Wednesday, August 12, 2020

বাতাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ

 একদিন এক বৃদ্ধা বাতাসের বিরুদ্ধে এক অভিযোগ নিয়ে আসল যে,  হে আল্লাহর নবী ও রাজ্যের বাদশা! আমি অত্যন্ত দরিদ্র এক বৃদ্ধা। আমার গৃহে কয়েকটি ছোট ছোট ছেলেমেয়ে আছে। আমি তাদের খাওয়ার জন্য কিছু গম পিসে আটা মাথায় করে নিয়ে আসছিলাম।   হঠাৎ বাতাস আমার সব আটা উড়িয়ে নিয়ে গেল। আমার প্রার্থনা হল, আপনি বাতাসের কাছ থেকে আমার  আটাগুলো উদ্ধার করে দিন। অন্যথায় আমার ছোট ছোট মাসুম ছেলেমেয়েরা অনাহারে থাকবে। 

হযরত দাউদ (আ) তার অভিযোগ শুনে বলেন, হে বৃদ্ধা, বাতাসের উপর আমার কোন ক্ষমতা নেই, তোমার আটা কি করে বাতাস থেকে উদ্ধার করে দিবো?  তবে তুমি যেহেতু অভাবগ্রস্ত মহিলা, তাই তোমার যে পরিমান আটা বাতাসে নিয়ে গেছে আমি  তোমাকে তার চারগুন আটা দিচ্ছি,  তুমি তা নিয়ে যাও। 

বৃদ্ধা খুব আনন্দের সাথেই সম্মত হল।   হযরত দাউদ (আ) তাকে পুর্ন একবস্তা  আটা দিয়ে বিদায় করলেন। বৃদ্ধা খুশীর সাথে আটা নিয়ে গৃহে চলল।  কিছুদুর যাওয়ার পর   হযরত সুলাইমান (আ) এর সাতে তার সাক্ষাৎ হল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন বৃদ্ধা তুমি বাদশার কাছে কি অভিযোগ নিয়ে গিয়েছিলে??  বৃদ্ধা বলল আমি বাতাসের বিরুদ্ধে নালিশ করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু বাদশাহ সে অভিযোগের বিচার না করে আমাকে একবস্তা আটা দিয়ে দিলেন। 

হযরত সুলাইমান (আ) বৃদ্ধাকে বলেন, তুমি আবার যাও, গিয়ে বল আমি আটা চাইনা, বিচার চাই? এ পরামর্শঅনুযায়ী বৃদ্ধা হযরত দাউদ (আ) এর দরবারে পুনরায় বিচারপ্রার্থী হল। হযরত দাউদ (আ) বুড়ীর কাছে জানতে চাইলেন কে তাকে এই পরামর্শ দিয়েছে?? 

বৃদ্ধা অনেক ভয়ে ভয়ে বলল, বাদশাজাদা সুলাইমান (আ) এই কথা আমাকে শিখায়ে দিয়েছেন। তখন তাকে ডেকে বলেন, হে সুলাইমান তুমি যে বৃদ্ধাকে আমার কাছে ফেরত পাঠিয়ে দিলে, এখন বল দেখি, আমি কিভাবে বাতাস হাযির করে তার বিচার করি??  

হযরত সুলাইমান (আ) বলেন, হে আমার পিতা, আপনি শুধু বাদশা নন, আপনি আল্লাহর মহাসম্মানী নবীও বটে। আপনার দোয়ায় বাতাস আপনার সামনে হাযির হতে বাধ্য হবে। হে পিতা, আমার ভয় হচ্ছে যে, কিয়ামতের দিন বৃদ্ধা যখন আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আল্লাহর দরবারে হাযির হবে, তখন আপনি  দুনিয়াতে তার অভিযোগের বিচার না করার অপরাধে অপরাধী সাব্যস্ত হবেন। 

পুত্রের কথায় হযরত দাউদ (আ) বাতাসকে উপস্থিত করার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। আল্লাহ হযরত দাউদ (আ) এর দরবারে বাতাসকে উপস্থিত হওয়ার জন্য হুকুম দিলেন। আল্লাহর হুকুম পেয়ে বাতাস হযরত দাউদ (আ) এর দরবারে হাযির হল। তিনি বৃদ্ধার অভিযোগ সম্পর্কে বাতাসের কি বলার আছে জিজ্ঞেস করলে বাতাস বলল, আমি আল্লাহর নির্দেশানুসারেই বৃদ্ধার আটা উড়িয়ে নিয়েছি। আমি নিজ থেকে কিছুই করিনি। 

ঘটনাটা ছিল এরুপ-  একখানা বিরাট জাহাজ বহু মালপত্র এবং যাত্রী নিয়ে বিশাল সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছে। হঠাৎ এ জাহাজের তলদেশে একটি ছিদ্র হয়ে তা ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তখন জাহাজের যাত্রীরা কান্নাকাটি শুরু করল, এবং আল্লাহর নামে মানত করল, হে আমাদের রব, আপনি আমাদের প্রান রক্ষা করলে এ জাহাজের সব সম্পদ আমরা আপনার পথে  বিলিয়ে দেব। তখন আমি আল্লাহর নির্দেশে এ বৃদ্ধার আটা উড়িয়ে নিয়ে  এ জাহাজটির ছিদ্রে লাগিয়ে তা বন্ধ করে দেই। তাই জাহাজের সবাই নিরাপদ ছিল। 

এর কয়েকদিন পরই সমুদ্র তীরে একখানা জাহাজ এসে  নোঙ্গর করেছে। সংবাদ পেয়ে হযরত দাউদ (আ) সেখানে হাজির হলেন। জাহাজের আরোহীরা বলল হুজুর, এ জাহাজের সব মালপত্র আমরা আল্লাহর পথে দান করার মানত করেছি। আপনি সব মাল গ্রহণ করে যথাযোগ্য স্থানে দান খয়রাত করে দিন। 

হযরত দাউদ (আ) জাহাজের মাল গ্রহণ করে তার অর্ধেক সে বৃদ্ধাকে এবং বাকি অর্ধেক অন্যান্য দারিদ্র এর মাঝে বিতরন করলেন। তারপর তিনি বৃদ্ধাকে জিজ্ঞেস করলে, হে বৃদ্ধা, তুমি এমন কি নেক আমল করেছ যার বিনিময়ে তোমার উপরে আল্লাহর এত অনুগ্রহ বর্ষিত হল?? জবাবে বৃদ্ধা বলল, 

হে আল্লাহর নবী,আমি কোন সৎকাজ করিনি, তবে আমার বাড়িতে কোন ভিক্ষুক এলে তাকে আমি কখনো খালি হাতে ফিরাই না। কিছু না কিছু অবশ্যই দিয়ে খুশী করে দেই। এজন্য আমি কোনদিন না খেয়েও থাকি। 

সেদিন একজন ভিক্ষুক এসে তার ক্ষুধার্ত থাকার কথা জানাল। তখন ঘরে সকলের খাওয়া হয়ে গিয়েছিল। কেবল মাত্র আমিই খাওয়ার বাকি ছিলাম। নিজের জন্ন্য যে দুইটা রুটি রেখেছিলাম তাই তাকে দিয়ে দিলাম। ২টা রুটি খেয়ে সে বলল, ক্ষুধা তো আমার গেল না, থেকেই গেল ক্ষুধা থাকলে আরো কিছু দিন। তখন ঘরে খাবার মত কিছুই ছিলনা, ঘরে কিছু গম ছিল, তখন আমি ভিক্ষুককে বল্লাম, আপনি একটু অপেক্ষা করুন, আমি গম পিসে আনতেছি, এক্টু পরেই আপনাকে রুটি বানাই দিতে পারবো। তখন ভিক্ষুক অপেক্ষা করল। 

আমি গিয়ে গম পিশে আটা নিয়ে ঘরে আসতেছিলাম, আমার সেই আটাগুলোই বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে গেল, যার বিচার আমি আপনার দরবারে দিয়েছিলাম। আমি এখন বুজতে পারলাম মহান আল্লাহ আমাকে এ আটার পরিবর্তই দয়াপরবস হয়ে এ মালগুলো দান করলেন।