Friday, April 10, 2015

পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ পর্ব-৪

. পর্ব-৪

মূলকথা হলো- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হিসেবে যারা যেভাবে ‘ইয়া নবী’, ‘ইয়া রসূল’, ইয়া হাবীব বলে খেয়াল করে উনাকে ডাকবে তাই শুদ্ধ হবে | শুধু ‘ইয়া’ ‘হরফে নিদা’ যোগ করার দ্বারাও পূর্বাপর সমস্ত সময়ের জন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই নির্দিষ্ট ও পরিচিত হন |

আধুনিক আরবী সাহিত্য বিশারদগণের সম্রাট অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রখ্যাত কবি আহমদ শাওকী বেক উনার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ “আশ শাওকিয়াত” এর الهمزية النبوية শীর্ষক কবিতায় শুধু يا ‘ইয়া’ হরফে নিদা উল্লেখ করে رسول কে নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেছেন। যেমন,

يا من له عز الشفاعة وحده + وهو المنزه ماله شفعاء

অর্থ: “ইয়া (হে) রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনিই সেই মহান রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যার রয়েছে পরকালে শাফায়াত করার একক মর্যাদা | জাত ও ছিফাতগতভাবে তিনি পূত-পবিত্র ও কলুষমুক্ত | উনার নিজের জন্য কোনো শুপারিশকারীর প্রয়োজন নেই |”

لى فى مديحك يا رسول عرائس+ تيمن فيك وشاقهن جلاء.

অর্থ: “ইয়া রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার প্রশংসা করার ব্যাপারে আমার রয়েছে প্রেমাস্পদের সাথে সাক্ষাতের আকাঙ্খার মতো অফুরন্ত বাসনা | যা আমাকে পূন্য-ধন্য করবেই | আর ওই বাসনাকে আপনার দিবালোকের মতো উজ্জ্বল সুন্দরতম চরিত্র মুবারক আরো উৎসাহিত করে তুলেছে |

অত্র কবিতায় يا رسول আলিফ-লাম যোগ করা ছাড়াই লিখা হয়েছে | এটা ক্বাওয়ায়িদ ও কবিতার নিয়মসম্মত | এভাবে ব্যবহার করায় সম্মানহানী হয় না | বরং এতে সম্মান প্রকাশ হয়েছে |

আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ব্যাপারে যেমন কবিগণ يا نبى، يا رسول (ইয়া নবী, ইয়া রসূল) বলে নিদা করেছেন | তেমনি উনার বংশধর তথা আওলাদে রসূলগণকেও সাহিত্যিক ও কবিগণ يا ‘ইয়া’ হরফে নিদা দ্বারা আহ্বান করেছেন |

“দুরূসুল্ বালাগাহ” উনার ‘মুহাস্সানাতুল মা’নুবিয়্যাহ’র আলোচনায় জনৈক কবির কবিতায় উল্লেখ আছে-

يا سيد احاز لطفا+ له البرايا عبيد
انت الحسين ولكن + جفاك فينا يزيد

অর্থ: “হে ইমাম, সাইয়্যিদ আলাইহিস সালাম! যিনি প্রত্যেক প্রকারের গুণ ও পবিত্রতা নিজের মধ্যে একত্রিত করে রেখেছেন, সমস্ত সৃষ্ট যার গোলাম | আপনি হলেন হযরত হুসাইন আলাইহিস সালাম | কিন্তু কি করা যাবে যে, আমাদের মধ্যে আপনার অমনোযোগ দৈনন্দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে |”

কবি অত্র শ্লোকে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে يا سيد বলে আহ্বান করেছেন | এতে একমাত্র হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে বুঝানো হয়েছে | অথচ পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ সাইয়্যিদ বা আওলাদে রসূল রয়েছেন | অর্থাৎ এখানে سيد শব্দটি যদিও নাকিরাহ, এর পূর্বে يا ‘ইয়া’ হরফে নিদা যুক্ত করার সাথে সাথে তা معرفة (মা’রিফাহ) বা নির্দিষ্ট হয়েছে | যা পূর্বাপর সব সময়ের জন্য হযরত হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে বুঝাচ্ছে |

তেমনিভাবে يا حبيب، يا نبى، يا رسول দ্বারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই আহ্বান করা হয়েছে বুঝতে হবে | তাই আলিফ-লাম ছাড়া শুধু يا ‘ইয়া’ হরফে নিদা দ্বারা সম্মান ও মর্যাদাই প্রকাশ পায়।

বাতিল ও গুমরাহদের বক্তব্য হলো- معرفة অর্থ পরিচিত ও نكرة অর্থ অপরিচিত |

এর জবাবে বলতে হয়-

আরবী ক্বাওয়ায়িদ অনুযায়ী বাতিলদের প্রদত্ত অর্থ ভুল, ধোঁকাপ্রসূত, মনগড়া ও ফিতনামূলক | কারণ, معرفة ও نكرة আরবী নাহু শাস্ত্রের দুটি অন্যতম পরিভাষা, যার অর্থ হলো معرفة (নির্দিষ্ট) ও نكرة (অনির্দিষ্ট) | যদিও লুগাত বিশারদগণ বিভিন্ন অর্থ নিয়েছেন | তবে লুগাতে হাজারো অর্থ থাকলেই যে সব অর্থ সবক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে হবে তা নয় | বরং পরিভাষা অনুযায়ী প্রয়োগ করতে হবে |

যেমন, আল্লামা হযরত সিরাজুদ্দীন উছমান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “হিদায়াতুন্ নাহু” কিতাবে উল্লেখ করেছেন,

المعرفة اسم وضع لشىء معين ... والنكرة ما وضع لشىء غير معين كرجل

অর্থ: “ معرفة (মারিফাহ) এমন একটি اسم (ইস্ম) বা বিশেষ্য যাকে কোনো নির্দিষ্ট কিছুর জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে | ..... نكرة (নাকিরাহ) এমন একটি اسم বা বিশেষ্য যাকে কোনো অনির্দিষ্ট কিছুর জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে | যেমন, رجل (রজুলুন) বা এক ব্যক্তি |

হযরত আল্লামা ইবনে হাজিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “কাফিয়া” নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন,

المعرفة ما وضع لشىء بعينه ... النكرة ما وضع لشىء لا بعينه

অর্থ: “معرفة (মারিফাহ) এমন একটি اسم (বিশেষ্য) যাকে কোনো নির্দিষ্ট কিছুর জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে | ... نكرة (নাকিরাহ) এমন একটি اسم (বিশেষ্য) যাকে কোনো অনির্দিষ্ট কিছুর জন্য প্রনয়ণ করা হয়েছে |”

অনুরূপ নাহুমীর, মাবাদিউল আরাবিয়া ও অন্যান্য ক্বাওয়ায়িদের কিতাবসমূহে বর্ণিত আছে | তাই প্রমাণিত হলো যে, গুমরাহ ও বেআক্বলদের বক্তব্য অশুদ্ধ; যা ক্বাওয়ায়িদের খিলাফ |

অতএব, প্রমাণিত হলো يا نبى، يارسول، يا حبيب এভাবে সালাম পেশ করা সম্মান প্রকাশক, ক্বাওয়ায়িদ হিসেবে শুদ্ধ এবং গ্রহণযোগ্য |

No comments:

Post a Comment