আনাল হক একটি আরবী বাক্য। এর আভিধানিক
অর্থ হলো আমি সত্য এবং পারিভাষিক অর্থ আমি আল্লাহ্ এটাই শরিয়ত সমর্থিত। হযরত
মনছুর হিল্লাজ রহমাতুল্লাহি আলায়হি খোদার প্রেম সাগরে অবগাহন ও তাঁর প্রেমে পাগল
হয়েই বলেছিলেন, হক হক আনাল হক, অর্থাৎ আল্লাহ্ আল্লাহ্ আমিই আলাহ। কিংবা সত্য
সত্য আমিই একমাত্র সত্য। দ্বিতীয় সত্য বলতে আর কিছুই নেই। সবই অস্তিত্বহীন, বিলীন।
ইশক্বে এলাহিতে বিভোর হয়ে, দুনিয়ার
সকল সৃষ্টির অস্তিত্বকে একমাত্র আল্লাহ্তে বিলীন মনে করে, এমনকি স্বীয়
অস্তিত্বকেও হারিয়ে সম্পূর্ণ দিওয়ানা অবস্থায় হযরত মনছুর হিল্লাজ বলেছিলেন- আনাল
হক। এ কালামটি তিনি বারংবার বলেছিলেন তখন স্তানীয় আলেম, পীর মাশায়েখগন উক্ত
কালামটি তাকে উচ্চারণ করতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু তিনি কিছুতেই আনাল হক বলা থেকে
বিরত হননি। খোদা প্রেমিক হযরত মনছুর হিল্লাজ আধ্যাত্মিক তত্বের যে সকল কথাবার্তার
জন্য শরিয়তি আলেম-ওলামা ও পীর মাশায়েখদের বিরাগভাজন হয়ে চরম নিন্দনীয় হয়ে
পড়েছিলেন। সে সবের মধ্য প্রধান কাজটি হল আলান হক, আমিই আল্লাহ। যার শেষ পরিনতি
হয়েছিল শূলদন্ড। আর এজন্যই শরিয়তি আলেমগণ তাকে কাফের ফতোয়া দিয়েছিলেন।
হযরত মনছুর হিল্লাজ রহমাতুল্লাহি
আলায়হির মুখ থেকে আনাল হক বাক্যটি উচ্চারিত হওয়া সম্পর্কে আশ্চাযজনক ঘটনা রয়েছে। হযরত
মনছুর হিল্লাজ রহমাতুল্লাহি আলায়হি আল্লাহর প্রেমে এমনভাবে ডুবে থাকতেন যে, তিনি
সর্বঅবস্তায় আল্লাহর জিকির করতেন। এমনকি রাতের বেলায় তিনি কখনো বিছানায় শুতেন না। যদি
কোন অবস্থায় তাঁর নিদ্রা এসে যেত, তখন তিনি মসজিদের দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে নিদ্রা দূর
করতেন। মোটকথা প্রতিটি নিঃশ্বাসেই তিনি আল্লাহর যিকিরে মুসগুল থাকতেন। একদা গভীর
রাতে যিকির করতে করতে নিজেকে একেবারে বিলীন করে দিলেন। বাহ্যিক ঙান ও দুনিয়াবি
চিন্তা-চেতনা সবই লোপ পেয়ে গেল। তিনি এক নতুন জগতে বিচরন করতে লাগলেন। অনেক নব নব
অদৃশ্য তাঁর চোখের সম্মুখে উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো। তিনি একেবারে তন্ময় হয়ে গেলেন। হঠাত
দেখতে পেলেন এক আশ্চার্জ জ্যোতির্ময় রুপচ্চবি। এতে তিনি মুদ্ধ ও আত্নহারা হয়ে
জিজ্ঞেস করলেন, হে আগন্তক মহান রুপছায়া! কে আপনি ? এ সময় সে মহান জ্যোতির্ময়
রুপছায়া হতে আওয়াজ এলো- আনাল হক, আমি আল্লাহ্। এ উত্তর শেষ হতে না হতেই সে অপূর্ব
জ্যোতির্ময় রুপচ্চবি তাঁর সম্মখ থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল। হযরত মনছুর হিল্লাজ
রহমাতুল্লাহি আলায়হির তন্দ্রাভাব দূরীভূত হলে মুহূর্তেই তাঁর মুখ থেকে বের হয়ে এলো
সেই অপূর্ব মহনীয় বাক্যটি আনাল হক, আমি আল্লাহ্। হযরত মনছুর হিল্লাজের চিরবাঞ্চিত
ও প্রিয় মাহবুবের ক্ষণিকের দর্শন স্রিতি তাঁর নজর হতে দূরীভূত হওয়ার সাথে সাথেই
তিনি যেন একেবারে দিশেহারা হয়ে পড়েন। নিজেকে সামলাতে না পেরে পাগলের ন্যায়
দিগ্বিদিক হারিয়েই মনের অজান্তেই বলতে শুরু করলেন, সেই মহান বাক্যটি আনাল হক। হক
হক, আনাল হক। কি সাংঘাতিক কথা, কি কুফরি বাক্য। সৃষ্টি হয়ে স্রষ্টার দাবী, দাস হয়ে
প্রভুর দাবী, এ কি কখনো হতে পারে ??? নির্বিকার হযরত মনছুর হিল্লাজের মুখে বারবার
সেই একই ধ্বনি, একই বাক্য-আনাল হক, তাঁর মুখে ঐ ধ্বনি শুনে শরীয়তপন্থী আলেমগণ
ক্রমশ বিরুদ্ধচরন করতে শুরু করলেন। তাদের দৃষ্টিতে আনাল হক হলো কুফরি কালাম। এ
কারনে আলেম সমাজ তাকে কাফের ফতোয়া দিলেন। অবশ্য ইতিপূর্বে এ বাক্য বলা থেকে বিরত
থাকার জন্য হযরত মনছুর হিল্লাজকে বারবার অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু অনঢ় অটল থেকে
এবং একখানা পুস্তুকের কিছু কথা নিয়েও লোক সমাজে বেশ আপত্তি উঠেছিল। এজন্য খলীফার
দরবারেও তাকে আসামীর কাঠগড়ায় দাড়িয়ে জবাবদিহি পর্যন্ত করতে হয়েছে। শুদু তাই নয়
হযরত মনছুর হিল্লাজ রহমাতুল্লাহি আলায়হির আল্লাহর সৃষ্টি তত্বের এমন কিছু নিগুঢ়
তত্ত্ব লোক সমাজে প্রকাশ করে ফেলেছিলেন। যার জন্য শরীয়তপন্থী আলেমগণ তাকে কাফের
ফতোয়া দিয়ে খলীফার নিকট তাঁর মৃত্যুদণ্ড দাবী করেছিলেন। খলিফা আলেমদের দাবীর
প্রেক্ষিতে হযরত মনছুর হিল্লাজকে কারারুদ্ধ করলেন। দীর্ঘ ৮/৯ বছর পর্যন্ত
কারান্তরালে থাকতে হবে। এ সময় হযরত মনছুর হিল্লাজের জাতশুত্রু ( আনাল হক বলায়
শুত্রুতা শুরু হয়) বাগদাদের প্রদান উজিরের ব্যাক্তিগত নির্দেশে অন্য
বন্দীদের থেকে হযরত মনছুর হিল্লাজের প্রতি
অতিরিক্ত কিছু নতুন ব্যবস্তা নেয়া হয়। তাকে প্রত্যহ ১০টি বেত্রাঘাত ও অন্যান্য
কয়েদীদের থেকে নিম্নমানের খাবার পরিবেষণের নির্দেশ দেয়া হল। সব নির্যাতন তিনি
নীরবে সহ্য করতে লাগলেন। বিন্দুমাত্র বিচলিত হলেন না। এই অমানবিক অত্যাচার ও
নির্যাতনের মধ্যে তিনি আপন প্রেমাসম্পদ ও প্রিয় মাহবুবের সরণ ও সর্বক্ষণের জন্যই
করে যেতে লাগলেন, বলেই চললেন, আনাল হক, কারাগারে থাকাবস্তায় হযরত মনছুর হিল্লাজের
পায়ে বেড়ী পরিহিত থাকতো। এ অবস্থায়ও গভীর রাতে তিনি অন্তত এক হাজার রাকআত নামায
আদায় করতেন। এ অবস্থা দেখে জেলখানায় অনেক কয়েদী এবং কারারক্ষী অনেকেই তাঁর মুরিদ
হয়ে যান। হযরত মনছুর হিল্লাজকে কোন উপায়ে দমাতে না পেরে ইরাকের প্রধান উজির দেশের
কাজীর (বিচারক) নিকট হতে মৃত্যুর ফতোয়া লিখিয়ে খলিফার নিকট পেশ করেন এবং অবিলম্বে
মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সুপারিশ করলেন। প্রধান উজির এবং আলেম সমাজ হযরত মনছুর হিল্লাজের কারামাতকে যাদুবিদ্যা বলে খলিফা
এবং জনসাধারণের মধ্যে মিথ্যা প্রচারণা চালান। ফলে, নানারকম অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে
খলীফা হযরত মনছুর হিল্লাজকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার
নির্দেশ দেন। হযরত মনছুর হিল্লাজকে কারাগার হতে বের করে আনার আদেশ শুনে কালবিলম্ব
না করে তিনি কারাগারের বাহিরে চলে আসেন। কেননা তিনি স্পষ্টভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন
যে, এবারে আর কারাগার বদল নয়, এবার পার্থিব জীবন ও দুনিয়ার বদল, এ বদল চিরদিনের
জন্য। তাঁর চেহারার দীপ্ত আভা দেখে মনে হচ্ছিল তিনি যেন কোন শুভ সংবাদ শুনে যাত্রা
করছেন। বাগদাদের দজলা নদীর তীরে শূলদন্ড স্থাপিত হয়েছিল। মুহূর্তের মধ্যে
মৃত্যুদণ্ডের খবর দেশব্যাপি ছড়িয়ে পড়লে বাদশাহ ও প্রধান উজির অতিশয় চিন্তিত হয়ে
পড়লেন। কেননা হযরত মনছুর হিল্লাজের দুনিয়াব্যাপি খ্যাতি ছিল। এছাড়া লক্ষাধিক মুরিদ
ও তখনও বর্তমান ছিল। তাই সরকারি পুলিশ দ্বারা বিরাট এলাকাটি মিশ্চিদ্র পাহারার
ব্যবস্তা করা হল। যাতে কোন প্রানী সে এলাকায় প্রবেশ করার সুযোগ না পায়। অপরদিকে
কারাগার হতে বের করার সাথে সাথে অতর্কিত হামলা চালিয়ে তাকে চিনিয়ে নেওয়ার
পরিকল্পনা গ্রহন করে মুরিদবৃন্দ। কিন্তু খলীফার প্রধান উজিরের পরিকল্পনা মোতাবেক মনছুর
হিল্লাজকে রাতের অন্ধকারে ভিন্নপথে বধ্যভূমিতে শূলদন্ড দেওয়ার জন্য নিয়ে যাত্রা
হয়। মুরিদগণ এ ব্যর্থতার শোকে চোখের জলে বুক ভাসিয়ে ক্রন্দন করতে থাকেন। শুদু তাই
নয়, হুজুরের চির শুত্রুগন সরকারের এমন কঠোর সিদ্ধান্তে গভীর নুঃখবোধ করেন। চাবুক
মারার পরেই শুরু হল শূলে চড়ানোর পালা। পূর্ব প্রস্ততি সম্পন্ন। কোতোয়াল তলোয়ার
হাতে এগিয়ে এসে উজিরকে খুশী করার মানসে হযরত মনছুর হিল্লাজের একটি হাত কেটে ফেলল। হযরত
মনছুর হিল্লাজ সচেতন অথচ নির্বাক। পর্বতের মত অটল দাঁড়িয়ে রইলেন। মুখে উচ্চারিত
হচ্ছে “আনাল হক”। এ অবস্তা দেখে বর্বর কোতোয়াল ২য় হাতটিও কেটে ফেলল। একে
একে দুটি পাও কেটে ফেলা হল। নির্বিকার হযরত মনছুর হিল্লাজ উহ! আহ শব্দ পর্যন্ত
উচ্চারণ করলেন না। ক্রোধোম্মুক্ত কোতোয়াল এবার শিরচ্চেদ করার পরিকল্পনা গ্রহন করল।
এবারে হযরত মনছুর হিল্লাজকে শূলদন্ডে চড়ানো হল। একখানা কাষ্ঠফলক তাঁর গ্রীবাদেশে
পতিত হবার সাথে সাথে দেহ থেকে পবিত্র মস্তক বিচ্ছিন্ন হয়ে দূরে ছিটকে পড়লো। মহান
আধ্যাত্মিক সাধক শাহাদাতের অমীও শুধা পান করলেন।
মহান আল্লাহর কুদরতের কি অপার মহিমা!
শাহাদাতের পরেই তাঁর কারামত প্রকাশ পেতে লাগল। এমনকি তাঁর পবিত্র দেহ হতে প্রবাহিত
রক্ত কণিকা হতেও ঐ “আনাল হক” উচ্চারিত হতে লাগলো। হক, হক, আনাল হক। মহান স্রষ্টার
প্রিওবন্ধু হযরত মনছুর হিল্লাজের এ ধরণের বিস্ময়কর কারামত প্রত্যক্ষ করে উপস্থিত
জনতা সরকারি আমলা, ও এলমে মারিফাত সম্পর্কে অজ্ঞ শরিয়তি আলামগন বিস্মিত ও হতবাক
হয়ে গেলেন। দর্শকরা ভিতসন্তস্থ হয়ে চারদিকে ছুটাছুটি করতে লাগলো এবং মুখে উচ্চারিত
সোবহানাল্লাহ ধ্বনি আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে তুললো। আনাল হক” ধ্বনি বন্ধ করার লক্ষ্য আলেম ও সরকারি আমলারা ঐক্যমত
হয়ে তাঁর দেহ, মস্তক, জমাট রক্ত স্তূপীকৃত করে জ্বালিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে
পুড়িয়ে ফেলল। হক বা সত্য কখনো ধ্বংস করা যায়না। এটা সর্বদা জাগ্রত। দেহপোড়া ভম্ম
হতেও ঐ গগনবিদারী “ আনাল হক” ধ্বনি উঠতে লাগল। এ দেখে সকলেই স্তম্বিত, বাকরুধ্ব ও
বিবেকহীন হয়ে পড়লো। অগত্যা স্থির হল ভম্ম রাশি দজলা নদীতে নিক্ষেপ করে বিপদ দূর
করা হোক। কিন্তু যতোই তারা বিপদ দুর করতে সচেস্টা হোল, ততোই মারাত্মক বিপদ তাদের ঘিরে ধরলো। আল্লাহর অলীর
(বন্ধু) সাথে বেয়াদবী আল্লাহ্ তা’লা কখনো বরদাশত
করেন না। দেহ পোড়া ভম্ম দজলা নদীতে নিক্ষেপ করার সাথে সাথে পূর্বের চেয়েও
গুরুগম্ভীর ধ্বনি উঠলো “আনাল হক” “আনাল হক”। শুধুই কি ধ্বনি হৃদয় কাঁপানো আওয়াজ, মোদিনী প্রকম্পিত
নিনাদ। মুহূর্তের মধ্যে শান্তভাবে প্রবাহিত পানি হঠাত বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো। বান
ডেকে দজলা নদীর অতি গভীরের পানি নু,কূল ভাসিয়ে দ্রুতগতীতে জনপদে , গ্রাম থেকে
গ্রামে, মাঠে-ময়দানের দিকে ধাবিত হতে লাগলো। দজলার ক্ষিপ্ত প্লাবিত পানি জনতাকে তাড়িয়ে
যাচ্ছে। স্রতধারা পা বেয়ে হাটু পর্যন্ত উঠে গেলো, পানির উচ্চতা ক্রমবর্দমান হয়ে
এগুচ্ছে কমার কোনো লক্ষণ নেই। হযরত নূহ আলাইহিস সালামের সময়কার প্লাবনের কথা
প্রত্যক্ষ করছে। ভীত সন্ত্রস্ত মানুষ গন্তব্যস্থলের ঠিকানায় ছুটছেতো ছুটছে। দজলা
নদীর পানি তাদেরকে “আনাল হক” “আনালহক” বলে যেন পেছনে হতে তাড়িয়ে নিচ্ছে। দজলার পানির প্রতি
বিন্দু হতেই “আনাল হক” আওয়াজ উঠতে থাকে। জনতা-দৌড়িয়ে বাড়িতে পৌছার পূর্বেই ঘর
বাড়ি প্লাবিত হয়ে গেছে। দাঁড়ানোর স্থান পর্যন্ত নেই। গৃহহারা আশ্রয়হীন লক্ষ লক্ষ
জনতা অবশেষে হ্যামিলন শহরের ইঁদুরের মতো পানিতে ডুবে মরার দুশ্চিন্তায় দিশেহারা। ডুবুডুবু
পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে কাকুতি-মিনতি, কান্নাকাটি করে বিপদমুক্ত হবার জন্য আল্লাহর
দরবারে ফরিয়াদ জানাল বিপদগ্রস্ত জনতা। চৈতন্যেদয় হলো উপস্তিত আলেম সরকারি আমলাদের।
উদ্ভুত পরিস্তিতির ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করে তারা হযরত মনছুর হিল্লাজ কত বড় ঙানী উচ্চ
মার্গের সাধক ও যুগশ্রেস্ট অলিয়ে কামেল এবং তাঁর স্তান আল্লাহর নিকট কতো ঊরদে তা
হৃদয়ঙ্গম করতে সমর্থ হল। তাঁর সাথে বেয়াদবি, শূলে চড়ানো, অত্যাচার-নির্যাতন পাপের
কারনে দেশের মানুষের এ দুরবস্থা। প্রকৃত খদাপ্রেমিক অলি-আল্লাহ্ নিজের মৃত্যু
সম্পর্কে আগেই অবগত হয়ে থাকেন। হযরত মনছুর হিল্লাজও তাঁর মৃত্যুর ঘটনাবলী মৃত্যুর
পরে দেশ ও জাতির জীবনে যে দুরযুগ নেমে আসবে সে ঘটনা এবং দজলা নদীবক্ষে তাঁর দেহ
ভম্ম ফেলে দিলে কি ভয়াবহ পরিনতি নেমে আসবে, তা তিনি আগেই অবহিত হয়েছিলেন এবং এর
থেকে বাঁচার উপায়ও আল্লাহর তা’আলার পক্ষ হতে
তাকে ঙাত করা হয়। তাইতো তিনি একান্ত বিশ্বাসী ও অনুগত জনৈক মুরিদকে সে বিষয়ে আগেই
বলে দিয়েছিলেন। দজলা নদীর বিক্ষিপ্ত প্লাবনের অবস্তা দেখে সেই মুরিদের পীরের
উপদেশের কথা স্মরণ হল। উপায় তো তাঁর জানা। মুরিদ তৎক্ষণাৎ দৌড়ে গিয়ে হযরত মনছুর
হিল্লাজের ব্যবহৃত একটি কম্বল এনে দজলার উৎক্ষিপ্ত পানিতে নিক্ষেপ করলো। এক
আশ্চারজ ব্যাপার!!! কম্বল নিক্ষেপ করার সাথে সাথে দজলার পানি শান্ত হল। জনপদ থেকে
পানি সরে নদীর দিকে যেতে থাকলো। অশান্ত দজলা আগের মত শান্ত হয়ে গেল। নদীর এতসব
বিবর্তন সত্ত্বেও দেহভম্মের কোন পরিবর্তন হল না। যেরূপ ভম্ম সে রূপই রয়ে গেল। সকল
ভম্ম একত্রিত হয়ে একস্থানে স্তপিক্রিত হল, একটি ভাসমান মাথার আকৃতি ধারন করে
যথাস্তানে অবস্থান করে জলতরঙ্গের সাথে হেলে দুলে খেলা করতে লাগলো। তখনও ঐ ভম্মরাশি
থেকে “আনাল হক” “আনাল হক” ধ্বনি উচ্চারিত হয়ে চারদিকে মুখরিত করে তুললো। উপস্তিত
ঙানি-গুণী ব্যাক্তিদের সিদ্দান্ত অনুযায়ী ভম্মরাশি সসম্মানে তুলে এনে যথাযথ
শ্রদ্ধার সাথে একটি নির্দিষ্ট স্তানে দাফন করা হয়। আল্লাহর কি অপার মহিমা !! হযরত
মনছুর হিল্লাজের ভম্মরাশির দাফন সমাধা করার পর সে স্থান হতে আর “আনাল হক” ধ্বনি উঠলো
না।
No comments:
Post a Comment