Thursday, April 16, 2015

গায়েবানা জানাযা জায়েয কি না-

গায়েবানা জানাযা জায়েয কি না-
মানুষ মারা গেলে তাকে শেষ বিদায় জানানোর জন্য জমায়েত এবং তার মাগফিরাতের জন্য যে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় এবং তাতে যে বিশেষ পদ্ধতিতে নামায পড়া হয়, তার নাম জানাযা। অত্যন্ত ভাবগম্ভীর ও অনাড়ম্বর পরিবেশে এই জানাযার নামায আদায় করা হয়ে থাকে। মৃতের মাগফিরাত কামনায় এই জানাযার নামায আদায় করা জীবিতদের জন্য শরয়ী দায়িত্ব। হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন,
গায়েবানা জানাযা
n حَقُّ الْـمُسْلِمِ عَلَى الْـمُسْلِمِ خَمْسٌ: رَدُّ السَّلَامِ، وَعِيَادَةُ الْـمَرِيْضِ، وَاتِّبَاعُ الْـجَنَائِزِ، وَإِجَابَةُ الدَّعْوَةِ، وَتَشْمِيتُ الْعَاطِسِ
একজন মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের পাঁচটি হক রয়েছে, সালামের উত্তর দেওয়া, অসুস্থের খোঁজ-খবর নেয়া, জানাযায় অংশ গ্রহণ করা, দাওয়াত কবুল করা এবং হাঁচির জবাব দেওয়া।
[আল-বুখারী, আস-সহীহ, দারু তওকিন নাজাত, খ. ২, পৃ. ৭১, হাদীস: ১২৪০]

অপর এক হাদীসে রয়েছে, হযরত আবু সাঈদ আল-খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন,
خَمْسٌ مَنْ عَمِلَهُنَّ فِي يَوْمٍ كَتَبَهُ اللهُ مِنْ أَهْلِ الْـجَنَّةِ: مَنْ عَادَ مَرِيْضًا، وَشَهِدَ جَنَازَةً، وَصَامَ يَوْمًا، وَرَاحَ يَوْمَ الْـجُمُعَةِ، وَأَعْتَقَ رَقَبَةً
পাঁচটি আমল এমন আছে, যে ব্যক্তি যে কোনো দিন ওই আমলগুলো করে আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতবাসীদের অর্ন্তভুক্ত করে দেবেন; যে রোগীর খোঁজ-খবর নেবে, জানাযায় অংশগ্রহণ করবে, যে কোন দিন রোযা রাখবে, জুমুআর নামাযের জন্য প্রত্যুষে রওয়ানা করবে এবং একটি গোলাম আযাদ করবে।
[ইবনে হিব্বান, আস-সহীহ, মুআস্সিসাতুর রিসালা, বৈরুত,
লেবানন, খ. ৭, পৃ. ৬, হাদীস: ২৭৭১]
আরেক হাদীসে আছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: ্রمَنْ شَهِدَ الْجَنَازَةَ حَتَّى يُصَلَّى عَلَيْهَا فَلَهُ قِيْرَاطٌ، وَمَنْ شَهِدَهَا حَتَّىٰ تُدْفَنَ فَلَهُ قِيرَاطَانِগ্ধ قِيْلَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ وَمَا الْقِيْرَاطَانِ؟ قَالَ: ্রمِثْلُ جَبَلَيْنِ عَظِيْمَيْنِ
হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের জানাযায় অংশগ্রহণ করে জানাযার নামায আদায় করে তার জন্য রয়েছে এক কিরাত সাওয়াব। আর যে ব্যক্তি জানাযায় শরিক হয়ে দাফনকার্য সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত উপস্থিত থাকে তার জন্য রয়েছে দুই কিরাত সমপরিমাণ সাওয়াব। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!) দুই কিরাত বলতে কী বোঝানো হয়েছে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, দুটি বৃহৎ পাহাড়ের সমপরিমাণ সাওয়াব।
[আল-বুখারী, আস-সহীহ, দারু তওকিন নাজাত, খ. ৭, পৃ. ৩৪৭, হাদীস: ৩০৭৮]
সাহাবি আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন:
“مَا مِنْ رَجُلٍ مُسْلِمٍ يَمُوتُ فَيَقُومُ عَلَى جَنَازَتِهِ أَرْبَعُونَ رَجُلا لا يُشْرِكُونَ بِاللَّهِ شَيْئًا إِلا شَفَّعَهُمُ اللَّهُ فِيهِ ”
“যদি কোন মুসলিম মৃত্যুবরণ করে, আর তার জানাযায় এমন চল্লিশ জন লোক উপস্থিত হয়, যারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করে না, আল্লাহ মৃত ব্যক্তির ব্যাপারে তাদের সুপারিশ কবুল করবেন”। [মুসলিম ২০৭২]
তাই আলেমগণ বলেছেন, মুসল্লি যত বেশী হবে ততই মৃতের জন্যে কল্যাণ হবে, কারণ এতে সে অধিক মানুষের দু’আ পাবে।
শরিয়তের দৃষ্টিতে জানাযার নামায আদায় করা ফরজে কিফায়া। কোনো এলাকায় যদি কাউকে জানাযার নামায ছাড়া দাফন করে দেওয়া হয় তাহলে ওই এলাকার সবাই গুনাহগার হবে। জানাযার নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। যেমন:
১. মৃত ব্যক্তিকে অবশ্যই মুসলমান হতে হবে। কেননা কোনো অমুসলিম, কাফের, নাস্তিক-মুরতাদের জানাযার নামায পড়া জায়েয নয়।
২. ওই ব্যক্তিকে জীবিত জন্মগ্রহণ করতে হবে। কেননা মৃত নবজাতক বা মৃত ভ্রুণের জানাযার নামায পড়ার প্রয়োজন নেই।
৩. মৃত ব্যক্তির শরীর ও কাপড় প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব ধরণের নাপাকি থেকে পবিত্র হতে হবে। সে পবিত্রতা গোসলের দ্বারা হোক বা তায়াম্মুমের দ্বারা হোক। সুতরাং কোনো মৃত ব্যক্তির স্বাভাবিকভাবে গোসল ও অপারগতাবশত তায়াম্মুম করানো ছাড়া জানাযার নামায পড়ালে তা শুদ্ধ হবে না। পবিত্র করানোর পর পুনরায় নামায পড়াতে হবে।
৪. মৃতের সতর আবৃত থাকতে হবে। অন্যথায় জানাযার নামায সহিহ হবে না। সুতরাং পুরুষ ও মহিলার জীবিতাবস্থায় যে পরিমাণ তার সতর হিসেবে গণ্য, সে পরিমাণ সতর ঢেকে রাখতে হবে। অন্যথায় তার জানাযার নামায শুদ্ধ হবে না।
৫. মৃতের লাশ ইমাম ও মুক্তাদিগণের সামনে থাকতে হবে। পাশে বা পিছনে থাকলে বা একেবারে অনুপস্থিত থাকলে জানাযা শুদ্ধ হবে না।
৬. মৃতের লাশ মাটিতে বা খাটিয়ার ওপর রাখতে হবে। কোনো ওজর ছাড়া মৃতের লাশ যানবাহনের ওপর বা মানুষের কাঁধের ওপর রেখে জানাযার নামায আদায় করলে তা শুদ্ধ হবে না।
৭. মৃতের লাশ অবশ্যই জানাযা স্থলে উপস্থিত থাকতে হবে। অনুপস্থিত লাশের ওপর জানাযা অর্থাৎ গায়েবানা জানাযা পড়া জায়েয নয়।
সম্প্রতি ল্য করা যাচ্ছে, আমাদের সমাজে যারা রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডে বা সহিংসতায় মারা যান, কর্মসূচি দিয়ে তাদের গায়েবানা জানাযা পড়া হয়। যেহেতু একজায়গায় একত্রিত হয়ে সবাই মিলে তার জানাযার নামায পড়া সম্ভব নয় সে কারণেই মৃত ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার গায়েবানা জানাযা পড়া হয়ে থাকে। তাছাড়া অনেক সময় দেখা যায় বড় কোনো নেতা বা ব্যক্তি মারা গেলে তার প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সম্মান থাকার কারণে তার জানাযার নামায পড়তে আগ্রহ বোধ করে। এসব েেত্র মানুষ সাধারণত গায়েবানা জানাযার আশ্রয় নিয়ে থাকে। কিন্তু গায়েবানা জানাযা জায়েয কিনা এ বিষয়টিকে কেউ খতিয়ে দেখার চেষ্টা করেন না। যেহেতু জানাযার নামায একটি ইবাদত ও ধর্মীয় বিষয় তাই ধর্মীয় শর্তাবলী ও বিধি-বিধান মেনেই তা পালন করা উচিত। দুঃখের বিষয় হলো, সম্প্রতি জানাযার বিধি-বিধানকে চরম উপো করে এই মহান ইবাদতটিকে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে রূপ দেয়া হয়েছে, যা কিছুতেই কাম্য নয়।
হানাফী, মালিকী মাযহাবের সব ফকিহ ও হাম্বলী মাযহাবের ফকিহদের একাংশের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হলো, লাশ অনুপস্থিত রেখে গায়েবানা জানাযা জায়েয নয়। কেননা সাহাবায়ে কেরামের যুগের দিকে ল করলে দেখা যায় যে, সে যুগে গায়েবানা জানাযা পড়ার কোনো প্রচলন ছিল না। অথচ সে যুগেও বড় বড় সাহাবি দূর-দূরান্তে ইন্তেকাল করেছিলেন; কিন্তু তাদের গায়েবানা জানাযা পড়া হয়নি। যেমন বীরে-মাউনার ঘটনায় সত্তরজন কারী আলেম সাহাবির শাহাদাতের খবর জেনেও নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়েবানা জানাযা পড়েননি। এমনকি স্বয়ং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকালের পরও কোথাও কোনো সাহাবি এমনকি মক্কা শরিফ যা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মস্থান সেখানেও কোনো গায়েবানা জানাযা পড়া হয়নি। আর নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো কাজ ব্যাপকভাবে বর্জন করা তা বর্জনীয় হওয়ার প্রমাণ।
হানাফী, মালেকী ও হাম্বলী ঊলামায়ে কেরামদের মতে জানাযার নামাযে মৃত ব্যাক্তির সামনে থাকা জরুরি নতুবা গায়েবানা জানাযা পড়া যাবেনা আর গায়েবানা জানাযা সুন্নাহসম্মত নয়।
[বাহরুর রায়েক; ফতোয়ায়ে শামী; আহকামুল মাইয়েত; যাদুল মা’আদ- বাবে সলাতুল জানায়েয; আল মাজমূ’-৫/২৫৩; আল মুগনী ২/৩৮৬; যারকানী ২/১০; ইলাউস সুনান ২/২৩৪; ফয়দুল বারী ২/৪৬৯; মুগনী মুহতাজ ১/১৬৫; কাশফুল কান্না ২/১২৬; শরহুছ ছগীর ১/৫৬৯]
হাম্বলী মাযহাবের অন্যতম দাবীদার ইবনুল কায়্যিম বলেন,
وَلَـمْ يَكُنْ مِنْ هَدْيِهِ وَسُنَّتِهِ الصَّلَاةُ عَلَىٰ كُلِّ مَيِّتٍ غَائِبٍ فَقَدْ مَاتَ خَلْقٌ كَثِيْرٌ مِنَ الْـمُسْلِمِيْنَ وَهُمْ غُيَّبٌ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيْهِمْ.
“গায়েবানা জানাযা পড়া রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত পরিপন্থি। কেননা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় দূর-দূরান্তে বহু সাহাবায়ে কেরাম ইন্তেকাল করেছেন; কিন্তু তিনি তাদের গায়েবানা জানাযা পড়েননি।’’
[(ক) আল-আযীমাবাদী, আওনুল মা’বুদ শরহু সুনানি আবী দাউদ, দারু আল-কুতুব আল-ইলমিয়া, বৈরুত, লেবানন (দ্বিতীয় সংস্করণ: ১৪১৫ হি. = ১৯৯৪ খ্রি.), খ. ৯, পৃ. ৮; (খ)) ইবনে কাইয়িম আল-জওযিয়া, যাদুল মা‘আদ ফী হাদয়ি খাইরিল ইবাদ, মুআস্সিসা আর-রিসালা, বৈরুত, লেবানন (সপ্তদশ সংস্করণ: ১৪১৫ হি. = ১৯৯৪ খ্রি.), খ. ১, পৃ. ৫০০]
হানাফী মাযহাবের শ্রেষ্ঠতম ভাষ্যকার আল্লামা ইবনুল হুমাম রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি বলেন,
وَشَرْطُ صِحَّتِهَا إسْلَامُ الْـمَيِّتِ وَطَهَارَتُهُ وَوَضْعُهُ أَمَامِ الْـمُصَلِّيْ، فَلِهَذَا الْقَيْدِ لَا تَجُوزُ عَلَىٰ غَائِبٍ وَلَا حَاضِرٍ مَحْمُوْلٍ عَلَىٰ دَابَّةٍ أَوْ غَيْرِهَا، وَلَا مَوْضُوْعٍ مُّتَقَدِّمٍ عَلَيْهِ الْـمُصَلِّيْ، وَهُوَ كَالْإِمَامِ مِنْ وَجْهٍ.
‘জানাযা সহিহ হওয়ার জন্য শর্ত হলো, মৃতকে মুসলমান হতে হবে, পবিত্র হতে হবে এবং লাশ মুসল্লিদের সামনে রাখতে হবে। কাজেই অনুপস্থিত লাশের ওপর গায়েবানা জানাযা জায়েয নয়।
[ইবনুল হুমাম, ফতহুল কদীর শরহুল হিদায়া, দারুল ফিকর, বৈরুত, লেবানন, খ. ২, পৃ. ১১৭]
এতে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, লাশ ছাড়া জানাযা তথা গায়েবানা জানাযা পড়া জায়েয নয়। ফাতহুল কদীরেরই অন্য জায়গায় তিনি আরও বলেন,
ثُمَّ دَلِيْلُ الْـخُصُوْصِيَّةِ أَنَّهُ لَـمْ يُصَلِّ عَلَىٰ غَائِبٍ إلَّا عَلَىٰ هَؤُلَاءِ وَمَنْ سِوَى النَّجَاشِيِّ صَرَّحَ فِيْهِ بِأَنَّهُ رُفِعَ لَهُ وَكَانَ بِمَرْأًى مِنْهُ مَعَ أَنَّهُ قَدْ تُوُفِّيَ خَلْقٌ مِنْهُمْ غَيْبًا فِي الْأَسْفَارِ كَأَرْضِ الْـحَبَشَةِ وَالْغَزَوَاتِ وَمِنْ أَعَزِّ النَّاسِ عَلَيْهِ كَانَ الْقُرَّاءُ، وَلَـمْ يُؤْثَرْ قَطُّ عَنْهُ بِأَنَّهُ صَلَّىٰ عَلَيْهِمْ وَكَانَ عَلَى الصَّلَاةِ عَلَىٰ كُلِّ مَنْ تُوُفِّيَ مِنْ أَصْحَابِهِ حَرِيْصًا حَتَّىٰ قَالَ: ্রلَا يَمُوتَنَّ أَحَدٌ مِنْكُمْ إلَّا آذَنْتُمُوْنِيْ بِهِ، فَإِنَّ صَلَاتِيْ عَلَيْهِ رَحْمَةٌ لَهُগ্ধ عَلَىٰ مَا سَنَذْكُرُ.
‘বহু সাহাবায়ে কেরাম এমন রয়েছেন, যারা বিভিন্ন সফরে মদিনার বাইরে ইন্তেকাল করেন। যেমন সিরিয়া বা বিভিন্ন যুদ্ধেেত্র। এক বীরে মাউনার মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডেই শহীদ হয়েছেন সত্তরজন সাহাবী। যারা ছিলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অত্যন্ত প্রিয়পাত্র; কিন্তু তিনি তাদের কারো গায়েবানা জানাযা পড়েছেন বলে একটি বর্ণনাও পাওয়া যায় না। অথচ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের জানাযায় শরীক হতে অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন। যে কারণে তিনি বলে রাখতেন, তোমাদের মধ্যে কারো ইন্তেকাল হলে আমাকে সংবাদ দেবে। যাতে আমি তার জানাযা পড়তে পারি। কারণ আমি যার জানাযায় শরীক হবো তা তার জন্য রহমতের কারণ হবে।
[ইবনুল হুমাম, প্রাগুক্ত, খ. ২, পৃ. ১১৮]
আল্লামা কাসানী (রহ.) বলেন, وَعَلَىٰ هَذَا قَالَ أَصْحَابُنَا: لَا يُصَلَّىْ عَلَىٰ مَيِّتٍ غَائِبٍ “এজন্যই আমাদের ওলামাগণ বলেছেন, অনুপস্থিত লাশের ওপর জানাযা তথা গায়েবানা জানাযা পড়া যাবে না।
[আল-কাসানী, বাদায়িউস সানাই ফী তারতীবিশ শারায়ি,
দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বৈরুত, লেবানন, খ. ১, পৃ. ৩১২]
বিখ্যাত ফাতওয়া গ্রন্থ আদ-দুররুল মুখতারে বলা হয়েছে,
حُضُوْرُهُ (وَوَضْعُهُ) وَكَوْنُهُ هُوَ أَوْ أَكْثَرُهُ (أَمَامَ الْـمُصَلِّيْ) وَكَوْنُهُ لِلْقِبْلَةِ فَلَا تَصِحُّ عَلَىٰ غَائِبٍ.
জানাযা সহিহ হওয়ার জন্য শর্ত হলো, মৃতের লাশ মুসল্লিদের সম্মুখে উপস্থিত থাকা। কাজেই গায়েব বা অনুপস্থিত লাশের ওপর জানাযা জায়েয নয়।
[আল-হাসকফী, আদ-দুররুল মুখতার তানওয়ীরুল আবসার ওয়া জামিউল বিহার, দারুল ফিকর, বয়রুত, লেবনান, খ. ২, পৃ. ২০৯]
মোটকথা হানাফী ও মালিকী মাযহাবের ইমামগণের সর্বসম্মত অভিমত এবং হাম্বলী মাযহাবের অধিকাংশ ইমামের অভিমত হলো, গায়েবানা জানাযা জায়েয নয়। জানাযা পড়তে হলে অবশ্যই লাশ মুসল্লিদের সামনে উপস্থিত থাকতে হবে।
কেউ কেউ গায়েবানা জানাযা জায়েয বলতে চান। তারা দলিল হিসেবে ইথিওপিয়ার মুসলিম বাদশাহ হজরত নাজ্জাসীর ঘটনা এবং মুয়াবিয়া ইবনে মুয়াবিয়া আল-মুযানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর ঘটনা পেশ করেন।
নাজ্জাসীর জানাযার ঘটনা
গায়েবানা জানাযার জন্য হাবশার (আবিসিনিয়া) বাদশাহ আছহামা নাজ্জাশীর জানাযা আদায়ের ঘটনাই হ’ল একমাত্র দলীল, যিনি ৯ম হিজরিতে মারা যান। নাজ্জাশী খ্রিস্টানদের বাদশাহ ছিলেন। কিন্তু নিজে মুসলমান ছিলেন। সেকারণে তার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের নিয়ে জামা‘আত সহকারে জানাযা আদায় করেন এবং ইরশাদ করেন, صَلُّوْا عَلَى أَخٍ لَّكُمْ مَاتَ بِغَيْرِ أَرْضِكُمْ ‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জানাযা পড়। যিনি তোমাদের দেশ ব্যতীত অন্য দেশে মৃত্যুবরণ করেছেন’।
নাজ্জাসীর জানাযার ঘটনাটি সহীহ ইবনে হিব্বানে এভাবে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ، قَالَ: أَنْبَأَنَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم، أَنَّ أَخَاكُمْ النَّجَاشِيَّ تُوُفِّيَ، فَقُومُوْا فَصَلُّوْا عَلَيْهِ، فَقَامَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ، وَصَفُّوْا خَلْفَهُ، وَكَبَّرَ أَرْبَعًا وَهُمْ لَا يَظُنُّوْنَ إِلَّا أَنَّ جَنَازَتَهُ بَيْنَ يَدَيْهِ
ইমরান ইবনে হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের ভাই নাজ্জাশী ইন্তিকাল করেছেন। চলো তাঁর জানাযার নামায পড়ি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে বাইরে এলেন। সাহাবায়ে কেরাম তার পেছনে কাতারবন্দি হলেন। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চার তাকবীরের সাথে নামায পড়ালেন। সাহাবায়ে কেরামের ধারণা নাজ্জাশীর জানাযা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে রাখা ছিলো।
[ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, দারু ইয়াহইয়ায়িল কুতুব আল-আরাবিয়া, বয়রুত, লেবনান, খ. ১, পৃ. ৪৯১, হাদীস: ১৫৩৭]
সহিহ আল-বুখারীতে ঘটনার বিবরণ এভাবে রয়েছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ: ্রنَعَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِلَىٰ أَصْحَابِهِ النَّجَاشِيَّ، ثُمَّ تَقَدَّمَ، فَصَفُّوْا خَلْفَهُ، فَكَبَّرَ أَرْبَعًا
হজরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সাহাবায়ে কেরামের কাছে উপস্থিত হয়ে নাজ্জাসীর মৃত্যুসংবাদ শোনালেন এবং জানাযার নামায পড়ার জন্য সামনে অগ্রসর হলেন। সাহাবায়ে কেরাম তার পেছনে কাতারবন্দি হয়ে দাঁড়ালেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চার তাকবীর দিলেন।
[আল-বুখারী, আস-সহীহ, দারু তওকিন নাজাত, খ. ২, পৃ. ৮৬, হাদীস: ১৩১৮]
সহীহ আল-বুখারীর অন্য বর্ণনায় হজরত জাবের রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত আছে,
عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم حِيْنَ مَاتَ النَّجَاشِيُّ: ্রمَاتَ اليَوْمَ رَجُلٌ صَالِحٌ، فَقُوْمُوْا فَصَلُّوْا عَلَىٰ أَخِيكُمْ أَصْحَمَةَ
একদিন নবী করীম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হাবশার অধিবাসী একজন নেককার লোক মারা গেছেন। তোমরা তোমাদের ভাই ‘আছমাহা’(নাজ্জাসী) এর জানাযা পড়ার জন্য প্রস্তুত হও।
[আল-বুখারী, আস-সহীহ, দারু তওকিন নাজাত, খ. ৫, পৃ. ৫১, হাদীস: ৩৮৭৭]
ইবনে মাজাহ শরীফে ঘটনাটি এভাবে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ أَسِيْدٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم خَرَجَ بِهِمْ فَقَالَ: ্রصَلُّوْا عَلَىٰ أَخٍ لَكُمْ مَاتَ بِغَيْرِ أَرْضِكُمْগ্ধ قَالُوْا: مَنْ هُوَ؟ قَالَ: ্রالنَّجَاشِيُّ
হুযায়ফা ইবনে আসীদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে বের হলেন। তিনি বললেন, তোমরা অমুসলিম দেশে ইন্তিকালকারী তোমাদের এক ভাইয়ের জানাযা পড়। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি কে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিনি নাজ্জাসী।
[ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, দারু ইয়াহইয়ায়িল কুতুব আল-আরাবিয়া, বয়রুত, লেবনান, খ. ১, পৃ. ৪৯১, হাদীস: ১৫৩৭]
উপর্যুক্ত হাদীসসমূহসহ সিহাহ সিত্তায় বর্ণিত অন্যান্য হাদীস দ্বারা বোঝা যায় হাবশার অধিপতি নাজ্জাসী স্বদেশে ইন্তিকাল করেছেন আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বস্থানে সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে জানাযার নামায পড়েছেন। গায়েবানা জানাযার পক্ষে কেউ কেউ এ ঘটনাকে দলিল হিসাবে পেশ করেন।
মুয়াবিয়া ইবনে মুয়াবিয়া আল-মুযানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর গায়েবানা জানাযার ঘটনা:
হযরত মুয়াবিয়া ইবনে মুয়াবিয়া আল-মুযানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর গায়েবানা জানাযার ঘটনা এভাবে বর্ণিত হয়েছে, ইমাম তাবারানী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি তার আল-মুজামুল কাবীর গ্রন্থে হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: نَزَلَ جِبْرِيْلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ! مَاتَ مُعَاوِيَةُ بْنُ مُعَاوِيَةَ الْـمُزَنِيُّ، أَتُحِبُّ أَنْ تُصَلِّيَ عَلَيْهِ؟ قَالَ: ্রنَعَمْগ্ধ ، فَضَرَبَ بِجَنَاحَيْهِ فَلَمْ تَبْقَ شَجَرَةٌ، وَلَا أَكَمَةٌ إِلَّا تَضَعْضَعَتْ، وَرَفَعَ لَهُ سَرِيْرَهُ حَتَّىٰ نَظَرَ إِلَيْهِ، فَصَلَّىٰ عَلَيْهِ وَخَلْفَهُ صَفَّانِ مِنَ الْـمَلَائِكَةِ فِيْ كُلِّ صَفٍّ سَبْعُوْنَ أَلْفًا، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لِـجِبْرِيْلَ: ্রيَا جِبْرِيْلُ! مَا بَلَّغَ هَذَا هَذِهِ الْـمَنْزِلَةَ مِنَ اللهِ؟গ্ধ قَالَ: بِحُبِّهِ “قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ” وَقِرَاءَتِهِ إِيَّاهَا جَائِيًا وَذَاهِبًا وَقَائِمًا وَقَاعِدًا وَعَلَىٰ كُلِّ حَالٍ.
হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেন, একদিন জিবরাইল আলায়হিস্ সালাম রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আল্লাহ তাআলার রাসুল! মুআবিয় ইবনে মুআবিয়া আল-মুযানী ইন্তেকাল করেছেন। আপনি তার নামাযে জানাযা পড়তে আগ্রহী? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অবশ্যই। তখন জিবরাইল আলায়হিস্ সালাম তার উভয় ডানা দ্বারা জমিনে আঘাত করলেন। ফলে জমিনের সকল গাছ-পালা টিলা-টুম্বর সমান হয়ে গেল। অতঃপর মুআবিয়ার লাশ সামনে আনা হলো। যা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখতে পেলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাযার নামায পড়ালেন। পেছনে দু’কাতার ফেরেশতা দাঁড়ালেন। প্রতি কাতারে সত্তর হাজার করে ফেরেশতা ছিল। নামায শেষে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরাইল আলায়হিস্ সালামকে জিজ্ঞাসা করলেন। কোন আমলের বরকতে মুআবিয়া এই মর্যাদা লাভ করল। উত্তরে হযরত জিবরাইল আলায়হিস্ সালাম বললেন, মুআবিয়া সুরা ইখলাসকে খুবই মুহাব্বত করতেন এবং চলতে ফিরতে উঠতে বসতে সর্বাবস্থায় তিনি সুরা আল-ইখলাস তেলাওয়াত করতেন।
[আত-তাবারানী, আল-মু’জামুল কবীর, মাকতাবাতু ইবনে তায়মিয়া,
কায়রো, মিসর, খ. ১৯, পৃ. ৪২৮, হাদীস: ১০৪০]
এই ঘটনা দ্বারাও অনেকে বুঝাতে চান যে, গায়েবানা জানাযা পড়া বৈধ।
নাজ্জাসীর জানাযা সম্পর্কে উত্তর
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজ্জাসীর গায়েবানা জানাযা পড়েছেন বলে যে দাবি করা হয়েছে তা এই হাদীস দ্বারা বোঝা যায় না; বরং হাদীস দ্বারা যেটা বোঝা যায় সেটা হলো, নাজ্জাসীর লাশ মুজিযা-স্বরূপ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে নিয়ে আসা হয়েছিল। সাহাবায়ে কেরামও এই মনে করে জানাযার নামায পড়েছেন যে, লাশ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে আছে। যেমন সহীহ সনদে মুসনদে আহমদ ইবনে হাম্বলে বর্ণিত হয়েছে,
حَدَّثَنَا عَبْدُ الصَّمَدِ، حَدَّثَنَا حَرْبٌ، حَدَّثَنَا يَحْيَىٰ، أَنَّ أَبَا قِلَابَةَ حَدَّثَهُ، أَنَّ أَبَا الْـمُهَلَّبِ حَدَّثَهُ، أَنَّ عِمْرَانَ بْنَ حُصَيْنٍ حَدَّثَهُ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: ্রإِنَّ أَخَاكُمْ النَّجَاشِيَّ تُوُفِّيَ فَصَلُّوْا عَلَيْهِগ্ধ، قَالَ: فَصَفَّ رَسُوْلُ اللَهِ صلى الله عليه وسلم، وَصَفَفْنَا خَلْفَهُ فَصَلَّىٰ عَلَيْهِ، وَمَا نَحْسِبُ الْـجِنَازَةَ إِلَّا مَوْضُوْعَةً بَيْنَ يَدَيْهِ.)إسناده صحيح علىٰ شرط مسلم رجاله ثقات رجال الشيخين غير أبي المهلب الجرمي فمن رجال مسلم.(
হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের ভাই নাজ্জাসী ইন্তেকাল করেছেন। সুতরাং তোমরা তার জানাযা পড়।’ বর্ণনাকরী বলেন, এরপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাতার সোজা করে দাঁড়ালেন। আমরাও তার পেছনে কাতারবন্দি হয়ে দাঁড়ালাম। আমাদের ধারণা হচ্ছিল লাশটি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে রাখা হয়েছিল।
[আহমদ ইবনে হাম্বল, আল-মুসনদ, মুআস্সিসাতুর রিসালা,
বৈরুত, লেবানন, খ. ৩৩, পৃ. ২০৯, হাদীস: ২০০০৫]
বিষয়টি সহীহ ইবনে হিব্বানেও সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে যে,
عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ، قَالَ: ্রأَنْبَأَنَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم، أَنَّ أَخَاكُمْ النَّجَاشِيَّ تُوُفِّيَ، فَقُوْمُوْا فَصَلُّوْا عَلَيْهِ، فَقَامَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم، وَصَفُّوا خَلْفَهُ، وَكَبَّرَ أَرْبَعًا وَهُمْ لَا يَظُنُّوْنَ إِلَّا أَنَّ جَنَازَتَهُ بَيْنَ يَدَيْهِ
সাহাবায়ে কেরাম প্রবলভাবে ধারণা করেন যে, লাশটি নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে রাখা হয়েছে।
[ইবনে হিব্বান, আস-সহীহ, মুআস্সিসাতুর রিসালা,
বয়রুত, লেবনান, খ. ৭, পৃ. ৩৬৯, হাদীস: ৩১০২]
عن ابن عباس قال : ( كشف للنبي صلى الله عليه وآله وسلم عن سرير النجاشي حتى رآه وصلى عليه -) سنن الترمذي গ্ধ كتاب الجنائز عن رسول الله صلى الله عليه وسلم গ্ধ باب ما جاء في صلاة النبي صلى الله عليه وسلم على النجاشي (
হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, নাজ্জাসীর খাটিয়াকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে রাখা হয়েছিল। ফলে তিনি তাকে দেখে দেখে জানাযা আদায় করেছিলেন।
[তুহফাতুল আহওয়াযী-১০৩৯]
বিষয়টি নাসবুর রায়া গ্রন্থেও বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। এখানে তা হুবহু উল্লেখ করা হলো:
النَّوْعُ الْـحَادِي وَالْأَرْبَعِيْنَ، مِنْ الْقِسْمِ الْـخَامِسِ، مِنْ حَدِيْثِ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: إِنَّ أَخَاكُمْ النَّجَاشِيَّ تُوُفِّيَ، فَقُوْمُوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ، فَقَامَ رَسُوْلُ اللَهِ صلى الله عليه وسلم، وَصَفُّوْا خَلْفَهُ، فَكَبَّرَ أَرْبَعًا، وَهُمْ لَا يَظُنُّوْنَ إلَّا أَنَّ جِنَازَتَهُ بَيْنَ يَدَيْهِ.
الثَّانِيْ: أَنَّهُ مِنْ بَابِ الضَّرُورَةِ لِأَنَّهُ مَاتَ بِأَرْضٍ لَّـمْ يُقَمْ فِيْهَا عَلَيْهِ فَرِيْضَةُ الصَّلَاةِ، فَتَعَيَّنَ فَرْضُ الصَّلَاةِ عَلَيْهِ لِعَدَمِ مَنْ يُصَلِّيْ عَلَيْهِ ثَمَّ، وَيَدُلُّ عَلَىٰ ذَلِكَ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم لَـمْ يُصَلِّ عَلَىٰ غَائِبٍ غَيْرِهِ، وَقَدْ مَاتَ مِنْ الصَّحَابَةِ خَلْقٌ كَثِيْرٌ، وَهُمْ غَائِبُوْنَ عَنْهُ، وَسَمِعَ بِهِمْ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيْهِمْ، إلَّا غَائِبًا وَاحِدًا وَرَدَ أَنَّهُ طُوِيَتْ لَهُ الْأَرْضُ حَتَّىٰ حَضَرَهُ، وَهُوَ مُعَاوِيَةُ بْنُ مُعَاوِيَةَ الْـمُزَنِيّ، رَوَى حَدِيْثَهُ الطَّبَرَانِيُّ فِيْ ্রمُعْجَمِهِ الْوَسَطِগ্ধ. و্َরكِتَابِ مُسْنَدِ الشَّامِيِّينَগ্ধ حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ سَعِيدٍ الرَّازِيُّ ثَنَا نُوحُ بْنُ عَمْرِو بْنِ حُوَيٍّ السَّكْسَكُ ثَنَا بَقِيَّةُ بْنُ الْوَلِيدِ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ زِيَادٍ الْأَلْـهَانِيِّ عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ، قَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُوْلِ اللَهِ صلى الله عليه وسلم بِتَبُوْكَ، فنزل عليه جبرئيل، فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! إنَّ مُعَاوِيَةَ بْنَ مُعَاوِيَةَ الْـمُزَنِيّৃ
[আয-যায়লায়ী, নসবুর রায়া লি আহাদীসিল হিদায়া, দারুর রাইয়ান লিত-তাবাআতি ওয়ান নশর, বয়রুত, লেবনান ও দারুল কিবলা লিস-সাকাফাতিল ইসলামিয়া, জিদ্দা, সাঊদী আরব (প্রথম সংস্করণ: ১৪১৮ হি. = ১৯৯৭ খ্রি.), খ. ৩, পৃ. ২৮৩]
আল্লামা ইবনে হাজার আল-আসকালানী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ফাতহুল বারীতে ইয়াহইয়া ইবনে কসীরের বর্ণনা উল্লেখ করার পর লিখেন, আমরা নাজ্জাসীর জানাযা পড়েছি এই অবস্থায় যে, তার মৃতদেহ আমাদের সামনে উপস্থিত ছিল।’
وَلِابْنِ حِبَّانَ مِنْ حَدِيْثِ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ، فَقَامَ وَصَفُّوْا خَلْفَهُ وَهُمْ لَا يَظُنُّوْنَ إِلَّا أَنَّ جِنَازَتَهُ بَيْنَ يَدَيْهِ أَخْرَجَهُ مِنْ طَرِيْقِ الْأَوْزَاعِيِّ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِيْ كَثِيْرٍ، عَنْ أَبِيْ قِلَابَةَ، عَنْ أَبِي الْـمُهَلَّبِ عَنْهُ وَلِأَبِيْ عَوَانَةَ مِنْ طَرِيْقِ أَبَانَ وَغَيْرِهِ، عَنْ يَحْيَىٰ فَصَلَّيْنَا خَلْفَهُ وَنَحْنُ لَا نَرَى إِلَّا أَنَّ الْـجِنَازَةَ قُدَّامَنَا وَمِنَ الِاعْتِذَارَاتِ أَيْضًا أَنَّ ذَلِكَ خَاصٌّ بِالنَّجَاشِيِّ، لِأَنَّهُ لَـمْ يَثْبُتْ أَنَّهُ صلى الله عليه وسلم صَلَّىٰ عَلَىٰ مَيِّتٍ غَائِبٍ غَيْرِهِ، قَالَ الْـمُهَلَّبُ وَكَأَنَّهُ لَـمْ يَثْبُتْ عِنْدَهُ قِصَّةُ مُعَاوِيَةَ اللَّيْثِيِّ.
উপর্যুক্ত বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায় যে, নাজ্জাসীর নামাযে জানাযা গায়েবানা ছিল না, বরং নাজ্জাসীর লাশ মদীনায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস

No comments:

Post a Comment