Friday, April 10, 2015

পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ পর্ব-১


পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ উনার সময় ইয়া নবী, ইয়া রসূল বলে সম্বোধন করার শরয়ী ফায়সালা
এবং বিরোধী পক্ষের খোরা যুক্তির খন্ডন মূলক জবাব ........................ পর্ব-১

আলীমুল হাকীম আল্লাহ্ পাক উনিই সকল হামদ ও শুকরিয়ার মালিক | যিনি পবিত্র মহামহিম | সর্বোত্তম আখলাকের অধিকারী আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অনন্তকালের জন্য অফুরন্ত ছলাত ও সালাম |

কিছু সংখ্যক জাহিল ও গুমরাহ লোক কিল্লতে ইলম ও কিল্লতে ফাহম অর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বলে থাকে যে, “পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ উনার সময় ‘ইয়া নবী সালামু আলাইকা, ইয়া রসূল সালামু আলাইকা, ইয়া হাবীব সালামু আলাইকা, ছলাওয়াতুল্লাহ আলাইকা’- এভাবে পবিত্র সালাম শরীফ পেশ করলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানহানী হয় | তাই এভাবে সালাম পেশ করা ঠিক নয় |”

তাদের আপত্তিকর বিষয়গুলো হচ্ছে-

(ক) نبى-رسول- حبيب এ শব্দগুলো نكرة (নাকিরাহ) বা অপরিচিত তাই এগুলোকে يا (ইয়া) হরফে নিদা দ্বারা ডাকলে معرفة (মা’রিফাহ) বা পরিচিত হয়ে যায় বটে, তবে ডাকার পূর্বে অপরিচিত থেকে যায় | তাই يا نبى ‘ইয়া নবী’ এভাবে সালাম পেশ করা ঠিক নয় | বরং يا ايها النبى ও يا ايها الرسول ইত্যাদি নিয়মে সালাম পেশ করাই সঠিক বা ক্বাওয়ায়িদ সম্মত |

(খ) يا ইয়া হরফে নিদা শুধু নিকটবর্তী আহ্বানের জন্য আসে | দূরবর্তীর জন্য আসে না | তাই يا نبى বলে সালাম দেয়া ঠিক হবে না | কারণ, তিনি তো আমাদের দেশ থেকে অনেক দূরে আছেন |

(গ) سلام এক পেশ দিয়ে পড়া শুদ্ধ হবে না |

(ঘ) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র সালাম শরীফ পাঠের পূর্বে পবিত্র ছলাত শরীফ বা পবিত্র দুরূদ শরীফ পড়া যাবে না | প্রথমে পবিত্র সালাম শরীফ দিতে হবে | তারপর পবিত্র ছলাত বা পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করতে হবে |

(ঙ) ছন্দ আকারে মিলযুক্ত বাক্যের মাধ্যমে পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করা ঠিক নয় | কারণ, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে এভাবে উল্লেখ নেই | নাউযুবিল্লাহ!

জাহিল ও গুমরাহ লোকদের আপত্তির কারণে কেউ সুওয়াল করতে পারে, يا نبى سلام عليك (ইয়া নবী সালামু আলাইকা) এভাবে সালাম পেশ করা শুদ্ধ হবে কিনা? শুদ্ধ হলে তার দলীল-আদিল্লাহ কি রয়েছে?

এদের জবাবে বলতে হয়, মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,

ان الله وملئكته يصلون على النبى يايها الذين امنوا صلوا عليه وسلموا تسليما

অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হযরত ফেরেশ্তা আলাইহিমুস্ সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র ছলাত শরীফ পাঠ করেন | হে মু’মিনগণ! আপনারাও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র ছলাত শরীফ তথা পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করো এবং পবিত্র সালাম শরীফ প্রেরণ করো প্রেরণ করার মতো |”
(পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৫৬)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করতে নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন | তবে পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ কিভাবে, কোন পদ্ধতিতে পাঠ করতে হবে তা সরাসরি নির্ধারিত করে দেননি | আর এককভাবেও এমন কোনো নিয়ম নির্ধারণ করে দেননি যে, কেবলমাত্র সে নিয়মেই পাঠ করতে হবে, তার বাইরে অন্য কোনো নিয়মে পাঠ করা যাবে না | তাই হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বিভিন্ন পদ্ধতিতে পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করেছেন ও করেন | তন্মধ্যে পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মজলিসে পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র তাওয়াল্লুদ শরীফ পাঠ করার পর দাঁড়িয়ে যে পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করা হয় তা ছন্দ, কবিতা বা ক্বাছীদা শরীফ আকারে | যেহেতু ছন্দ, কবিতা বা ক্বাছীদা শরীফ তৈরি করা, পাঠ করা এবং লেখা সবগুলোই সুন্নত মুবারক |

No comments:

Post a Comment