আমার রব ক্ষমতায় মহান, কোনরূপ ভীতি তাকে আচ্ছন্ন করতে পারে না, বরং তিনিই তা প্রদর্শণ করে থাকেন। একথা নিশ্চিত যে তার সেনাদল ময়দানে এসে পৌঁছিবেই-আর তা অতি অল্প সময়ের মধ্যেই।"
নমরুদ সেনাপতিদের বললেন, "যুদ্ধ পতাকা উড়িয়ে দাও, সতর্ক হও, নাকাড়া বাজাও।"
ষাট লক্ষ সেনার শোরগোলে ভূমি প্রকম্পিত হল। ফেরাউন পুনঃরায় ইব্রাহিম(আ:)কে বললেন, "কোথায় তোমার রবের সৈন্যদল?"
ইব্রাহিম(আ:) দূরে আকাশের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করলেন। দূরে কাল রঙের একটা মেঘ দেখা যাচ্ছে। যখন সেটা কাছে, মাথার উপর চলে এল, লক্ষ লক্ষ মশার গুণ গুণ কলতানে চারিদিক মুখরিত হল।
মশা! ক্ষুদ্র এ প্রাণীটি সন্ত্রাসী, বেপরোয়া। রক্তের নেশায় জীবনের ঝুকি নিয়ে তারা আক্রমণ করে মানুষ, পশুকে। আর এ মশা তো আল্লাহ প্রেরিত, যুদ্ধের নিমিত্ত। কিন্তু নমরুদ এদের ব্যক্তিত্বকে খাটো করে দেখলেন। অবজ্ঞার সূরে বললেন, "এ তো মশা! তুচ্ছ এক প্রাণী, তার উপর নিরস্ত্র। তোমার রবের কি অস্ত্র-ভান্ডার বা মালখানা নেই?"
এখানে বলে রাখা ভাল- অনেকের মতে এগুলো মশা ছিল না, ছিল মশার আকৃতির, আকারে আরও ক্ষুদ্র প্রাণী, মাংসাশী (carnivorous), Gnat.
ইব্রাহিম বললেন, "আমার রবের সেনাবাহিনী সম্পর্কে আপনার কোন ধারণাই নেই। আপনার এই সেনাবাহিনীর জন্যে তিনি এই তুচ্ছ, নিরস্ত্র মশাকেই যথেষ্ট মনে করেছেন। আর নিরস্ত্র হলেও এরা তাদের যুদ্ধ কৌশল জানে। এখন আপনি শুধু এই বাহিনীর মোকাবেলা করে আপনার শক্তি, সামর্থ্য ও মেধার পরিচয় দিন।"
এদিকে এই মশা বাহিনীর সঙ্গে কিরূপে যুদ্ধ করতে হবে তা ভেবে পাচ্ছিল না নমরুদের সেনারা। এত ক্ষুদ্র প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তাদের পূর্ব কোন যুদ্ধের অভিজ্ঞতা বা ট্রেনিং- কোনটাই নেই। সুতরাং তারা হতভম্ভ হয়ে আদেশের অপেক্ষায় সাঁরিবদ্ধভাবে নিশ্চল দাঁড়িয়ে রইল। এই অবসরে প্রতিটি সৈন্যের মাথার উপর একটি করে মশা অবস্থান নিল। অতঃপর কেউ কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই তারা তাদের নাসিকা পথে মস্তিস্কে প্রবেশ করল।তারপর দংশন। সেনাবাহিনীর মধ্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হল। হিতাহিত জ্ঞানশুণ্য হয়ে তীরন্দাজগণ উর্ধ্বে তীর নিক্ষেপ করতে লাগল। আর পদাতিক সেনারা নিজেদের চতুষ্পার্শ্বে অন্ধের মত তরবারী চালনা শুরু করল। এভাবে একে অপরকে নিজেদের অজান্তেই তারা আহত বা নিহত করে ফেলল।
নমরুদ পালিয়ে প্রাসাদে ফিরে আসছিলেন। এসময় একটি দূর্বল মশা তাকে তাড়া করল। সে কিছুক্ষণ তার শিরোস্ত্রাণের চতুষ্পার্শ্বে কয়েকবার প্রদক্ষিণ শেষে সুড়ুৎ করে তার নাসিকাপথে মস্তিস্কে ঢুকে পড়ল। তারপর ধীরে সুস্থ্যে মগজে দংশন শুরু করল। যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে পড়লেন নমরুদ। উন্মাদের ন্যায় প্রাসাদে প্রবেশ করলেন। একসময় দিশেহারা হয়ে পাদুকা খুলে নিজের মাথায় আঘাত করতে শুরু করলেন তিনি। এতে মশা দংশনে বিরত রইল। তিনি একটু আরাম বোধ করলেন। কিন্তু আঘাত বন্ধ করতেই মশা পুন:রায় দংশন শুরু করল। অবশেষে নমরুদ তার মাথায় মৃদু আঘাত করার জন্যে একজন সার্বক্ষণিক কর্মচারী নিযুক্ত করলেন।
এটা অদ্ভূত ছিল যে, পাদুকা ব্যতিত অন্যকিছুর আঘাতে মশা দংশনে বিরত থাকত না। এসময়ই ইব্রাহিম(আ:) তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললেন, "হে নমরুদ! স্বীয় মস্তকে, স্বীয় পাদুকা দ্বারা আঘাতের জন্যে, স্বীয় অর্থেই গোলাম নিযুক্ত করে রাখা জঘণ্য। সুতরাং এখনও সময় আছে আল্লাহকে সর্বশক্তিমান ও অদ্বিতীয় বলে স্বীকার করে নিন। তাতে তিনি আপনার পাপসমূহ ক্ষমা করবেন এবং আপনি এই কঠিন বিপদ থেকে মুক্তি পাবেন।"
নমরুদ মনে করতেন খোদাকে স্বীকার করে নিলে তার ক্ষমতা ও প্রভাব বিলুপ্ত হবে। তাই তিনি উত্তর দিলেন, "হে ইব্রাহিম! আমি যাকে চিনি না, জানি না, তাকে কি প্রকারে সর্বশক্তিমান বলে স্বীকার করব?"
ইব্রাহিম(আ:) দেখলেন এই অবাধ্য মানব সন্তান সম্পূর্ণ সত্যপথ বিচ্যূত। তিনি হতাশ হয়ে ফিরে এলেন।
এদিকে নমরুদের সার্বক্ষণিক দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মচারী অতিষ্ট হয়ে পড়েছিল। একমুহুর্ত অবসর নেই। সামান্য বিরতিতেই তিরস্কার। একসময় তার মনে এমন বিরক্তি ও ক্রোধের সৃষ্টি হল যে, সে তার হস্তস্থিত পাদুকা দ্বারা নমরুদের মাথায় সজোরে এক আঘাত হানল। ঐ আঘাতেই তার মৃত্যু হল।