নামাজের ওয়াক্ত ছাড়া বিপদে
আযান দেওয়া কি বিদায়াত?
===== 🕌 =====
আশাকরি লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়বেন । যে বা যারা আজ আযান দেওয়াকে নামাজের জন্য খাস অর্থাৎ নির্দিষ্ট করে ইসলামে নামাজ ব্যতীত অন্য কোথাও আজানের ধ্বনি উচ্চারিত হতে পারবেনা এবং এই পবিত্র ধ্বনিকে হিন্দুদের উলুধ্বনির সাথে মিলিয়ে অবান্তর ফতোয়া দেওয়া লোকদের জন্য আজকের আমার এ লেখাটি। আযানের আহবানটি করেছিলাম নির্দিষ্ট সময় রাত দশটায়। গভীর রাতে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য নয়। ধরে নিলাম অনেকে না বুঝে রাতে আযান দিয়েছে তো কি হয়েছে! শয়তান ছাড়া তো কোন মুমিনবান্দার বিরক্তের কারণ হওয়ার কথা নয়। কবি কায়কোবাদ বলেছিলেন,
"কে ঐ শোনাল মোরে আযানের ধ্বনি।
মর্মে মর্মে সেই সুর বাজিল কি সুমধুর"।
আমাদের সমাজে নয় শুধু বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ বিপদ-আপদে ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মুসলিম সমাজে আযান দিয়ে থাকেন। কই কখনো তো ফতোয়া দেখিনি! আমি যখন স্পেনে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে সরকারের অনুমতিক্রমে আযান দেওয়ার ভিডিও আপলোড দিয়েছি তখন অসংখ্য মানুষ সে ভিডিও। লাইক কমেন্ট এবং শেয়ার করেছেন। এমনকি আজকে যারা ফতোয়াবাজী করছেন তাদের বিভিন্ন পেজেও সেই ভিডিও আপলোড দিয়েছে। সমস্যা কেবল একি আযান যখন দেশে দেওয়া হলো তখন তাদের ফতোয়ার ছড়াছড়ি। কারণ দেশে ফতোয়াবাজের অভাব নেই। আপনি খবর নিয়ে দেখুন, একি আযান ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানরাও দিয়েছে। ভারতের বিভিন্ন সংগঠন এ আযানের আহবান করেছেন। আমার কাছে ফোন করেও তারা জানিয়েছে। তবে সেখানে অনেকে ভূমিকম্প ভেবে বিভ্রান্ত হয়েছে জানতে পেরে আমি অবিহিত করেছিলাম আমাদের দেশে কেউ যেন বিভ্রান্ত না হয়।
এবার আসুন সাধারণ মানুষ কেন বিভ্রান্ত হয়েছে? উত্তর একটাই আমাদের সমাজেও সবাই অবগত আছেন যে বিপদে আযান দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। মূলত এটা নতুন কোন নিয়ম নয়, এতোদিন কোন ফতোয়াও দেয়নি কেউ। আজ ভূমিকম্পের পরিবর্তে করোনাভাইরাসের হওয়ায় ফতোয়াবাজদের গায়ে আগুন লেগেছে। আমি নিশ্চিত যে ইসলামে কোথাও নিষেধ নেই যে নামাজ ব্যতীত অন্য কোথাও আযান দেওয়া যাবেনা। যদি থাকে দলিল দিয়ে সাহায্য করার অনুরোধ রইলো।
আসলে বিপদে আযান দেওয়াকে যারা আজ বিদায়াত বলে প্রচার করছে তাদের ফতোয়া মতে পৃথিবীর অধিকাংশ মুসলমানই বিদায়াতকারী। কারণ বিপদে আযান অনেক দেশে দেওয়া হয়। মূলত ফতোয়াবাজরা জানেওনা বিদায়াতের প্রকৃত সংজ্ঞা কি।
প্রশ্নঃ বিদায়াত কাকে বলে❓ এমন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর যদি বলি তো সংক্ষেপে বলতে পারি " ইসলামের মূল বিষয়গুলিতে ইবাদতের উদ্দেশ্যে নতুন কিছু সংযোজন করাকে বিদায়াত বলে"। কিন্তু যখন কোন ব্যক্তি স্বইচ্ছায় আযান দেয়, উদ্দেশ্য তার যাইহোক বিদায়াত নয়। বিপদ থেকে রক্ষার আযানটি ইসলামে নতুন কিছু নয় এবং আযানদাতা ইবাদতের উদ্দেশ্যে আযানটি দেয়নি। নামাজ ব্যতীত আযান দেওয়ার হুকুম বিদায়াত হলে নিন্মোক্ত হাদিসের হুকুমে কি ফতোয়া দেওয়া যায় একটু বলুন! আসুন নামাজ ব্যতীত আযান দেওয়া যায় কিনা দেখি।
◾হযরত আবু রাফেই (রা.) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন:
” رأيتُ رسول الله صلى الله عليه و سلم أذّنَ في أُذُنِ الحسنِ ابن عليٍّ حين ولدتهُ فاطمة بالصلاة ” رواه أبو داود والترمذي و قال: هذا حديث صحيح.
অর্থাৎ “ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আলীর (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) পুত্র হাসানের (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কানে নামাযের আযানের মত আযান দিতে দেখেছি। যখন ফাতেমা (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা) তাঁকে জন্ম দেয়।”
(আবু দাউদ এবং তিরমিযী)
▪উল্লেখঃ ইমাম তিরমিযী (রহঃ) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
👉 উপরোক্ত হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে আযানটি ঠিক নামাজের মতোই দেওয়া হয়েছিল। এখানেই স্পষ্ট যে নামাজ ব্যতীতও আযান দেওয়া যায়। এটি বিদায়াত নয়। আরবি বুঝলে এবারতটি ভালো করে দেখে নিন।
◾খলিফাতুল মুসলেমীন হজরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত,
قَالَ رَایٰ النَّبِیُّ صَلّٰی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَسَلَّم حُزِیْناً فَقَالَ یَا ابْنَ اَبِیْ طَالِبٍ اِنِّیْ اَرَاكَ حُزِیْناً فَمُرْ بَعْضَ اَھْلِكَ یُؤَذِّنُ فِیْ اُذُنِكَ فَاِنَّهٗ دَرْءُ الْھَّمِ
অর্থাৎ ; রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাকে চিন্তিত অবস্থায় দেখে বললেন, হে আলী! (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) আমি তোমাকে উদ্বিগ্ন অবস্থায় দেখছি। তোমার পরিবারের কাওকে তোমার কানে আযান দিতে বলো। কেননা আযান চিন্তা ও উদ্বিগ্নতা দূর করতে সহায়ক।
(মুলতান থেকে প্রকাশিত মিরকাতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ, আযান পর্ব)
বাকীটা নিজেই ভেবে দেখুন আযান কি শুধু নামাজের জন্য খাস! নাকি বিপদমুক্ত হতেও দেওয়া যায়।
◾ হাদিস শরীফে আরও বর্ণিত আছে যে, যখন আযানের শব্দগুলো উচ্চারণ করা হয় তখন আযানের শব্দ যে পর্যন্ত শুনা যায়, সে পর্যন্ত শয়তান পলায়ন করে থাকে। (মুত্তাফাকুন আলাইহ)
এ হাদিস থেকে স্পষ্ট যে শয়তান একজন মুমিন বান্দার জন্য বিপদজনক। সুতরাং মানুষের নাফরমানীর ফলে মানবকূলে গজব আসার মূলে শয়তানের প্ররোচনাই যথেষ্ট। শয়তান থেকে রক্ষা পেতে আযানের শব্দগুলো একজন মুসলমান উচ্চারণ করতেই পারে, দোষের কিছু নেই। এ আযান দেওয়া ছিলো মূলত উত্তম কাজ হিসেবে। বাধ্যতামূলক কোন আযান নয়। তবে অসময়ে আযান দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা অনুচিৎ। আযান দেওয়াটাই ছিলো মূলত একটি ধার্মিকতার প্রতি আহবান। যে আহবানে মানুষ করুনাময় দয়ালু আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানানোর প্রতি অনুপ্রাণিত হয়। এছাড়া ইসলামে যদি উত্তম কোন ধ্বনি থেকেই থাকে সেটা কেবল আযানের মধুর ধ্বনিই। আযানের মাধ্যমেই তো আল্লাহর রহমত অবতীর্ণ হয়। দূরীভূত হয় বিপদ আপদ।
◾এছাড়াও খাদেমে রাসুল হজরত আনাস বিন মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
"اِذَا اُذِّنَ فِیْ قَرِیَةٍ اٰمَنَھَا اللہُ مِنْ عَذَابِهٖ فِیْ ذٰلِكَ الْیَوْمِ"
অর্থাৎ ; যখন কোন গ্রামে আযান দেয়া হয়,তখন মহান আল্লাহ সেদিন গ্রামটিকে তার আযাব থেকে নিরাপদে রাখেন। (মু'জামুল কবীর,খ-১,পৃ-২৫৭/৭৪৬)
◾হানাফী মাজহাবের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ রদদুল মুখতার বা ফতোয়ায়ে শামীতে আযানদানের ১০টি মুস্তাহাব সময়ের মধ্যে মহামারীর সময় আযানের কথা উল্লেখ রয়েছে। কথা হচ্ছে যারা আজ মুস্তাহাব আযানের বিরোধিতা করছে তারা মূলত লা মাজহাবী। তাদের কাজেই হচ্ছে মাজহাবীদের বিরুদ্ধে বলে সমাজে ফিতনা করা।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারী করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে আল্লাহ দরবারে তাঁর পবিত্র শব্দের মাধ্যমে আহবান দিয়ে আমরা কোন অন্যায় করিনি। আমি কৃতজ্ঞ তাদের কাছে যারা অধমের আহবানে সাড়া দিয়ে দেশবিদেশে আযানের রেকর্ড করেছেন। তবে গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি যারা না বুঝে মানুষকে অসমে আযান দিয়ে কষ্ট দিয়েছেন। আমি জানিয়েছিলাম কোন মানুষ যেন বিভ্রান্ত না হয়। এর পরেও পবিত্র এ ধ্বনি উচ্চারিত হওয়ায় কোন মুসলমানদের অখুশি হওয়ার কারণ দেখিনা। আল্লাহ সবাইকে কবুল করুন। আমিন।
আযান দেওয়া কি বিদায়াত?
===== 🕌 =====
আশাকরি লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়বেন । যে বা যারা আজ আযান দেওয়াকে নামাজের জন্য খাস অর্থাৎ নির্দিষ্ট করে ইসলামে নামাজ ব্যতীত অন্য কোথাও আজানের ধ্বনি উচ্চারিত হতে পারবেনা এবং এই পবিত্র ধ্বনিকে হিন্দুদের উলুধ্বনির সাথে মিলিয়ে অবান্তর ফতোয়া দেওয়া লোকদের জন্য আজকের আমার এ লেখাটি। আযানের আহবানটি করেছিলাম নির্দিষ্ট সময় রাত দশটায়। গভীর রাতে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য নয়। ধরে নিলাম অনেকে না বুঝে রাতে আযান দিয়েছে তো কি হয়েছে! শয়তান ছাড়া তো কোন মুমিনবান্দার বিরক্তের কারণ হওয়ার কথা নয়। কবি কায়কোবাদ বলেছিলেন,
"কে ঐ শোনাল মোরে আযানের ধ্বনি।
মর্মে মর্মে সেই সুর বাজিল কি সুমধুর"।
আমাদের সমাজে নয় শুধু বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ বিপদ-আপদে ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মুসলিম সমাজে আযান দিয়ে থাকেন। কই কখনো তো ফতোয়া দেখিনি! আমি যখন স্পেনে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে সরকারের অনুমতিক্রমে আযান দেওয়ার ভিডিও আপলোড দিয়েছি তখন অসংখ্য মানুষ সে ভিডিও। লাইক কমেন্ট এবং শেয়ার করেছেন। এমনকি আজকে যারা ফতোয়াবাজী করছেন তাদের বিভিন্ন পেজেও সেই ভিডিও আপলোড দিয়েছে। সমস্যা কেবল একি আযান যখন দেশে দেওয়া হলো তখন তাদের ফতোয়ার ছড়াছড়ি। কারণ দেশে ফতোয়াবাজের অভাব নেই। আপনি খবর নিয়ে দেখুন, একি আযান ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানরাও দিয়েছে। ভারতের বিভিন্ন সংগঠন এ আযানের আহবান করেছেন। আমার কাছে ফোন করেও তারা জানিয়েছে। তবে সেখানে অনেকে ভূমিকম্প ভেবে বিভ্রান্ত হয়েছে জানতে পেরে আমি অবিহিত করেছিলাম আমাদের দেশে কেউ যেন বিভ্রান্ত না হয়।
এবার আসুন সাধারণ মানুষ কেন বিভ্রান্ত হয়েছে? উত্তর একটাই আমাদের সমাজেও সবাই অবগত আছেন যে বিপদে আযান দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। মূলত এটা নতুন কোন নিয়ম নয়, এতোদিন কোন ফতোয়াও দেয়নি কেউ। আজ ভূমিকম্পের পরিবর্তে করোনাভাইরাসের হওয়ায় ফতোয়াবাজদের গায়ে আগুন লেগেছে। আমি নিশ্চিত যে ইসলামে কোথাও নিষেধ নেই যে নামাজ ব্যতীত অন্য কোথাও আযান দেওয়া যাবেনা। যদি থাকে দলিল দিয়ে সাহায্য করার অনুরোধ রইলো।
আসলে বিপদে আযান দেওয়াকে যারা আজ বিদায়াত বলে প্রচার করছে তাদের ফতোয়া মতে পৃথিবীর অধিকাংশ মুসলমানই বিদায়াতকারী। কারণ বিপদে আযান অনেক দেশে দেওয়া হয়। মূলত ফতোয়াবাজরা জানেওনা বিদায়াতের প্রকৃত সংজ্ঞা কি।
প্রশ্নঃ বিদায়াত কাকে বলে❓ এমন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর যদি বলি তো সংক্ষেপে বলতে পারি " ইসলামের মূল বিষয়গুলিতে ইবাদতের উদ্দেশ্যে নতুন কিছু সংযোজন করাকে বিদায়াত বলে"। কিন্তু যখন কোন ব্যক্তি স্বইচ্ছায় আযান দেয়, উদ্দেশ্য তার যাইহোক বিদায়াত নয়। বিপদ থেকে রক্ষার আযানটি ইসলামে নতুন কিছু নয় এবং আযানদাতা ইবাদতের উদ্দেশ্যে আযানটি দেয়নি। নামাজ ব্যতীত আযান দেওয়ার হুকুম বিদায়াত হলে নিন্মোক্ত হাদিসের হুকুমে কি ফতোয়া দেওয়া যায় একটু বলুন! আসুন নামাজ ব্যতীত আযান দেওয়া যায় কিনা দেখি।
◾হযরত আবু রাফেই (রা.) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন:
” رأيتُ رسول الله صلى الله عليه و سلم أذّنَ في أُذُنِ الحسنِ ابن عليٍّ حين ولدتهُ فاطمة بالصلاة ” رواه أبو داود والترمذي و قال: هذا حديث صحيح.
অর্থাৎ “ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আলীর (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) পুত্র হাসানের (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কানে নামাযের আযানের মত আযান দিতে দেখেছি। যখন ফাতেমা (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা) তাঁকে জন্ম দেয়।”
(আবু দাউদ এবং তিরমিযী)
▪উল্লেখঃ ইমাম তিরমিযী (রহঃ) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
👉 উপরোক্ত হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে আযানটি ঠিক নামাজের মতোই দেওয়া হয়েছিল। এখানেই স্পষ্ট যে নামাজ ব্যতীতও আযান দেওয়া যায়। এটি বিদায়াত নয়। আরবি বুঝলে এবারতটি ভালো করে দেখে নিন।
◾খলিফাতুল মুসলেমীন হজরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত,
قَالَ رَایٰ النَّبِیُّ صَلّٰی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَسَلَّم حُزِیْناً فَقَالَ یَا ابْنَ اَبِیْ طَالِبٍ اِنِّیْ اَرَاكَ حُزِیْناً فَمُرْ بَعْضَ اَھْلِكَ یُؤَذِّنُ فِیْ اُذُنِكَ فَاِنَّهٗ دَرْءُ الْھَّمِ
অর্থাৎ ; রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাকে চিন্তিত অবস্থায় দেখে বললেন, হে আলী! (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) আমি তোমাকে উদ্বিগ্ন অবস্থায় দেখছি। তোমার পরিবারের কাওকে তোমার কানে আযান দিতে বলো। কেননা আযান চিন্তা ও উদ্বিগ্নতা দূর করতে সহায়ক।
(মুলতান থেকে প্রকাশিত মিরকাতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ, আযান পর্ব)
বাকীটা নিজেই ভেবে দেখুন আযান কি শুধু নামাজের জন্য খাস! নাকি বিপদমুক্ত হতেও দেওয়া যায়।
◾ হাদিস শরীফে আরও বর্ণিত আছে যে, যখন আযানের শব্দগুলো উচ্চারণ করা হয় তখন আযানের শব্দ যে পর্যন্ত শুনা যায়, সে পর্যন্ত শয়তান পলায়ন করে থাকে। (মুত্তাফাকুন আলাইহ)
এ হাদিস থেকে স্পষ্ট যে শয়তান একজন মুমিন বান্দার জন্য বিপদজনক। সুতরাং মানুষের নাফরমানীর ফলে মানবকূলে গজব আসার মূলে শয়তানের প্ররোচনাই যথেষ্ট। শয়তান থেকে রক্ষা পেতে আযানের শব্দগুলো একজন মুসলমান উচ্চারণ করতেই পারে, দোষের কিছু নেই। এ আযান দেওয়া ছিলো মূলত উত্তম কাজ হিসেবে। বাধ্যতামূলক কোন আযান নয়। তবে অসময়ে আযান দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা অনুচিৎ। আযান দেওয়াটাই ছিলো মূলত একটি ধার্মিকতার প্রতি আহবান। যে আহবানে মানুষ করুনাময় দয়ালু আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানানোর প্রতি অনুপ্রাণিত হয়। এছাড়া ইসলামে যদি উত্তম কোন ধ্বনি থেকেই থাকে সেটা কেবল আযানের মধুর ধ্বনিই। আযানের মাধ্যমেই তো আল্লাহর রহমত অবতীর্ণ হয়। দূরীভূত হয় বিপদ আপদ।
◾এছাড়াও খাদেমে রাসুল হজরত আনাস বিন মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
"اِذَا اُذِّنَ فِیْ قَرِیَةٍ اٰمَنَھَا اللہُ مِنْ عَذَابِهٖ فِیْ ذٰلِكَ الْیَوْمِ"
অর্থাৎ ; যখন কোন গ্রামে আযান দেয়া হয়,তখন মহান আল্লাহ সেদিন গ্রামটিকে তার আযাব থেকে নিরাপদে রাখেন। (মু'জামুল কবীর,খ-১,পৃ-২৫৭/৭৪৬)
◾হানাফী মাজহাবের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ রদদুল মুখতার বা ফতোয়ায়ে শামীতে আযানদানের ১০টি মুস্তাহাব সময়ের মধ্যে মহামারীর সময় আযানের কথা উল্লেখ রয়েছে। কথা হচ্ছে যারা আজ মুস্তাহাব আযানের বিরোধিতা করছে তারা মূলত লা মাজহাবী। তাদের কাজেই হচ্ছে মাজহাবীদের বিরুদ্ধে বলে সমাজে ফিতনা করা।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারী করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে আল্লাহ দরবারে তাঁর পবিত্র শব্দের মাধ্যমে আহবান দিয়ে আমরা কোন অন্যায় করিনি। আমি কৃতজ্ঞ তাদের কাছে যারা অধমের আহবানে সাড়া দিয়ে দেশবিদেশে আযানের রেকর্ড করেছেন। তবে গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি যারা না বুঝে মানুষকে অসমে আযান দিয়ে কষ্ট দিয়েছেন। আমি জানিয়েছিলাম কোন মানুষ যেন বিভ্রান্ত না হয়। এর পরেও পবিত্র এ ধ্বনি উচ্চারিত হওয়ায় কোন মুসলমানদের অখুশি হওয়ার কারণ দেখিনা। আল্লাহ সবাইকে কবুল করুন। আমিন।