Wednesday, May 21, 2025

ইনকামে বরকত

 ইনকামে বরকত পাচ্ছিনা এই অভিযোগ নিয়ে একদিন আমার এক প্রিয় উস্তাযের (মেন্টর) কাছে গেলাম। কোনো কিছু নিয়ে দ্বিধান্বিত-কনফিউজড কিংবা অশান্তিতে থাকলে তার সাথে কথা বললে এক ধরনের মানসিক প্রশান্তি আমি পাই।

তো একবার এইরকম একটা ডাউট নিয়ে আমি মেন্টরের সাথে দেখা করলাম।
আমাকে দুধ এবং চিনি ছাড়া স্রেফ গরম পানিতে ডুবানো একটা টি প্যাক এগিয়ে দিয়ে বললেন-, বাবু আছো কেমন?
আমি কিছুটা আড়ষ্টতা নিয়ে তাকে বললাম, কনফিউজড উস্তায!
তিনি আমার চেহারার দিকে গভীর ভাবে তাকালেন, মিনিট খানেক। তারপর চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন-কি নিয়া পেরেশানিতে আছো?
আমি তার আরো একটু সামনে এসে নিচু কন্ঠে বললাম-উস্তায, আমার ইনকাম নিয়া আমি দ্বিধায় আছি। আমি সৎ পথে উপার্জন করি। পেশাগত কাজে পারলে ২০০ ভাগ নিবেদন দিয়ে কাজ করি। তারপরও কেন জানি এতো বছর কাজ করার পরও আমার মনে হয়ে যে আমার উপার্জনে কোনো বরকত পাচ্ছিনা।
উস্তায মন দিয়ে আমার কথা শুনলেন, তারপর জিজ্ঞেস করলেন
-কেন তোমার এমন মনে হচ্ছে?
আমি এবার বললাম, যে আমার সেভিংস হচ্ছেনা। প্রতিবছর যেমন আয় বাড়ছে, তেমনি খরচও বাড়ছে।
উস্তায আবার কী মনে করে যেন আমার ডান হাতটা তার হাতে নিলেন। তারপর আবার গভীর ভাবে আমার কপাল আর চোখের দিকে তাকালেন। প্রশ্ন করলেন
-কিসের খরচ বাড়ছে তোমার?
-এই যেমন বাচ্চাদের এডুকেশন-ওদের স্কুলের বেতন, ওদের টিচারদের বেতন, কিছু অস্বচ্ছল আত্নীয় স্বজনদের খরচ।
-কোন স্কুলে পড়ে তোমার বাচ্চারা?
-আমি স্কুলের নাম বললাম।
-তানভীর, তুমি কি মনে করো, শুধু ব্যাংকে জমা বাড়া মানেই আয়ের বরকত?
আমি আমতা আমতা করি।
-এই যে তুমি সেরা একটা স্কুলে তোমার বাচ্চাদের পড়াতে পারছ, এটা কি বরকত নয়? কয়জন বাবা-মা এরকম ভালো স্কুলে তার বাচ্চাদের পড়াতে পারছে?
্যাঁ, তা তো ঠিক। আমি মাথা নাড়ি।
-তোমার বাচ্চারা কেমন? ওরা কি উচ্ছৃংখল? তোমাদের কথা বার্তা শোনেনা?
-না, না উস্তায। খুব লক্ষি বাচ্চা ওরা।
-এটা কি বরকত নয়, তানভীর?
-জি, অবশ্যই।
-বিগত ৫/৭ বছরে তোমার পরিবারে কেউ বড় রকম অসুস্থ হইছে? বা তুমি নিজে?
-না উস্তায, আল্লাহর রহমতে কেউ ওরকম সিরিয়াস অসুস্থ হয়নাই। আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়েছিল, আল্লাহর রহমতে দ্রুত সুস্থ হয়ে গেছে।
-হাসপাতালে ভর্তি করাতে হইছিল?
-না উস্তায, আল্লাহর রহমতে সুস্থ হয়েছে।
-এই যে তোমরা সুস্থ আছো, এটা কি বরকত না, আমার মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞেস করেন তিনি।
-জি অবশ্যই।
-বাবু , তোমার স্ত্রী কেমন মানুষ? সে কি তোমার সাথে সদাচারণ করে? তোমার খেয়াল রাখে? সে কী উন্নত চরিত্রের নয়?
-না না, উস্তায। সে অসাধারণ উন্নত চরিত্রের মানুষ। সে শুধু আমাকেই নয়। আমার সন্তাদের, আমার বাবার, আত্নীয় স্বজনেরও যত্ন নেয।
-আর কী বরকত চাও, তুমি? পরিবারে শান্তির চেয়ে বড় বরকত কী হতে পারে?
-জি উস্তায, আমি আসলে এভাবে গভীরে গিয়া চিন্তা করিনাই।
-তোমার বাবা-মা আছেন?
-বাবা নেই, মা আছেন?
-বাবা কি তোমার সাথে থাকেন, নাকি আলাদা থাকেন?
-আমার সাথে থাকেন, উস্তায। আমার সাথে।
-তোমার মা তোমার সাথে থাকেন, এ যুগে বাবা-মা সাথে থাকা, কত বড় বরকত তানভীর, তুমি টের পাওনা?
-টের পাই উস্তায। টেরপাই। মা সাথে আছেন, এইটা
অনেক বড় বারাকা, উস্তায।
তিনি আর কথা বাড়ান না। আমাকে বুকে জড়াই ধরেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। তারপর বলেন, জীবনে টাকা পয়সা-ধনসম্পদ বৃদ্ধিই শুধু বরকত না। জীবনে তুমি সুস্থ আছো, তোমার একটা সুন্দর পরিবার আছে, তুমি তাদের এবং তারা তোমার দেখভাল করতে পারছে-এটাও বরকত। জীবনে তুমি সঠিক জ্ঞানের আলো পাচ্ছ-এটাও বরকত। আত্নীয় স্বজনের খবর নিতে পারছ-এটাও বরকত। প্রতিদিন মার চেহারা দেখতে পাচ্ছ-এটাও বরকত।
-তুমি টাকা পয়সা ব্যাংকে জমাইয়া কী এরচেয়ে বেশি বরকত পাবে, বাবু ?
-উস্তায, আপনি ঠিক বলছেন।

Thursday, February 6, 2025

আবুল আলা মওদূদীর ভ্রান্ত এবং কুফুরী আক্বীদা সমূহ

 আপনি মুসলমান না জামাত? 

আমরা কেন জামাতের বিরোধিতা করি??


সেটা কি রাজনৈতিক স্বার্থে নাকি ধর্মীয় স্বার্থে??

জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা,

আবুল আলা মওদূদীর ভ্রান্ত এবং কুফুরী আক্বীদা সমূহ রেফারেন্সসহ নিম্নে পেশ করা হলো।


১।মওদূদী বলেছে, সমস্ত নবী গোনাহগার। (তাফহীমাত ২য় খন্ড ৫৭ পৃঃ)


২। মওদূদী বলেছে, নবী ও সাহাবীদের মধ্যে লোভ, লালসা, ঘৃনা-বিদ্ধেষ, কার্পন্য, স্বার্থপরতা ও প্রতিহিংসা ছিল, যার ফলে ওহুদ যুদ্ধে পরাজিত হয়েছেন। (তাফহীমুল কুরআন ২য় খন্ড পৃঃ ৬০ , ৯৯ নং টীকা।)


৩। কুরআন নাযিল হওয়ার একশত বছর পরে তা পরিবর্তন হয়ে গেছে। (কুরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা পৃঃ ১৪ ও ১৫)


৪।মওদূদী বলেছে, আমাদের নবী তাঁর রেসালতের দায়িত্ব আদায়ে ভূল ত্রুটি করেছেন। (তাফহীমুল ১৯ খন্ড পৃঃ ২৮৬ , ৪নং টীকা , কুরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা পৃঃ ১১৮)


৫। নবী عليه السلام এর মত লম্বা দাড়ি রাখা বা অন্যান্য কর্ম নবী এর মত করা মারাত্মক ধরনের বিদাত ও দ্বীনের বিপজ্জনক বিকৃতি। (রাসায়েল ও মাসায়েল ১ম খন্ড পৃঃ ১৮২ ও ১৮৩ নং)


৬। হাদীসের দ্বারা যদি বেশি কিছু অর্জিত হয় তবে সহীহ হওয়ার ধারনার উপর দৃঢ় বিশ্বাস ইয়াকিন রাখা যায় না। (তরজমানুল কুরআন পৃঃ ২৬৭ খন্ড ২৬ সংখ্যা ৩)


৭। আল্লাহ পাকের বিধান অস্বীকার করে মওদূদী বলেছিলো - "যে ক্ষেত্রে নর-নারীর অবাধ মেলামেশা সেক্ষেত্রে যেনার কারনে (আল্লাহ পাক উনার আদেশ কৃত) রজম শাস্তি প্রয়োগ করা জুলুম। (তাহফীমাত ২/২৮১)


নোট- অথচ জেনাকারীদের জন্যে রজমের শাস্তি স্বয়ং আল্লাহ পাক নিজেই দিয়েছেন।


৮। ফেরেশতা ঐ জিনিস যাকে গ্রীক, ভারত ইত্যাদি দেশের মুশরিকরা দেব-দেবী হিসাবে স্থির করেছে। (তাজদীদ ও ইহইয়ায়ে দীন ১০ পৃ)


৯।হযরত আদম আলাইহিস সালাম মানবিক দুর্বলতায় আক্রান্ত ছিলেন। (তাহফীমুল কুরআন উর্দু ,৩/১২৩)


১০। হযরত নূহ আলাইহিস সালাম এর চিন্তা ধারার দিক থেকে দীনের চাহিদা থেকে সরে গিয়েছিলেন। (তাহফীমুল কুরআন ২/৩৪৪, ৩য় সংস্করন ,১৯৬৪ ইং )


১১। নবী হওয়ার পূর্বে হযরত মুসা আলাইহিস সালাম দ্বারা একটি কবীরা গুনাহ হয়েছিলো। (রাসায়েল ও মাসায়েল ১/৩১)


১২। মহানবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানবিক দুর্বলতা থেকে মুক্ত ছিলেন না। অথাৎ তিনি মানবিক দুর্বলতার বশিভুত হয়ে গুনাহ করেছিলেন। (তরজমানুল কুরআন , ৮৫ সংখ্যা , ২৩০ পৃষ্ঠা , তরজমানুস সুন্নাহ ৩/৩০৫ )


পর্ব-১

চলবে.....

Sunday, July 14, 2024

বিশ্বখ্যাত প্রজ্ঞাবান হযরত লোকমান হাকীম

এক সাহসী রাজা বন্ধু হযরত লোকমান হাকীমের ছিলেন। রাজা যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হযরত লোকমান হাকীমের পরামর্শ অনুসারে সম্পন্ন করতেন। তাছাড়া, ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন সমস্যা আসলে তা থেকে উত্তরণের জন্য হাকীম লোকমানের শরণাপন্ন হয়ে সমাধান খুঁজতেন এবং তাঁর প্রজ্ঞাপূর্ণ দিক-নির্দেশনা নিয়ে আশাতীত উপকৃত হতেন।


রাজা একদা রাজ্যের প্রসিদ্ধ সোনা বনে হরিণ শিকারে গিয়েছিলেন। তিনি এক পর্যায়ে একাকী বনের গভীরে গিয়ে পৌঁছে যান।


বনের একটি বড় গাছের আড়াল থেকে এক নারীর কন্ঠে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসলো। সাহসী রাজা উচ্চস্বরে বললেন, "কে তুমি? মানুষ, নাকি জিন্? সামনে এসো, দেখি তোমার সমস্যার সমাধান আমি করতে পারি কিনা।" উত্তর

আসলো- "আমিও আপনার মতো মানুষ। তবে আমি এক নারী। আমি আপনার সামনে আসতে পারছিনা। কারণ, আমি বিবস্ত্র। আমাকে এক টুকরা কাপড় দিতে পারলে আমি তা পরিধান করে আপনার সামনে আসতে পারি।" রাজা তাঁর মাথার পাগড়িটা খুলে বৃক্ষটির অপর প্রান্তের দিকে ছুঁড়ে মারলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে নারীটি ওই সাদা বস্ত্র পরিধান করে রাজার সামনে আসলো। তিনি বললেন, “তুমি এখানে কিভাবে আসলে? তোমার পরিচয় কি?” নারীটি বললো, "আমিও আপনার মতো মানুষ। এখানে কিভাবে এসেছি তা আমার জানা নেই। তবে সে নিজের নাম বললো 'কোঁয়া কোঁয়া'।


এ অতি সুন্দরী নারীটার অসহায়ত্বের কথা ভেবে রাজা বললেন, "তুমি চাইলে আমার সাথে আমার রাজ্যে আমার মহলে চলে যেতে পারো।” নারীটা বললো, "আমি আপনার সাথে যেতে রাজি। তবে আপনি আমাকে বিয়ে করলেই আমি আপনার সঙ্গে যেতে পারবো। অন্যথায় না।” রাজা কিছুক্ষণ নিশ্চুপ র'য়ে চিন্তা করলেন, আর বললেন, “ঠিক আছে। তুমি আমার সাথে চলো। রাজ দরবারে গিয়ে বিয়ের কাজ সমাধা করবো।” সফর  সঙ্গীদের প্রশ্নের জবাবেও তিনি বললেন, এ নারী আমার দ্বিতীয় রাণী হবে। রাজ দরবারে পৌঁছলে প্রথম রাণীকেও তিনি একই জবাব দিলেন এবং নিয়ম মাফিক বিয়েও সম্পন্ন হলো। নতুন রাণীর জন্য রাজা পৃথক দালান তথা বাসস্থানের ব্যবস্থা করলেন। নতুন রাণীকে পেয়ে রাজা খুব খুশী। আনন্দের আতিশয্যে তিনি অন্য সবাইকে, এমনকি ■ তাঁর পরম বন্ধু হাকীম লোকমানকেও ভুলে - গেলেন। এভাবে সময় অতিবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে এরপর রাজ্যে এক নতুন সমস্যা ও বিপর্যয় দেখা দিলো। প্রতি রাতে প্রজাদের গোয়ালের গরু, মহিষ ও ছাগল ইত্যাদি খোয়া  যাচ্ছিলো। চতুর্দিক থেকে অভিযোগ আসছিলো। কোন্ অদৃশ্য হাতের কারসাজিতে এমন বিপর্যয় ঘটছে তার কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছিলো না। এবার এহেন করুণ অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে গিয়ে রাজার হাকীম বন্ধু (লোকমান হাকীম)-এর কথা স্মরণ হলো। সুতরাং তিনি লোকমান হাকীমের শরণাপন্ন হলেন এবং যাবতীয় ঘটনা বর্ণনা করলেন।


ইতোপূর্বে রাজা না জানালেও হযরত লোকমান হাকীম সব ঘটনা জানতেন। নতুন রাণীর বংশ পরিচয়সহ তাঁর জানা ছিলো। তিনি রাজাকে বললেন, "আমাকে প্রাসাদে নিয়ে চলুন এবং আপনার নতুন রাণীর হাতে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করুন।” সুতরাং প্রাসাদে আসার পর রাজা রাণীকে বললেন, "ইনি আমার বন্ধু লোকমান হাকীম, তিনি তোমার হাতে এক গ্লাস পানি চাচ্ছেন।” রাণী পানি নিয়ে আসতেই হাকীম লোকমানকে দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। কারণ, এ রাক্ষসী জানতো, এ হাকীমই তার রাক্ষসী মাকে তাঁরই তৈরীকৃত এক ধরনের পাউডার ছিঁটিয়ে হত্যা করেছিলো। তখন সে ছোট ছিলো। তাকে তার মা একটি গাছের গর্তে রেখে খাবারের তালাশে বের হয়েছিলো। বাইরে তার মায়ের আর্তনাদ শুনে বের হয়ে আসলে মরতের মরতে তার মা এক হাকীমের কথা বলে গিয়েছিল।  রাণীর এহেন আচরণ দেখে লোকমান হাকীমকে বললেন, "আপনি কি আমার রাণীকে চিনেন? আসল অবস্থা সম্পর্কে বলুন।" হাকীম লোকমান রাণীর সামনে শুধু হাসছিলেন। প্রথমে কিছুই বলেননি। রাণী প্রস্থান করলে হাকীম লোকমান বললেন, "বন্ধু, আপনি এ'কে রাণী বানিয়ে আপনার রাজ্যে ও প্রাসাদে এনে চরম ভুল করেছেন। কারণ, সে কোন মানুষ নয়; বরং এক  রাক্ষুসী (জিন)। আপনাকে রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় - রেখে প্রাসাদ থেকে বের হয়ে রাজ্যের পশুগুলো আহার করছে। সে ওই জঙ্গলের সব পশু সাবাড় করে লোকালয়ে এসে তার আহার সংগ্রহের জন্য পথ খুঁজছিলো। তখন আপনাকে পেয়ে আপনার হাত ধরে এ রাজ্যে ঢুকেছে। আপনি আমার পরামর্শ ছাড়া যেহেতু এ কাজটা করেছেন, সেহেতু ভুলের মাসুলতো কিছু দিতেই হচ্ছে।"


রাজা এ কথা শুনে দারুণভাবে ভীত হয়ে পড়লেন। আর প্রাসাদে নতুন রাণীর সাথ থাকতে ভয় পাচ্ছিলেন। তিনি হাকীম লোকমানকে বললেন, "আমাকে এবং আমার রাজ্যটাকে এ রাক্ষসীর হাত থেকে বাঁচান।" হাকীম বললেন, "সেটারও ব্যবস্থা হবে; কিন্তু আপনাকে তজ্জন্য কিছু কাজ করতে হবে। তা হচ্ছে- নতুন রাণীকে নিয়ে সমুদ্র ভ্রমণে যেতে হবে। তাও 'বাহরে কুলযম' সমুদ্রে। কথিত আছে যে, ওই সমুদ্রে যেমন তলদেশ নেই, তেমনি সেটার পানির উপরেও ভারী কোন জিনিষ স্থির থাকে না। তাই একটি দ্বিতল বেতের জাহাজ তৈরী করতে হবে।" সুতরাং তাই করা হলো।


নতুন রাণীকে ওই বেতের জাহাজ করে কুলযম  সমুদ্রে ভ্রমণের প্রস্তাব দেওয়া হলো এবং বলা হলো যে, ওই ভ্রমণে রাজার বন্ধু লোকমান হাকীমও যাবেন। প্রস্তাব শুনে রাণী রাজী হলো- এ শর্তে যে, তিনি নিচের তলায় থাকবেন, উপরের তলায় উঠতে পারবেন না। কারণ উপরের তলায়. থাকবেন রাজা ও নতুন রাণী। তাছাড়া, রাণীও মনে মনে ভাবলেন যে, সুযোগ বুঝে হাকীম সাহেবকে সমুদ্রে ডুবিয়ে মেরে প্রতিশোধ নেওয়া হবে। এদিকে আর লোকমান হাকীমও রাক্ষসী রাণীকে চিরদিনের জন্য সমুদ্রে আটকে দেওয়ার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা করে নিয়েছিলেন।  যথাসময়ে সামুদ্রিক ভ্রমণ আরম্ভ হলো। জাহাজ উ যখন কুলযম সমুদ্রের গভীরের দিকে যাচ্ছিলো, তখন নিচের তলা থেকে হাকীম লোকমান রাণী কোঁয়া কোয়াঁর উদ্দেশে বললেন, "আমি জেনেছি যে, কুলযম সমুদ্রের নাকি তলা নেই। এ সম্পর্কে ভাবী সাহেবা! আপনার অভিমত কি?" রাণী কোঁয়া কোঁয়া বিরক্তির সুরে বললো, "এসব ভিত্তিহীন কথা। তলদেশ না থাকলে এত পানি কিসের উপর রয়েছে?" হাকীম বললেন, "আপনি কি এ কথা প্রমাণ করতে পারবেন যে, এ সমুদ্রের তলদেশ আছে?" রাণী বললেন, "অবশ্যই পারবো। তাও এভাবে যে, আমি নাগিনী (সাপ) হয়ে সমুদ্রে নামবো। আর আমার লেজ থাকবে পানির উপরি ভাগে আপনার হাতে। আমি সমুদ্রের তলদেশে পৌঁছে আমার লেজে নাড়া দেবো। অথবা আমার মুখে করে সমুদ্রের তলদেশ থেকে মাটি নিয়ে আসবো। এভাবে আমি আমার দাবীর বাস্তবতা প্রতিষ্ঠা করবো।" যেমন কথা তেমন কাজ। রাণী অমনি সাপ হয়ে সমুদ্রে নেমে গেলো। কিছুক্ষণ পর পানির  

উপরিভাগে সেটা আপন লেজে নাড়া দিলো। আর বুঝাতে চাইলো যে, সে সমুদ্রের তলদেশে পৌঁছে গেছে। এ দিকে হাকীম লোকমান তাঁর সাথে রাখা এক শিশি ঔষধ সাপটির লেজের চতুর্পাশে পানিতে ঢেলে দিলেন। অমনি লেজের চতুর্পাশে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে পানি পাথর হয়ে গেলো এবং সাপটি আটকা পড়ে গেলো। এরপর হাকীম সেখানে আরো কিছু ঔষধ পানিতে ফেলে দিলেন। ফলে আরো বিশাল এলাকা পাথর হয়ে গেলো এরপর চিরদিনের জন্য সাপটি, তথা কোঁয়া কোঁয়া রাক্ষসী সমুদ্রে আটকা পড়ে গেলো। এভাবে রাজা ও তাঁর রাজ্য এ রাক্ষসীর হাত থেকে মুক্তি পেলো।

Monday, November 1, 2021

হযরত আলাউদ্দিন আহমদ সাবের কালিয়ার (র) বড় পীরের পর সবচেয়ে জালালি ফায়েজের আউলিয়া।।

 হযরত আলাউদ্দিন আহমদ সাবের কালিয়ার (র) বড় পীরের পর সবচেয়ে জালালি ফায়েজের আউলিয়া। বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানি (র) এর আপন নাতি। বড় পীরের পর তিনি হলেন সর্বাধিক জালালি তবীয়তের আউলিয়া। হযরত ইমাম জাফর সাদেক (র) বলেন "আল্লাহ্‌র অলি-আউলিয়াদের মধ্যে দুইটা অতি ধারালো খোলা তরবারি আছে, একটা হল বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানি (র) আর আরেকজন হল তাহার নাতি আলাউদ্দিন সাবের কালিয়ার (র)। যদি কোন ব্যাক্তি এই দুইজনের সাথে সামান্যতম বেয়াদবিও করে তাহলে আল্লাহর জালালি তেজে সে সাথে সাথে দুই খণ্ড হয়ে যাবে"। সাবের পাকের জালালি এতই বেশি ছিল যে তিনি যদি কাউকে লক্ষ করে একবার উচ্চারণ করতেন যে "লোকটির আচরণ ভালো না" তাহলে সাথে সাথে সেই লোক দুই খণ্ড হয়ে যেত। আর যদি সাবের পাক কখনও রেগে যেতেন তাহলে উক্ত এলাকা জ্বলে পুড়ে ছাড়-খার হয়ে যেত কেউ আর প্রানে বাঁচত না।সাবেরপাকের অসম্ভব জালালির কারনে তাহার মুর্শিদ শেখ ফরিদও তাহার সাথে রীতিমত কথা বলতে ভয় পেতেন এই ভেবে যদি সাবেরপাক কখনও খেপে যান।


 সাবের পাক একবার ক্ষেপে গেলে ৬ মাসের আগে তার সামনে কেউ আসতে পারত না।যদি কেউ এই সময় ভুলেও দেখা করতে যেত তাহলে আর প্রান নিয়ে ফিরতে পারত না সে যত বড় আল্লাহর অলি হোক না কেন। সাবেরপাকের শরীরের যদিও কেউ অজু ছাড়া স্পর্শও করত তাহলে তার গায়ে সঙ্গে সঙ্গে আগুনের জ্বালা-পোরা শুরু হয়ে যেত। সাবের পাকের এই অসম্ভব জালালির কারনে কেউই তার কাছে মুরিদ হইতে সাহস পেত না। সাবের পাক জীবিত থাকাকালিন শামসুদ্দিন তুর্কি পানিপথি নামের এক ব্যাক্তিকে শুধু মুরিদ করেছিলেন। এই ব্যাক্তি থেকে পরবর্তী সময়ে তাহার সিলসিলা চালু হয়ে আজ পর্যন্ত চালু হয়ে আছে। সাবেরপাকের ইন্তেকালের পর তার রওজাশরিফ ৪০ দিন এক পর্যন্ত একসিংহ পাহারা দিয়ে হটাৎ গায়েব হয়ে যায়। 

হযরত খাজা আলাউদ্দিন আহমেদ সাবের কালিয়ার (র)
জন্মঃ- ১৯ শে রবিউল আউয়াল ৫৯২ হিজরি
পর্দা-গ্রহনঃ-১৩ই রবিউল
পিতাঃ- হযরত আব্দুল রহিম (র)
মাতাঃ- হযরত জামিলা খাতুন (র)
পদবীঃ- কুতুবে আউলিয়া ,হযরত গাউসুল আজম বড় পীর আব্দুল কাদির জিলানি (র) এর আপন নাতী
মাজার শরিফঃ- ভারতের উত্তর-খণ্ড প্রদেশের কালিয়ায়র নামক শহরে।
তরিকাঃ- চিশতিয়া
পীর কেবলাঃ-হযরত শেখ ফরিদ (র)
ধর্মঃ- ইসলাম (সুন্নি)
সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ- জন্মের কয়েক বছর পর পিতা মারা গেলে শিশু সাবের আহমেদ ও তার মা অর্থ-নৈতিক দিক থেকে অসহায় হয়ে পড়েন।তারা উভয়েই দিনের বেলায় রোজা রাখতেন এবং রাতের বেলায় শুকনা রুটি দিয়ে ইফতার করতেন।ছোটবেলা থেকেই সাবের আহমদের মাঝে আল্লাহ্‌র অলৌকিক ক্ষমতা প্রকাশ পেতে থাকলে তাহার মাতা তাকে স্বীয় আপন ভাই হযরত শেখ ফরিদ (র) এর কাছে উচ্চতর সাধনার জন্য প্রেরন করেন।পরবর্তী-কালে তাহার ভাই সাবের আহমেদ (র) কে আপন মুরিদ করে নেন।কথিত আছে হযরত সাবের কালিয়ার এর অসম্ভব জালালির কারনে তার পীর কেবলা হযরত শেখ ফরিদ ও তাহাকে খুব ভয় পেতেন।ধীরে ধীরে বাবা শেখ ফরিদের তত্ত্বাবধানে সাবের আহমেদ ইল মে তাসাউফের উচ্চ শিখর লাভ করেন।পরবর্তীতে ভারতের কালিয়ার নামক স্থানে পর্দা গ্রহন করেন।
অলৌকিক কারামতঃ-
১। জন্মের সময় কারামতঃ- কথিত আছে যে বাবা সাবের আহমেদ যখন জন্ম নেন,তখন তার দায়ী মা তাকে অজু ছাড়া কোলে নিলে দায়ী মার সারা শরীরে সঙ্গে সঙ্গে জালা-পোড়া শুরু হয়ে যায়।

২। ১২ বছর অনাহারঃ-সাবের আহমেদকে তাহার মামা লঙ্গর-খানা পরিচালনার দায়িত্ব দিলে তিনি একটানা ১২ বছর সেই লঙ্গর খানা থেকে কোন খাবার গ্রহন করেন নি। এতে তার দেহ কঙ্কাল-সার হয়ে গেলে তার মামা শেখ ফরিদ জিজ্ঞাস করলেন"তোমাকে আমি পুরো লঙ্গর খানার দায়িত্ব দিলাম,তবুও তোমার শরীরের এই বেহাল অবস্থা কেন??" উত্তরে সাবের আহমেদ বললেন" আপনি আমাকে লংগর খানা দেখা শুনার কেবল দায়িত্ব দিয়ে ছিলেন,কিন্তু সেখান থেকে খাবার খাওয়ার কোন অনুমতি দেন নি,তাই আমি এত দিন না খেয়ে কাটিয়েছি"। এই উচ্চ পর্যায়ের সততার কথা শুনে শেখ ফরিদ (র) খুব অবাক হয়ে পড়েন।
৩। কেউ সামান্য বেদবি করলে তার নির্ঘাত মৃত্যুঃ- আল্লাহপাক তাকে এতই জালালি স্বভাব দান করেছিলেন যে তিনি যদি মুখে একবার উচ্চারণ করতেন যে লোকটির আচরণ ভাল না,তাহলে সাথে সাথেই সেই লোকটি দুই খণ্ড হয়ে যেত,তার আর প্রানে বাঁচার উপায় থাকত না
৪।সম্পূর্ণ কালিয়ার শহর ধ্বংসঃ- তাহার পীর কেবলা অর্থাৎ আপন মামা হযরত শেখ ফরিদ (র) তাকে খিলাফত দিয়ে কালিয়ার শহরের কুতুব (প্রধান ধর্মীয় নেতা)নিযুক্ত করেন।কিন্তু কালিয়ার শহরের কাজী তবারক তাকে সাধারন এক রাস্তার ফকির ভেবে খুব তাচ্ছিল্য করে এমন কি মসজিদে নামাজ পড়ার সময় তাকে ঘাড় ধরে বের করে দেন।এতে বাবা সাবের এর ধৈর্যের বান ভেঙ্গে গেলে তিনি কেবল এইটুকুই উচ্চারণ করেন যে "সব ধ্বংস হোক"।ফলে এক প্রচণ্ড ভুমিকম্পে সমগ্র কালিয়ার প্রদেশ ৫ মিনিটে ধূলিসাৎ হয়ে যায়।সেদিন ঐ কালিয়ার শহরে একটি গাছ ছাড়া আর কিছুই অক্ষত ছিল না। ভূমি-কম্পে সেই গাছ অক্ষত থাকার কারন হল সেই গাছের নীচে কালিয়ার আসার পর বাবা সাবের কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে ছিলেন। আজো সেই গাছকে মানুষ পরম শ্রদ্ধার চোখে দেখে থাকে।
৫।মৃত ছাগলের কথা বলাঃ-কাজী তবারক হিন্সার বশবর্তী হয়ে বাবা সাবেরকে পরীক্ষা করার জন্য জন সম্মুখে বাবা সাবেরকে বললেন যে " আমার তিন মাস আগে একটি ছাগল হারানো গেছে,তুমি যদি তার খবর বলতে পার তাহলে আমি মেনে নিব তুমি সত্যি আল্লাহর অলি"।বাবা সাবের এই কথা শুনে কেবল এই বলে ডাক দিলেন যে "যারা কাজী সাহেবের ছাগল খেয়েছ তারা আমার সামনে হাজির হও"সাথে ২৭ জন লোক আপনা আপনি বাবার সামনে হাজীর হন।এরপর বাবা সাবের কাজী সাহেবকে তার ছাগলের নাম ধরে ডাক দিতে বললে,কাজী সাহবের ডাকে ২৭ জনের পেট থেকে ছাগল কথা বলা শুরু করে দিল। এই আশ্চর্য কারামত দেখে কাজী তবারক হিংসায় তাকে যাদু কর বলে আখ্যা দিলেন। এতে বাবা সাবের কিছুই মনে করলেন না।
৬ ।স্ত্রীর গায়ে আগুন লাগাঃ- বাবা সাবের সব সময় আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকতেন।এজন্য চার পাশে কি ঘটছে তা তার কোন খেয়াল থাকতো না।একবার বাবা সাবের এর মায়ের অনু-রোধে তার মামা শেখ ফরিদ তাহার নিজের কন্যার সাথে বাবা সাবেরের বিয়ে দেন।কিন্তু বাসর রাতে যখন তাহার স্ত্রী তাহার নিকট গমন করলে বাবা সাবের জিজ্ঞেস করলেন"তুমি কে?" তাহার স্ত্রী বললেন "আমি আপনার বিবি"এই কথা শুনার পর বাবা সাবের জালালি হালে শুধু এইটুকু উচ্চারণ করলেন যে " যে আল্লাহ লা শারিক তার আবার স্ত্রী কিভাবে থাকতে পারে"আর এতে সাথে সাথেই তাহার বিবির গায়ে আগুন লেগে যায়।ফলে তাহার বিবি আগুনে জলসে মারা যান। এতে তাহার মামা খুব কষ্ট পেলেও তাহার করার কিছুই ছিল না।
৭। নিজের জানাজা নিজে পড়লেনঃ- বাবা সাবের দুনিয়া থেকে পর্দা গ্রহন করার কিছু দিন পূর্বে তাহার ভক্তদের বলে যান যে "আমার মৃত্যুর দুই ঘণ্টা পরে একজন লোক সাদা ঘোড়ায় চরে আসবে আমার জানাজা ও দাফন করতে,তাই তার আসার পূর্বে ভুলেও যেন কেউ লাশ স্পর্শ না করে "। যথা-রীতি বাবার কথা মত এক লোক মুখ চাদরে দেখে ঘোড়ায় চরে এসে লাশ দাফন করে চলে যেতে লাগলে এক ভক্তের আকুল আবেদনে সেই লোকটি মুখের কাপড় খুললে সবাই দেখতে পান যে এটা আর কেউ নয় সয়ং বাবা সাবের,এর পর বাবা ঘোড়ায় চরে হঠাত অদৃশ্য হয়ে যান।
৮। পূর্বে মাজার শরিফে কেউ প্রবেশ করতে পারত নাঃ- বাবা সাবের ইন্তেকালের পর তাহার মাজার শরিফের চারপাশে তিন গুন জালালি ভাব প্রকাশিত হতে শুরু করে।কেউ যদি মাজারে যাওয়ার চেষ্টা ১ মাইল দূর থেকেও করত তাহলে সাথে আকাশ থেকে বজ্র পাত হয়ে সে খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যেত।কথিত আছে তাহার ইন্তেকালের ৪০ দিন পর্যন্ত তাহার মাজার সিংহ পাহাড়া দিতে দেখা যেত। পরবর্তীতে তার এক বংশধরের অনুরোধে তিনি তাহার জালালি ভাব ক্ষান্ত করে তাহার মাজার শরীফ সবার জন্য জিয়ারতের উপযুক্ত করে দেন।
৯।জীন- পরীর গায়ে আগুন লাগাঃ- তাহার মাজার শরীফের ওপর দিয়ে জীন পরীও যদি ভুলে অতিক্রম করে তাহলে তাদের গায়ে সঙ্গে সঙ্গে আগুন লেগে যায়।
বাবা খাজা আলাউদ্দিন আহমেদ সাবের কালিয়ার এর কারামত বলে শেষ করা যাবে না,এক কথায় বলতে গেলে বড় পীর আব্দুল কাদির জিলানীর পর তার স্থান, এতে কোন সন্দেহ নেই।


আল্লাহ আমদের সবার নসীবে এই আউলিয়ার রূহানী ফয়েজ নসিব করুন আমিন... !! 

Tuesday, August 31, 2021

কারবালা

 মুসলিম বানিয়েছে। নাস্তিক দমিয়েছে। তবুও কেন বিরোধীতা! লিখেছেন মাহদী গালিব।

কারবালা শেষ। এজিদ মসনদে। তিন বছরেই মরল। ৬৪ হিজরি, ৬৮৪ সালে। এরপর আসলো ঝড়। এজিদের যে বাহিনী ছিল কারবালায়, সেটার হোতারা মরতে লাগল। যেনতেন মৃত্যু না। মৃত্যুও ভয় পেয়েছে সে মৃত্যুতে। এজিদ অজানা রোগে মরেছে। কিন্তু বাকিদের মৃত্যু- বিশাল বিভীষিকা!
আমর বিন সাদ। সে ছিল সেনাপতি। সে ও তার ছেলের মাথা কাটা হয়। পাঠানো হয় মদিনায়। মুহাম্মদ বিন হানাফিয়ার কাছে। তিনি মওলা হুসাইনের ভাই, সৎভাই।
হাওলা বিন ইয়াজিদ। সে মওলা হুসাইনের মস্তক বিচ্ছিন্ন করেছিল। তার হাত-পা কেটে শূলে চড়ানো হয়। লাশ জ্বালানো হয়।
শিমার। মওলা হুসাইনের গলায় ছুরি চালিয়েছে। সে স্রেফ দু’ টুকরা হয়। হাকিম বিন তোফায়েল। মওলা হুসাইনকে তীর ছুঁড়েছিল। তার মাথা বর্শার আগায় নাচানো হয়। বাদর নাচের ডুমড়ির মত।
ইবনে জিয়াদ। সব’চে পাপিষ্ঠ। ইয়াজিদের পরে। তার মাথা, দেহ আলাদা করা হয়। দেহ দহন হয় আগুনে। মাথা বর্শার ডগায় কুফায় আসে। কুফা তখন প্রতিশোধের ঘাঁটি। এভাবে আরো অনেক। একজনও পার পায় নি। জানিয়ে রাখি, কুফা ইরাকের শহর। মওলা আলী একে রাজধানী করেছিলেন।
প্রতিশোধটা প্রাণের দাবী। তা নেয়া হয়েছে। কিন্তু কে নিয়েছে? নিশ্চই প্রশ্ন জাগছে? যে করেছে সে মহাবীর। এমনটা ভাবছেন হয়ত। কিন্তু ঘটনা ভিন্ন। সময়ে জানতে পারবেন।
তার নাম মুখতার সাখাফি। তায়েফে জন্মায়। আরবের একটি প্রদেশে। ৬২২ সালে। পরে কুফায় স্থায়ী হয়। প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। ইবনে জিয়াদ তখন কুফার গভর্নর। তার প্রতিপক্ষ ছিল সাখাফি। সাখাফি থাকলে এজিদের হুকুম চলবে না। তাই তাকে জেলে ঢুকানো হয় কৌশলে।
কারবালার ঘটনা শুরু-শেষ হয়। সাখাফি তখন জেলে। অনেক পরে বেরোয়। কূটনীতি খাঁটিয়ে। বেরিয়ে দেখে সব খতম। মওলা হুসাইন শহীদ হয়েছেন। পাল্টেছে খেলাফতের মানচিত্র। সে প্রতিজ্ঞা করে, কারবালার বদলা নিবেই নিবে। তাই করেছিল। ধীরেধীরে দল গুছায়। কিন্তু অ্যাকশনে নামতে-নামতে এজিদ ভূত হয়। বড় বাঁচা বাঁচে। কিন্তু চ্যালা-চামুণ্ডারা নিস্তার পায় নি। একেএকে প্রাপ্য পেয়েছে। যা আগেই লিখেছি।
এখন ভাবুন। নিরপেক্ষ হয়ে ভাবুন। সাখাফিকে মহানায়ক মনে হচ্ছে? সে অন্যায়-অসত্য নিঃশেষকারী। এমনটা ভাবছেন। ভাবাটাই স্বাভাবিক। লিকিন পিকচার আভি বাকি হ্যাঁয়।
জমহুর মানে সিংহভাগ, বেশির ভাগ। ইসলামের, আহলে সুন্নাতের জমহুর ইমামগণের ‘সাখাফি’ কেন্দ্রিক বক্তব্য নেতিবাচক, নেগেটিভ। ইমাম আ’লা হযরতও তাকে ‘মুরতাদ’ বলেছেন। যে আগে মুসলিম ছিল, পরে ঈমান হারা হয়েছে; সেই মুরতাদ। অর্থাৎ- সাখাফির প্রতিশোধ কেন্দ্রিক-কাজ ইতিবাচক। কিন্তু তার শেষজীবন অশুদ্ধ।
কেন! কেন এমন? কারণ, সে শেষ-সময়ে নবুয়ত দাবী করে। শিয়া ভাইদের চেতনা ভিন্ন। তাকে মহাবীর ভাবেন। কিন্তু শিয়াদের ইতিহাস দিয়েই প্রমাণ হয়েছে সাখাফি পথভ্রষ্ট হয়েছিল। তথ্য কমেন্ট বক্সে দিচ্ছি।
আবার হাজ্জাজ বিন ইউসুফকে ধরুন। কোর’আনে যের-যবর লাগিয়েছে। যা আজকের কোরআনে পাই। হাজ্জাজের আগে যের-জবর ছিল না। সে পাকিস্তান পর্যন্ত ইসলাম ছড়িয়েছিল। বিশাল অবদান। কিন্তু তাকেও মানা হয় না, সাখাফির মত। জমহুর ইমামের মত সে ধর্মচুত্য। এখন চাইলেই যের-যবর সরাতে পারবেন? সম্ভব না। হাজ্জাজ মুসলিম মেরেছে হাজার-হাজার। বেয়াদবি করেছে মসজিদে নববীতে।। এতটাই পাপিষ্ঠ। অতএব, তাকে মানা হচ্ছে না। কিন্তু তার নির্দিষ্ট কাজকে মানা হচ্ছে।
ইসলাম-মুসলিম অবদান অস্বীকার করে না। কিন্তু একটি অবদান ব্যক্তির অন্য অপরাধের বদলা, এক্সচেঞ্জ না। যদি না তওবা করে। সাখাফি-হাজ্জাজের অবদান মানা হয়। নির্দিষ্ট কাজ মানা হয়। কিন্তু তাদের না। কারণ, তারা অস্বীকার করেছে আকাইদ (creed), মৌলিক বিশ্বাসকে। ইসলামের স্তম্ভ, খুঁটিকে।
একই ভাবে কেউ ‘তুলনা মূলক ধর্মতত্ব’ আলোচনা করল। খ্যাতি কামালো। দলেদলে মুসলিম বানালো। কেউ ফেবু-ব্লগে-বইমেলায় রাজ্য উদ্ধার করলো। নাস্তিকের নাভিশ্বাস ওঠাল।
কিন্তু বলল, নবী দোষে-দূর্বলে মানুষ। কেউ বলবে, তাকে আজকের যুগে না মানলেও চলে। বিরোধীতা করলে বলবে জিহ্বার ভুল। তওবা করবেন না। তাদেরি কেউ বলবে আল্লাহ মিথ্যা বলতে পারেন। কিন্তু বলেন না। তিনি আরশে আছেন। তার শরীর আরশের থেকে চার আঙুল বড়। আল্লাহ নিচে নামেন। আমরা যেমন সিঁড়ি বেয়ে উঠি-নামি। যেসব ব্যক্তিদের প্রায়-পুরো উম্মাহ (জাতি) ধিক্কার দিয়েছে, তাদের নায়ক বানাবে। প্রজন্মের থেকে প্রজন্ম ধরে বিধৌত-পরিশুদ্ধ নীতি-আইন অস্বীকার করবে।
যে সাধকেরা মা-মাটি ছেড়ে, রোদ-বৃষ্টি-নদী-জঙ্গল-বাঘ-সাপ-ক্ষুধা-তৃষ্ণা তোয়াক্কা না করে, দূরে-বহুদূরে, ইসলাম ছড়িয়েছেন; তাদের অসম্মান করবে। ‘মশারী কেন, মশা কামড়ায় নাকি’ টিটকারি মারবে। তাদের স্মরণকে শিরিক-বিদাত বলবে।
যখন রক্তঝরা-সম্ভ্রমহারা ফেব্রুয়ারি-মার্চ-ডিসেম্বরকে, দেশের পতাকাকে অবজ্ঞা করবে। ইসলামকে শুধুই হুর-গেলমানের ধর্ম বানাবে। সেই লোভে প্রজন্ম জঙ্গি হবে। বলবে, বিন-লাদেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। বাংলাভাইয়ের গুণগান গাইবে। ইসলামকে একটি ভীতিপ্রদ, আতঙ্কের অবয়বে পরিণত করবে। হাজার বছরের মূল্যবোধ-চেতনা-সংস্কৃতিতে লাথি মারবে। হাজার সাহাবার মাজার ভাঙবে।
কথায় কথায় রেফারেন্স চাইবে। কোরআনের আয়াত দিবেন। বলবে অনুবাদ ও ব্যাখ্যাকারী ভুল। হাদিস দিবেন। চাইবে সহিহ হাদিস। মানে হাসান ও অন্যান্য মানের হাদিস হওয়ায় লাল-দোপাট্টা উড়িয়ে এসেছে। সেগুলো হাদিসই না। যাক, সহিহ হাদিস দিবেন। বলবে, প্রকাশনী ভুল। প্রকাশনী নিখুঁত দেখাবেন। বলবে- তোরা মাজার পূজারী! তোরা বানোয়াট। আমাগো শায়েখ ঠিক।
তার শায়েখ ঠিক। ১৩২৮ সালে দামাস্কাসে মরা, ১৭০৩ তে নজদে জন্মানো, ১৯৯৯ তে পটোল-তোলা শায়েখেরা সঠিক। ৮০ হিজরির আবু হানিফা ভুল। ৮৩২ এ জন্মানো মাতুরিদি ভুল। ১০৭৯ তে জন্মানো আব্দুল কাদির জিলানি ভুল। বইমেলার বেস্টসেলার সঠিক। কিন্তু ‘জজবুল কুলুব’-‘মাদারেজুন নবুয়ত’-‘মসনবি-‘কানযুল ঈমান’ ভুল। লালসালু সঠিক, হাদায়িকে বখশিশ ভুল... (আর কত কমু)!
কারো আদর্শের অবচেতন-আবেদন যখন মানুষকে এভাবে ভাবাতে শিখাবে, ইসলামের চেইন অব কমাণ্ড ভাঙবে, ইতিহাস থেকে ইসলামকে ছাঁটবে, প্রজন্মকে শিক্ষিত-অভদ্র, ধৃষ্ট-ধুরন্ধর বানাবে...
তখন! তখন! আর যাই হোক, যে যাই করুক, নাস্তিক নাচাক, মঙ্গলগ্রহের এলিয়নকেও মুসলমান বানাক – তার বিরোধীতা আবশ্যক! অত্যাবশ্যক!
কারণ; আকিদায় ধৃষ্টতার ক্ষেত্রে আপোষ নয়, প্রতিরোধ-প্রতিকার-নির্মূল করাই কাম্য।
যেমনটা ইমামে হক্বগণ করেছেন। কারবালা মুসলিমের আবেগ-অস্তিত্বের সংজ্ঞা। সেখানেও সাখাফিকে ছাড় দেয়া হয় নি। তুমি যাই করো, আকাইদ নেই তো কিছুই নেই। তোমার কাজ কচুপাতার পানি। প্রবাদ আছে না, ‘দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য’।
এ বিরোধীতা সখে না। নিজের জন্য না। আমি আপনার জমির ভাগ পাই না। বিরোধীতার কারণ একটাই, একজন। যাকে প্রাণ, সম্পদ, আত্মীয়, সন্তান এমনকি মায়ের থেকেও বেশী ভালো না বাসলে কেউ মুমিন হয় না (তওবা : ২৪)। তার জন্যই এই বিরোধীতা। এ বিরোধী শুধু মদিনার জন্য। মদিনা-মুনিব সাল্লালাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের জন্য। তিঁনি হয়ে তাঁর খোদার জন্য।
যদি দুধ চান। শুধু দুধ না, ক্ষীর দিতেও প্রস্তুত আছি। আশ্রয় চাইলে ঘর ছেড়ে দিব। কিন্তু নিজের গায়ে ইসলামের ব্রাণ্ড লাগিয়ে, মদিনার বিপরীতে যাবেন; তখন- অস্তিত্বের সবটুকু দিয়ে বিরোধীতা করতে আজন্ম প্রস্তুত আহলে সুন্নাহ। এটাই ঈমানের দাবী।
প্রজন্ম হে! চাকু দিয়ে সব্জি কাটে। আবার খুনও হয়। কোনটা হবে, নির্ভর করে চাকু-অলার ওপর। যে সহীহ হাদিসে ঢেকুর তুলে তোমাকে টানছে, চিন্তা করিও সে চাকু কিসের জন্য রেখেছে। মনে রাখিও-
মিথ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠিত সত্য ভঙ্গুর, ভেঙে যাবে। কিন্তু সত্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত মিথ্যা ভয়ংকর।